
এ
কুশে বইমেলা ২০২৩-এ, সলিমুল্লাহ খানের বই ‘ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়Ñভাষা-শিক্ষা সাম্প্রদায়িকতা’ প্রকাশিত হওয়ার পর-আপন মিলে ৬ মাস পার হয়ে গেল। কিন্তু বইটি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করার আন্তরিকতা কারও দেখলাম না। বাঙালির চিন্তাজগতের মধ্যে যে একটি কাব্যের আবেশ থেকে গেছে, মানে আবেগ একটি রোগের মতো ছড়িয়ে আছে সলিমুল্লাহ খান সেই আবেগকে উপড়ে ফেলে বাঙালির চিন্তার যে গঠন তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ চিন্তা সত্য ও মহত্ত্বের প্রশ্নে এক বড় লড়াই। এর জন্য সাহস দরকার, দরকার ব্যাপক পাঠন-পঠন, তীক্ষè বিশ্লেষণ ক্ষমতা, জানা দরকার দর্শন, বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা, থাকা দরকার ঘ্রাণশক্তি।
সলিমুল্লাহ খানের লেখা সাধারণ পাঠক সহজে বুঝতে পারে, কিন্তু অসাধারণ নামধারী পাঠক বুঝতে পারে না। এখানে সাম্প্রতিক সময়ের বিদ্যান দাবি করা নতুন ঠাকুরদের মাৎস্যন্যায় আছে। আমি সেদিকে যাব না। বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড়জন বিদ্যান মহাকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তার চিন্তার সঙ্গে পাঞ্জা লড়া অত সহজ নয়। ভক্তি ও শ্রদ্ধাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আবার তাকে দূরে ঠেলে তর্ক তোলা, সঠিক বিশ্লেষণ করে ক্ষত ও বেদনাগুলো পাঠকের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া একজন সত্যিকারের সাহিত্যিক, গবেষক, দার্শনিকের কাজ। সলিমুল্লাহ খান এখানে সে সত্যকে আবিষ্কার করেছেন। এ রকম আবিষ্কার কয়জন লোক করতে পারে। আমি যদি নিজে তা পারতাম তাহলে নিজেকে কতই না ভাগ্যবান মনে করতাম।
সলিমুল্লাহ খানের এই আবিষ্কার বাঙালি জাতিকে চিন্তার নতুন জগতে নিয়ে যাবে। বুদ্ধদেব বসু থেকে শুরু করে কাজী আবদুল ওদুদ পর্যন্ত যারা সত্য মহত্ত্ব ভাষার প্রশ্নে নিজের সীমার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে পারেনি, তাদের মাৎস্যন্যায় পাঠক ধরতে পারবে। প্রবেশিকা, কৈফিয়তÑ ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় পর্বে, ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়, ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : রবীন্দ্রনাথের সাধনা, নজরুল ইসলাম ও আধুনিক বাংলা কবিতা, জাতির নামে বজ্জাতি, সংবর্ধনা পর্বে কবির অভিভাষণ, বড়র পিরীতি বালির বাঁধ-কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গ-সাহিত্যে খুনের মামলা-বীরবল, আমার কৈফিয়ত-কাজী নজরুল ইসলাম। রচনা পরিচয়।
যে দেশে চিন্তা করাকে অপরাধ ভাবা হয়, সে দেশে বুদ্ধিবৃত্তি কীভাবে এগোবে, লোকে চিন্তা করতে শিখবেই বা কী করে? বুদ্ধদেব বসু, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের নেতা, সাহিত্যিক কাজী আবদুল ওদুদও একই ঘরের এলিট সন্তান, সলিমুল্লাহ খান তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। বিধায়কের দৃষ্টিতে তারা বাংলা সাহিত্যের বিচারের ভার নিয়েছেন। সলিমুল্লাহ খান সেই বিধায়কদের রায় যে ভুল, সঠিক নয়, সেটি দেখিয়েছেন; তার ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় বইটিতে।
