
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর সামনে ‘বেসিস সফটএক্সপো-২০২৩’-এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী নিয়ে লিখেছেন অনিন্দ্য শোভা
‘ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স’ স্লোগান নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) উদ্যোগে আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘বেসিস সফটএক্সপো-২০২৩’ শেষ হয়েছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
প্ল্যাটফর্ম সোপিয়া
বাংলাদেশের প্রথম গ্লোবাল নো কোডিং ই-কমার্স, ব্লগ এবং পোর্টফোলিও প্ল্যাটফর্ম সোপিয়া (শপ্পিয়া, Soppiya) এই প্রদর্শনীতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অফিশিয়ালি যাত্রা শুরু করেছে। বাংলাদেশ ই-কমার্স ব্যবসার নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সোপিয়ার নির্বাহী পরিচালক আসাদ বিন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, শপ্পিয়া একটি সাসভিত্তিক (এসএএসএস) সিএমএস প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহারের মাধ্যমে ৩০ মিনিট সুবিধাজনক প্যাকেজ, থিম, প্লাগইন, উইজেট, হোস্টেড সলিউশন এবং উন্নত প্রযুক্তিসহ মানসম্পন্ন প্রফেশনাল ই-কমার্স, ব্লগ, পোর্টফোলিও এবং ওয়েবসাইট একদম বিনামূল্যে নিজেই তৈরি করে নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘যাদের কোনো কোডিং বা প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই তারাও ওয়েবসাইট সেটআপ করতে পারবেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
চাকরি মেলার আয়োজন
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইটি গ্র্যাজুয়েট ও আইটি প্রফেশনালরা এই চাকরি মেলায় আসেন। পাঁচ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী এই চাকরি মেলায় অংশ নেন। চাকরিপ্রত্যাশীরা পছন্দসই একেকজন ৩-৫টি আইটি কোম্পানিতে রেজিস্ট্রেশন করেন। এতে অংশ নেয় ১০২টি চাকরিদাতা আইটি প্রতিষ্ঠান।
চাকরি মেলার আয়োজন নিয়ে বিডিজবস ডটকমের মার্কেটিং ডিরেক্টর প্রকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ‘দেশের ক্রমবর্ধমান আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ আইটি প্রফেশনালদের বিপুল চাহিদা রয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০২টি আইটি কোম্পানি ৫০০টি পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ দিতে চাকরিপ্রত্যাশীদের সিভি নিয়েছে।’ বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘বিডিজবস এবারের সফটএক্সপোতে দেশের সর্ববৃহৎ আইটি জব ফেয়ারের আয়োজন করেছে। মেলায় আমরা অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। আশা করছি, এখান থেকে পাঁচ শতাধিক পদের বিপরীতে আইটি গ্র্যাজুয়েট ও আইটি প্রফেশনালরা নিশ্চিতভাবে চাকরি পাবেন।’
ই-ট্র্যাকারের চার সেবা
দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ই-ট্র্যাকার এবারের প্রদর্শনীতে নিজেদের চারটি তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেবা প্রদর্শন করেছে। সেবার মধ্যে ছিল ‘সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট’, যা সেলস ফোর্স এবং সেলস অর্ডার ম্যানেজমেন্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন; ‘পোলট্রি প্রো’, যা পোলট্রিশিল্পের সব কার্যক্রমের পাশাপাশি ভ্যাকসিন শিডিউল মেইনটেন এবং এফসিআর, লেয়ার লাইফ সাইকেল, ব্রয়লার লাইফ সাইকেলসহ বিশেষায়িত সব প্রতিবেদন একটি মোবাইল অ্যাপ থেকে পাওয়ার সমাধান; ‘সুপার কাপ’, যা কাস্টমার বা ইনফ্লুয়েনসারকে কোম্পানির প্রতি অনুগত রাখা, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন, কোম্পানির ব্র্যান্ডিং ও প্রমোশনাল অফার ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করবে; ‘এইচআর টেলিস্কোপ’, যা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে সমাধান দেবে।
ই-ট্র্যাকার সলিউশনের কর্ণধার সাখাওয়াত রনি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের বিজনেস ইন্ডাস্ট্রি উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলোর সঙ্গে পরিচিত হোক, আইটি সেবা গ্রহণের মাধ্যমে কাজগুলো সহজ করার পাশাপাশি ব্যবসায়ে সাফল্য বয়ে নিয়ে আসুক।’
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যারের বিকল্প নেই
