
তৃতীয় পর্বে ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
আমি হাসি হাসি পরবো ফাঁসি, দেখবে ভারতবাসী... একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি... মানুষের মুখে মুখে ফেরা পীতাম্বর দাসের লেখা এই গান বাঁচিয়ে রেখেছে প্রথম বাঙালি শহীদ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে (১৮৮৯-১৯০৮)।
মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে ক্ষুদিরামের জন্ম। ছয় বছর বয়সে মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর মৃত্যু এবং একই বছরে পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু মারা গেলে বড় বোন তাকে লালন-পালন করেন। এর আগে তার দুই ভাই মারা যায়, তাই ক্ষুদিরামের বড় দিদি অপরূপা দেবী তিন মুঠো খুদ (চালের ভাঙা অবশিষ্ট) দিয়ে তার এই ভাইটিকে কিনে নেন। খুদ দিয়ে তাকে কেনা হয়েছিল বলে নাম হয় ক্ষুদিরাম। গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পর তমলুকের ‘হ্যামিল্টন’ স্কুল ও তারপর ১৯০৩ সালে মেদিনীপুরের ‘কলেজিয়েট’ স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করেন ক্ষুদিরাম। পড়াশোনায় মেধাবী ক্ষুদিরাম ছিলেন দুরন্ত, দুঃসাহসী।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলন স্কুলের ছাত্র ক্ষুদিরামকে প্রভাবিত করে। ফলে পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন। আরও কয়েকজনের সঙ্গে সেখানে শরীরচর্চার পাশাপাশি নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা শুরু হয় ক্ষুদিরামের। এ সময়ে পিস্তল চালনায় তার হাতেখড়ি। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণে বোঝাই নৌকা ডোবানোর অভিযানে ক্ষুদিরাম অংশ নেন।
ক্ষুদিরামের প্রাণ ছিল দরদি। আর তার মধ্যে ছিল মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা। কারও অসুখ শুনলে ক্ষুদিরামের প্রাণ কেঁদে উঠত। জনগণের সেবাই ছিল তার ব্রত। প্রকৃতির নানা দুর্যোগে মানুষের সাহায্যের জন্য তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করে রিলিফ-ওয়ার্ক করেছেন।
স্বদেশি আন্দোলন শুরু। চারদিকে বিদেশি জিনিসের বয়কট চলছে। বিলিতি কাপড়, বিলিতি নুন লুট করার কাজে নেতারা লেগে গেছেন। চারদিকে ব্রিটিশ জাতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু। এ সময়ে ১৯০৬ সালে মেদিনীপুরে মারাঠা কেল্লায় কৃষিশিল্প প্রদর্শনী মেলা বসে। এই মেলা প্রাঙ্গণে সোনার বাংলা নামে বিপ্লবী পুস্তিকা বিলি করতে গিয়ে ক্ষুদিরাম প্রথম রাজনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ক্ষুদিরাম হঠাৎ সেই সময়ে পুলিশের বাধা পেলে পুলিশের বুকে এক প্রচণ্ড লাথি মেরে পালিয়ে যান। কেউ তাকে ধরতে পারে না। প্রায় তিন মাস পার হয়েছে, তখন তিনি ধরা পড়লেন। বিপ্লবীদের এই বই কোথা থেকে বেরিয়েছে সেই গোপন কথা জানার জন্য পুলিশ ক্ষুদিরামের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করে, কিন্তু একটি কথাও তিনি প্রকাশ করেননি, বলেননি সতীর্থদের নাম। মুখ বুজে সব সহ্য করেছেন। কোনো কথা আদায় করতে না পেরে তখন ব্রিটিশ সরকার ক্ষুদিরামকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে তার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার বিপ্লবীদের মুখে মুখে ক্ষুদিরামের প্রশংসা। ১৯০৭ সালে হাটগাছায় ডাকের থলি লুট এবং নারায়ণগড় রেলস্টেশনের কাছে বঙ্গের ছোটলাটের বিশেষ রেলগাড়িতে বোমা আক্রমণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্ষুদিরাম। একই বছরে মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সভায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যপন্থি রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
সুরেন্দ্রনাথ পরলোকগমন করলেও তার প্রেরণা রয়ে গেল বাংলার তরুণদের মধ্যে। দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে এলেন ক্ষুদিরামসহ আরও অনেকে। তারা ছিলেন অগ্নিযুগের শহীদ।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের প্রয়োজনভিত্তিক কঠোর সাজা ও দমননীতির কারণে কলকাতার প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বাঙালিদের অত্যন্ত ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। যুগান্তর বিপ্লবী দল ১৯০৮ সালে কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরামের ওপর এ দায়িত্ব পড়ে।
কর্র্তৃপক্ষ কিংসফোর্ডকে কলকাতা থেকে দূরে মোজাফ্ফরপুরে সেশন জজ হিসেবে বদলি করে দিয়েছিল। ৩০ এপ্রিল ১৯০৮, দুই যুবক স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে একটি গাছের আড়ালে অতর্কিত আক্রমণের জন্য অ্যামবুশ পাতেন। কিন্তু কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো অন্য একটি গাড়িতে ভুলবশত বোমা মারলে গাড়ির ভেতরে একজন ইংরেজ মহিলা ও তার মেয়ে মারা যান। এ ঘটনার পর ক্ষুদিরাম ওয়ানি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সব দায়িত্ব নিজে স্বীকার করেন। ব্রিটিশ পুলিশের চরম নির্যাতনের মুখেও প্রফুল্ল চাকীসহ অপর কোনো সহযোগীর পরিচয় বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করেননি। বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য অনুসারে, মোজাফ্ফরপুর কারাগারে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ক্ষুদিরামের ফাঁসি কার্যকর করধা হয়।
সব কিছু ত্যাগ স্বীকার করে অন্তত জীবন রক্ষা করা ক্ষুদিরামের পক্ষে কঠিন ছিল না। তার এই উজ্জ্বল উদাহরণে দেশের হাজারো তরুণ-তরুণী প্রেরণা লাভ করে। স্বাধীনতার বেদিতে ক্ষুদিরামের জীবনের এই উৎসর্গ উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। বাংলা কাব্যে, সাহিত্যে, সংগীতে ও ইতিহাসের পাতায় এই আত্মবলিদানের মধ্য দিয়েই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে আছেন।
নেরুদা বললেন, অচিরেই তুমি বিখ্যাত হতে চলেছ মারিও বার্গাস যোসা এবং বলে দিচ্ছি, কী কী থাকছে তোমার জন্য। তুমি যত আক্রান্ত হবে, তত বিখ্যাত হবে। প্রত্যেকটি প্রশংসার জন্য থাকবে দুই রকম ফলাফল। আমার নিজের বুক অপমান, পাষ-তা আর কুখ্যাতিতে ভরা। এসব সহ্য করা এক লোক আমি। কেউ আমাকে ছাড়েনি। চোর, বদমাশ, বিশ্বাসঘাতক, ঠগ, ব্যাভিচারী এক কথায় সবই। যদি তুমি বিখ্যাত হও এসবের মধ্য দিয়ে তোমাকে যেতে হবে। যোসা এক সাক্ষাৎকারে এ কথা উল্লেখ করেন মায়াময়ভাবে। বললেন, কেবল আমার বুক নয়, পরিচিতজনদের অপমানপূর্ণ লেখাজোখায় আমার বেশ কিছু সুটকেস ভর্তি হয়ে আছে।
