
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক।
আজ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। সেখানে তিনি পবিত্র ফাতিহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধু, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করেন।
সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় প্রার্থনা করা হয়। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান, উপমহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল মো. নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঢাকা রেঞ্জের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, উপপরিচালক (সমন্বয়) মো. মাহবুবুর রহমান সরকার, উপপরিচালক (মনিটরিং) মো. শরফুজ্জামান, গোপালগঞ্জ ২৩ আনসার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক শাওন আসাদ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোপালগঞ্জ জেলার জেলা কমান্ড্যান্ট মো. ফজলে রাব্বিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি সকালে মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক আনসার-ভিডিপি সদর দপ্তর, খিলগাঁও, ঢাকায় মদ্য-সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসানের কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নেন। এরপর বিকালে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের আগে মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজে সিনিয়র ডিরেক্টিং স্টাফ (আর্মি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ইসলামী ব্যাংক-রিয়া মানি ট্রান্সফার ক্যাশ রেমিট্যান্স উৎসবে তৃতীয় মোটরসাইকেল বিজয়ীর নিকট মোটরসাইকেল হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোটরসাইকেল হস্তান্তর করা হয়।
ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খান মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুর রহিমের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রেক্ষিতে বাঘা শাখার গ্রাহক তার স্ত্রী লাভলী বেগমের নিকট এই পুরস্কার হস্তান্তর করেন।
এ সময় ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. জামাল উদ্দিন মজুমদার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাকসুদুর রহমান, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এ. কে. এম মাহবুব মোর্শেদ ও রাজশাহী জোনপ্রধান মো. মিজানুর রহমান মিজি উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১৪ মে পর্যন্ত চলমান এই ক্যাম্পেইনে রিয়া মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রেরিত ক্যাশ রেমিট্যান্স গ্রাহকদের মধ্যে প্রতি ব্যাংকিং দিবসে ১জন গ্রাহক মোটরসাইকেল জিতে নিতে পারবেন।
“দেশের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাতেই এ পর্যন্ত ৭০০০-এর অধিক স্মার্ট কৃষক- ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী” -তারিক আফজাল, প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবি ব্যাংক লিমিটেড
এবি ব্যাংক লিমিটেড পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার ২৫০০-এর অধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। পাবনার আটঘরিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঋণ বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পাবনা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আব্দুল হামিদ, চেয়ারম্যান, চাটমোহর উপজেলা ও সহ-সভাপতি পাবনা জেলা শাখা আওয়ামী লীগ, মো. শহিদুল ইসলাম রতন, মেয়র, আটঘরিয়া পৌরসভা ও সভাপতি, আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, আলহাজ্ব মো. মোশারোফ হোসেন, চেয়ারম্যান, পাবনা সদর উপজেলা ও সভাপতি, পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, মো. তানভীর ইসলাম, চেয়ারম্যান, আটঘরিয়া উপজেলা ও সদস্য, পাবনা জেলা শাখা আওয়ামী লীগ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবি ব্যাংক লিমিটেড-এর প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব তারিক আফজাল। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
আজ আইসিডিডিআর,বি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যৌথভাবে 'লং টার্ম সিকুয়েল অফ কোভিড-১৯: অ্যা লংজিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ' শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পাঁচ মাসের ফলো-আপের ফলাফল সম্প্রতি গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট রিজওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়ায় প্রকাশিত হয়। ইউএসএআইডি-র অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিউবারকিউলোসিস ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) এই গবেষণায় অর্থায়ন করে।
এশিয়ার মধ্যে এটি প্রথম গবেষণা যেখানে দেখা যায়, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যাকে পোস্ট-কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস) বা লং কোভিড হিসেবেও অভিহিত করা হয়। উক্ত সেমিনারে 'লং কোভিড ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন ফর ফিজিশিয়ানস’ শীর্ষক একটি নির্দেশিকাও উপস্থাপন করা হয়।
বিএসএমএমইউ-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ, এবং আইসিডিডিআর,বি-র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো উপস্থাপন করেন।
