
‘মানবতাবাদী’ সাহিত্যের বিপক্ষে মাসরুর আরেফিন; ইকতিজা আহসানের সঙ্গে আলাপ। সাক্ষাৎকারের এই বইটি বইমেলা ২০২৩-এ প্রকাশিত। মাসরুর আরেফিনের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইকতিজা আহসান দুই পর্বে।
১. প্রথম পর্ব-২০২০, জুন-ডিসেম্বর। ২. দ্বিতীয় পর্ব-২০২২, অক্টোবর-ডিসেম্বর। সম্পাদনার সময় পুরো সাক্ষাৎকারের ৪ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার মতো লেখা ফেলে দেওয়া হয়েছে এই বই থেকে।
‘মানবতাবাদী’ সাহিত্যের বিপক্ষে বলে এই বইকে একটা শেপে রাখার, দেখানোর মানে দেখি না। এটা কি মার্কেটিংয়ের টুল? একটা ধাক্কা দেওয়া পাঠককে? ধাক্কা দিয়ে কি আগ্রহী করা যায় পাঠককে পাঠে? কেন এটা বলছেন মাসরুর আরেফিন? ২৯৬ পৃষ্ঠার এই বইয়ে প্রবেশের জন্য এই ধাক্কাটা আমার প্রয়োজন নেই। বইয়ের নাম ‘মাসরুর আরেফিনের সাক্ষাৎকার’ই যথেষ্ট ছিল।
সাক্ষাৎকারের ‘র’ ফ্লেবার আপনি এখানে পাবেন না। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সম্পাদনা করে এই বইকে এমন একটা মার্জিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে বইটাকে সাক্ষাৎকারের বই মনে হয় না বা এরকম সাক্ষাৎকার পড়তে আমরা অভ্যস্তও নই, এ দেশে এমন বইয়ের উদাহরণও কম। বইয়ের প্রথম পর্বে সাক্ষাৎকার গ্রহীতার ভূমিকা খালি চোখে নিরালম্ব মনে হয়। মনে হয় মাসরুর আরেফিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে বলছেন, নিজের এতদিনের কংক্রিট জার্নির রাস্তা নিজে পরখ করে দেখছেন, নিজের ভাবনায় শান দিচ্ছেন, নিজের অবস্থানটা একটা সার্কেলে এঁটে দিচ্ছেন কিংবা নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন। আবার দ্বিতীয় পর্বে ইকতিজা আহসানকে জেগে উঠতে দেখি। সেখানে তার ভূমিকা একদম পাল্টে যায়। দ্বিতীয় পর্বে মনে হয় মাসরুর আরেফিন আয়নার সামনে কথা বলা ছেড়ে পৃথিবীতে নেমে এসে হাঁটছেন ইকতিজা আহসানের সঙ্গে আর ইকতিজা আহসানও একটা উপায় পেয়ে গিয়েছেন মাসরুর আরেফিনের ভয়াবহ কথার ফ্লোকে কিছুটা দিকে রাখার। নিছক সাক্ষাৎকারের বই না হয়ে বইটা হয়ে উঠেছে রেফারেন্স বুক, বিশ্বসাহিত্য নিয়ে, বাংলা সাহিত্যের বিশ্বমানের লেখা নিয়ে জানতে চাওয়া পাঠকদের জন্য একরকম টেক্সটবুক, মাসরুর আরেফিনের লেখক ও পাঠক সত্তার আত্মজীবনী। এই বইটার প্ল্যানিং প্রায় ৩ বছর আগে হলেও মাসরুর আরেফিনের এমন এক বইয়ের অপেক্ষায় আমি তারও আগে থেকে।
বইটা আমার জন্যই। ২০১৯ এ মাসরুর আরেফিনের ‘আগস্ট আবছায়া’ পাঠের পর আমি খুব আগ্রহী হয়ে উঠি মাসরুর আরেফিনের সাহিত্য যাত্রা নিয়ে জানতে। শুধু তার লেখা নয় তার পাঠ জীবন নিয়েও জানতে, তার ফিলোসফি জানতে।
ইকতিজা আহসান নিজেও মাসরুর আরেফিনের লেখার মুগ্ধ পাঠক বলেই ইচ্ছাকৃতভাবে সাক্ষাৎকারে নিজের সাক্ষাৎকার গ্রহীতার অবস্থান থেকে অনেকটা গুটিয়ে এনে প্রথম পর্বে নিজেকে অলমোস্ট শ্রোতার আসনে বসিয়ে ফুল স্পেস দিয়েছেন মাসরুর আরেফিনকে। এই স্পেসটা ছিল বলেই এই বইয়ে মন খুলে মাসরুর আরেফিন তার কথাগুলো বলে গেছেন। সাক্ষাৎকার শেষে ওয়েল ডিজাইন করা গেছে বইটির এবং আমার জন্য ঠিক এই প্রসেসে বের হওয়া মাসরুর আরেফিনের কথাগুলো শোনার প্রয়োজন ছিল দীর্ঘদিন ধরেই।