মারিও বার্গাস যোসা বিশ্ব সাহিত্যের এক অনন্য নাম। কিন্তু তিনি নিঃসঙ্কোচে ঋণ স্বীকার করেছেন, বিশ্ব সাহিত্যের আরেক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক হোর্হে লুই বোর্হেসের কাছে। যোসাকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন তিনি। বোর্হেসের প্রতি তার এই মুগ্ধতা এক অন্যমাত্রায় উপনীত হয়। এ সম্পর্কে যোসা নিজেই বলেছেন ‘ইটস আ সিনফুল প্যাশন’। বোর্হেস তিনি বারবার পাঠ করেন। কোনোবারই তিনি হতাশ হন না। যোসা বলেন, প্রত্যেকবার নতুন পাঠ তাকে উদ্দীপিত ও আনন্দিত করে। যে বোর্হেস তাকে এড়িয়ে চলতেন, সেই বোর্হেসের প্রতি তার মুগ্ধতা কখনো কমেনি বরং বেড়েছে। বোর্হেস তাকে প্রতিবারই নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে দিয়েছেন। যোসার ভাষায় : পৃথিবীর যে সৌন্দর্য ও মনন তিনি তৈরি করেছেন, তা আমার নিজের সীমাবদ্ধতাকে আবিষ্কারে সাহায্য করেছে। এমনকি তার মুখ ফিরিয়ে থাকাও আমার মুগ্ধতা একবিন্দু কমায়নি। বিশ বছরের মধ্যে বোর্হেসের দুটো সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। তেত্রিশ বছর বয়সে মারিও প্রথম দেখেছিলেন বোর্হেসকে। প্যারিসে। এ সময় বোর্হেসের একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ পান, দীর্ঘ কথোপকথন। এ সঙ্গে তিনি দেখেছেন, প্যারিসে বোর্হেসের চোখ ধাঁধানো বিজয়।
বহুমাত্রিক লেখক বোর্হেস খ্যাত তার ছোটগল্পের জন্য। সাহিত্যজীবনে একাধারে কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাও লিখেছেন তিনি। অনুবাদক হিসেবেও করেছেন অসাধারণ সব কাজ। তার অনন্য সাহিত্যকর্ম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে গার্সিয়া মার্কেজ, মিশেল ফুকো এবং মারিও বার্গাস যোসার মতো পরবর্তী প্রজন্মের বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের।
হোর্হে লুইস বোর্হেসের প্রথম সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়কাল ১৯৬৩ সাল। তার ব্যক্তিগত ভা-ার থেকে লেখাটি উদ্ধার করে যোসার ওয়েবসাইটে ‘অপ্রকাশিত ও বিরল বিভাগ’-এ প্রকাশিত হয়।
সাক্ষাৎকারে বার্লিনে অনুষ্ঠিত জার্মান ও লাতিন আমেরিকান লেখকদের একটি সম্মেলনের অনুভূতি প্রকাশ করেন বোর্হেস। সম্মেলন তাকে বিষণœ ও বিস্মিত করেছিল। সেখানে তিনি দেখেছেন সাহিত্যিকরা সাহিত্যে কম, রাজনীতি নিয়ে আলাপ করছেন বেশি। ফ্রান্সে বোর্হেসের অভাবনীয় পাঠক ছিল। বেশ কয়েকটি পত্রিকা তার কাজ সম্পর্কে বিশেষ সংখ্যা করে। তার বক্তৃতা শোনার জন্য যারা সভাস্থলে প্রবেশ করতে পারেননি তাদের জন্য বাইরে সাউন্ডবক্স স্থাপন করা হয়েছিল। এটা তাকে নিজের সম্পর্কে বিস্ময়কর অনুভূতি দিয়েছে বলে যোসার কাছে বলেছেন।
