
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
পুরস্কার এক ধরনের তিরস্করণী মুকুট, এই বাংলাদেশে। সহজ কথায়, এক প্রকার জুতার মালা।
বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রায় অবধারিতভাবে বলা যায় পুরুষকারই পুরস্কারের মানদণ্ড। ‘পুরুষকার’ বলতে আমরা বোঝাতে চাইছি, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যক্তির দাপুটে অবস্থান। রাষ্ট্র ও তার এজেন্সিগুলো ব্যক্তির ওই অবস্থানকেই মূলত পুরস্কৃত করে, তার সাহিত্য বা সৃজনশীলতাকে নয়। সেই জন্য এই কালে এই রাষ্ট্রে যখন কেউ পুরস্কার পায় তখন তাকে অভিনন্দন জানানো যেতেই পারে, বিশেষ ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য। কিন্তু সাহিত্যকৃতির জন্য কস্মিনকালেও নয়।
আর তাই আমাদের অভিশংসন, ঘৃণা ও ধিক্কারের একমাত্র প্রাপক পুরস্কার-কমিটি ওরফে জুরিবোর্ড। এরাই প্রকৃতপক্ষে সাহিত্যের পরিবেশ দূষিত করে তুলছে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে। বলা ভালো, নৃশংসভাবে। কেননা তাদের মিসলিডিং বিচারকার্যে যেভাবে পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে নিম্নরুচির উদযাপনে স্বস্তি খোঁজে এবং নবীন লেখক উ™£ান্ত হয়ে নিম্নমানের সাহিত্য রচনায় ব্রতী হয় তা নৃশংসতারই শামিল। এ কথাও বলা উচিত, এসব জুরিবোর্ড সব সময়ই ভালো সাহিত্যকে আড়াল করে দাঁড়ায়। এও এক সাংস্কৃতিক হত্যাকাণ্ড বটে।
দিনের পর দিন এসব চলতে থাকলে জুরিবোর্ডের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে, এ সত্য তাদের চেয়ে ভালো কে জানে। সে কারণেই নিজেকে ন্যায্যতা দিতে মাঝে মাঝে তাকে প্রকৃত সাহিত্যিকের সন্ধানে নামতে হয়। আর তাতে আমরাও আশায় বুক বাঁধি ‘ভালোরা আলোর মুখ একদিন দেখবেই’ এই প্রত্যয়ে।
খারাপ সাহিত্য পুরস্কৃত হলে কী ঘটে সেটা নির্মোহভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। প্রথমত, অযোগ্য ব্যক্তির সামান্য তারকাখ্যাতি জোটে, বাড়ে সামাজিক পরিসর। তাতে হয়তো আমাদের চোখ টাটায়। গোপনে কারও বুক ফাটায়। সেটা ঈর্ষায় নয়, ক্ষোভে। দ্বিতীয়ত, অদীক্ষিত অর্বাচীন লেখক ওই খারাপ সাহিত্যকে আদর্শ ভেবে অগ্রসর হয় এবং নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করে। তৃতীয়ত, মেধাবী লেখক খানিকটা ডিমোরালাইজড হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে সাংস্কৃতিক অবনমন ঘটতে থাকে একটি গোষ্ঠীর, কখনোবা জাতির।
পুরস্কার-প্রদানের পাপাচার কীভাবে সংঘটিত হয়, তার একটা প্রামাণ্য দলিল হাজির করা যাক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘চিহ্ন’ পত্রিকার দশকপূর্তি সংখ্যায় খোন্দকার আশরাফ হোসেনের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল। তার একটি অংশ তুলে ধরছি :
চিহ্ন : আমাদের দশকপূর্তিতে আপনার আগমনকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু শুরুর প্রশ্নটা করতে হচ্ছে বিস্ময়ের সঙ্গে। মাত্র কয়েকদিন আগে ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ ২০০৯’ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা জানি সিলেকশন বোর্ডে আপনিও একজন সম্মানিত বিচারক ছিলেন। জানতে পারি কি আলতাফ হোসেনের ‘পাখি বলে’ কবিতাগ্রন্থে কী এমন বিশেষত্ব আপনারা পেলেন?