এই বইতে যাওয়ার আগে মাসরুর আরেফিনের সাহিত্য যাত্রার এক সামারি করা যাক। মাসরুর আরেফিনের জন্ম ১৯৬৯ সালের ৯ অক্টোবর। প্রথম বই; যেটা কবিতার বই, ‘ঈশ্বরদী মেয়র ও মিউলের গল্প’ প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে। সেই একই দিনে একই সন্ধ্যায় মাসরুর আরেফিনের প্রিয় বন্ধু; যার সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল হয়নি কোনোদিন সেই ব্রাত্য রাইসুরও প্রথম কবিতার বই ‘আকাশে কালিদাসের লগে মেগ দেখতেছি বের হয়।
একজন লেখকের প্রথম যখন বই প্রকাশিত হয় তখনই কি কেবল তিনি লেখক হন? মোটেও না। একজন লেখক প্রথমে হন পাঠক। পাঠ করতে করতেই একসময় লেখক সত্তার বীজ আসে ভেতরে। সেটা ধীরে ধীরে লিখতে লিখতে, পড়তে পড়তেই বাড়তে থাকে। এই বীজটা প্রথম যেদিন আসে সেদিন থেকেই তিনি লেখক। সম্ভবত বরিশাল ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময়ই মাসরুর আরেফিনের ভেতর এই বীজ আসে। সবার সামনে লেখক হিসেবে প্রকাশিত হন কবিতার বই প্রকাশের মাধ্যমে ২০০১ সালে।
এরপর ২০১৩ সালে তার প্রথম অনুবাদ ‘ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র’ প্রকাশিত হয়। এর দুই বছর পর প্রকাশিত হয় তার অনুবাদে হোমারের ‘ইলিয়াড’। এরপর ২০১৯ সালে এক বিস্ফোরণ ঘটান বাংলা সাহিত্যে তার প্রথম উপন্যাস ‘আগস্ট আবছায়া’ দিয়ে। এর পরের বছর ২০২০ সালে প্রকাশ করেন তার দ্বিতীর উপন্যাস ‘আলথুসার’ ও দ্বিতীয় কবিতার বই ‘পৃথিবী এলোমেলো সকালবেলায়’। তার পরের বছর ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় মাসরুর আরেফিনের তৃতীয় উপন্যাস ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ ও তৃতীয় কবিতার বই ‘পরিস্থিতি যেহেতু আগুন হয়ে আছে।’ এর পরের বছর ২০২২ এ প্রকাশিত হয় তার চতুর্থ উপন্যাস ‘আড়িয়াল খাঁ’। এই বইমেলায় (২০২৩) প্রকাশিত হলো এই সাক্ষাৎকার গ্রন্থ।
৪টি উপন্যাস, ৩টি কবিতার বই, দুটি ঢাউস অনুবাদ গ্রন্থ আর এই সাক্ষাৎকার গ্রন্থ মিলে অবাক কি লাগে না যে, ২০০১ এ প্রথম কবিতার বই প্রকাশের পর তার মৌলিক গ্রন্থ নিয়ে ১৮ বছর পর কেন এলেন একজন মাসরুর আরেফিন?
এই ১৮ বছর মাসরুর আরেফিন নিবিড় প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছেন। তিনি কখনো একদিনের জন্য সরে আসেননি তার প্রবল পাঠ ও নিয়ম করে বসে লেখালেখি থেকে। আপনাদের অনেকের কাছে মাসরুর আরেফিনের ব্যাংক এমডি পরিচয় মুখ্য মনে হলেও আমার কাছে তিনি সাধক, সাহিত্যের সাধক। তিনি চাইলেই প্রতি বছর ১টা করে ১৮ বছরে ১৮টি বই বের করতে পারতেন। করেননি। তিনি সময় নিয়েছেন নিজেকে শাণিত করতে, পাঠে নিমগ্ন থেকেছেন জীবনের অপার প্রয়োজনে, নিজেকে বৈশ্বিক পরিসরে বিশ্বমানে প্রকাশ করতে।
এই দীর্ঘ বিরতির পর তিনি যখন ‘আগস্ট আবছায়া’ উপন্যাস নিয়ে প্রকাশিত হলেন ঘনবদ্ধ হয়ে, নিশ্চিত হয়ে, তখন যারা সাহিত্যের এই ফিল্ডে বিচরণ করছেন তাদের অনেকে হঠাৎ করে বাংলা সাহিত্যের বড় একটা অংশে নিজেকে বসিয়ে দেওয়া মাসরুর আরেফিনকে নিতে নারাজ। তারা বিবিধ দোষ পেতে থাকেন মাসরুর আরেফিনে। বিনয় পান না, এলিট শ্রেণির, ব্যাংক এমডি ইত্যাদি ইত্যাদি। তা পেতে থাকুন তারা, কিন্তু ২০১৯ সালকে আমার অস্বীকার করার জো নেই কারণ এই বছর দীর্ঘ সাধনার পর সাড়ে চার বছর ধরে লেখা ‘আগস্ট আবছায়া’ বাংলা সাহিত্যে অবতরণ করে। এক ইলিয়াডের অনুবাদ বাদে মাসরুর আরেফিনের সব লেখাই আমার পড়া। সব সাক্ষাৎকারও দেখা (ইউটিউবে যেগুলো