
প্রথমবারের মতো এআর (অগমেন্টেড রিয়েলিটি) প্রযুক্তির হেডসেট তৈরি করেছে টেলিযোগাযোগ পণ্য নির্মাতা শাওমি। গত সোমবার স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের (এমডব্লিওসি) প্রথম দিনে হেডসেটটি প্রদর্শন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শাওমি ওয়্যারলেস এআর গ্লাস ডিসকভারি এডিশন মডেলের হেডসেটটিতে দুটি মাইক্রোওএলইডি প্রযুক্তির কাচ থাকায় অগমেন্টেড রিয়েলিটির ছবি দেখা যায়। স্ন্যাপড্রাগন এক্সআর২ জেনারেশন ওয়ান প্রসেসরে চলা হেডসেটটি হাত নড়াচড়া করেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ওয়্যারলেস প্রযুক্তি থাকায় নির্দিষ্ট মডেলের ফোনের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে হেডসেটটি। ফোনে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ চালু বা বন্ধ করার পাশাপাশি ইউটিউব ও টিকটক ভিডিও সিনেমার আদলে বড় পর্দায় দেখা যাবে। চাইলে ফোন থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে হেডসেটটি।
মনিরুজ্জামান
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়েক বছর ধরে কেনাকাটা, উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রাহক পরিষেবায় ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোবট।
সুপারশপগুলোতে ব্যবহৃত সক্রিয় রোবটের উদাহরণ হলো ট্যালি রোবট, সিম্বে রোবোটিক্স দ্বারা তৈরি। ট্যালি হলো একটি শেল্ফ-স্ক্যানিং রোবট যা সুপারশপের করিডোরগুলো নেভিগেট করে। স্টক-এর বাইরে থাকা আইটেম এবং মূল্যের ত্রুটি যেমন শনাক্ত করতে পারে, তেমনি ভুল স্থানান্তরিত পণ্যও শনাক্ত করে। ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট এবং পণ্য প্লেসমেন্ট করে কর্মীদের সাহায্য করতে রিয়েল-টাইম ডেটা সরবরাহ করে। সুপারমার্কেটগুলো রোবট ব্যবহার এখনো পুরোপুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে। যা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য এবং স্টোর লেআউট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। অনলাইন অর্ডার পূরণেও রোবট ব্যবহার হচ্ছে। রোবটগুলো পণ্য বাছাই বা প্যাকেটজাত করে সেসব গ্রাহকদের পিকআপের জন্য প্রস্তুত করে দেয়। সামগ্রিকভাবে, রোবট সুপারমার্কেটগুলোকে শ্রম ও সময়ের সংরক্ষণে গ্রাহকদের জন্য নির্বিঘে্ন কেনাকাটার সুযোগ দিয়ে আসছে। তাছাড়া রোবটগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা গ্রাহক ও কর্মীদের উভয়কে সুরক্ষা দিচ্ছে। শপে ব্যবহৃত রোবটের আরেকটি উদাহরণ হলো মার্টি রোবট, ব্যাজার টেকনোলজিস দ্বারা তৈরি। মার্টি হলো ফ্লোর-ক্লিনিং রোবট যেটি সেন্সর এবং মেশিন ভিশন ব্যবহারের মাধ্যমে দোকানে পরে থাকা ক্ষতিকর আবর্জনা বা বস্তু শনাক্ত করে। এছাড়া যেসব পণ্য যথাযথ স্থানে রাখা হয়নি এবং গ্রাহকরা যাতে খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে না পরে সেটাও শনাক্ত করতে সাহায্য করে। ইতিমধ্যে এই রোবটগুলো গ্রাহক পরিষেবা সহায়তা প্রদানের জন্য চ্যাটবট এবং ভয়েস সহকারী প্রযুক্তিও তৈরি করছে। এই ধরনের রোবট মানব কর্মীদের প্রয়োজন যেমন কমাচ্ছে তেমনি গ্রাহকদের পণ্যগুলো খুঁজে পেতেও সাহায্য করছে। এছাড়া গ্রাহকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং সুপারিশ প্রদানের ক্ষেত্রে সাহায্যও করে।
সুপারশপ ব্যবহৃত রোবটের সুবিধা
দক্ষতা: সুপারশপ রোবট ক্লান্ত না হয়ে বা বিরতির প্রয়োজন ছাড়াই একটানা এবং দ্রুত কাজ করতে পারে। যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। ব্যবহৃত রোবট একই কাজ বারবার বা ক্লান্তিকর কাজগুলো করতে পারে।
নির্ভুলতা : রোবট যাতে নির্ভুল কাজ শেষ করতে পারে সেসব প্রোগ্রাম আরও যোগ করা এবং ত্রুটি হ্রাস করার চেষ্টা চলছে।
ব্যয়: দীর্ঘমেয়াদে সুপারশপে রোবট বিনিয়োগ করা সাশ্রয়ী। কারণ তারা বিরতি ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর সামনে ‘বেসিস সফটএক্সপো-২০২৩’-এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী নিয়ে লিখেছেন অনিন্দ্য শোভা
‘ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স’ স্লোগান নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) উদ্যোগে আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘বেসিস সফটএক্সপো-২০২৩’ শেষ হয়েছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
প্ল্যাটফর্ম সোপিয়া
বাংলাদেশের প্রথম গ্লোবাল নো কোডিং ই-কমার্স, ব্লগ এবং পোর্টফোলিও প্ল্যাটফর্ম সোপিয়া (শপ্পিয়া, Soppiya) এই প্রদর্শনীতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অফিশিয়ালি যাত্রা শুরু করেছে। বাংলাদেশ ই-কমার্স ব্যবসার নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সোপিয়ার নির্বাহী পরিচালক আসাদ বিন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, শপ্পিয়া একটি সাসভিত্তিক (এসএএসএস) সিএমএস প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহারের মাধ্যমে ৩০ মিনিট সুবিধাজনক প্যাকেজ, থিম, প্লাগইন, উইজেট, হোস্টেড সলিউশন এবং উন্নত প্রযুক্তিসহ মানসম্পন্ন প্রফেশনাল ই-কমার্স, ব্লগ, পোর্টফোলিও এবং ওয়েবসাইট একদম বিনামূল্যে নিজেই তৈরি করে নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘যাদের কোনো কোডিং বা প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই তারাও ওয়েবসাইট সেটআপ করতে পারবেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
চাকরি মেলার আয়োজন
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইটি গ্র্যাজুয়েট ও আইটি প্রফেশনালরা এই চাকরি মেলায় আসেন। পাঁচ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী এই চাকরি মেলায় অংশ নেন। চাকরিপ্রত্যাশীরা পছন্দসই একেকজন ৩-৫টি আইটি কোম্পানিতে রেজিস্ট্রেশন করেন। এতে অংশ নেয় ১০২টি চাকরিদাতা আইটি প্রতিষ্ঠান।
চাকরি মেলার আয়োজন নিয়ে বিডিজবস ডটকমের মার্কেটিং ডিরেক্টর প্রকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ‘দেশের ক্রমবর্ধমান আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ আইটি প্রফেশনালদের বিপুল চাহিদা রয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০২টি আইটি কোম্পানি ৫০০টি পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ দিতে চাকরিপ্রত্যাশীদের সিভি নিয়েছে।’ বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘বিডিজবস এবারের সফটএক্সপোতে দেশের সর্ববৃহৎ আইটি জব ফেয়ারের আয়োজন করেছে। মেলায় আমরা অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। আশা করছি, এখান থেকে পাঁচ শতাধিক পদের বিপরীতে আইটি গ্র্যাজুয়েট ও আইটি প্রফেশনালরা নিশ্চিতভাবে চাকরি পাবেন।’
ই-ট্র্যাকারের চার সেবা
দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ই-ট্র্যাকার এবারের প্রদর্শনীতে নিজেদের চারটি তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেবা প্রদর্শন করেছে। সেবার মধ্যে ছিল ‘সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট’, যা সেলস ফোর্স এবং সেলস অর্ডার ম্যানেজমেন্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন; ‘পোলট্রি প্রো’, যা পোলট্রিশিল্পের সব কার্যক্রমের পাশাপাশি ভ্যাকসিন শিডিউল মেইনটেন এবং এফসিআর, লেয়ার লাইফ সাইকেল, ব্রয়লার লাইফ সাইকেলসহ বিশেষায়িত সব প্রতিবেদন একটি মোবাইল অ্যাপ থেকে পাওয়ার সমাধান; ‘সুপার কাপ’, যা কাস্টমার বা ইনফ্লুয়েনসারকে কোম্পানির প্রতি অনুগত রাখা, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন, কোম্পানির ব্র্যান্ডিং ও প্রমোশনাল অফার ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করবে; ‘এইচআর টেলিস্কোপ’, যা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে সমাধান দেবে।
ই-ট্র্যাকার সলিউশনের কর্ণধার সাখাওয়াত রনি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের বিজনেস ইন্ডাস্ট্রি উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলোর সঙ্গে পরিচিত হোক, আইটি সেবা গ্রহণের মাধ্যমে কাজগুলো সহজ করার পাশাপাশি ব্যবসায়ে সাফল্য বয়ে নিয়ে আসুক।’
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যারের বিকল্প নেই
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্পিকার
প্রতিদিনই আমাদের সফটওয়্যার নির্ভরশীলতা বাড়ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যারের বিকল্প নেই। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট নামে চারটি স্তম্ভ নির্ধারণ করা হয়েছে, আশা করি সে ক্ষেত্রে বেসিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব
রাসেল টি আহমেদ, বেসিস সভাপতি