খো. আ. হো : দেখুন এ বিষয়ে বলতে গেলে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে। মনোনয়নের জন্য আমাদের কাছে সর্বশেষ যে ৩৬টি বই দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে এ বইটির নাম ছিল না। আমরা হরিশংকর জলদাসের একটি বই মনোনয়ন দিয়েছিলাম। কিন্তু চূড়ান্তপর্বে গিয়ে দেখি সাজ্জাদ শরিফ আমাদের হাতে এই ‘পাখি বলে’ বইটি দিয়ে বলেন, আমরা আলতাফ হোসেনের জন্য কিছু করতে চাই। আমরা তখন রাগ করে বেরিয়ে আসতে চাইলে অনুষ্ঠানটি করে যাওয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ করা হয়। আসলে এটা আমাদের বিচারকদের মনোনয়ন নয়। প্রথম আলোর মনোনয়ন।
২
বিগত বছর দুয়েক ধরে একটা তর্ক চালু আছে মাসরুর আরেফিনের ‘আগস্ট আবছায়া’ উপন্যাসকে কেন্দ্র করে। বলা ভালো, বইটির ব্লার্ব-রচয়িতা হাসান আজিজুল হককে কেন্দ্র করে। উপন্যাসটি সম্পর্কে হাসানের শংসাবচন পাঠ করে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছিলেন কতিপয় কথাসাহিত্যিক। তাদের চাপে পড়ে সেই শংসাবচন নিজের লেখা নয়, বরং অনানুষ্ঠানিক টেলিফোন-আলাপ বলে একবার ঘোষণা দেন বিচলিত আজিজুল হক। আবার একই সঙ্গে তার পূর্বের অবস্থানও ধরে রাখেন। হাসানের অবস্থা হয়েছিল এমন যে, কূল রাখি না শ্যাম রাখি। আমরা, দূরবর্তী পাঠকরা, এই রোমাঞ্চকর রহস্য পুরোপুরি ভেদ করতে পারিনি আজও। এর সত্যাসত্য নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি স্বাভাবিকভাবেই।
অতিসম্প্রতি তর্কটা আবার তুলেছেন জিগর-জ্বলা কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। তাকে এনকাউন্টার করতে মাঠে নেমেছেন তরুণ তুর্কি অথবা বাংলার বর্গী স্বকৃত নোমান। তাদের লড়াইয়ের মূল জায়গাটা হাস্যকর। একজন দাবি করছেন, শংসাবচন লেখার জন্য হাসান আজিজুল হক মাসরুরের তরফ থেকে বিশ-ত্রিশ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন। অন্যজনের দাবি, চেক নয়, অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা দেয়া হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, তারা দুজনেই দুজনকে অভিহিত করেছেন তেলবাজ হিসেবে। বিদেশ-গমন, সার্টিফিকেট-অর্জন ও পুরস্কার-গ্রহণ এসব ক্রিয়াকাণ্ডে বিভিন্ন মেশিনম্যানকে তৈলমর্দন করতে হয় বলে আমরা এতদিন শুনে এসেছি আঁড়ি পেতে। এবারে তা জানতে পারলাম সাক্ষীর জবানিতে। এ জন্য কোনো কোনো দুষ্টু পাঠক বলে থাকেন, লেখকদের মধ্যে মাঝে মাঝে স্বার্থ-সংঘাত হওয়া ভালো, আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর। ভদ্র পাঠিকা অবশ্য বলেন, লেখকদের খুব কাছে না যাওয়াই নিরাপদ।
তবে, জাকির তালুকদার ও স্বকৃত নোমানের অমøমধুর কথা-চালাচালিতে আরেকটা বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তা হলো, সাহিত্য-বিচারে হাসান আজিজুল হক ছিলেন অস্থির এবং অসৎ। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের বিচার ও বিবেচনাবোধে আস্থা রাখা সত্যিই বিপজ্জনক। এই জেঠুরাই বিভিন্ন জুরিবোর্ডে গুটিবাজি করে এসেছে। আজও করে। এরাই আলতু-ফালতু লোককে পুরস্কার দিয়ে থাকে।