তারা জানান, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত দুটি কোভিড-১৯- বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত (আরটি-পিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত) ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জন ব্যক্তিকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা নির্ণয় করার জন্য সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলো-আপ করা হয়। তাদের স্নায়বিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুই বছর ধরে ফলোআপ করা হবে।
গবেষণায় দেখা যায়, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃৎকম্পন, বা পা ফুলে যাওয়া) এবং স্নায়বিক (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বা হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিমঝিম করা ও ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অস্বাভাবিকতা) জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। এই রোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে পৃথক; পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে কোভিড-পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার (১.৫-৪) গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত এবং নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়েছিল এমন রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার সম্ভাবনা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন (২-৩) গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্ত্বেও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার (ব্লাড সুগার) সম্ভাবনা যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল এবং তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। একটি শঙ্কার বিষয় হলো হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি ১,০০০ জনে ১০ জন। একইভাবে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনি জনিত জটিলতা (হাই ক্রিয়েটিনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভার জনিত জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইম) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। আশ্বস্ত করার মতো বিষয় হল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উভয় গ্রুপের জটিলতাগুলোর বেশির ভাগ হ্রাস পেয়েছে। তবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃৎকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ইত্যাদির মতো কিছু সমস্যা রোগমুক্তির ৫ মাস পরেও মৃদু-কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়নি।
এই ফলাফলগুলো কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ এটি দেশে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকদের জন্য লং কোভিড ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন উপস্থাপন করেন। তিনি উল্লেখ করেন একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের অনুপস্থিতি প্রায়শই সহজে নির্ণয় করা যায় না এমন কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোর চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রস্তাবিত গাইডলাইন চিকিৎসকদের সর্বাধিক সাফল্যের সঙ্গে রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে সহায়তা করবে।
আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ গবেষণার ফলাফলের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ধরন নির্ণয়ে এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে কোভিড-১৯-এ যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তারা যদি নিয়মিত ফলোআপ করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন তবেই এই গবেষণা সার্থক হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ-র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ। তিনি দীর্ঘ মেয়াদি কোভিড জটিলতা ও তা সমাধানের জন্য আইসিডিডিআর,বি এবং বিএসএমএমইউ-র বিজ্ঞানীদের এই যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এ সংক্রান্ত গবেষণার আরও নতুন কিছু ধারণা দেন।
তিনি বলেন, আমি আশা করি আইসিডিডিআর,বি ও বিএসএমএমইউ যৌথভাবে আরও নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম গবেষকদের এবং গবেষণা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ দেন। তিনি গবেষণায় অর্থায়নের জন্য ইউএসএআইডি-কে ধন্যবাদ জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
ইউএসএআইডি-র হেলথ এক্সপার্ট ড. সামিনা চৌধুরী সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় ইউএসএআইডি-র বিভিন্ন সহযোগিতা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি মানুষ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কি ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিয়েছে এবং তার ব্যাপ্তি কেমন ছিল তা অজানা ছিল। কিন্তু এই গবেষণা সে বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে। এই উদ্যোগের জন্য আইসিডিডিআর,বি ও বিএসএমএমইউ-কে অনেক ধন্যবাদ।
সেমিনারে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ, আইসিডিডিআর,বি ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড গ্রাহকদের জন্য ফ্রি এসি ক্লিনিং সার্ভিস চালু করেছে। এই বছর সিঙ্গার মার্চ মাস জুড়ে ৩০,০০০ এরও বেশি নিবন্ধিত সিঙ্গার এসি ব্যবহারকারীকে ফ্রি এসি ক্লিনিং সার্ভিস প্রদান করছে। প্রতি বছর সিঙ্গার গ্রীষ্মের ঠিক আগে এই ফ্রি এসি ক্লিনিং সার্ভিস প্রদান করে। গত ৫ বছর ধরে তারা এই বিশেষ সেবা দিয়ে আসছে।