বাঙালির চিন্তার গঠন এমন শিশুসুলভ, যে হয় তারা এই অসঙ্গতি ধরতে পারেনি নয়তো তারা সচেতনভাবে তা এড়িয়ে গেছেন, যেহেতু বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বৈদিক রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন তার মানস উপনিষদ রচনা করেছেন, আমরা বাংলা সাহিত্য হিসেবে যা পেয়েছি। বৈদিক হিন্দুয়ানি, ব্রাহ্মধর্মের খ্রিস্টীয় মরালিটি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ মুসলমান প্রজাদের সঙ্গে মিশেছেন। সেখানে কাজী নজরুল ইসলামসহ মুসলমানদের ভাষা সাহিত্য সংগীত ইত্যাদি বিষয় তার মনের মধ্যে তোলপাড় তুলেছে। ভাববাদী সন্দেহে অচেতনে ডুবে থাকা সেই অমীমাংসিত মনোবেদনা প্রকাশ্যে সাহিত্য সভায় একদিন তিনি মানুষের সামনে তুলে ধরলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় বইয়ে এ দেশের সারস্বত সমাজের মানসিক হীনম্মন্যতা পাঠকের সামনে উন্মোচন করেছেন। এলিট মুসলমান এলিট হিন্দুসহ সারস্বত সমাজের কেউ কবির সত্যকে সহ্য করতে পারেন না। না নজরুল ইসলাম না সৈয়দ আলাওল কাউকে না। গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, হুমায়ুন কবির, প্রমথ চৌধুরী সবাই মিলে নিজেদের সপক্ষে যে সাফাই গেয়েছেন তাই তারা বাংলা সাহিত্য বলে চালিয়ে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে থেকে তাদের থিওরি মেনে এখানে সাহিত্য করতে হবে। কাজী নজরুল ইসলাম-বিরোধী এসব বড় বড় সাহিত্যিকের কথাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যখন নজরুল ইসলামসহ ভারতীয় দরিদ্র-দলিত জীবনকে উপহাস করলেন তখন নজরুল ফুঁসে উঠলেন। ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ’ বিখ্যাত লেখাটিতে তিনি তা তুলে ধরলেন।
সলিমুল্লাহ খান বইটির ইনারের পাতায় ‘আয়না’ নামে শার্ল বোদলেয়ারের একটি কবিতা দিয়েই শুরু করেছেন। এখানে পুরো বইটির তাৎপর্য লুকিয়ে আছে। সত্যের খাতিরে সত্য বলা, আইনের চোখে তাহার কথাও সত্য। আইন ও সত্য এখানে পরখ করে নিতে হবে। সত্য ও আইন এক নয়। বিচারের ক্ষেত্রে সবাই আয়না বা দর্পণের কথা বলে। দর্পণে সত্য প্রতিফলিত হয়। তাই সবাই চমকে ওঠে। ‘লেভ তলস্তয়-রুশ বিপ্লবের দর্পণ’ তলস্তয়কে নিয়ে লেনিনের লেখা এই প্রবন্ধে লেনিন বলেন ‘যে- দর্পণ সবকিছুকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে না সেটাকে তো দর্পণ বলা শক্ত’।