পাওয়া যায়)। মাসরুর আরেফিনের শুধু লেখা নয়, তার এই সাহিত্যের এই টোটাল যাত্রাপথ আমার আগ্রহের বিষয়। আমার ধারণা ছিল একজন ব্যাংকার ভালো সাহিত্যিক হতে পারেন না যেহেতু তাকে স্ট্রেসড, স্ট্রাকচার্ড একটা জীবনের ভেতর গেঁথে থাকতে হয়। সেখানে সময় খুব হিসেবের, বেহিসেবী হওয়ার সুযোগ নগণ্য। এইদিক দিয়ে সাহিত্যে মাসরুর আরেফিনের সবল উপস্থিতি আমার ধারণা পাল্টে দিয়েছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্য, শহীদুল জহিরের সাহিত্য মাসরুর আরেফিনকে অ্যাট্রাক্ট করে না জেনেও শওকত আলীর ‘পিঙ্গল আকাশ’ আর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ কিংবা মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন এর কোনো উল্লেখ না দেখাটা রীতিমতো কষ্টের ছিল। বিশেষ করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে যেভাবে খারিজ করেছেন তাতে ছুরি দিয়ে কেউ আমার হৃদয়ে আঘাত দিয়ে গিয়েছে যেন। এই বইতে ইন্টারেস্টিংলি দেখতে পাওয়া যায় লেখক তার নিজের বই নিয়ে বলতে যতটা না উৎসাহিত তার চেয়ে ঢের উৎসাহী বলতে তার পছন্দের দেশি ও বিদেশি সাহিত্যিকদের নিয়ে। এতটা ইনভলভড আর অ্যাটাচড হয়ে বলা যে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়, ঘোরে পড়ে যেতে হয়। আমি বইটা পড়ার সময় আমার সুবিধার জন্য কোট করছিলাম বই আর লেখকদের নাম। বইয়ের বেলায় ৯৫টা নাম লিখে থেমে যাই আর লেখকদের নাম ১০০-এর মতো লিখে দমে যাই।
যে সব লেখক ও যেসব বই লেখকের পছন্দের তা নিয়ে এমনভাবে বলে গেছেন যে, এমনভাবে উসকে দিয়েছেন আপনি না পড়ে থাকলে ব্যর্থ ভাববেন নিজেকে, লো ফিল করবেন। আবার আপনি চাইলে এই বইয়ের মণি-মুক্তো নিয়ে আাগামী কয়েক বছরের পাঠের একটা দিকরেখা তৈরি করে ফেলতে পারেন যদি বৈশ্বিক লেখক হতে চান, যদি বৈশ্বিক নিবিড় পাঠক হতে চান বা এই যে আমাদের চোখের সামনের পৃথিবী তার ঢাকনাটা খুলে পৃথিবীর ভয়ংকর সত্যটা জানতে চান।
এই বই আমার জন্য এক দুর্দান্ত সংগ্রহ, মাঝে মাঝে উল্টে পাল্টে দেখার জন্যও এবং যেকোনো পাঠকের জন্যও তাই হবে।
ধূর্ত ও ধীমান সমালোচকও মাঝে মাঝে মূর্খ ও মুরতাদের মতো এই কথা বলে বসেন যে, সাহিত্যের জনপ্রিয়তা মানেই হলো সাহিত্যের সীমানা বাড়ানো। উল্টোভাবে কথাটার মানে দাঁড়ায়, জনপ্রিয় সাহিত্য জনগণকে সাহিত্যের দিকে টানে।
আসলে কি তাই ঘটে? ফিরিস্তি নেওয়া যাক। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র জনপ্রিয়তা বাংলার জনগণকে নিশ্চয়ই চলচ্চিত্র-দেওয়ানা করে তুলেছিল নব্বইয়ের দশকে। এর ফলস্বরূপ তারা ক্রমান্বয়ে উচ্চতর বোদ্ধায় পরিণত হয়ে সিনেমাহলে যাওয়া বন্ধ করে দিল। ঘরে বসে দেখতে শুরু করল তারকাভস্কি বা কিসলোভস্কি। ব্যাপারটা কি এমন?
হুমায়ূন আহমেদের গগনচুম্বী মগনগানে উন্মত্ত পাঠককুল কি তার মৃত্যুর পর দলে দলে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা কমলকুমার মজুমদার কিংবা নিদেনপক্ষে শহীদুল জহির আবিষ্কারে আকুল হয়ে উঠেছিল? নাকি তারা খুঁজে নিয়েছিল আনিসুল হক বা সাদাত হোসাইনদের?
হেলাল হাফিজের ভিউকার্ড-কবিতা-ক্রেতারা কিংবা পূর্ণেন্দু পত্রীর ক্যাসেট-কাব্য-শ্রোতারা কখনো কি উৎপল কুমার বসু বা মান্নান সৈয়দকে বুঝতে চেষ্টা করেছিল? নাকি তারা মজে গিয়েছিল অশ্রু ও চিঠি ফেরি করা কবি মহাদেব সাহাতে?
