নতুন বাস্তবতা ওয়েবিনার
তানিয়া আক্তার | ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
করোনার হঠাৎ হানায় বদলে গিয়েছে জীবন। তবে থমকে থাকেনি কিছুই। যাপিত জীবনের সবকিছুই বহমান ডিজিটাল স্রোতে। সেই ঘরবন্দির সময় থেকেই ওয়েবিনার একটি বেশ পরিচিত শব্দ। কারণ শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবস-বাণিজ্য, খেলা, বিনোদন, কর্মজীবন, সভা, সেমিনার সবই চলেছে অনলাইনে। ঘরবন্দি সময় পেরিয়ে এখনো এই অন্তর্জালেই সরব সবাই। অনেকের ব্যক্তিজীবন এবং কর্মজীবনে সামঞ্জস্য এনে দিয়েছে ওয়েবিনার। সময় এবং অর্থের দিক থেকে সাশ্রয়ী হওয়ায় নতুন স্বাভাবিক সময়ে ওয়েবিনারও একটি নতুন বাস্তবতা।
করোনাকালে ওয়েবিনার
করোনাকালে ওয়েবিনারে ওয়েবিনার মানে হলো ওয়েব সেমিনার। আর ওয়েবিনারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সুবিধামতো সময়ে যেকোনো জায়গা থেকেই অনেকের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়। ঘরবন্দির সময়ে তাই ওয়েবিনার ছিল পছন্দে এবং প্রয়োজনের শীর্ষে। দেশে কিংবা বিদেশে অর্থাৎ পৃথিবীময় সবার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম এই ওয়েবিনার। সরাসরি মিটিংয়ে সবার মতামত জানার বা জানানোর হয়তো সুযোগ হয়ে ওঠে না কিন্তু ওয়েবিনারে তা সম্ভব। এছাড়া সরাসরি সভা বা সেমিনার অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল। তাই সময় এবং অর্থের অপচয়রোধেও ঘরবন্দি সময়ের পরেও এর জনপ্রিয়তা রয়েছেই।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহান মিজান বলেন, ‘তথ্য আদান-প্রদান কিংবা মতবিনিময় সভার ক্ষেত্রে ওয়েবিনারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। এর মাধ্যমে যেকোনো সময়ে যে কোনো জায়গা থেকে অনায়াসেই অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যে কোনো মিটিংয়ে যুক্ত হতে পারছি। ফলে ব্যক্তিজীবন এবং কর্মজীবনে ব্যালেন্স করতে পারছি।’
ওয়েবিনার আয়োজনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সফটওয়্যার
সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ওয়েবিনার আয়োজনে বর্তমান বিশ্বে রয়েছে নানা ধরনের সফটওয়্যার। নিজেদের সুবিধামতো তাই বাছাই করে নিতে হবে সেই সঠিক সফটওয়্যারটি। এর মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য হলো জুম সফটওয়্যার। কারণ এর মাধ্যমে একসঙ্গে ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী এবং হাজারখানেক দর্শক নিয়ে মিটিং করা যাবে। এছাড়াও রয়েছে গুগল মিট সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২৫০ জন অংশগ্রহণ করতে পারবে। এর অন্যতম সুবিধা হলো স্বয়ংক্রিয় ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে সফটওয়্যারটিতে। তবে তথ্যের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কিন্তু ব্যয়বহুল সফটওয়্যারটি হলো মাইক্রোসফট টিমস। যদি একদম ফ্রিতে কোনো সফটওয়্যার দরকার হয় তাহলে রয়েছে ওয়েবএক্স। সেখানে ১০০ জনের অংশগ্রহণ করা যাবে।
ওয়েবিনারে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।
সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘তথ্যের সুরক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রথমত আমরা যে টুলসগুলো ব্যবহার করি বিশেষ করে জুম এখন অনেক জনপ্রিয়। এগুলো মূলত ক্লাউডবেজড। অর্থাৎ আমার যে সার্ভার সেটা হয়তো কোন দেশে রয়েছে সেগুলো জানি না। বাংলাদেশে যে জুম রয়েছে এটা ভারতীয় একটা সার্ভার থেকে রাউটিং হয়। তাই এগুলো অনেক ক্ষেত্রে সুরক্ষিত নয়। কারণ প্রথম দিকে হ্যাকিংয়ে সমস্যা ছিল। অর্থাৎ জুমের মধ্যে হ্যাকিং করে কোনো ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে যাওয়া এগুলো সমস্যা ছিল। যদিও জুম অনেক নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করেছে। তবুও আমাদের নিজের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যে কোনো সফটওয়্যারই ব্যবহারই করি না কেন সেখানে যে সেটিংস রয়েছে সেখানে গিয়ে পাসওয়ার্ড রাখা যেতে পারে, একটা ওয়েটিং রুমও রাখা যেতে পারে। তাহলে কেউ যদি ঢুকে পরেও সে হয়তো মেইন কনফারেন্সে ঢুকতে না পারে। এমন অনেক টুলস রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’
ওয়েবিনারের আদবকেতা
একটি সফল ওয়েবিনার সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই আদবকেতা মেনে চলতে হবে। প্রথমেই সময় নির্ধারিত করে দিন। মিটিং শুরুর আগে ফোন করে মনে করিয়ে দিন। মিটিং শুরু হলে অপ্রয়োজনীয় কথা বা শব্দ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে সেটি আগেই তৈরি করে সবাইকে পাঠিয়ে দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নোটবন্দি করে রাখুন। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত সময় যাতে না নেওয়া হয়।