তলস্তয়ের রচনাবলিতে, অভিমতে, মতবাদে, তার মতো সম্প্রদায়ে অসংগতিগুলো বাস্তবিকই দগদগে। একদিকে, আমাদের এই মহাশিল্পী, মহাপ্রতিভাধর, যিনি রুশ জীবনের বিভিন্ন অতুলনীয় চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন শুধু তাই নয়, তার রয়েছে বিশ্বসাহিত্য ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির অবদান। খ্রিস্টের ভকত জমিদারটিকে আমরা পাচ্ছি অন্যদিকে। একদিকে সামাজিক মিথ্যাচার আর ভণ্ডামির বিরুদ্ধে অসাধারণ শক্তিশালী, স্বাভাবিক এবং আন্তরিক প্রতিবাদ, আর অন্যদিকে সে তলস্তয়ী’, বকে যাওয়া বিকারগ্রস্ত ঘ্যানঘ্যানকারী, যাকে বলে রুশ বুদ্ধিজীবী, যে প্রকাশ্যে বুক চাপড়ে বিলাপ করে : আমি খারাপ দুষ্ট মানুষ, কিন্তু আমি নৈতিক আত্মশুদ্ধিব্রত পালন করছি। আমি মাছ মাংস আর খাইনে এখন খাই ভাতের কাটলেট। এসব অসংগতির কারণে তলস্তয়ের... রুশ বিপ্লবকে বোঝা সম্ভব হয়নি।’
রবীন্দ্রনাথের বেলায়ও আমরা এই কথা বলতে পারি। মানুষের দারিদ্র্য, জীবনের প্রতিদিনের অনিশ্চয়তা, উপোস থাকার কষ্ট, পরিবারের ভরণপোষণ দিতে না পারা, সংগ্রাম-লড়াই এই অভিজ্ঞতা তো মহাশিল্পী রবীন্দ্রনাথের নেই। তাই তিনি নজরুলসহ মানুষের দরিদ্র নিয়েও উপহাস করতে পেরেছেন। এ কারণে তিনি ভারতীয় দরিদ্র মানুষের জীবনকে বুঝতে পারেননি। ঠিক এই জায়গাটিতে নজরুল কষ্ট পেয়েছেন বেশি। নজরুল ইসলাম তার সব বেদনাকে ঢেলেছেন ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ’ শীর্ষক লেখাটিতে। সলিমুল্লাহ খানের কৃতিত্ব এখানে যে ‘ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ বই তিনি রচনা করেছেন, আর আয়নার সামনে পুরো জাতিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথসহ সেসব সাহিত্যিক পণ্ডিতদের দর্প চূর্ণ হয়েছে, দর্পণে ভরেনি মন। সমস্যা হচ্ছেÑ আয়না বা দর্পণে মানুষ নিজেকে দেখে না, সমাজ তাকে কীভাবে দেখে নিজের মধ্যে সেই প্রতিফলন দেখে, এটি ফ্রয়েডের আবিষ্কার। তাই দর্পণের সত্যও মিথ্যায় পর্যবসতি হয়।
বাঙালির চিন্তার গঠন ছাড়িয়ে যাওয়ার এই চেষ্টা এখানে কেউ করেনি। কিছু ব্যতিক্রম বাদে সবাই সরকারি, গতানুগতিক, একঘেয়ে। সলিমুল্লাহ খান যিনি বাঙালির সামাজিক চিন্তার গঠন ছাড়িয়ে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়।। ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা।। সলিমুল্লাহ খান।। জাতীয় সাহিত্য ৩।। মধুপোক।। প্রচ্ছদ: সায়মন জাকারিয়া।।
শ হরজুড়ে তখন ঝকঝকে রোদ খেলা করছে। বারান্দার গ্রিল গলে সেই রোদ ঘরের ভেতরেও লুটোপুটি খাচ্ছে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন মামুন স্যার। আমার স্কুলশিক্ষক। বন্ধু রায়হানের বাবা। রায়হান চলে যাওয়ার পর স্যার কবে মন খুলে হেসেছিলেন মনে পড়ে না। তাকে দেখে মনে হলো, একেবারে শান্ত, নিঃস্পৃহ। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা আঁটা, হাতে রুপালি চেইনের একটা হাতঘড়ি। প্রায় সব সাদা হয়ে যাওয়া চুলের মাঝে কিছু কালো চুল যেন স্পর্ধা জানাচ্ছে। তার পরনে কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট।
স্যারকে সামনে পেয়ে মিষ্টি হেসে আর কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললাম, আপনি আসবেন, বলেননি তো স্যার!