যোসা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, এটি নির্জন দ্বীপে যদি পাঁচটি বই নিয়ে যেতে হয় তাহলে কী কী নেবেন? মনে হয় গিবনের ‘হিস্টরি অব ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব রোমান এম্পায়ার’ সঙ্গে নেব। মনে হয় না কোনো উপন্যাস নিয়ে যাব, বরং ইতিহাসের একটা বই নিয়ে যাব। ধরা যাক, এটা হবে দুই খন্ডের একটা সংস্করণ। এরপর আমি নিতে চাই অন্য আরেকটা বই, যেটা আমি পুরোপুরি বুঝিনি, অতএব বারবার পড়ে বোঝার জন্য নিয়ে যাব রাসেলের ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল ফিলোসফি’; বা আঁরি গোইঙ্কায়ের কোনো বই। এটাও আমার নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা। তিন খন্ড হলো। এরপর চোখ বুজে এনসাইক্লোপিডিয়ার যে কোনো একটা খন্ড। ওর মধ্যে অনেক লেখা পাওয়া যাবে, তবে সত্যিকারের এনসাইক্লোপিডিয়া নয়। কারণ সত্যিকারের এনসাইক্লোপিডিয়াগুলো পরামর্শমূলক বই, আমি বরং ১৯১০ বা ১১ সালের দিকে প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়া চাই, ব্রোখাস মেয়ারের কোনো খ- বা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার কোনো খ- অর্থাৎ এনসাইক্লোপিডিয়াগুলো তখনো পর্যন্ত ছিল পাঠ করার মতো বই। তো চারটা বই পেলাম। এরপর শেষটার ক্ষেত্রে একটা চাতুরী করা যাক, এমন একটা বই নিয়ে যাব, যেটা নিজেই একটা গ্রন্থাগার অর্থাৎ আমি বাইবেল নিয়ে যাব। এবার কবিতা প্রসঙ্গ, যেহেতু এই তালিকার মধ্যে এটা অনুপস্থিত; অতএব, এর দায়িত্ব আমি নিজের ওপর চাপিয়ে দেব। সুতরাং কবিতা পড়ার দরকার হবে না। তা ছাড়া আমার স্মৃতিভা-ার কবিতা দ্বারা এতটাই সমৃদ্ধ যে, মনে হয় কবিতার বইয়ের আর দরকার পড়বে না। আমি নিজে নানা ধরনের সাহিত্যের একটা সংকলনের মতো। যে আমি নিজের জীবনের ঘটনাবলি স্মরণ করার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য নই, সে-ই আমি অসংখ্য কবিতা একঘেয়েভাবে বলতে পারব লাতিন, স্পানঞল, ইংরেজি, প্রাচীন ইংরেজি, ফরাসি, ইতালীয়, পর্তুগিজ ভাষায়।’ এ রকম অজস্র হৃদয়গ্রাহী কথোপকথন রয়েছে আলাপ পরস্পরে। রাজু আলাউদ্দীন অসম্ভব পরিশ্রমী একজন লেখক। আমি চেষ্টা করি তার সব লেখাই মোটামুটি পড়ার জন্য। তবে বিষয়গত আগ্রহের জায়গা থেকেই রাজু আলাউদ্দীনের বইটি সংগ্রহ করা। যাদের বোর্হেস এবং যোসা সম্পর্কে আগ্রহ আছে, তারা নির্দ্বিধায় বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। পাঠক সমাবেশের সমাবেশ প্রকাশনা এটি। বইটির বিক্রয়মূল্য পাঠক সমাবেশের অন্যান্য বইয়ের মতোই বেশি।
আজকের লেখকরা যখন কে মহান আর কে কালোত্তীর্ণ, আর কে ছোট আর কে তুচ্ছ এসব বাগ-সংলাপে মত্ত সে সময় বইমেলা-২০২৩-এ প্রকাশ হলো এই অনন্য সাক্ষাৎকার গ্রন্থ। অগ্রজ লেখক সম্পর্কে একজন অনুজ লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি জানার এক অনন্য সুযোগ এই ছোট্ট বইটি। আমাদের সময়ে অশ্রাব্য আলাপে পরস্পর লেখকরা কিন্তু অনেক সময়ক্ষেপণ করেন। পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টার, এসব কথা চালাচালি যে পাঠক মনকে আহত করে, তা হয়তো তারা বুঝতে চান না। সাধারণের মনে প্রশ্ন জাগে শিল্পজনরা কি মহৎ আর আলোকময় কিছু আলাপ করতে জানে না! অনুজ লেখকরা কি অগ্রজদের ভালোবাসতে জানে না!