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্পিকার
প্রতিদিনই আমাদের সফটওয়্যার নির্ভরশীলতা বাড়ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যারের বিকল্প নেই। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট নামে চারটি স্তম্ভ নির্ধারণ করা হয়েছে, আশা করি সে ক্ষেত্রে বেসিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব
রাসেল টি আহমেদ, বেসিস সভাপতি
২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বেসিস বিশ্বাস করে, শুধু ৫ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব। দেশের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী আয়োজনের মূল লক্ষ্য স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার পাশাপাশি সম্ভাবনাকে তুলে ধরা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই মেধার মাধ্যমে ভ্যালুয়েশন সম্ভব
মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রথম প্রোগ্রামার হানিফ উদ্দিন মিয়ার কোডিং থেকে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের যাত্রা। এখন এই খাত বহু গুণে সমৃদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী আমাদের রপ্তানি বিকেন্দ্রীকরণের কথা জানিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতই একমাত্র খাত যেখানে শুধু মেধার মাধ্যমে শতভাগ ভ্যালুয়েশন সম্ভব।
প্রাথমিক থেকে কোডিং শেখানো হচ্ছে
জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
আইসিটি এখন অন্যতম শিল্প খাত হয়ে উঠেছে। ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বর্তমানে ১.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ সেটি ৫ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত করতে সরকারি ও বেসিস যৌথভাবে কাজ করছে। দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এক লাখ ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রবলেম সলভার তৈরিতে প্রাথমিক থেকেই কোডিং শেখানো হচ্ছে। বেসিস সদস্যদের বেশ কটি প্রতিষ্ঠান বিদেশের প্রয়োজন মেটাতে এআই ও মাইক্রো চিপ তৈরির কাজ করছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়েক বছর ধরে কেনাকাটা, উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রাহক পরিষেবায় ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোবট।
সুপারশপগুলোতে ব্যবহৃত সক্রিয় রোবটের উদাহরণ হলো ট্যালি রোবট, সিম্বে রোবোটিক্স দ্বারা তৈরি। ট্যালি হলো একটি শেল্ফ-স্ক্যানিং রোবট যা সুপারশপের করিডোরগুলো নেভিগেট করে। স্টক-এর বাইরে থাকা আইটেম এবং মূল্যের ত্রুটি যেমন শনাক্ত করতে পারে, তেমনি ভুল স্থানান্তরিত পণ্যও শনাক্ত করে। ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট এবং পণ্য প্লেসমেন্ট করে কর্মীদের সাহায্য করতে রিয়েল-টাইম ডেটা সরবরাহ করে। সুপারমার্কেটগুলো রোবট ব্যবহার এখনো পুরোপুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে। যা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য এবং স্টোর লেআউট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। অনলাইন অর্ডার পূরণেও রোবট ব্যবহার হচ্ছে। রোবটগুলো পণ্য বাছাই বা প্যাকেটজাত করে সেসব গ্রাহকদের পিকআপের জন্য প্রস্তুত করে দেয়। সামগ্রিকভাবে, রোবট সুপারমার্কেটগুলোকে শ্রম ও সময়ের সংরক্ষণে গ্রাহকদের জন্য নির্বিঘে্ন কেনাকাটার সুযোগ দিয়ে আসছে। তাছাড়া রোবটগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা গ্রাহক ও কর্মীদের উভয়কে সুরক্ষা দিচ্ছে। শপে ব্যবহৃত রোবটের আরেকটি উদাহরণ হলো মার্টি রোবট, ব্যাজার টেকনোলজিস দ্বারা তৈরি। মার্টি হলো ফ্লোর-ক্লিনিং রোবট যেটি সেন্সর এবং মেশিন ভিশন ব্যবহারের মাধ্যমে দোকানে পরে থাকা ক্ষতিকর আবর্জনা বা বস্তু শনাক্ত করে। এছাড়া যেসব পণ্য যথাযথ স্থানে রাখা হয়নি এবং গ্রাহকরা যাতে খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে না পরে সেটাও শনাক্ত করতে সাহায্য করে। ইতিমধ্যে এই রোবটগুলো গ্রাহক পরিষেবা সহায়তা প্রদানের জন্য চ্যাটবট এবং ভয়েস সহকারী প্রযুক্তিও তৈরি করছে। এই ধরনের রোবট মানব কর্মীদের প্রয়োজন যেমন কমাচ্ছে তেমনি গ্রাহকদের পণ্যগুলো খুঁজে পেতেও সাহায্য করছে। এছাড়া গ্রাহকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং সুপারিশ প্রদানের ক্ষেত্রে সাহায্যও করে।
সুপারশপ ব্যবহৃত রোবটের সুবিধা