অমনি স্যার শব্দ করে হেসে বললেন, তোকে দেখতে ইচ্ছা হলো, তাই চলে এলাম।
সেই ছোটবেলার মতো স্যার এখনো আচমকা আমাদের বাড়ি এসে আমাকে চমকে দেন।
ঘরে ঢুকে বসার ঘরের চারপাশটা স্যার ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। প্রতিবারই এভাবেই দেখেন। যেন এবারেই প্রথম এসেছেন! ঘরের একপাশের বুকসেলফে থরে থরে সাজানো বইগুলো দেখে বললেন, তুই অনেক বই পড়িস, না রে? আচ্ছা, লেখালিখিটা করিস এখন? খুব ভালো লিখতি তুই।
প্রশংসায় খানিকটা আপ্লুত হয়ে মাথা নেড়ে বললাম, লিখি স্যার।
স্কুলে থাকাকালীন টিচার্স রুমে কেন যেন স্যারের কাছে গিয়েছিলাম, এখন ঠিক মনে পড়ছে না। স্যার তখন অন্য টিচারদের কাছে আমায় নিয়ে প্রশংসা করে বলেছিলেন, ও খুব ভালো ছেলে, ভালো আবৃত্তি করে, ভালো লিখতেও পারে। কিছুদিন আগে রচনা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছিল। কথা বলতে বলতে তখন ভূগোলের হাসান স্যারকে উদ্দেশ করে সহাস্যে বললেন, শুনুন হাসান সাহেব, ও শুধু আমার ছাত্রই নয়। আমার ছেলেও।
যতদূর জানি, আপনার ছেলে তো একটাই। হাসান স্যার বললেন।
কেন হাসান সাহেব, রক্তের সম্পর্ক না থাকলে বুঝি ছেলে হয় না?
সেদিন স্যারের কথা শুনে নির্মল এক ভালো লাগায় মন ভরে গিয়েছিল। আজও সে কথা ভেবে চোখের কোণে খানিকটা জল জমেছে বুঝে হাতের তালু দিয়ে চোখটা মুছে নিয়ে ভেতরের ঘরে গেলাম। স্যারের জন্য ঠা-া শরবত নিয়ে এসে দেখি স্যার বইয়ের কাছ থেকে সরে মখমলের নরম কাপড়ে মোড়ানো সোফায় গিয়ে বসেছেন। শরবতের স্বচ্ছ কাচের গ্লাসটি স্যারের হাতে তুলে দিয়ে আমি তার মুখোমুখি বসলাম। কত কথা দুজনের! গ্রামের কথা, স্যারের স্কুলের কথা, দেশের উন্নয়ন, রাজনীতি এমন আরও অনেক বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলছিলাম।
হঠাৎ বাইরে থেকে ভেসে আসে বাঁশির সুর। হয়তো কোনো বাঁশিওয়ালা শহরের এই পিচঢালা পথে বাঁশি ফেরি করে বেড়াচ্ছে। আর বাঁশিওয়ালার সেই সুর এই ভরদুপুরে ঘরের বাতাসকে কেমন বিষণœ করে তুলল।
সেই সুর যেন স্যারের মনেও বিষাদের ছায়া ফেলে গেল। কেননা তার পরপরই তিনি বললেন, তোর মনে আছে শাহরিয়ার, রায়হান যখন লন্ডন থেকে এমএসসি শেষ করে দেশে এসে একটা চাকরি নিল, তারপর ওর জন্য পাত্রী খুঁজছিলাম?