এই কারণে, কে পুরস্কার পাচ্ছে তা আমাদের আলোচ্য হওয়া উচিত নয়। তাদের মানহানি করাও কোনো কাজের কথা নয়। আমাদের এখন নজর দেয়ার সময় এসেছে মেশিনম্যানদের ওপর। আই মিন, জুরিবোর্ডের ওপর। এই জেঠুদের ইমান নড়বড়ে বলেই বিচারিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুবিচার থেকে বঞ্চিত বাংলার সারস্বত সমাজ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, জুরিবোর্ডের জেঠুরা প্রায়ই থেকে যান আড়ালে। সে আড়াল কখনোবা আমরাও তৈরি করি। আমাদের ক্ষোভ, নিন্দা, সমালোচনা সব কিছু আবর্তিত হয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখককে নিয়ে ক্যারিকেচার করতে। ফলে, খুব অনায়াসে নেপথ্যের কুশীলব তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে মৃদু মৃদু হাসেন আমাদের দিকে চেয়ে।
৩
এই কুশীলব কারা? অবশ্যই ষাটোর্ধ্ব যুবক-যুবতীরা। পুরস্কার-দাতা ও গ্রহীতার পারস্পরিকতার এক চমৎকার উদাহরণ হলো সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম-মারুফুল ইসলাম। এই ইসলাম-জুটির কারসাজির কথা আপনাদের মনে পড়বে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’-এর ঘটনা স্মরণ করলেই। মারুফুলের ‘নতুন করে পাব বলে’ কাব্যে সৈয়দ মনজুর তাকে নতুন করে আবিষ্কার করেন। তার এই আবিষ্কারে গৌণ হয়ে পড়েন ফরিদ কবির, মাসুদ খান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, জুয়েল মাজহার, শান্তনু চৌধুরী, মজিদ মাহমুদ প্রমুখ কবিগণ, যারা আজও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মুমূর্ষু প্রবীণ, পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক-বিচারক কমিটির কাউকেই বিশ্বাস করা চলে না। আমলাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তার প্রমাণ স্বাধীনতা পুরস্কার। আমলাদের কারিশমাতেই খুনের মামলায় নয় বছর কারাদণ্ডভোগী কোনো এক আমির হামজা মরে গিয়ে পেয়ে যান এই পুরস্কার। ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা আবার বাতিলও হয়ে যায়। প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটে এসএম রইজ উদ্দিন আহম্মদের ক্ষেত্রে। পুরস্কার ঘোষণা করে প্রত্যাহার করা হয় তার নাম।
এর উল্টো চিত্রও আছে। যেমন আওয়ামী-স্নেহধন্য নির্মলেন্দু গুণের ধাতানিতে পাদানি থেকে পা-পিছলে পড়ে গিয়ে তড়িঘড়ি তার হাতে পদক তুলে দিয়েছে আমলারা। ‘জামান ব্যাপারী’ অভিধা পেয়ে শামসুজ্জামান খান মুখ বন্ধ করতে চেয়েছেন আবু হাসান শাহরিয়ারের। পুরস্কার বগল-দাবা করে শাহরিয়ারও চলে গেছেন নিরিবিলি বানপ্রস্থে।
পুরস্কার প্রদানের সবচেয়ে বড় পাপেট শো ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’। বন্ধুকৃত্যের করুণ উদাহরণও বটে। এখানে সাজানো নাটকে রোল প্লে করতে আসেন পশ্চিমবঙ্গের জেঠুরা। যেমন এক সময় আসতেন দেবেশ রায়। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে মিসগাইডেড পার্সন তিনি। তার মিসলিডিং লেখার দগদগে নমুনা হলো ‘দ্বাদশ নভেলা’র ভূমিকা।