অচির অর্থ ক্ষণস্থায়ী। অরোরা মানে ঊষাকাল, আবার হিন্দু ও গ্রিক মতে ভোরের দেবী। বইয়ের নাম অচির অরোরা, মানে কি ক্ষণস্থায়ী ভোর! এখানে অরোরা বাহুল্য। অথচ অচির অরোরা শুনতেই ভালো লাগছে। বাহুল্যও সর্বদা বর্জনীয় নয় বলেই কি ভাবেন কবি! অচির অরোরা শব্দদ্বয় মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে প্রথম যখন বইটা চোখে পড়ে।
‘অচির অরোরা’ ছোট্ট একটা কবিতার বই, যা এই বইমেলায় ‘বাতিঘর’ প্রকাশ করেছে। আল ইমরান সিদ্দিকীর চতুর্থ কবিতার বই। তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। বইয়ের ভূমিকায় লেখা কবিতাটি কবির দেশ ছেড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্লেনে ওঠার আগমুহূর্তে লেখা! বইতে ভূমিকার এই কবিতাটিসহ ধরলে, আসলে ৩৪টি কবিতা আছে। কবি আল ইমরান সিদ্দিকীর কবিতাগুলো স্নিগ্ধ হয়ে উঠতে চায়, শান্ত একটা পরিবেশ তৈরি করে। ৩৪টি কবিতার একটি কবিতা যেটা ভূমিকায় জায়গা পেয়েছে, সেটা কেবল দেশে বসে লেখা। আসলে কি দেশে বসে? দেশ আর ভিনদেশে যাওয়ার মাঝামাঝি অন্যরকম এক অনুভূতির দেশে বসে লেখা। বাকি কবিতাগুলো প্রবাসেই লিখেছেন কবি। দেশ ছাড়ার আগে কবি লিখেছেন, ‘তোমার মুখ মনে পড়ে। একদিন তুমি এসে দাঁড়িয়েছিলে আমার কাছে, যেন পাতাশূন্য গাছের পাশে ফুলভর্তি সাইকেল, গোধূলিরঙিন দুনিয়ায়া।’ এখানে পাতাশূন্য গাছ কি কবির আগেকার কোনো এক সময়ের জীবনের সিম্বল? কখন জীবন পাতাশূন্য মনে হয়? কখন প্রিয়জনের একদিনের আগমন মনে হয় শূন্য হৃদয়ের কাছে সাইকেল ভর্তি ফুল নিয়ে আসা? কী সুন্দর হাহাকার সমেত মুহূর্ত আর ইমেজ এখানে! আবার এই ভূমিকা কবিতায় লেখা, ‘আজ তুমি আমার রাস্তায় আঁকা ক্ষয়ে যাওয়া কোনো তীর চিহ্ন।’ তীর চিহ্ন আঁকা তবে তা ক্ষয়ে যাওয়া। পথের প্রকৃত নির্দেশ যখন নাই। সম্পর্ক যখন আর সম্মোহনী নাই। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে এই ক্ষয়ে যাওয়া তীর চিহ্ন, ফুলভর্তি সাইকেল সব কেমন মন-মরা অথচ সুন্দর হয়ে থাকে যেমত গোধূলি এক নীরব বেদনায় আঁকড়ে রাখে পৃথিবী। যেন সুন্দর হয়ে ওঠে এখানে চিরন্তন। সুন্দর কিছু মুহূর্ত বই থেকে পেয়ে পাঠ শেষে বই থেকে বেরুতে গিয়ে ভাবি, ভূমিকা কবিতার পর এই বইয়ের প্রথম কবিতাটি আর শেষ কবিতাটি বাকি কবিতাগুলো থেকে যথেষ্ট আলাদা করা যায়। বইয়ের প্রথম কবিতায় প্রবাস যাপনের দুঃখবোধ নুয়ে থাকে দেশে থাকা বাবা-মাকে আবর্তন করে। আমার ধারণা, বইয়ের প্রথম কবিতাটি নিয়ে বেশ কথা হবে সামনের কবিতাপৃথিবীতে।