জি স্যার, মনে আছে। বরাবরের মতোই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।
কথার মধ্যে বসার ঘরের পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকল আমার স্ত্রী নিপা। স্যারকে সালাম দিয়ে আমার পাশে এসে বসল। স্যার আর নিপার মধ্যে কিছুক্ষণ কুশলাদি বিনিময়ের পর নিপা উঠে যেতে যেতে বলল, দুপুরের খাবার টেবিলে দিয়েছি স্যার। আপনি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন।
খাবার টেবিলে খেতে খেতে কত পুরনো গল্প, মান-অভিমানের কথা, কত আনন্দে ভরা দিনের স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হলেন তিনি। এর মধ্যে কিছু গল্প আগেও বহুবার বলেছেন। বয়স হলে মানুষ হয়তো এমনিই হয়। নির্দিষ্ট কিছু স্মৃতিতে মন বাঁধা পড়ে থাকে। বারবার ঘুরেফিরে কেবলই সেই স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ধরা দেয়। স্মৃতিময় দিনগুলোকে স্মরণ করতে করতে স্যার হঠাৎ বেশ গম্ভীর হয়ে বললেন, শোন শাহরিয়ার, তোকে কিছু জরুরি কথা বলা দরকার। বলতে পারিস সে জন্যই আজ এখানে এসেছি, বুঝলি। আমার শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না রে। কখন যে কী হয়, তা তো আগে থেকে বলা যায় না। তাই যখনই জানবি, আমি আর নেই, শেষ দেখাটা দেখতে যাস। কথাগুলো বলেই সামনে গ্লাসে রাখা পানিটুকু খেয়ে নিলেন। হঠাৎ করেই সাময়িক এক নৈঃশব্দ্যে গম্ভীর হয়ে উঠল ঘরটা। জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি একটি স্নিগ্ধ মুখ যেন বেদনায় লীন হয়ে আছে। মাঝে নিপা আর আমিও এঁটো হাত ধুয়ে এসে আবার টেবিলে বসলাম।
নীরবতা ভেঙে পুনর্বার তার কথা বলে ওঠার জন্য আমরা সশ্রদ্ধভাবে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর স্তব্ধতা ভেঙে আবারও স্যার বলা শুরু করলেন, কোথায় খাবি, কোথায় থাকবি এগুলো নিয়া ভাবিস না। জানি, আমি না থাকলে ওইখানে তো তোর আর কেউ রইল না। তবুও যাইস। না হয়, দুই একবেলা হোটেলেই খেয়ে নিলি। দাফন শেষ করেই আবার ঢাকার গাড়ি ধরিস।
কথাগুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই স্যার বলে গেলেন। কোথাও থামলেন না। কিংবা কোনো কষ্টের অনুভূতিতে তার গলাও ধরে আসেনি। আমি আর নিপা নিশ্চুপ, নির্বাক মনোযোগী শ্রোতার মতো পলকহীন চোখে তাকিয়ে থেকে স্যারের কথাগুলো শুনে গেলাম। বাইরে তখন রোদ ঝিমিয়ে পড়েছে। চারপাশে শান্ত, নরম বিকেল।
নীরবে আনমনে বসে স্যার তখন তার কব্জিতে আটকানো হাতঘড়িটির চেইন এপাশ-ওপাশ ঘুরাচ্ছেন। মাঝে স্যারের অনুমতি নিয়ে নিপা বিকেলের চা করতে গেল। সন্ধ্যার আগাম অন্ধকারকে আলোয় উজ্জ্বল করে দিতে ঘরে বাতি জ্বালালাম। বিপরীত দিক থেকে সেই আলো এসে পড়েছিল স্যারের ঘাড় আর মাথার ওপর। ফলে তার কাঁচা-পাকা চুলগুলো হয়ে উঠেছিল উজ্জ্বল। টেবিলে রাখা হাত দুটিও সে আলোয় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
আমি বেশ ধীরে আর শান্তস্বরে জানতে চাইলাম, রায়হানকে খুব মনে পড়ছে স্যার?
কথা শুনে মনে হলো, চমকে গেলেন তিনি। ঘড়ির চেইনটা ঘুরানো থামিয়ে আমার দিকে তাকালেন।
রায়হান! নামটি উচ্চারণ করেই একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্যার বললেন, আমার ছেলেটার সাথে কেন এমন হলো বলতো? সেদিন কী হয়েছিল? বল না!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলাম, যে গল্প আগেও কয়েকবার শুনিয়েছি। রায়হান লন্ডনে চলে যাবার পর যখনই ওকে খুব মনে পড়ে, তখনই স্যার আমার কছে চলে আসেন। রায়হানের গল্প শুনতে চান আর একই গল্প আমিও প্রতিবার শুনিয়ে যাই।
স্যার, আপনি তো ওদের চিটাগাং বেড়াতে যাবার কথা জানেন?