ঢাকা ক্লাব, রূপসী বাংলা, লা মেরিডিয়ানসহ গুটিকয় রেস্তোরাঁ ও বারে সাম্প্রতিক লেখক-লোকাচারে শামিল হওয়ার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করবেন সাহিত্য-রাজনীতিতে ‘পাগলা পানি’র বিশেষ ভূমিকা আছে। এই পাগলা পানি গড়াতে গড়াতে ঢুকে পড়েছে লেখকের বাসগৃহে। সাহিত্যের জাঁকালো জেঠুরা পুরস্কার-পিপাসু লেখকের গৃহে অন্তত দুবার গমন করেন। পুরস্কার ঘোষণার আগে একবার, পুরস্কার প্রদানের পর আরেকবার।
ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে জুরিবোর্ড কোন কোন শুঁড়িবাড়ি বাদ-মাগরিব সুরাপান করতে যায়, সেটা খেয়াল করলেই আপনারা বুঝতে পারবেন কে কোথায় কোন পুরস্কার পেতে যাচ্ছে। কেবল এই দুই মাস আমাদের বুড়া লেখক ও অধ্যাপকদের নজরদারির মধ্যে রাখুন, হাতে-নাতে প্রমাণ পেয়ে যাবেন।
পর্দায় ফুটে ওঠে জলাশয়ে গলা ডুবিয়ে ভেসে চলা কতিপয় পানকৌড়ির জলকেলি। না, এমত দৃশ্যের কাব্য করতে ‘কবি’ এই সিনেমা নির্মাণ করেননি। কবি, এই সিনেমার পরিচালক, ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরির ডাক নাম। জলাশয়ের ওপাশের শহর-কলকাতার সারিসারি উঁচু বাসভবনের খোপের ভেতরের মানুষজন, গলিঘুপচির বিব্রত নাগরিক মন নিয়েই এখানে তার কারবার। শুরুর দৃশ্যটা রচিত হয়েছে এই সিনেমা-গল্পের এক মূল চারিত্র সত্য’কে পরিচয় করিয়ে দিতে। সত্য (সোহেল মন্ডল) চোর, একটা রিয়েল এস্টেট সিন্ডিকেটের মাস্তান সে। সত্য’র যিনি বস, তিনি সিন্ডিকেটের লিডার। মধ্যাহ্নভোজের একটি পিকনিক সুলভ দৃশ্যটি ঘটছে ওই ঝিলের পাড়ে। ইউটিউবে/ টিকটকে ফিচলেমির ভিডিও দেখতে দেখতে মাছভাত খাচ্ছেন বস। বাইকচুরির অপরাধী সত্যকে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছে ফিল্ড লেভেলের লিডাররা। এঁটো হাতে চড়-থাপ্পড় মেরে বস তার নিজের অবস্থান জানান দিয়ে বিদায় নেন এই ছবি থেকে। থানায় পূজা-অর্চণা সেরে পূজারীর সঙ্গে আমরা পৌঁছে যাই একটি বেশ্যাবাড়িতে। সত্য’র মন বাঁধা আছে ওইখানে বিউটির কাছে। এই বিউটি সরকারের আবার আরেকটি পরিচয় আছে, সে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার মেয়ে সরলা সরকার (চান্দ্রেয়ী ঘোষ)। বছর ছয়েক আগে স্বামী তাকে এদেশে এনে বেচে দিয়েছে। সরলা সত্যকে বিনে পয়সার শরীর পেতে দেয়, সত্য তাকে এদেশের আধারকার্ড-পরিচয়পত্র জুটিয়ে দেয়। শরীর ও স্বার্থের এইসব লেনদেনের মধ্যে প্রেমের রেশটুকুও আন্দাজ করি। যদিও তা সংশয়ে, সন্দেহে দোদুল্যমান। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোটগল্প আবলম্বনে ‘মায়ার জঞ্জাল’ নামের সিনেমার একটি গল্প ‘বিষাক্ত প্রেম’-এর চরিত্র এই সিনেমার সত্য ও সরলা। বাংলাদেশের সোহেল ম-ল আর পশ্চিমবঙ্গের চান্দ্রেয়ী ঘোষ দু’জনেই বেশ ভালো চরিত্রায়ণ করেছেন। বলে রাখা ভালো এডাপটেশনের বেলায় সাহিত্যের চরিত্র, মেজাজ, প্লট লাইন-বাই-লাইন সিনেমায় নেই, থাকবার প্রয়োজনও নেই। অপর গল্পটি ‘সুবালা।’ সিনেমার চিত্রনাট্যে গল্পদুটি যেমন মিলেমিশে একাকার, তেমনি নতুন নতুন চরিত্র ও জায়গাজমিন এসে হাজির হয়েছে।