‘এই যে বৃদ্ধ লোকটি লম্বা দাড়ি, মাথায় হ্যাট, রংচটা জিনস, পপলিনের শার্ট রবিবার চার্চের দিকে যাচ্ছে, এই লোকটিকে আমি দেখেছি আমার দেশেও মেহেদি দেয়া দাড়ি, মলিন সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি-মসজিদের দিকে হেঁটে যাচ্ছে।’ হৃদয়ে যেন দেশে থাকার বোধে আচ্ছন্ন তখন কবি। আলাদা ধর্মের, আলাদা আচারের হলেও কবি চার্চে যাওয়া লোকটার ভেতর দেশি মানুষকেই রিলেট করেন, ধর্মাচারকে প্রাথমিক ক্রাইটেরিয়া ধরে এখানে সিমিলারিটি রোপণ করে। আদতে নিজের দেশকে খুঁজছেন কবি এখানে। ‘ওকের সুগন্ধে ভরে আছে চারপাশ; এ গোধূলি রক্তিম ওয়াইন।’ এখানে গোধূলিকে বলা হচ্ছে রক্তিম ওয়াইনের মতো। মুহূর্তটা বিবশ হতে চাওয়ার আগের মুহূর্ত। বিষণœতায়ও মাধুরী মিশিয়ে রেখেছেন কবি এখানে। ‘আমার পায়ের পেছন দিয়ে অর্থাৎ/ আমার ফেলে আসা দিন ও আমার মাঝখান দিয়ে/ এক পাতা উড়ে যায়, ধীরে।// তারপর উড়ে উড়ে সামনে এসে পড়ে;/ আমি হাতে তুলে নিই,/ আমি বসি,/ আমি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরখ করি মমতায়;/ বারবার এমনই হয়/ তোমার স্মৃতি এমনই।’
এখানে দেখি কবির ফেলে আসা চুম্বকীয় স্মৃতি মমতায় সবুজ (রঙিন) করে দেখছেন। এখন যে জীবন; তার অনেক পেছনে ফেলে আসা যে সে জীবন। বইয়ের এইখানে কিছুটা চুপ হয়ে যেতে হয়। সাদাকালো এক দৃশ্যের ভেতর নম্র হয়ে পড়তে থাকা সবুজ এক মনোরম পাতা ধীরলয়ে উড়তে দেখতে পাই। বিষণœতার সুন্দর সব ছবি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এই বইতে, যার বেশিরভাগই প্রকৃতিকে হৃদয়ে নিয়ে। শেষ কবিতাটি বাদে (যেখানে ছন্দের খেলায় নড়েচড়া ওঠা কবিতাটি ইতি টানে বইটির), ধীর একটা মেলানকলি সুর বহমান প্রায় সব কবিতাতেই। প্রবাস জীবনের দৃশ্যাবলি, নস্টালজিয়া, বিষণ্ন অনুভূতি, যা রোজকার ইরেজার দিয়ে ঘষে তোলা যাবে না, তা-ই যেন এই অচির অরোরা।
কবিতাগুলো সহজে পড়ে ফেলা যায়, স্বতঃস্ফূর্ত; দৃশ্যে সহজে নেমে পড়া যায়, আবার সেই দৃশ্য থেকে উঠেও আসা যায়। দৃশ্যগুলো দামামা বাজায় না, ডে-অফের দৃশ্য মনে হয় যখন অবসর মিলে দেখার, মাপার জীবন! এই বইতে আদতে নিজের যাপনকেই এঁকেছেন কবি আল ইমরান সিদ্দিকী কবিতার ভাঁজে ভাঁজে, এবার পাঠকের কাজ ভাঁজ খুলে ঘ্রাণ মগজে ও আত্মায় নিয়ে নেয়া।
প্রেমের কবিতা
প্রেমের কবিতা পারি না!