জানি।
ওর শ্বশুরবাড়িতেই উঠেছিল। সেখান থেকে একদিন সকালে দুজনে বেড়াতে বেরোয়। কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ানোর পর রিয়াকে কে যেন ফোন করে। সে ফোনটা রিসিভ করেই বলল, আমি আসছি। কথা শেষ হলে রিয়া রায়হানকে জানায়, তার একটু পার্লারে যাওয়া দরকার।
রায়হানও তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই সম্মতি দেয়। কিন্তু ওর মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিল। সেই প্রশ্নটির উত্তর পেতে সে রিয়ার কাছে জানতে চাইল, কে ফোন করেছে?
রিয়া জানায়, ওর মা ফোন করেছে।
কথাগুলো স্যার বেশ আগ্রহ নিয়ে মনোযোগী শ্রোতার মতো শুনছিলেন, নিষ্পলক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে। প্রতিবারই এভাবেই শোনেন।
রিয়া পার্লারে ঢোকার পর রায়হান পারসোনার গেটের পাশে করিডোরে রাখা চেয়ারে বসে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিল। এ রকমই কিছু রায়হান বলেছিল। মাঝে মাঝে লিফটের ওঠানামার টুংটাং শব্দে পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে লিফটের দিকে তাকাতো। কখনো আবার পার্লারের মূল গেট খোলার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ কানে এলেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখত, কে বেরুল। এভাবে বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু রিয়া পার্লার থেকে বেরোয় না। রায়হান তখন ভেবেছিল, একবার রিয়াকে ফোন করবে। আবার ভাবল, থাক্ আরও কিছুক্ষণ দেখি। হয়তো ভেতরে ক্লায়েন্টদের ভিড় অনেক, তাই দেরি হচ্ছে। মনের অস্থিরতাকে কোনোভাবে ধামাচাপা দিয়ে সে আবারও ম্যাগাজিনে চোখ বুলাতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরেই রায়হানের মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। রিয়ার মা ফোন করেছিলেন। রায়হান ফোন রিসিভ করতেই তিনি জানতে চাইলেন, রায়হান এখন কোথায়? রায়হান জানাল, সে পারসোনায় রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আর তখনই রিয়ার মা বললেন, রায়হানকে বাসায় ফিরে যেতে।
আহা! ছেলেটা তো তখনো জানত না, ততক্ষণে রিয়া তাকে ফাঁকি দিয়ে পার্লারের অন্য দরজা দিয়ে চলে গেছে, অন্য কারও কাছে। এটুকু বলে স্যার কিছুক্ষণ থেমে আবার প্রশ্নবিদ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কেন রিয়ার বাবা-মা সবকিছু জেনেও আড়াল করে গেল? জানিস শাহরিয়ার, আমার এখন মনে হয়, তুই ঠিকই বলেছিলি তখন, বাইরের সৌন্দর্য মুখ্য নয়। তখন যদি রায়হানের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে নিপার ছোট বোনকে রায়হানের বউ করে আনতাম তবে হয়তো এমনটা হতো না। আর রায়হানও লন্ডনে পাড়ি জমাতো না। অন্তত শেষ বিদায়টা তো দিতে পারতো আমায়! নিজের একমাত্র ছেলের বউ খুব সুন্দরী হবে, এমন অন্তর্গত অহংবোধের প্রত্যাশাই সবকিছু এলোমেলো করে দিল। যাই হোক, তুই ওকে বুঝিয়ে বলিস, যেন নতুনভাবে সংসারটা শুরু করে।
আমি অনেক বুঝিয়েছি স্যার, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। আবারও যদি প্রতারিত হয় সেই ভয় ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।
বুক খালি করা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্যার বললেন, জানিস শাহরিয়ার, ছেলেটার কথা ভাবলেই বন্যার তুমুল স্রোতের মতোই মাঝে মাঝে হৃৎপিণ্ড থেকে প্রচুর রক্ত বেরিয়ে এসে মনে হয় বুকের চারপাশে তোলপাড় করে ছড়িয়ে পড়ছে। আমার খুব কষ্ট হয়। সহ্য করতে পারি না...