প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখব এইসব জনপ্রিয়তায় শিল্পের প্রসার ঘটে না। যা ঘটে তা হলো, অভুক্ত ভোক্তার সুপ্ত বাসনার উদ্যাপন। এই ভোক্তা ভাত খেতে চায়। গামলা-ভর্তি ভাত। মুকুন্দরাম যেমন বলেছেন: শয়ন কুৎসিত এর, ভোজন বিটকাল। ছোট গ্রাসে তোলে যেন তেয়াটিয়া তাল।
এভাবেই আম-পাঠক তৈরি করে রুচির সুচির শর্বরী।
তা দেখে আমরা কেন লাজে মরি!
২
কবিতা কীভাবে জনপ্রিয় হয়? কেন হয়?
প্রশ্নটা এ কারণে ওঠে যে, শিল্পের যে মাধ্যমগুলো ভাষা-নির্ভর, আরও ভেঙে বললে শব্দ-নির্ভর, কবিতা তার মধ্যে সবচেয়ে সূক্ষ্ম, সবচেয়ে এলিট সেই অর্থে। এই সূক্ষ্মতা কীভাবে জনচিত্তে উদ্যাপিত হতে পারে? তবে সেই উচ্চবোধ জনগোষ্ঠী কোন গ্রহে কোন কালে বাস করে, তা আমাদের জানতে ইচ্ছে হয় বৈকি।
পৃথিবীর জননন্দিত কবিদের কথা স্মরণ করলেই আমরা প্রায় সমস্বরে উচ্চারণ করিমায়াকোভস্কি, নাজিম হিকমত, পাবলো নেরুদা, মাহমুদ দারবিশ এবং আমাদের নজরুল, সুকান্ত প্রমুখের নাম।
মনে রাখা দরকার, এদের জনপ্রিয়তা পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিজমের সঙ্গে জড়িত। সময়ের বিশেষ প্রয়োজন ও প্ররোচনায় এদের আর্টওয়ার্ক হয়ে ওঠে পারপাসিভউদ্দেশ্য নিহত শিল্পপ্রয়াস। যে শিল্পপ্রয়াসে শিল্পী সর্বদাই ভোক্তার চাহিদা পূরণ করে চলেন। অর্থাৎ এ ধরনের কবিতায় মূলত পাঠকের জ্বালামুখে গ্যাস সরবরাহ করেন কবি। পাঠকের জ্বলুনি থেমে গেলে সেই গ্যাস আর জ্বলে না, বোঁটকা গন্ধ ছড়ায় মাত্র। এবং তারপর অপেক্ষা করতে থাকে আরও একটি ফুলকি ফোটা মুহূর্তের। যদি আবার জ্বলে ওঠা যায়।
জনপ্রিয়তার রকমফেরও আছে। মুগ্ধবোধ জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয়তা, আর উচ্চবোধ জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয়তা এক জিনিস নয়। রুশ জনগোষ্ঠীর কাছে আসতে তলস্তয়কে আর্টের সঙ্গে যে বোঝাপড়া করতে হয়, বাংলার জনগোষ্ঠীর কাছে যেতে সুনীল-শীর্ষেন্দুর বোঝাপড়াটা হয় ভিন্নতর। বলা ভালো, নি¤œতর। শিল্পীমন ও জনচিত্তের সংযোগ কীভাবে ঘটবে এ নিয়ে গ্যেটেরও ছিল টনটনে টেনশন। ফাউস্টের উপক্রমণিকাতেই তা পরিষ্কার।
আমরা যেসব ক্লাসিক বা সিরিয়াস লিটারেচারের কথা বলি, সেসবও জনপ্রিয়। কিন্তু তা জনপ্রিয় হয়েছে দীর্ঘকালপরিসরে, জীবিত ও মৃত পাঠকের কলরবে। রাতারাতি হাতাহাতি করে মাত করার বিষয় ছিল না সেসব।
তাৎক্ষণিকভাবে, কবির জীবৎকালে কবিতা জনপ্রিয় হতে হলে ঘটতে হবে দুইটি ঘটনা। হয় কবিতাকে স্থূল হতে হবে, নয় পাঠককে সূক্ষ্ম হতে হবে। মানে দুপক্ষকে এক বিন্দুতে এসে মিলতে হবে।
৩
অতি-সম্প্রতি দুচার জন জীবিত কবির জনপ্রিয়তা নিয়ে খানিকটা বিস্ময় ও বিতণ্ডা শুরু হয়েছে। ব্যাপারটা ফয়সালা করার জন্য চার জন কবিকে নিয়ে সামান্য আলাপের সূচিমুখ তৈরি করা যাক। এই চার জন কবি হলেনহেলাল হাফিজ, মারজুক রাসেল, ইমতিয়াজ মাহমুদ ও হাসান রোবায়েত।
প্রথমত আমরা বুঝতে চেষ্টা করব এদের জনপ্রিয়তা অর্জনের তরিকাটা কী। ওই তরিকার মধ্যেই লুকানো থাকবে কাব্যশৈলীর তর্জা। ফলে কবিতার মূল্যনিরূপণে আমরা বেশিদূর এগোব না আপাতত।
‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’হেলাল হাফিজের এই পঙ্ক্তি একদা দেয়ালে দেয়ালে উৎকীর্ণ ছিল। যে সময়ের কথা বলছি, সেসময় দেয়াল নিজেই এমন একটা পঙ্ক্তির জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ছিল। এই পঙ্ক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেছিল পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা। যারা মূলত কবি-সাহিত্যিক বা শিল্পী নন। কিন্তু প্রায়-কবি, ঊনকবি অথবা কবি-ভাবাপন্ন ক্যাটাগরিতে পড়বেন হয়তো। তাদের দ্বারা এইসব পঙ্ক্তি চারদিকে প্রচারিত ও উদ্যাপিত হতে দেখে উঠতি কবিরা রীতিমতো উ™£ান্ত হয়েছেন এবং প্রীতিগতভাবে প্রলুব্ধ হয়েছেন অমন পঙ্ক্তি রচনার জন্য। কিছুটা দূর থেকে, আড়চোখে এইসব দেখেশুনে বয়োজ্যেষ্ঠ কবিরা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন, কখনোবা ঈর্ষায় পুড়ে মরেছেন সঙ্গোপনে।
এই আলোচনার সূত্রপাতে যে সূত্রটি বেরিয়ে আসে তা হলো, সমকালে কবিতা জনপ্রিয় হয় মূলত অ-কবিদের দ্বারা। তারপর তাতে যুক্ত হন দ্বিধান্বিত কবিসমাজ।