২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গার বাংলাদেশ এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করে। গ্রাহকদের ব্যাপক চাহিদার কারণে নিবন্ধনের সময় ৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ৩০,০০০ সিঙ্গার এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারকারী যারা সার্ভিসের জন্য নিবন্ধন করেছেন তাদের ছাড়াও, সিঙ্গার সারা বাংলাদেশে ২৪০ টি মসজিদে ফ্রি এসি ক্লিনিং সার্ভিস দিবে। পূর্ব নির্ধারিত ফ্রি এসি ক্লিনিং সার্ভিস ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে৷
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং ডিরেক্টর জনাব চন্দনা সামারাসিংহে বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ বাড়িতে গ্রীস্মকালে বিশেষ করে এয়ার কন্ডিশনার ব্যাবহৃত হয়, তাই বছরের বেশ কিছু মাস এই এসিগুলো অব্যবহৃত থাকায় এসির ভিতরে ধুলো জমা হয় । আমরা বিশ্বাস করি গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তাই প্রতি বছর আমরা গ্রাহকদের ইনডোর ইউনিটটি বিনামূল্যে পরিষ্কার করার সার্ভিস দিয়ে থাকি। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা আমাদের মূল উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড কোলাবরেশন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ইউআইইউ ক্যাম্পাসে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব মিসেস সারা যাকের। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউআইইউ’র উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া।
ইউআইইউ এর উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স রিসার্চের (আইএআর) নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. রিজওয়ান খান, রেজিস্ট্রার ডা. মো. জুলফিকার রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গবেষণা ও গ্রন্থাগারের প্রধান ড. রেজিনা বেগম।
এই সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ইউআইইউ এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যৌথভাবে গবেষণা সহযোগিতার মাধ্যমে গবেষণা উন্নয়নে কাজ করাসহ বিভিন্ন গবেষণায় যৌথ ভাবে গবেষণা অনুদান প্রদান করবে। এই চুক্তি একাডেমিয়া এবং ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষণা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উল্লেখ যে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সঙ্গে এটাই প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ (আইএআর) ইউনাইটেড গ্রুপের সক্রিয় আর্থিক সহায়তায় বিভিন্ন বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে গুণগত গবেষণা ও গবেষণা কার্যক্রমকে উন্নীত করার লক্ষে গবেষকদের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল প্রদানের অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ (আইএআর) ২০১৯ সাল থেকে ৪.৫ কোটি টাকা বিভিন্ন গবেষণায় প্রদান করেছে। ইউআইইউ’র আইএআর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলির সঙ্গে সম্মিলিত গবেষণা সহযোগিতার পাশাপাশি গবেষণা অনুদান প্রদান করেছে। বর্তমানে আইএআর বছরে দুবার গবেষণা অনুদান প্রদান করে এবং ৭৫টিরও বেশি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানগণ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে আলোচিত পুলিশ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের রেসিডেন্ট পারমিট বাতিল করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সরকার। এর ফলে তার ভিসাও বাতিল হয়ে গেছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। একই সঙ্গে ভারতও তার পাসপোর্ট বাতিল করেছে বলে পুলিশ একটি সূত্র জানিয়েছে।
অন্যদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দিনভর গুঞ্জন ছিল দুবাই পুলিশ আরাভকে আটক করেছে। তবে তাকে আটকের বিষয়টি কেউ স্বীকার করছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরাভের বিষয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, দুবাইতে থাকা আরাভের রেসিডেন্ট পারমিট সোমবার বাতিল করা হয়েছে। আটকের বিষয়ে তিনি বলেন,তাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। যতক্ষণ ইন্টারপোল বা দুবাই পুলিশ তাদের নিশ্চিত না করবে ততক্ষণ তারা গুঞ্জনকে পাত্তা দেবেন না। তবে তাকে আটকের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারা চেষ্টা করছেন। আরাভ আটক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের টিম দুবাই পাঠানো হবে। সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আরাভকে নজরদারির মধ্যে রাখা আছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
এদিকে পুলিশে একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা খুনের পর আরাভ খান নামধারী রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। আরাভ খান নামে ওই দেশের পাসপোর্ট নিয়ে পরে তিনি দুবাই চলে যান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার সে পাসপোর্ট বাতিল করেছে।
আটক হওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই। তবে দ্রুত তাকে আটক করা যাবে বলে আশা করছি।’
গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বলেছেন, পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এটুকুই বলতে পারি যে, বাংলাদেশের কোনো আসামি বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে পালিয়ে থাকতে পারবে না। আরাভের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে অফিশিয়ালি দুবাইয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।’