বলি, এই সিনেমার প্যারালাল স্টোরির অপর চরিত্র ‘সোমা’র কথা, তার জীবনসঙ্গীর কথা, সন্তান ও পরিবারের কথা। বছর খানেক আগে প্রযোজক বন্ধুর সঙ্গ করবার কারণে ‘মায়ার জঞ্জাল’ দেখবার সুযোগ হয়েছিল, তখন তাকে আমি সিনেমাটা নিয়ে দু-চার কথা লিখবার আগ্রহ নিজেই প্রকাশ করেছিলাম। প্রথমবার সিনেমাটা দেখে আমার সমস্ত কৌতূহল গিয়ে হাজির হয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার এই সিনেমার ওই বিশেষ চরিত্র ‘সোমা’ ও তার অভিনয় শিল্পীর দিকে, তিনি বাংলাদেশের অপি করিম। এর আগে তার কোনো সিনেমা আমি দেখেছি বলে মনে করতে পারি না। মাতাল- গোঁয়াড় স্বামী চান্দুর চাকরি চলে গেছে। সংসার চালানোই দায়। তবু ছেলেকে মাস্টার রেখে গান শেখানো চাই। ইংরেজি ইশকুলে পাঠাবেন বলে স্বামীর অনুমতির তোয়াক্কা না করেই সোমা ‘পরের ঘরে বাসন মাজতে যাবে।’ মাসে হাজার দশেক টাকার মাইনেতে হাউজ কিপিংয়ের চাকরি, টুকটাক রান্নাবান্নার সঙ্গে বাড়ির বয়স্ক ভদ্রলোকের দেখভাল করা। ভারতে এমন ঘটনা প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশের বিরল। কিন্তু জানি, যা দিনকাল পড়েছে আমার দেশেও সোমাকে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইংরেজি ইশকুলে পড়তে পাঠাতে পরের ঘরে ‘কাজের বুয়া’ হয়ে হাজির হতে হবে। এখনই হয়। ইংরেজি স্কুলে নয়, বাংলা স্কুলে কিংবা মাদ্রাসায় সন্তানকে পাঠিয়ে তারা আমাদের ঘরে ঘরে হাজির হন। একটু আগেও যে ঊর্ধ্বকমার ভেতরে যে শব্দবন্ধে কাজের বুয়া বলে যাকে আমরা জানি ‘মায়ার জঞ্জাল’-এ তিনি সোমা। সিনেমাটি ভারতে বাংলাদেশে একসঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে এই মুহূর্তে। কিন্তু দুই দেশের দর্শকের মনোভঙ্গি ভিন্ন। এই ভিন্নতার গল্পই আমি বলতে চাই। এই দেশে তথাকথিত ‘কাজের বুয়া’ সোমাদের কোনো ব্যক্তিগত জীবন নজর করার কোনো রীতি নেই বাড়ির মালিক-মালকিনদের। তাদের স্বামী-সন্তানদের খোঁজখবর করবার দায়ও নেই। সে আসবে, আমার ঘর সাফাই রান্নাবান্না করতে বান্দিগিরি করতে। গৃহকর্মীদের আমরা নাটক-সিনেমায় গার্হস্থ্য বিনোদনের অনুষঙ্গ হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত। পরিষ্কার করে বললে তারা হবেন বোকার হদ্দ, নয়তো কমেডিয়ান। এইক্ষেত্রে সোমার সংসার আমাদের নিম্ন-মধ্যবিত্তের আপন সংসার। সোমার বর চান্দু শুধু শিক্ষিতই নয়, রাজনীতি সচেতন, এলাকার বাম সংগঠনেও তার যাওয়া-আসা। স্ত্রীকে পরের ঘরে পাঠাতে তার পৌরুষে লাগবে, ভাতের থালা ছুড়ে ফেলবে, স্ত্রীকে গতর দেখিয়ে তার চেয়ে বেশি বেতনের চাকরি পাওয়ার খোঁটা দিয়ে মোক্ষম ইঙ্গিত করবে। আবার আলসেমি-গোঁয়ার্তুমির কারণে হারানো চাকরিটা ফিরে পেতে মেগাস্টোরের কর্তাব্যক্তির কাছে নিজের ইগো ধসিয়ে পাবলিক প্লেসে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখব। ঋত্বিক