২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বেসিস বিশ্বাস করে, শুধু ৫ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব। দেশের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী আয়োজনের মূল লক্ষ্য স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার পাশাপাশি সম্ভাবনাকে তুলে ধরা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই মেধার মাধ্যমে ভ্যালুয়েশন সম্ভব
মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রথম প্রোগ্রামার হানিফ উদ্দিন মিয়ার কোডিং থেকে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের যাত্রা। এখন এই খাত বহু গুণে সমৃদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী আমাদের রপ্তানি বিকেন্দ্রীকরণের কথা জানিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতই একমাত্র খাত যেখানে শুধু মেধার মাধ্যমে শতভাগ ভ্যালুয়েশন সম্ভব।
প্রাথমিক থেকে কোডিং শেখানো হচ্ছে
জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
আইসিটি এখন অন্যতম শিল্প খাত হয়ে উঠেছে। ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বর্তমানে ১.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ সেটি ৫ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত করতে সরকারি ও বেসিস যৌথভাবে কাজ করছে। দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এক লাখ ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রবলেম সলভার তৈরিতে প্রাথমিক থেকেই কোডিং শেখানো হচ্ছে। বেসিস সদস্যদের বেশ কটি প্রতিষ্ঠান বিদেশের প্রয়োজন মেটাতে এআই ও মাইক্রো চিপ তৈরির কাজ করছে।
প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর বিভিন্ন উপায় নিয়ে কাজ করছেন বোয়ান সø্যাট নামে একজন উদ্যোক্তা। এই কাজটি করছেন প্রায় এক দশক ধরে। ‘ওশন ক্লিনআপ’ নামে অলাভজনক পরিবেশ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ। সাগরে জমে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বড় জঞ্জালটি পরিচিত ‘দ্য গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচ’ নামে। এটি রয়েছে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে।
এই জঞ্জালের মধ্যে রয়েছে মাছ ধরার জাল ও মাইক্রোপ্লাস্টিক। বর্জ্য আটকাতে ওশন ক্লিনআপ দল দীর্ঘ, ইউ-আকৃতির এক কাঠামো ব্যবহার করে, যা দেখতে মাছ ধরা জালের মতো। এর দুপাশে দুটি নৌকার মাধ্যমে বিভিন্ন বর্জ্যরে স্তূপ টানা হয়। জলজ প্রাণীদের যেন সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ধীর গতিতে চলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-চালিত ক্যামেরার মাধ্যমে সাগর পৃষ্ঠে ক্রমাগত স্ক্যান করে সেটি আগে থেকে করে রাখা কম্পিউটার মডেলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে দলটি। এর ফলে, প্রশান্ত মহাসাগরের টার্গেট এলাকা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা হয়। সাগর থেকে তুলে আনা এই প্লাস্টিক পরে রিসাইকল হয়। উদ্যোক্তা বোয়ান বলেন, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক পরিষ্কার করা হয়েছে।
এ বছরের শেষ নাগাদ সাগরের বর্জ্যরে স্তূপ থেকে ১ শতাংশ তুলে আনা যাবে। এ ছাড়া ‘সিস্টেম ৩’ নামে নতুন আর একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে দলটি। ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশাল এই প্রতিবন্ধক ব্যবস্থা চালু হবে শিগগিরই। ‘ওশন ক্লিনআপ’-এর অনুমান বলছে, এমন দশটি বিশালাকারের সিস্টেম চালু করলে এই দশকের শেষে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। ২০২১ সালে করা কোম্পানির গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণের ৮০ শতাংশেরই উৎস বিশ্বের প্রায় এক হাজার নদী। নদীতে প্লাস্টিক আটকানোর সুযোগ না থাকলে নিশ্চিতভাবেই সাগরে গিয়ে পড়ে। সাগরে পৌঁছানোর আগে, নদী থেকে বর্জ্য তুলে আনতে নিজেদের ‘ইন্টারসেপ্টর’ নামে ব্যবস্থা ব্যবহার করে কোম্পানিটি। এই প্রযুক্তি পরিবর্তিত হয় নদীর প্রস্থ, গভীরতা, প্রবাহের গতি ও আবর্জনার ধরনের মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে।
এআই-চালিত ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো মূল্যায়ন করা হয়। আমরা বিশ্বের ১১টি নদীতে প্লাস্টিক আটকাচ্ছি বলেন বোয়ান। তবে, শেষ পর্যন্ত বিশ্বের এক হাজার দূষিত নদীতে আমরা এই ব্যবস্থা চালু করব, এটা লক্ষ্য আমাদের।
নাহার সুলতানা
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।