শেয়ার করুন
তানিয়া আক্তার | ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

করোনার হঠাৎ হানায় বদলে গিয়েছে জীবন। তবে থমকে থাকেনি কিছুই। যাপিত জীবনের সবকিছুই বহমান ডিজিটাল স্রোতে। সেই ঘরবন্দির সময় থেকেই ওয়েবিনার একটি বেশ পরিচিত শব্দ। কারণ শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবস-বাণিজ্য, খেলা, বিনোদন, কর্মজীবন, সভা, সেমিনার সবই চলেছে অনলাইনে। ঘরবন্দি সময় পেরিয়ে এখনো এই অন্তর্জালেই সরব সবাই। অনেকের ব্যক্তিজীবন এবং কর্মজীবনে সামঞ্জস্য এনে দিয়েছে ওয়েবিনার। সময় এবং অর্থের দিক থেকে সাশ্রয়ী হওয়ায় নতুন স্বাভাবিক সময়ে ওয়েবিনারও একটি নতুন বাস্তবতা।
করোনাকালে ওয়েবিনার
করোনাকালে ওয়েবিনারে ওয়েবিনার মানে হলো ওয়েব সেমিনার। আর ওয়েবিনারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সুবিধামতো সময়ে যেকোনো জায়গা থেকেই অনেকের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়। ঘরবন্দির সময়ে তাই ওয়েবিনার ছিল পছন্দে এবং প্রয়োজনের শীর্ষে। দেশে কিংবা বিদেশে অর্থাৎ পৃথিবীময় সবার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম এই ওয়েবিনার। সরাসরি মিটিংয়ে সবার মতামত জানার বা জানানোর হয়তো সুযোগ হয়ে ওঠে না কিন্তু ওয়েবিনারে তা সম্ভব। এছাড়া সরাসরি সভা বা সেমিনার অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল। তাই সময় এবং অর্থের অপচয়রোধেও ঘরবন্দি সময়ের পরেও এর জনপ্রিয়তা রয়েছেই।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহান মিজান বলেন, ‘তথ্য আদান-প্রদান কিংবা মতবিনিময় সভার ক্ষেত্রে ওয়েবিনারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। এর মাধ্যমে যেকোনো সময়ে যে কোনো জায়গা থেকে অনায়াসেই অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যে কোনো মিটিংয়ে যুক্ত হতে পারছি। ফলে ব্যক্তিজীবন এবং কর্মজীবনে ব্যালেন্স করতে পারছি।’
ওয়েবিনার আয়োজনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সফটওয়্যার
সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ওয়েবিনার আয়োজনে বর্তমান বিশ্বে রয়েছে নানা ধরনের সফটওয়্যার। নিজেদের সুবিধামতো তাই বাছাই করে নিতে হবে সেই সঠিক সফটওয়্যারটি। এর মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য হলো জুম সফটওয়্যার। কারণ এর মাধ্যমে একসঙ্গে ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী এবং হাজারখানেক দর্শক নিয়ে মিটিং করা যাবে। এছাড়াও রয়েছে গুগল মিট সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২৫০ জন অংশগ্রহণ করতে পারবে। এর অন্যতম সুবিধা হলো স্বয়ংক্রিয় ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে সফটওয়্যারটিতে। তবে তথ্যের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কিন্তু ব্যয়বহুল সফটওয়্যারটি হলো মাইক্রোসফট টিমস। যদি একদম ফ্রিতে কোনো সফটওয়্যার দরকার হয় তাহলে রয়েছে ওয়েবএক্স। সেখানে ১০০ জনের অংশগ্রহণ করা যাবে।
ওয়েবিনারে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।
সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘তথ্যের সুরক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রথমত আমরা যে টুলসগুলো ব্যবহার করি বিশেষ করে জুম এখন অনেক জনপ্রিয়। এগুলো মূলত ক্লাউডবেজড। অর্থাৎ আমার যে সার্ভার সেটা হয়তো কোন দেশে রয়েছে সেগুলো জানি না। বাংলাদেশে যে জুম রয়েছে এটা ভারতীয় একটা সার্ভার থেকে রাউটিং হয়। তাই এগুলো অনেক ক্ষেত্রে সুরক্ষিত নয়। কারণ প্রথম দিকে হ্যাকিংয়ে সমস্যা ছিল। অর্থাৎ জুমের মধ্যে হ্যাকিং করে কোনো ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে যাওয়া এগুলো সমস্যা ছিল। যদিও জুম অনেক নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করেছে। তবুও আমাদের নিজের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যে কোনো সফটওয়্যারই ব্যবহারই করি না কেন সেখানে যে সেটিংস রয়েছে সেখানে গিয়ে পাসওয়ার্ড রাখা যেতে পারে, একটা ওয়েটিং রুমও রাখা যেতে পারে। তাহলে কেউ যদি ঢুকে পরেও সে হয়তো মেইন কনফারেন্সে ঢুকতে না পারে। এমন অনেক টুলস রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’
ওয়েবিনারের আদবকেতা
একটি সফল ওয়েবিনার সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই আদবকেতা মেনে চলতে হবে। প্রথমেই সময় নির্ধারিত করে দিন। মিটিং শুরুর আগে ফোন করে মনে করিয়ে দিন। মিটিং শুরু হলে অপ্রয়োজনীয় কথা বা শব্দ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে সেটি আগেই তৈরি করে সবাইকে পাঠিয়ে দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নোটবন্দি করে রাখুন। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত সময় যাতে না নেওয়া হয়।