গত সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ইন্টারপোল সেই আবেদন গ্রহণ করেছে।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন করার পর আলোচনায় আসেন জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খান। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। সেই তাকে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন এরকম কয়েকটি নামেও পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন ইমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন রবিউল। দেশ ত্যাগের আগে ওই খুনের ঘটনার অন্য আসামিদের সঙ্গে আরাভকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে দুদিন রাখার পর তাকে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা ও রাজনৈতিক নেতার অনুরোধে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়ে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান। গুম করতে লাশ গাড়িতে করে নেওয়া হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গলে। সেখানে লাশে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসে দেওয়া হয় চেহারা। সেই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। ওই বছরের ১০ জুলাই মামুনের ভাই ঢাকার বনানী থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন মামুন ইমরান খান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন আরাভ খান।
মামুন ইমরান হত্যা মামলায় বাদীর সাক্ষ্য : মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম খান। গতকাল তার সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সাল আতিক বিন কাদের পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য আগামী ৪ জুন ধার্য করেন।
মামুন ইমরান হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আরাভের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, ইমরানের বন্ধু রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন এবং দুই কিশোরী রয়েছেন। তাদের মধ্যে আরাভ ও সুরাইয়া পলাতক, দুই কিশোরী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার হচ্ছে শিশু আদালতে এবং তারা জামিনে আছেন।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, হত্যা মামলা হওয়ায় পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা শুনানি করছেন। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩৮ জনকে।
‘বস্তি এলাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। পানি সরবরাহ ও নর্দমা লাইন প্রায়ই এক হয়ে যাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে দূষিত ও নোংরা পানি পান করছেন তারা।’ এভাবে বলছিলেন ঢাকার বস্তির জীবন মান নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের উন্নয়ন কর্মী বাছেরা আক্তার।
শুধু বস্তি এলাকা নয়, দেশের সব এলাকার সুপেয় পানি সরবরাহের চিত্র এমনই। রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করা পানিই না ফুটিয়ে পান করা যায় না। চট্টগ্রাম শহরের পানি লবণাক্ত। রাজশাহীর পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ। খুলনায় সরবরাহ করা পানিও না ফুটিয়ে পান করা যায় না। রয়েছে লবণাক্ততাও। গভীর নলকূপের পানিও নিরাপদ নয়, আর্সেনিক ও লবণাক্ততার কারণে ব্যবহার করাও দুষ্কর। পাহাড়ে সুপেয় পানির উৎস সীমিত। পাহাড়ি ছড়া শুকিয়ে যাচ্ছে। উজানে বাঁধ দেওয়ার কারণে নদন্ডনদীর পানিও কমছে। সুপেয় পানি ও সেচের জন্য অত্যধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে দিন দিন।
এ পরিস্থিতিতে আজ ২২ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য : ‘আসুন নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিত করি।’
সরকারের পানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় মিষ্টি পানিসমৃদ্ধ বাংলাদেশেও সুপেয় পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ সুপেয় পানির বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও নিরাপদ পানি মিলছে না। এ ব্যর্থতা ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনও হুমকিতে পড়ার শঙ্কা তৈরি করেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. তানভীর আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানিকে সুপেয় পানি বলা যায়। তবে সেখানে কোনো ময়লা ঢুকে পড়লে সেই পানিকে আর সুপেয় থাকে না। সুপেয় পানি না ফুটিয়েই পান করা যাবে।’
পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাইরে ময়লা ঢুকে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন ঘটনা ঘটলে সেই পানিকে নিরাপদ বলা যাবে না। শুধু ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানির মান ভালো হলে চলবে না, বাসা পর্যন্ত ভালো পানি পৌঁছে দিতে হবে। কেননা সরবরাহ লাইনের পানি নিরাপদ রাখাও সংস্থার দায়িত্ব।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। আশা করি সবাই মিলে কাজ করে পানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দূর করে আমরা নির্ধারণ সময়ে লক্ষ্যপূরণ করতে পারব।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে ৫৯ ভাগ অর্থাৎ ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ২২০ জন মানুষ সুপেয় পানি সুবিধার আওতায় এসেছে। আর সুপেয় পানি সুবিধার বাইরে রয়েছে ৪১ ভাগ অর্থাৎ ৬ কোটি ৭৭ লাখ ১৪ হাজার ৭৮০ জন মানুষ। এখনো দেশের ১০ ভাগ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।
বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-তে বলা হয়েছে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সুপেয় পানি প্রাপ্যতার বিবেচনায় ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চর এলাকা, বন্যাপ্রবণ এলাকা, উপকূলীয় এলাকা, হাওর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকা। দেশের এই ছয় শ্রেণির এলাকা বিস্তৃত রয়েছে ১০০টি উপজেলায়। দেশের ১৫৯ সিটি ও পৌরসভায় সরবরাহ করা পানির মানও একই। ওইসব এলাকায় ১৬৮টি পানি শোধনাগার, ১ হাজার ৫০০টি গভীর নলকূপে ১৫ হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সরকার চালু রেখেছে। গ্রাম পর্যায়ের ২০ লাখ টিউবওয়েলের পানি নিরাপদ হওয়ার কথা ছিল। তবে আর্সেনিক ও মাত্রাতিরিক্ত আয়রন সে পানিও জনজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
২০১৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বিশে^র সবচেয়ে বড় ‘গণবিষ’-এর উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের আর্সেনিক পরিস্থিতিকে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বছরে আর্সেনিকে ৪৩ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়। আর ২০০৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, দেশের ২৯ শতাংশ নলকূপে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া যায়। আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী শনাক্তে ২০১২ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। তখন ৬৫ হাজার ৯১০ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে ৪২টি জেলার হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য সংগ্রহ করে। ওই হিসাব অনুযায়ী, ওই বছর এসব হাসপাতালে ১৮ হাজার ৬৬২ আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী সেবা গ্রহণ করে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের সরকারিভাবে স্থাপিত গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। সেই হিসাবে জনসংখ্যার বিবেচনায় সরকার ৮৩ জনে একটি পানির উৎস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। সমগ্র জনসংখ্যার বিবেচনায় বর্তমান পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ১১ ভাগ। আর শহর এলাকার জনসংখ্যা বিবেচনায় ৩৮ ভাগ।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারকে সুপেয় পানি সরবরাহে শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে হবে। সেটা করতে হলে প্রতি বছর ছয় ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বর্তমান অগ্রগতি প্রায় এক ভাগ। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে সামনের দিনগুলোতে পানি সরবরাহ খাতের অর্জন আরও কম হতে পারে। এ জন্য লক্ষ্য পূরণে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে চারগুণ তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, দেশে বেসরকারি টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় দেড় কোটি। আর সরকারি টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এ দুটো ধরে হিসাব করতে দাঁড়ায় প্রতি ১০ জনে একটি পানির উৎস রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় পানযোগ্য পানি খুবই দুষ্পাপ্য। এসব এলাকার বেশিরভাগ উপজেলায় গভীর নলকূপ কার্যকর নয়। সরকার পানি সরবরাহ সেবার আওতায় আনতে পেরেছে ৯৮ দশমিক ৫০ ভাগ মানুষকে। এখনো ১ দশমিক ৫০ ভাগ মানুষ পানি সুবিধার আওতার বাইরে রয়েছে।
নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর : ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বাড়ায় স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। যে হারে পানির স্তর নামছে, সে হারে পানির স্তর পূরণ হচ্ছে না। স্বাভাবিক অবস্থা ৬ থেকে ৭ ফুট নিচেই ভূগর্ভস্থ উৎসে পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই। ঢাকায় পানি পেতে ২৫৫ থেকে ২৬০ মিটার নিচে নামতে হচ্ছে। খুলনায় ভূগর্ভস্থ পানি নেমে গেছে ২৫-৩০ ফুট। রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর ১২০ থেকে ১৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। খরার মৌসুমে এ অবস্থা থাকে। বর্ষার মৌসুমে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়।
অন্যদিকে দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২-৩ মিটার নেমে যায়। আর ২৫ ভাগ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫-১০ মিটার নেমে যায়। বর্ষার মৌসুমে এসব এলাকার বেশিরভাগ অংশে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না। দেশের গৃহস্থালি ও খাবার পানির ৯৪ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। গ্রাম এলাকায় এ উৎস থেকে ৯৯ শতাংশ ও শহর এলাকায় ৮০ শতাংশ পানি সরবরাহ করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ১৮ শতাংশ নলকূপের পানি উত্তোলনে সমস্যা হয়। এ ছাড়া ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা, মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ, গড়াই নদীর পানি কমে যাওয়ায় এসব এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পুনঃভরণ হয় না।