আমি গাই আগুন-লাগা নারী,
তারে জাপটে ধরি, বলি,
আমি গাঙে ভাসা ছেলে,
আমার সারা অঙ্গে পানি!
আমারে জড়াও তোমাতে
আর দহন করো দান,
বিনিময়ে আমি তোমার
ফেলা দেওয়া সন্তান!
মাটির খাদ্য
মানুষ একটা ফলের নাম। মাটির খাদ্য।
ঝরে পড়লে মাটির মুখে তুলে দিতে হয়।
কাউকে রান্না করে আর কাউকে কাঁচা।
বিষ
সাপের বিষ আছে।
মানুষের বিষ নাই।
সাপের কামড়ে সাপ মরে না।
মানুষের কামড়ে মানুষ মরে।
মানুষ তার শৈশবের কঙ্কাল
আমি আমার শৈশবের কঙ্কাল
অচেনা সময়ের কাঁটাতারে ঝুলে আছি
যে মাটিতে গোলাপ ফোটাতে চেয়েছিলাম
সে আমার কবর হওয়ার জন্য দম ধরে বসে আছে।
মানুষের ভূমিকা পালন
বিষয়ের ভূমিকা
নদী দাঁড়াতে পারে না। শুয়ে থাকে।
মাঝে মাঝে তার দাঁড়াতে ইচ্ছা করে
এই ইচ্ছার নাম ঢেউ।
ঢেউ খুব বড় হলে পাড় ভেঙে
নদী চলে যায় নদীর বাইরে।
বাইরে গিয়ে শুয়ে থাকতে হয়।
এইভাবে দেখা গেছে শুধু নদী না
পানির শরীর যার যার
তারা সকলেই জন্ম থেকেই শায়িত
দাঁড়াতে গিয়ে অঘটন ঘটায়।
অন্যদিকে মানুষ হাঁটতে পারে। শুতে পারে
ঘুমানোর সময় মূলত শুতে হয়
দাঁড়িয়ে বা হেঁটে মানুষ ঘুমাতে পারে না।
এই জন্য মানুষের বিছানার দরকার হয়।
নদীর বিছানা মাটি। নদীরে নদীর মতো
করে রাখে যে-পার দুইটি
তারাও মাটির তৈরি।
মাটি কিছু পানি চুষে নেয়
নিয়ে গাছগাছালিরে ফুল-ফল দেয়
নদী তাতে রাজিই থাকে।
খুব ঠা-া পড়লে নদীর বরফ হয়ে
থেমে যেতে হয়। তাই সূর্য তারে সাহায্য করে
বিনিময়ে কিছু পানি সূর্যও নিয়ে যায়
নিয়ে মেঘ বানায়।
মেঘ ঝরলে বৃষ্টি হয়
গাছগাছালির ওপর পড়ে।
ফুল-ফল ভালো হয়।
মানুষ তা খায়। পশু-পাখিও খায়
মাটি, নদী বা সূর্য কিছু খায় না
নদীতে আবার মাছ ইত্যাদি থাকে
মানুষ জাল ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরে খায়
কিন্তু মানুষের নদীর বা সূর্যের বা মাটির মতো
কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না।
কেন দেখা যায় না তা তারাই ভালো জানে।
মা
যখন আমার চতুর্দিকে
জ্বলে বিষের আগুন,
কৃষ্ণচূড়ার লালে লালে
যখন আসে ফাগুন।
তখন মায়ের মুখ,
দেয় ভরিয়ে বুক।
যখন আমি নীল-হতাশায়
শূন্য-আচ্ছাদিত,
মা আমাকে কোলের মধ্যে
ঠিক জড়িয়ে নিতো।
মা মানে তো মাতা
মাথার ওপর ছাতা।
মা মানে তো ভালোবাসার বাড়ি
মনে পড়ে মায়ের রঙিন শাড়ি।
যখন বুকে কষ্ট জমে
দুচোখ জুড়ে ঘৃণা
মা বলতেন, কাউকে কিন্তু
কিচ্ছুটি বলবি না।
মা তো আমার দেবীর মতো
নীল আকাশের পরী-
যখন ছড়া হয় না লেখা
মাকে স্মরণ করি।
ছড়া
আমরা সবাই মিথ্যা কথার রাজা
শরীর-মোটা তাজা।
আমরা সবাই ভণ্ড প্রতারক
সহজ কথায় ঠক।
বই
দামি দামি বই কিনেছি
করেছি সংগ্রহ
আর কিছু নয়, আর কিছু নয়,
বইয়ের প্রতি মোহ।
ঘরে অনেক ইঁদুরছানা
কাটুর কুটুর কুট
বইয়ের প্রতি মোহ তাদের
বই যেন বিস্কুট!