মারজুক রাসেলের ক্ষেত্রেও তাই। ভিজুয়াল-মিডিয়ার দ্বারা অর্জিত তারকাখ্যাতি বিজ্ঞাপিত হয়েছে কবিতা-বিক্রির জগতে। পরিমণি বা হিরো আলমের কবিতার বই আরও বেশি বিক্রি হবে, এমনটা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। প্রশ্ন উঠতে পারে, যা কিছু লিখলেই কবিতা হয় নাকি?
প্রশ্নটা কবিদের কাছে করলে একরকম উত্তর পাওয়া যাবে, জনগণের কাছে করলে ভিন্নরকম। এ দুয়ের মাঝে যে বিস্তর ফাঁক এবং কবিতার সংজ্ঞা-নিরূপণে যে ঐতিহাসিক ফোকর বিদ্যমান, তাতে যে কোনো কিছুকেই কবিতা বলে চালানো সম্ভব। অন্তত গণতান্ত্রিক গণপরিসরে। এখানে প্রয়োজন শুধু একটা লেখাকে কবিতা বলে ক্লেইম করা।
যে কারণে ম্যাক্সিম বা প্রবচনগুচ্ছকে কবিতা বলে ভ্রম তৈরি করা সম্ভব। কিংবা বোর্হেসের প্যারাবলগুলোকে। এমনকি ঈশপের গল্পগুচ্ছকেও। ফেসবুক হচ্ছে তেমনই একটা ‘গণতান্ত্রিক গণপরিসর’। ইমতিয়াজ মাহমুদের কেসস্টাডিতে এমনটাই আমরা দেখতে পাব।
ইভ বনফোয়া একটা কথা বলেছিলেন, কবিতার মধ্যে কবি তার বাসনা ব্যক্ত করেন, পাঠক তার বাসনা দিয়ে সেখানে যুক্ত হন। এই দুই বাসনার মিলন হলে সেখানে আর্টের প্রশ্ন গৌণ হয়ে পড়ে। কিন্তু বাসনার সংঘাত যখন লাগে, তখন আর্টের লড়াইয়ে কবির টিকে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। বস্তুত, সেই টিকে থাকাটা হয় টেকসই।
হাসান রোবায়েতের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে এই বাসনার সম্মিলন। যে বিপুল মাদ্রাসা-আগত বুদ্ধিবৃত্তিমুখর তরুণ তুর্কি ছড়িয়ে আছে চারপাশে, তাদেরই কাছে তার কবিতা ইদানীং ব্যাপক সমাদৃত। তাদেরই দ্বারা সম্প্রচারিত। তার কবিতার কনটেন্ট তাদের কান ধরে টেনে আনছে বলা যায়। এখানে শিল্পের তর্জনী তোলা বৃথা।
আমার বক্তব্য এটা নয় যে, এই চার জন কবি হিসেবে দুর্বল। বরং অনেক ক্ষেত্রেই তারা সমকালের অন্য কবিদের তুলনায় তীক্ষè। কিন্তু যে ধরনের রসদ-সরবরাহ তাদের জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে, তা রসে টইটম্বুর যতটা, ততটা রসোত্তীর্ণ নয়।
অনেকটা উন্নয়ন-নাট্যের মতো। তৃতীয় বিশ্বের দেশে উন্নয়নের গল্প মানেই যেমন দুর্নীতির প্রকটন ও স্বচ্ছতার অনটন। কবিতার জনপ্রিয়তা তেমনি সন্দেহের নীড়ে নিঃশব্দ চিত্তের উচাটন। অন্তত আমার কাছে।
দ্বিতীয় পর্বে প্রীতিলতাকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
ভারত উপমহাদেশের অগ্নিযুগের বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা থেকেই অনেক নারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। যেমন ছিলেন অগ্নিযুগের প্রথম পর্বে স্বর্ণকুমারী দেবী, সরলা দেবী, আশালতা সেন, সরোজিনী নাইডু, ননী বালা, দুকড়ি বালা, পরবর্তীকালে ইন্দুমতী দেবী, (অনন্ত সিংহের দিদি) লীলা রায়, পটিয়া ধলঘাটের সাবিত্রী দেবী প্রমুখ দেশপ্রেমিক নারী। তারই ধারাবাহিকতায় সেই অগ্নিযুগের অগ্নিকন্যা, বীরকন্যা প্রীতিলতার আবির্ভাব। ‘বাংলার প্রথম নারী শহীদ’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (৫ মে ১৯১১-২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২)।
শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রেখেছেন প্রীতিলতা; চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা তখন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন শেষে সক্রিয় হচ্ছিলেন। এর মধ্যে ১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাসের মোড়ে সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করে। এ ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর গোপন বৈঠক চলাকালীন অবস্থায় বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধের পর গ্রেপ্তার হন মাস্টারদা সূর্যসেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রেলওয়ে ডাকাতি মামলা।
১৯২৪ সালে বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স নামে এক জরুরি আইনে বিপ্লবীদের বিনাবিচারে আটক করা শুরু। এই আইনে চট্টগ্রামের বিপ্লবী দলের অনেক নেতা ও সদস্য আটক হয়। সরকার বিপ্লবীদের প্রকাশনাসমূহ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। বিপ্লবী দলের কর্মী প্রীতিলতার নিকটাত্মীয় পূর্ণেন্দু দস্তিদার সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত কিছু গোপন বই প্রীতিলতার কাছে রাখেন। লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি পড়েন ‘দেশের কথা’, ‘বাঘা যতীন’, ‘ক্ষুদিরাম’, ‘কানাইলাল’।