ভূ-উপরিস্থ সুপেয় পানির উৎসের অভাবে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর অঞ্চলে সারা বছর সুপেয় পানির সংকট থাকে। বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যরকম সংকট। খরার মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনার নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। বর্ষার মৌসুমে দেশের অন্যান্য এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির শূন্য স্তরের ২৫ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলে মাত্র ৮ শতাংশ পূরণ হয়। ওইসব এলাকায় ১৬০ ফুটের আগে পানির দেখা মিলছে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূগর্ভস্থ পানি বিভাগের পরিচালক এবং পানি বিশেষজ্ঞ ড. আনোয়ার জাহিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারকে বর্ষায় কৃত্রিমভাবে মাটির নিচে পানি প্রবেশ করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমন উদ্যোগ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে দেশ বড় ধরনের পানি সংকটের মুখোমুখি হতে পারে।
উপকূলে লবণাক্ততা সমস্যা : ভূতত্ত্ববিদদের মতে, উপকূলীয় এলাকার পানিতে একবার লবণাক্ত পানি প্রবেশ করলে ওখানকার ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নদীতে পানি না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই অববাহিকা অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাবে। একই সঙ্গে সাগরের দিক থেকে লবণ পানি প্রবেশের হার বাড়বে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরের উপকূলীয় এলকাগুলোতে আমরা গভীর নলকূপ বসাতে পারি না। এই এলাকায় নলকূপে লবণাক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে।’
উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা কমাতে উজান থেকে পানির প্রবাহ বাড়ানোর কথা বলছে ভূতত্ত্ববিদরা। কিন্তু ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ৫৬টি যৌথ নদী থেকে ইতিমধ্যে পানি প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে এবং শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়েও যাচ্ছে। নদীগুলোর গভীরতা কমে গিয়ে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সারা নওরিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই পানির স্তর নিচে। এখন এই হার আরও বেড়েছে।’
স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ অনেক ভাস্কর্যের শিল্পী শামীম সিকদার আর নেই। নিভৃতে জীবন কাটানো এই শিল্পী চলেও গেলেন খুব নিভৃতে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় একুশে পদকজয়ী ভাস্কর শামীম সিকদারের। আলোচিত কমিউনিস্ট নেতা সিরাজ সিকদারের বোন শামীম সিকদারের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামীম সিকদারের ভাস্কর্যগুলোর কিউরেটর মো. ইমরান হোসেন জানান, ঢাবির চারুকলার সাবেক অধ্যাপক নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে কয়েক মাস আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তবে দেশে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে মৃত্যু হয় তার।
তিনি জানান, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বেলা ১১টায় শামীম সিকদারের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ শহীদ মিনার কিংবা তার যেকোনো একটি ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তার পরিবারের সদস্য ও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে
মোহাম্মদপুরে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শামীম সিকদার ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়া জেলার মহাস্থান গড়ের চিংগাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৭৬ সালে তিনি লন্ডনের স্যার জন কাস স্কুলে চলে যান। গত শতকের আশির দশকে চারুকলায় শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
১৯৭৪ সালে এই ভাস্কর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে স্থাপন করা হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ললিতকলা অনুষদের একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন। তিনি ২০০০ সালে একুশে পদক পান।
শামীম সিকদারের ছাত্র ও বর্তমানে ঢাবি ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুকুল কুমার বাড়ৈ প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুর পর দেশ রূপান্তকে জানিয়েছেন তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘শামীম আরা সিকদার ভাস্কর্য বিভাগে আমার শিক্ষক ছিলেন। তার মতো শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক আজকের সময়ে খুবই কম পাওয়া যায়। তিনি অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন, শিক্ষার্থীদের মুখ দেখলেই তিনি বুঝতে পারতেন শিক্ষার্থী হয়তো সকালের খাবার খেয়ে আসেনি, তিনি তৎক্ষণাৎ তার খাবারের ব্যবস্থা করতেন। অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য তিনি ক্লাস ওয়ার্কের বাইরে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কমিশন ওয়ার্ক দিয়ে দিতেন। অত্যন্ত আধুনিকমনস্ক শিল্পী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করতেন শিক্ষার্থীদের। প্রচ- মাত্রায় পরিশ্রমী কাজপাগল একজন ভাস্কর ছিলেন তিনি।’
মুকুল কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্য চর্চার ইতিহাসে সামাজিকভাবে ভাস্কর্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তার অবদান বিশালতম। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। স্বাধীনতাসংগ্রামে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করার কথা মাঝেমধ্যে আমাদের শোনাতেন। বাংলাদেশের ভাস্কর্য চর্চার ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।