দক্ষতা: সুপারশপ রোবট ক্লান্ত না হয়ে বা বিরতির প্রয়োজন ছাড়াই একটানা এবং দ্রুত কাজ করতে পারে। যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। ব্যবহৃত রোবট একই কাজ বারবার বা ক্লান্তিকর কাজগুলো করতে পারে।
নির্ভুলতা : রোবট যাতে নির্ভুল কাজ শেষ করতে পারে সেসব প্রোগ্রাম আরও যোগ করা এবং ত্রুটি হ্রাস করার চেষ্টা চলছে।
ব্যয়: দীর্ঘমেয়াদে সুপারশপে রোবট বিনিয়োগ করা সাশ্রয়ী। কারণ তারা বিরতি ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর বিভিন্ন উপায় নিয়ে কাজ করছেন বোয়ান সø্যাট নামে একজন উদ্যোক্তা। এই কাজটি করছেন প্রায় এক দশক ধরে। ‘ওশন ক্লিনআপ’ নামে অলাভজনক পরিবেশ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ। সাগরে জমে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বড় জঞ্জালটি পরিচিত ‘দ্য গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’ নামে। এটি রয়েছে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে।
এই জঞ্জালের মধ্যে রয়েছে মাছ ধরার জাল ও মাইক্রোপ্লাস্টিক। বর্জ্য আটকাতে ওশন ক্লিনআপ দল দীর্ঘ, ইউ-আকৃতির এক কাঠামো ব্যবহার করে, যা দেখতে মাছ ধরা জালের মতো। এর দুপাশে দুটি নৌকার মাধ্যমে বিভিন্ন বর্জ্যরে স্তূপ টানা হয়। জলজ প্রাণীদের যেন সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ধীর গতিতে চলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-চালিত ক্যামেরার মাধ্যমে সাগর পৃষ্ঠে ক্রমাগত স্ক্যান করে সেটি আগে থেকে করে রাখা কম্পিউটার মডেলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে দলটি। এর ফলে, প্রশান্ত মহাসাগরের টার্গেট এলাকা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা হয়। সাগর থেকে তুলে আনা এই প্লাস্টিক পরে রিসাইকল হয়। উদ্যোক্তা বোয়ান বলেন, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক পরিষ্কার করা হয়েছে।
এ বছরের শেষ নাগাদ সাগরের বর্জ্যরে স্তূপ থেকে ১ শতাংশ তুলে আনা যাবে। এ ছাড়া ‘সিস্টেম ৩’ নামে নতুন আর একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে দলটি। ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশাল এই প্রতিবন্ধক ব্যবস্থা চালু হবে শিগগিরই। ‘ওশন ক্লিনআপ’-এর অনুমান বলছে, এমন দশটি বিশালাকারের সিস্টেম চালু করলে এই দশকের শেষে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। ২০২১ সালে করা কোম্পানির গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণের ৮০ শতাংশেরই উৎস বিশ্বের প্রায় এক হাজার নদী। নদীতে প্লাস্টিক আটকানোর সুযোগ না থাকলে নিশ্চিতভাবেই সাগরে গিয়ে পড়ে। সাগরে পৌঁছানোর আগে, নদী থেকে বর্জ্য তুলে আনতে নিজেদের ‘ইন্টারসেপ্টর’ নামে ব্যবস্থা ব্যবহার করে কোম্পানিটি। এই প্রযুক্তি পরিবর্তিত হয় নদীর প্রস্থ, গভীরতা, প্রবাহের গতি ও আবর্জনার ধরনের মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে।
এআই-চালিত ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো মূল্যায়ন করা হয়। আমরা বিশ্বের ১১টি নদীতে প্লাস্টিক আটকাচ্ছি বলেন বোয়ান। তবে, শেষ পর্যন্ত বিশ্বের এক হাজার দূষিত নদীতে আমরা এই ব্যবস্থা চালু করব, এটা লক্ষ্য আমাদের।
নাহার সুলতানা
প্রথমবারের মতো এআর (অগমেন্টেড রিয়েলিটি) প্রযুক্তির হেডসেট তৈরি করেছে টেলিযোগাযোগ পণ্য নির্মাতা শাওমি। গত সোমবার স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের (এমডব্লিওসি) প্রথম দিনে হেডসেটটি প্রদর্শন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শাওমি ওয়্যারলেস এআর গ্লাস ডিসকভারি এডিশন মডেলের হেডসেটটিতে দুটি মাইক্রোওএলইডি প্রযুক্তির কাচ থাকায় অগমেন্টেড রিয়েলিটির ছবি দেখা যায়। স্ন্যাপড্রাগন এক্সআর২ জেনারেশন ওয়ান প্রসেসরে চলা হেডসেটটি হাত নড়াচড়া করেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ওয়্যারলেস প্রযুক্তি থাকায় নির্দিষ্ট মডেলের ফোনের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে হেডসেটটি। ফোনে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ চালু বা বন্ধ করার পাশাপাশি ইউটিউব ও টিকটক ভিডিও সিনেমার আদলে বড় পর্দায় দেখা যাবে। চাইলে ফোন থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে হেডসেটটি।
মনিরুজ্জামান
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।