প্রীতিলতা যখন ঢাকায় পড়তে যান তখন ‘শ্রীসংঘ’ নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন ছিল। শ্রীসংঘের ‘দীপালী সঙ্ঘ’ নামে একটি মহিলা শাখাও ছিল। লীলা নাগ (বিয়ের পর লীলা রায়)-এর নেতৃত্বে এই সংগঠনটি নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করত। গোপনে তারা মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার কাজও করত। প্রীতিলতা লিখেছিলেন ‘আইএ পড়ার জন্য ঢাকায় দু’বছর থাকার সময় আমি নিজেকে মহান মাস্টারদার একজন উপযুক্ত কমরেড হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছি।’
১৯৩০ সালের ১৯ এপ্রিল আইএ পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন প্রীতিলতা। আগের দিন রাতেই চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের দীর্ঘ পরিকল্পিত আক্রমণে ধ্বংস হয় অস্ত্রাগার, পুলিশ লাইনস, টেলিফোন অফিস এবং রেললাইন। এটি ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ’ নামে পরিচয় লাভ করে। চট্টগ্রামের মাটিতে বিপ্লবী দলের এই উত্থান সমগ্র বাংলার ছাত্রসমাজকে উদ্দীপ্ত করে। প্রীতিলতা লিখেছিলেন ‘পরীক্ষার পর ঐ বছরেরই ১৯ এপ্রিল সকালে বাড়ি ফিরে আমি আগের রাতে চট্টগ্রামের বীর যোদ্ধাদের মহান কার্যকলাপের সংবাদ পাই। ঐসব বীরের জন্য আমার হৃদয় গভীর শ্রদ্ধায় আপ্লুত হলো। কিন্তু ঐ বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে না পেরে এবং নাম শোনার পর থেকেই যে মাস্টারদাকে গভীর শ্রদ্ধা করেছি তাকে একটু দেখতে না পেয়ে আমি বেদনাহত হলাম।’
১৯৩০ সালে প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজে পড়তে আসেন। যুব বিদ্রোহের পর তিনি মধ্য কলকাতায় বিপ্লবী মনোরঞ্জন রায়ের পিসির (গুণু পিসি) বাসায় আশ্রয় নেন। দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। প্রীতিলতা ঐ বাসায় গিয়ে দাদার সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলে মনোরঞ্জন রায় (ক্যাবলা’দা নামে পরিচিত) নারী বিপ্লবীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। যুব বিদ্রোহের পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে বন্দি নেতাদের সঙ্গে আত্মগোপনে থাকা সূর্য সেনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতো। তারা তখন আরও হামলার পরিকল্পনা করছিল। শহর আর গ্রামের যুবকরা পুলিশের চোখে সবচেয়ে সন্দেহভাজন। এ অবস্থায় সূর্য সেন নারী বিপ্লবীদের এসব কাজের দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কারণ গোয়েন্দা বিভাগ তখনো মেয়েদের সন্দেহ করত না। মাস্টারদার অনুমতি পাওয়ার পর নারীদের বিপ্লবের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা হয়।
প্রীতিলতার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনাতে মাস্টারদা লিখেছেন ‘তার চোখেমুখে একটা আনন্দের আভাস দেখলাম। এতদূর পথ হেঁটে এসেছে, তার জন্য তার চেহারায় ক্লান্তির কোনো চিহ্নই লক্ষ করলাম না। যে আনন্দের আভা তার চোখেমুখে দেখলাম, তার মধ্যে আতিশয্য নেই, ঋরপশষবহবংং নেই, ঝরহপবৎরঃু শ্রদ্ধার ভাব তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। একজন উচ্চশিক্ষিত পঁষঃঁৎবফ ষধফু একটি পর্ণকুটিরের মধ্যে আমার সামনে এসে আমাকে প্রণাম করে উঠে বিনীতভাবে আমার দিকে দাঁড়িয়ে রইল, মাথায় হাত দিয়ে নীরবে তাকে আশীর্ব্বাদ করলাম...।’ মাস্টারদা আরও লিখেছেন ‘তার ধপঃরড়হ করার আগ্রহ সে পরিষ্কারভাবেই জানাল। বসে বসে যে মেয়েদের ড়ৎমধহরংব করা, ড়ৎমধহরংধঃরড়হ চালান প্রভৃতি কাজের দিকে তার প্রবৃত্তি নেই, ইচ্ছাও নেই বলে।’ তিন দিন ধরে ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে অবস্থানকালে আগ্নেয়াস্ত্র ঃৎরমমবৎরহম এবং ঃধৎমবঃরহম-এর ওপর প্রীতিলতা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রামে সূর্য সেনের কাছে বোমা পৌঁছে দিয়ে কলকাতা ফেরত আসার একদিন পরেই ২৪ নভেম্বর মনোরঞ্জন রায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৩০ সালের ২ ডিসেম্বর চাঁদপুর রেলস্টেশনে তারা রিভলবার নিয়ে আক্রমণ চালান কিন্তু ভুল করে তারা মি. ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এসডিও তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করেন। সেদিনেই পুলিশ বোমা আর রিভলবারসহ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে। এই বোমাগু্েলাই কলকাতা থেকে মনোরঞ্জন রায় চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। তারিণী মুখার্জি হত্যা মামলার রায়ে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মৃত্যুদ- এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসন দ- দেওয়া হয়। ব্যয়বহুল বলে আলিপুর জেলের ফাঁসির সেলে মৃত্যু গ্রহণের প্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে আত্মীয়দের মধ্যে কেউ দেখা করতে আসা সম্ভব ছিল না। এ খবর জানার পর মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতার কাছে লেখা এক চিঠিতে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করতে অনুরোধ করেন। মনোরঞ্জন রায়ের মা হিজলী জেলে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে গোপনে তিনি প্রীতিলতাকে লেখা চিঠিটা তার হাতে দেন। প্রীতিলতা মৃত্যুপ্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করার জন্য আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে ‘অমিতা দাস’ ছদ্মনামে ‘কাজিন’ পরিচয় দিয়ে দরখাস্ত করেন। জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে তিনি প্রায় চল্লিশবার রামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেন। ১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসি হয়। এই ঘটনা প্রীতিলতার জীবনে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। তার ভাষায় ‘রামকৃষ্ণদার ফাঁসির পর বিপ্লবী কর্মকা-ে সরাসরি যুক্ত হওয়ার আকাক্সক্ষা আমার অনেক বেড়ে গেল।’
রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির পর প্রায় নয় মাসের মতো প্রীতিলতাকে কলকাতায় থেকে যেতে হয় বিএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে বাড়ি এসে দেখেন তার পিতার চাকরি নেই। সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য শিক্ষকতাকে তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে বিশিষ্ট দানশীল ব্যক্তিত্ব অপর্ণাচরণ দে’র সহযোগিতায় তখন নন্দনকাননে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (বর্তমানে অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন।
১৯৩২ সালে বিএ পরীক্ষার পর বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহের কথা তিনি কল্পনা দত্তকে বলেন। মাস্টারদা ঐ সাক্ষাতের সময় কল্পনা দত্তের কাছ থেকে প্রীতিলতা সম্পর্কিত খোঁজখবর জানতে চান। এরমধ্যে একবার মাস্টারদার সংগঠন চালানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু অর্থের প্রয়োজন দেখা দিল। প্রীতিলতার বাবা সংসারের খরচ চালানোর জন্য মাসিক বেতনের পুরো টাকাটা প্রীতিলতার হাতে দিতেন। তিনি ঐ টাকা সংগঠনের কাজে দিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু তা নিতে কল্পনা দত্ত আপত্তি করায় প্রীতিলতা কেঁদে বলেন ‘গরিব দেখে আমাদের টাকা নিতে চান না। আমি যে নিষ্ঠাবান কর্মী হতে পারব তার প্রমাণ করার সুযোগও কি আমায় দেবেন না?’ প্রীতিলতার প্রবল আগ্রহের কারণেই কল্পনা দত্ত একদিন রাতে গ্রামের এক ছোট্ট কুটিরে তার সঙ্গে নির্মল সেনের পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৩২ সালের মে মাসের গোড়ার দিকে ঐ সাক্ষাতে নির্মল সেন প্রীতিলতাকে পরিবারের প্রতি কেমন টান আছে তা জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বলেন ‘টান আছে। কিন্তু ফঁঃু ঃড় ভধসরষু-কে ফঁঃু ঃড় পড়ঁহঃৎু-র কাছে বলি দিতে পারব।’ প্রীতিলতা সূর্য সেনের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী দলে যুক্ত হন। প্রীতিলতার কথায়... ‘মাতৃভূমির মুক্তির জন্য যেকোনো দুরূহ বা ভয়াবহ ব্যাপারে ভাইদের পাশাপাশি দাঁড়াইয়া সংগ্রাম করিতে তাহারা ইচ্ছুক ইহা প্রমাণ করিবার জন্যই আজিকার এই বিপদসঙ্কুল অভিযানের (ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ) নেতৃত্ব গ্রহণ করিতেছি।’
পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের সশস্ত্র আক্রমণে, ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পরিচিত, এই সময়ে একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ। কিন্তু গুড ফ্রাইডের কারণে সেদিনের ঐ পরিকল্পনা সফল করা যায়নি। চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে এই ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড় ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে প্রহরীদের অবস্থান ছিল। বিপ্লবীরা ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে এবং পরে ঔপনিবেশিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন। কালীকিংকর দে’র কাছে তিনি তার রিভলবারটা দিয়ে আরও পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে, কালীকিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন। গ্রেপ্তার এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
অদম্য উদ্যম আর প্রচ- সাহস বুকে ধারণ করে দেশমাতৃকা ভারতের স্বাধীনতার জন্য সেই অগ্নিযুগে কিছু মুক্তিপাগল মানুষ ‘জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে এগিয়ে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে সেদিন শামিল হয়েছিলেন বীর চট্টলার বীরকন্যা প্রীতিলতা। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয়, সেই ইতিহাসে যে সব বিপ্লবী রয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রীতিলতা অন্যতম।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের কবিদের জনপ্রিয়তা বিষয়ক কাদা ছোড়াছুড়ির এ সময়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ২২৭টি ‘হাহা’ ইমো অর্জন করেছেন। অনেকে শেয়ারও করেছেন সেই স্ট্যাটাস। তিনি লিখেছেন ‘হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে প্রচুর ভিড়। ঢাকা শহর তো বটেই, আশপাশের এলাকা থেকেও অনেকে এসেছে। সবার গায়ে কামড়ের দাগ। তারা আবার একে অন্যের দিকে তাকিয়ে গজরাচ্ছে। ডিউটি ডাক্তার অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলেন, শরীরে কামড়ের দাগ, আবার নেকড়ের মতো গজরাচ্ছেন, আপনারা কারা!
জবাব এলো, ‘না বোঝার কী আছে! আমরা কবি।’
কবি মজনু শাহ্ ইতালি থাকেন। তিনি সাহিত্যাঙ্গনে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়িতে দুটি মোক্ষম স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ কবি, এই সময়ের সবচেয়ে ভালো কবি, এভাবে বলাটাই, অতিরঞ্জন। এই যুগ, একসঙ্গে, অনেক ভালো লেখকের।
স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে, আশির দশকের কয়েকজন কবির থেকে, দুর্দান্ত কিছু বই আমরা পেয়েছি। ওটাই টার্নিং পয়েন্ট। মাসুদ খান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, জুয়েল মাজহার, কাজল শাহনেওয়াজ, শান্তনু চৌধুরী, বিষ্ণু বিশ্বাস, শোয়েব শাদাব, সাজ্জাদ শরিফ... এমন আরও কয়েকজন। যে কোনো বাখোয়াজি করার আগে, ভালো করে পড়া দরকার এনাদের বইগুলো। ৩০ বছরের বেশি ॥
সময় ধরে এই কবিরা, দুই-একজন বাদে, পুরো মাত্রায় লিখে চলেছেন, যারা এদের পড়েননি, তারা কবিতার পাঠকই নয়।’ সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা যে কারণে খারাপ শিরোনামে আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘যে কোনো সৃষ্টিকর্ম, প্রতিযোগিতা করে উৎকর্ষের দিকে যায় না। একজন স্রষ্টা, ছাড়িয়ে যেতে পারে কেবল নিজেকেই।’
অন্যদিকে, খেলা বা সমাজে আর বৃত্তিমূলক কাজে দরকার হয় প্রতিযোগিতার, নইলে আরও ভালো করার তাগিদ, আনন্দ, এমনকি, ব্যবসায়িক লক্ষ্যহারা হয়। ১০০ মিটার দৌড়ে শ্রেষ্ঠত্ব দরকার, নইলে ঐ খেলা, প্রথমত, উত্তেজনা হারায়।
আপনি কি বলতে পারবেন, গোলাপ সুন্দরী, আরণ্যক বা মহিষকুড়ার উপকথার লেখকদের মধ্যে কে ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড হলেন?
সমাজে তবু শ্রেষ্ঠ বানানোর পাঁয়তারা আছে। কারণ এসবের ভেতর দিয়ে শিল্প-ব্যবসা, মিথ/আইকন তৈরি, পুরস্কারের ধান্দাবাজি, সেই সঙ্গে শ্রেষ্ঠ-ঘোষিত শিল্পীর সমান্তরালে অন্য শিল্পীদের গৌণ করে তোলার আয়োজন খুব চতুরভাবে করে ফেলা যায়।’
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।