চক্রবর্তী এই চান্দুর ভূমিকায় দুর্দান্ত। অতঃপর সত্যবাহিনীর কাছে ড্রাগস বিক্রির ব্যবসার ‘বিহারী বুদ্ধিতে’ চান্দু ফেঁসে যাবে। তার আগে একটি স্বপ্নের কথা‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি!’, মাসে দশ-বিশ হাজার ইনকাম হবে। তুমি ওই বাড়ির কাজটা এবার ছাড়ো। ছেলে ভালো করে খেতে পারবে, গান শিখতে পারবে, ইংরেজি ইশকুলে পড়বে। এরপর কালীপূজার তান্ডব উৎসবের রাত। আতশবাজি-পটকার আওয়াজের মধ্যেও মশারির নিচে ক্লান্ত ঘুমন্ত চান্দু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। স্বামীর মুখের দিকে সোমার মায়াবী চোখে চেয়ে থাকা, এতটুকু স্পর্শের আদর। তবে কিছুটা মায়া রহিয়া গেল? শুধুমাত্র এই কারণেই এই ছবিটি আমার দেশের দর্শকদের আমি দেখতে বলব। ভদ্রলোকি চোখে ‘নন-এক্সিসটেন্ট’ এই মানুষগুলার কোনো আশা-উচ্চাশা যে থাকতে পারে তা আমরা ভাবতেও পারি না। ইহা আমাদের মুসলমানি অভিজ্ঞতা ‘বান্দি’ বললে আপনারা যাকে বুঝবেন। নিজে দেখে নিয়ে পরখ করে নিতে পারেন আমাদের দেশজ বাস্তবতা।
এবার আসা যাক সিনেমার কিছু টুকিটাকি দৃশ্যে। যে বুড়োর পরিচর্যার জন্য সোমার এই বড়লোকের ফ্ল্যাটবাড়িতে আসা ওই বুড়ো ভদ্রলোকের চরিত্র সহজ এবং সুন্দর। যুবতী মেয়েদের পরের ঘরে রাত্রিযাপনের যে দুর্যোগ তা এই ছবিতে অনুপস্থিত। সংবেদশীল শিক্ষিত ভদ্রলোক মর্নিং ওয়াকের নামে পুত্রবধূকে লুকিয়ে সোমাকে নিয়ে রাস্তার লুচি খাওয়ার দৃশ্যটি অনবদ্য। দিনদুনিয়ার অনাচারের মধ্যে তিনি যখন স্টিফেন হকিংয়ের রেফারেন্স দিয়ে বলেন এই পৃথিবী বেশিদিন টিকবে না, সোমার অবাক বিস্মিত কথা, ‘ওরা মন্দলোক, ওদের কথা শুনবেন না।’ বোকার স্বর্গে বাস করা আশাবাদী সোমাকে বড় আপন লাগে। এত যে ক্লান্ত তার মুখচ্ছবি, তার মধ্যে ওই শান্ত, ভুবনমোহিনী হাসিটুকুতে মায়া রহিয়া গেল। সত্যর জন্মদিনে মায়ের ফোনে ঘুমঘোরে অবহেলামূলক ওই কথা কয়টি কিংবা পানের ভেতর ড্রাগসের মিশ্রণের বেশিবেশিতে ঘাবড়ে যাওয়া সত্য সরলাকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টায় পায়ের নিচে মালিশ করতে থাকার ব্যাকুল দৃশ্য। আরও দুটি দৃশ্য বেশ মনে পড়ছে, সত্য নিজের জন্মদিনে সরলার সঙ্গে দেখা করতে এসে দেখে সরলার ঘরে খদ্দের। সরলার সহকর্মী বন্ধু মেয়েটি কী সুন্দর ভাবেই না সত্যকে চিংড়িমাছ-ভাত খাইয়ে আপ্যায়ন করে তাকে। ওই মেয়েটির অভিনয় দুর্দান্ত। ভীষণ জ্যান্ত দুইজনের ওই মুহূর্তটি ডায়ালগে, পাশের ঘরের যৌনশব্দে, নৈঃশব্দে, পরস্পরের চাহনিতে। সরলার একজন রসিক খদ্দের যিনি মাছের কারবারি (ব্রাত্য বসু) শিংমাছ নিয়ে তার আতিশয্যের গল্প। মাছগুলো কিলবিল করছে, কর্মচারীকে খলবল করে বলে চলেছেন ছোটবেলার গল্প, তিনদিনের জ্বরের পরে মায়ের হাতে পটল-শিংয়ের ঝোলের জন্য তার হাহাকারের গল্প। মাতৃঅন্তঃপ্রাণ মানুষটির প্রগলভতা একটু বেশি বেশি। যাইহোক, যে চরিত্রের অনন্যতা সিনেমাটিকে মায়ার জালে বেঁধে রাখে সে জঞ্জাল কুড়ানো এক পাগল। ছবির প্রায় শুরু থেকে শেষ অব্দি নিঃশব্দেই তার আনাগোনা এবং প্রায় প্রতিটি প্রধান চরিত্রের সঙ্গেই তাকে আমরা ফ্রেমবন্দি হতে দেখি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা’ অন্যসব চরিত্রের অগোচরেই তার বিচরণ।