আমীরুল
আমীরুল কথা শোন, আর কত ঘুরবি
কতোদিন ডালে ডালে ঘুরে ঘুরে উড়বি?
নিজের আগুনে তুই কতো আর পুড়বি?
ধীরে ধীরে এইবার হও ধীর শান্ত
জীবনের অপচয় করে তুমি ক্লান্ত
অতিদ্রুত ক্ষয়ে যাবে কেউ সেটা জানতো?
টাকা যদি থাকে তবে আকাশেতে উড়তি
প্রতিক্ষণ প্রতিদিন করে গেলে ফূর্তি
সংসার করলে না, যেন এক মূর্তি।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্তিতে
পুরস্কার পাওয়ার পরে
বুঝতে পারি হায় রে
এর তো কোনো মূল্যই নাই
দিন চলে যায় যায় রে!
মহাকালের গর্ভে আমার
কী বা এমন মূল্য?
কেউ পড়ে না লেখা, আমার
জীবদ্দশায় ভুলল।
পুরস্কার পাওয়ার পরে
বুঝছো ভায়া বুঝছো
বুঝতে পারি আমার লেখা
তুচ্ছ অতি তুচ্ছ।
সোহেল হাসান গালিবের ‘সাহিত্যের জনপ্রিয়তা ও দরিদ্রের উন্নয়ননাট্য’ লেখাটি প্রকাশিত হয় ধ্রুপদি নবম সংখ্যায়।
‘‘এই লেখাটারই দরকার ছিল। মানে রাইসু-স্টাইলে ‘ফালতু’-টালতু না। এমন। এবং এর অনুবর্তন দরকার। মানে, আখ্যানকারদের কথা ছেড়ে দিচ্ছি। তাদের কারও-কারও জনপ্রিয়তার সুলুকসন্ধান নিষ্প্রয়োজন, সে সব তাদের লেখার সঙ্গে আমপাঠকরুচির অন্বয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। চাহিদা-জোগান, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ। কিন্তু কবিতার জনপ্রিয়তা? সেটাও, সত্তর-অবধি ওরকমই ছিল। নৈলে গুণ? হাউ ইন দ্য ওয়ার্লড? হেলাল হাফিজও তাই। মহাদেব কী অসীম কী অমুক কী তমুক... রাহমানেরও জনপ্রিয় কবিতা কোনগুলো দ্যাখেন, বা রফিক আজাদ বা আলাউদ্দিন আল আজাদ...
কিন্তু আজ যারা জনপ্রিয়, তথা মারজুক, ইমতিয়াজ বা রোবায়েত... তাদের জনপ্রিয়তা কি সত্তর শ্রেণির? মানে, শুধুই কি তাই? না, বোধ হয়। এ কেবলই রুচির অন্বয় নয়, নানা অন্য কার্যক্রমও এতে আছে, যে সব এই কালেরই অবদান। কবিরা এই কালের, এই মিডিয়াধিপত্যের কালের নানা তৎপরতায় ঠিকমতো পাল তুলতে পারলে তবেই জনপ্রিয়তার প্রশ্ন এমনকি ওঠে। না হলে কবিতা লেখে গাধার পাল, যাদেও লেখাপড়া দূর হোক, তাদের নাম জানবার ফুরসত কারও নাই আর। সকলে মিডিয়া-ব্যস্ত।”
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।