স্যারের কথাগুলো শুনে চোখ দুটো ভিজে ওঠে। ঘরের জানালার গ্রিল গলে ভেসে আসা মৃদু হাওয়ায় তার দীর্ঘশ্বাস নিমেষে মিলিয়ে যায়। আমি সেই দীর্ঘশ্বাসের ব্যথা অনুভব করতে পারি। আমার দৃষ্টি ঘর থেকে ঠিকরে বাইরে চলে যায়। দেখি, গাছের পাতাগুলোও ঝিরঝির কাঁপছে...
শাদা কাগজ
শাদা কাগজের মতো মন
আমি কল্পনা করি শাদা কাগজের মন
তার নির্মল স্মিত হাসি
তার নিঃশব্দ শাদা কান্না!
বাতাসের লম্বা ঢালে শাদা কাগজ
ধরে রাখে তার ফুরফুরে উড়াল
শাদা বুকের আড়ালে জমিয়ে রাখে
ঝরাপাতা; ঊর্ধ্বমুখী ডালপালার বিস্ময়।
আশা
প্রাচীনকালের নায়িকার কথা
আমার মনে আছে
তার ব্যাকুলতা, তার বেদনাভরা চোখের
পাপড়ি আমি ভুলে গেছি!
এখন অন্ধকার বারান্দায়
হেলানচেয়ারে বসে গান করি;
গান শেষ হওয়ার পর আমি জীবনের চিরসত্য
এক ঝলক দেখি অন্ধকারে
আশার অস্পষ্ট মুখ
আমার প্রায় ঠা-া হৃদয়ের মাঝখানে
রাখা লাল জামরুল সে তুলে নিয়েছিল
একদিন রূপালী বিভ্রমে!
দড়ি ও শিকল
আকাশ থেকে নেমে এসেছে মোটা একটা দড়ি
নিচের প্রান্তটি ঝুলছে!
ওই দড়ি বেয়ে কোথাও যেতে পারি না আমরা!
গাছের গোড়া থেকে মোটা একটা শিকল
পানির গভীরে নেমে গেছে
ওই দড়ি আমাদের আকাক্সক্ষার বাঁকে
ওড়ায় ফানুস!
ওই শিকল আমাদের অনিশ্চয়তার
পথে দেখায় আঁধার!
শেষ রাতে দড়ি ও শিকল
উঠে যায় সাত আসমানে,
ভোরের মুলমুলে হাওয়ায়
কিছু কিছু বোঝা যায় তার মানে!
আলু
সারাটা শীতকাল ঠান্ডা হজম করে
বসন্তকালে তার রোদঝলমল মুখ
এখন সে উজ্জ্বল হয়ে আছে
মাটির রহস্যভরা মুখমন্ডল;
বুকের নিচে সূর্য ঘুমিয়ে আছে
মুখের ওপর টিপটিপ জল
এখন সে মেঘলা সময়ের
ঝাপসা আকাশ বহুরূপী,
হাসতে হাসতে মিশে যাচ্ছে সকলের সাথে!
বিয়ের পর
নারীরা খোলস ছাড়ে
পুরুষরাও!
মধ্যরাতে টেবিলের কোনা ধরে
বিহ্বল দাঁড়িয়ে থাকে নারীসকল
পুরুষরাও!
এক সময় ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে
তারা; চেয়ে থাকে ঊর্ধ্বমুখ
যেন রাত দ্যাখেনি আগে
তারা দ্যাখেনি আগে
মনোবেদনার আয়না দ্যাখেনি জীবনে!