অল্প পরিসরে টুকিটাকি গল্পগুজব তো হলো, এবার সিনেমা-দর্শনের অভিজ্ঞতা নিয়ে দু’চার কথা বলি। এই সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালক দুজনেই আমার বন্ধুস্থানীয়। সমালোচকই চলচ্চিত্রকারের প্রকৃত বন্ধু জেনে তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত অনুভূতিমালা হাজির করা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প দুটির অ্যাডাপটেশন বেশ জুৎসই হলেও তার চিত্রায়ণ এতটাই ব্যাকরণসিদ্ধ যে আরও গভীরে মনঃসংযোগে আগ্রহী করে তোলে না। শব্দায়োজন, সম্পাদনার ছন্দেও বিশেষ কোনো মাহেন্দ্রক্ষণ তৈরি করছে না দেখে কষ্ট পেয়েছি। হয়তো আমি নিজে একটু ড্রামাপ্রবণ মানুষ, তবু বলি সিনেমায় প্রাণের অভাবটা রয়েই গেল। তারপরও এই অভাবের সংসারে বন্ধুদের হলে গিয়ে ছবিটা দেখতে বলি, ঘরের সোমাদের নিয়ে আপনারা কৌতূহলী না হলে আর কে হবে? আর হ্যাঁ, ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমায় ওয়াহিদা মল্লিক জলি আপার অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ! মায়া পড়ে আছে জঞ্জাল কুড়ানো মানুষটার জন্যও। জয়গুরু।
২ মার্চ, ২০২৩।
কবিতা মানুষের কথা বলে, ভালোবাসার কথা বলে, অনুভূতিকে শব্দে ছড়িয়ে দেওয়ার নাম কবিতা। সুন্দর মুহূর্তগুলোকে শব্দে ও ছন্দে রূপান্তরিত করে। বিগত বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছে কবি হায়াত কামালের প্রথম কবিতার বই ‘রোমিওর থার্টিফার্স্ট নাইট’। ১২৭টি কবিতা নিয়ে বই, কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো কবির বয়স এখন আশির কোঠায়। এই বয়সে আত্মপ্রকাশ কবি হিসেবে, কিন্তু কবির কবিতা পড়লে বোঝা যায় এতে আছে প্রেমের কথা, বিরহ-বেদনার কথা, বিভিন্ন উৎসব, যাপিত জীবনের প্রেম, প্রত্যাখ্যান আর ছয় ঋতুর রঙবাহার। ছাত্রজীবন থেকে লিখলেও কখনো বই প্রকাশ করার কথা ভাবেননি, দীর্ঘদিন ফেসবুকে হায়াত কামাল নামে পেজ খুলে কবিতা শেয়ার করছিলেন পাঠকদের সঙ্গে, তাদের মন রাখতে, তাদের উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় বই প্রকাশ করলেন বলে জানান কবি। আশিতে বসে এই কবি লিখেছেন কবিতা তেইশের যুবক, এক মিনিটের ভালোবাসা, শরতের চিঠি, শীত আসছে, ফাগুনের গান, বসন্ত, প্রথম চুম্বন ও নববর্ষ বিলাস। তিনি লিখেছেন ভালোবাসবো শিরোনামের কবিতা। ভালোবাসবো তোমাকে/পকেটে করে ভালোবাসা নিয়ে আসবো/আঁচল পেতে দাও/পকেট খালি করে তোমার আঁচলে ঢেলে দেব। হায়াত কামালের কবিতায় ধ্রুপদি অনুভবের চেয়ে বেশি করে উঠে এসেছে জীবনের টুকরো টুকরো গল্প। যেমন ভোকাট্টা ঘুড়ি কবিতায় তিনি লিখেছেন,... হঠাৎ আমার এক্স আমার ঘুড়ির সুতোটা কেটে দিল ওর ঘুড়ির সুতো দিয়ে। আমি ভোকাট্টা হয়ে হেলে-দুলে তোমার ছাদে পড়ে গেলাম...
নিটোল আবেগ থেকে লিখেছেন কবিতাগুলো হায়াত কামাল। অনুভূতি প্রকাশে কোনো ভণিতার ধার ধারেননি। হংকংয়ে বসবাস করা কবি তার দেখার ও নতুন অভিজ্ঞতার পৃথিবীকে তুলে এনেছেন সাবলীল যাপিত জীবনের প্রচল ভাষায়। নিজের লেখা ব্যাকফ্ল্যাপে স্বীকার করেছেন, ‘আমি নূতন লেখক, একেবারে শুদ্ধ বাংলা ভাষা আমার কবিতায় ব্যবহার করিনি। এই মিলেনিয়ামে এসে ২০২৩-এ বাংলা ভাষাটা যেমনভাবে দিন দিন কথোপকথনে ব্যবহার করছি সেভাবেই লিখেছি।’
জাগৃতি প্রকাশনীর এ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা। দাম রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা।
আহমদ মানিক
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দেশের বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ৫০০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর সরকারি হাসপাতালে এজন্য খরচ হবে ১০০ টাকা। এ ছাড়া সব হাসপাতালে পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। সংবাদ সম্মেলনে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা-রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৫৮ ও ঢাকার বাইরে ৯ জন। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৭৭১ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৩ জন। ঢাকার পর বেশি রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে : সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজারে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ সংখ্যা ৪২৬ জন। সব মিলে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৫৩২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা ঢাকায় শনাক্ত রোগীর চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নেই। এর ব্যাখ্যায় অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা কমিউনিটি যেহেতু আমাদের নাগরিক নয়, তাই তাদের তথ্য দেওয়া হয় না। তবে যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গেই থাকে, জাতিসংঘও তাদের তথ্যটা চায়, সেহেতু গুরুত্ব দিয়েই আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করি এবং আলাদাভাবে হিসাব রাখি।’
এ বছরের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ছড়ানো এ সংখ্যাটাও উপেক্ষা করার মতো নয়। তাদের পরিষ্কার পানির উৎস সীমিত। তারা পানি সংগ্রহ করে অনেক সময় খোলা পাত্রে রেখে দেয়, যা মশার জন্য একটা ভালো প্রজননক্ষেত্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কম জায়গায় মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যা পরিস্থিতি, তাতে সেখানে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ‘কঠিন’ বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের সংস্কৃতি আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যায় না। তারা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকেন, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অনেক নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়।’
সিটি করপোরেশনকে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ : সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনগুলোকে জানিয়েছি, খুব দ্রুত যদি মশার স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হয়। আমরা তাদের ম্যাপিং করে জানিয়ে দিই, কোথায় বেশি ছড়াচ্ছে। তাদের জায়গা থেকে আরেকটু বেশি অ্যাকটিভ হতে হবে। যেহেতু আমরা জানিয়ে দিচ্ছি কোথায় কী হচ্ছে, তাই তাদের উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণ, লার্ভা ধ্বংসসহ তারা যেসব ব্যবস্থা নেয়, সেগুলোর মাধ্যমে যেন আমরা ভেক্টরটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’
অবশ্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী, সে তথ্য জানাতে পারেনি অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে ঘনবসতি বেশি, সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।’
ডেঙ্গু বাড়ছে কয়েক কারণে : সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে জলাবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনঘনত্বের কারণের কথা বলেন। অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক জনবহুল, তার ওপর এখানে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। ফলে এখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের পর থেকে অনেক গরম পড়েছে। বিজ্ঞান বলে, কোনো জিওগ্রাফিতে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে তার দ্বিগুণ পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী দেখা দেয়। সব দেখে অনুমান করা হয়েছে, প্রাক মৌসুমেই ডেঙ্গু রোগী বেশি হবে।’
এ ব্যাপারে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। ২০০০ সালে এটা বাংলাদেশে আসার পর মাঝে পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু কভিডের আগের বছর একটা বড় সংক্রমণ দেখেছি, গত বছর দেখলাম, এবারও হয়তো এমন কিছু একটা হতে পারে।’
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১১ পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বাল্যবিয়ের ১০ দিনের মাথায় স্ত্রী ও নিজ পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার (২৮ মে) রাত ১১টার দিকে উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের ভাটিপাছানি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত কিশোরের নাম ইমরান (১৫) সে একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। নুরুল ইসলামের প্রতিবেশী জিয়াউর রহমানের মেয়ে সাথী আক্তার ও ইমরান স্থানীয় পাঁচানী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ১০ দিন আগে প্রেমিকাকে নিয়ে নিজের বাড়ি পালিয়ে যায় ইমরান। পরে ইমরানের বাবা মেয়ের বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। আট দিন সংসার করার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে স্ত্রী অভিমান করে বাবার বাড়ি চলে যায়। ইমরান তার স্ত্রীকে এনে দিতে পরিবারকে চাপ দিলে পরিবার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এই অভিমানে গতরাত ১০টার দিকে বিষ পান করে সে, ঘটনাটি টের পেয়ে তার পরিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে মৃত্যু হয় ইমরানের।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিক হাসান বাবুল জানান, শনিবার আমার কাছে মেয়ের বাবা ও ছেলের বাবা এসেছিল। রবিবার দুই পক্ষকে ডাকলেও ছেলের বাবা সাড়া না দেওয়ায় সমস্যাটি সমাধান করতে পারিনি। রাতে ছেলে এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় মেয়ে পক্ষের কোনো অবহেলা দেখছি না।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানান, ঘটনাটি আমাদের কেউ অবহিত করেনি। আমি খোঁজ নিচ্ছি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।