একই ছাদের নিচে
একা হতে থাকে দুটি মাথা।
খোঁজাখুঁজি
সে তাকে খোঁজে বেলাভূমির উচ্ছ্বাসের ভেতর
কিন্তু সে আছে পাহাড়ের গাম্ভীর্যে
সে তাকে খোঁজে গোলাপের ঝাড়ে
কিন্তু সে আছে তৃণহীন মাঠের গ্রীষ্মধাঁধায়!
আছে লালচে বালুমাটির গভীরে
ছেঁড়া বালিশের বিচির ভেতর
আছে সবুজ স্মৃতি ও পান্ডুর
ভুলে যাওয়ার মাঝখানে!
সে তাকে খোঁজে তারা-খসা বাগানবাড়িতে
আসলে সে থাকে
পোকাধরা আপেলের হীনম্মন্যতায়।
চাওয়া
মেয়েটা চায় ছেলেটা তাকে কবিতায় আঁকুক
সুগন্ধি মেখে তার জন্য অপেক্ষায় থাকুক!
তার চলার পথে অধীর চিহ্ন রাখুক!
মেয়েটা চায় ছেলেটা তার জন্য পাগল হোক
খুব করে ভালোবাসুক
যখন তখন তার ফোনে মিসডকল দিক
করুণ রিংটোন হয়ে বাজুক!
ছন্দিত শব্দের বার্তা আসুক!
হুডখোলা রিকশায় কপালের এলো চুল সরাক!
বৃষ্টি সন্ধ্যায় ভয় কাতরে বুকে জড়াক!
মেয়েটা অনেক কিছুই চায়Ñ চায় আগল ভাঙুক
ছেলেটা মাতালগন্ধে তার দিকে ছুটুক!
মেয়েটার মনে অনেক দ্বিধা
ছেলেটা দূরেই থাকুক!
আজন্মের তৃষ্ণা নিয়ে দুজন অপার বেদনায় পোড়ে!
জননী
আগরবাতি লোবানের গন্ধ
সব মুছে যায়!
পচে যায় দেহ এবং কাফনের কাপড়।
বন্ধু স্বজন শত্রুমহল
আমাকে ভুলে যায়!
বিলীন হয়ে যাই আমি
মহাকালের স্রোতে!
কোথাও লেখা থাকে না
আমার নাম!
আমি আর কোথাও থাকি না
শেষ হয়ে যাওয়া জীবনের পর!
শুধু জননীর অন্তরে বেঁচে থাকে
তার মৃত সন্তান!
কবি হেলাল হাফিজের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হাতে লিখে পাঠান ধ্রুপদির ঠিকানায়। নির্বাচিত সঠিক উত্তরদাতাদের
একজন পাবেন এডুসেন্ট্রিক, মুন্সিয়ানা ও ধ্রুপদির সৌজন্যে মূল্যবান বই।
উত্তর ধ্রুপদির ডেস্কে পৌঁছাতে হবে ৩০ আগস্টের আগে।
ধ্রুপদি জিজ্ঞাসা ২৮-এর সঠিক উত্তর
আত্মরক্ষার প্রতিবেদন
অজস্র সঠিক উত্তরের মধ্যে ভাগ্যপরীক্ষা পেরিয়ে মূল্যবান বই জিতেছেন হারাগাছ রংপুরের
মো. মোকাদ্দেস আলী। আপনাকে অভিনন্দন।
ধ্রুপদিতে লেখা পাঠানোর ঠিকানা : বিভাগীয় সম্পাদক, ধ্রুপদি, দৈনিক দেশ রূপান্তর, পঞ্চমতলা, রূপায়ণ ট্রেড সেন্টার, ১১৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, বাংলা মোটর, ঢাকা-১০০০ ।
লেখা পাঠানো যাবে ইমেইলেও [email protected] ঠিকানায়।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।