
গ্রামীণ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেযারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের ডিএমডি মো. ছাইদুজ্জামান ভূইয়া। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি মো. মোসলেহ উদ্দীন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা হয়।
চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তাদেরকে সহজ শর্তে ও স্বল্প মুনাফায় ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিডব্লিউসিসিআই) এর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ”অ্যাসোসিয়েশন বেজড ক্রেডিট ডিসবার্সমেন্ট (এবিসিডি)” প্রোগ্রামের অধীনে এ সমঝোতো স্মারকটি সই হয়।
শনিবার (৩ জুন) চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ বিজনেস অফিসার কে. এম. আওলাদ হোসেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট আয়েশা ফারহা চৌধুরী পরষ্পরের মাঝে সমঝোতা স্মারক হস্তান্তর করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ মাহবুবুল আলম (সিআইপি)। এসএমএই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী।
সরকারি ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণকে ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ যেভাবে ডিজিটালাইজড করেছে, সেই সাফল্যকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল। আইনি প্রতিকার পেতে এ বিষয়ে রাজধানীর বনানী থানায় আজ বুধবার একটি মামলা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি নগদের প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি বিতরণে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে রাজধানীর বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর অধীনে নগদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। নগদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো কিছু ফেসুবক পেইজ ও কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে কাজ করা নগদ-এর মাধ্যমে সকল সরকারি ভাতা প্রান্তিক পর্যায়ে বিতরণ করতে ২০২০ সালের শুরুতে একটি অনুশাসন জারি করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিদেশি অংশীদারত্বের অন্য বেসরকারি মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করে আসছিল। কিন্তু সেসব বিতরণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি ভাতাভোগীরা তাদের ভাতা না পাওয়াসহ বিভিন্ন রকম অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সরকারও সন্তুষ্ট ছিল না। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকার অনেকগুলো আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে নগদকে ভাতা বিতরণের জন্য বেছে নিয়েছে।
সম্পতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে উপবৃত্তি এবং শিক্ষা উপকরণ বিতরণে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নগদকে বেছে নিয়েছে। আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাও ভাতা বিতরণের জন্য নগদকেই এককভাবে বেছে নিতে যাচ্ছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে চক্রটি।
এর আগেও নানাভাবে ফেসবুক এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে চক্রটি। এমনকি নগদের ইমেজ ক্ষুণœ করার প্রচেষ্টায় তারা লিফলেট পর্যন্ত বিতরণ করে। তখনো সুনির্দিষ্ট কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নগদ এখতিয়ারাধীন বিজ্ঞ আদালতে মামলা করে এবং আদালতের নির্দেশনায় বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বিদেশি মালিকানায় থাকা একটি মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু কর্মকর্তার নাম চলে আসে। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে নগদের স্ট্রাটেজিক রিলেশন্স অ্যান্ড এলইএ অপারেশন্স-এর চিফ লে. কর্নেল (অব.) কাওসার সওকত আলী বলেন, বিভিন্নভাবে আমরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছি। এবার সরকারি দায়িত্ব আমাদের কাছে আসার পরে আক্রমণের হার আগের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। অপপ্রচার ও নোংরা আক্রমণের শিকার হয়ে অবশেষে নগদ কর্তৃপক্ষ আইনের আশ্রয় নিয়েছে। নানা তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বিভিন্ন সরকারি ভাতা বিতরণের বিপক্ষে ভিত্তিহীন অপপ্রচারের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
এর আগেও নগদের যাত্রার সময় থেকেই কুচক্রী মহলটির আক্রমণের শিকার হয়েছে। তখন নগদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা, নগদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ করাসহ প্রান্তিক পর্যায়ের কোনো এজেন্টকে নগদের সেবা না রাখতে দেওয়াসহ বিভিন্ন কৌশল নিতে থাকে তারা। নগদ ওসব ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং আইনের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল।
সোনালী পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিবিধ ফি ও চার্জ আদায়ের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক পিএলসি এবং সরকারি তিতুমীর কলেজের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
আজ বুধবার (৭ জুন) সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন সোনালী ব্যাংকের সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিম এবং সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌস আরা বেগম।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে সোনালী ব্যাংক পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং সঞ্চিয়া বিনতে আলী, সুভাষ চন্দ্র দাস, কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, পারসুমা আলম, জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুল কুদ্দুস, মো. নুরূন নবী, মো. সাফায়েত হোসেন পাটওয়ারী, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহা. রবিউল আলম, মো. আতিকুর রহমান, সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মালেকা চৌধুরী, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মো. সালাহ্উদ্দীন, সহযোগী অধ্যাপক এম এম মোস্তফা জামাল চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. গালিব হোসেন এবং প্রভাষক শেখ নাজিয়া জাহানসহ সোনালী ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই চুক্তির ফলে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে সোনালী পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে যাবতীয় ফি, বেতন ও চার্জ পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া Sonali e-Sheba মোবাইল App এর মাধ্যমে ঘরে বসে ২ মিনিটে ব্যাংক হিসাব খোলা ও Sonali e-Wallet এর মাধ্যমে দিন রাত যেকোনো সময় ব্যাংকিং লেনদেন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, Sonali e-Wallet এর মাধ্যমে চেক ছাড়াই কিউআর কোড স্ক্যান করে অর্থ উত্তোলন করা যায়। ফলে অনলাইনের মাধমে যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌছাঁনো সম্ভব হচ্ছে।
ওটিটি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ২০২২-এর নির্মাতা ও শিল্পীদের সম্মান জানাতে 'ব্লেন্ডারস চয়েস- দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি এবং ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২২' এর উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বুধবার (৭ জুন) উদ্বোধন করা হয়।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট নির্মাতা ও শিল্পীদের সৃষ্টিশীল ও যুগান্তকারী কাজকে সম্মান জানাতে দ্বিতীয়বারের মতো এ আয়োজনটি করতে যাচ্ছে ইস্পাহানি টি লিমিটেড এবং দ্য ডেইলি স্টার।
সংবাদ সম্মেলনে দ্য ডেইলি স্টার- এর হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস ইমরান কাদির, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ওমর হান্নান এবং মিডিয়াকম লিমিটেডের সিইও অজয় কুমার কুন্ডু উপস্থিত ছিলেন।
এই বছর ব্লেন্ডারস চয়েস - দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি এবং ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২২ - এ ২৮টি বিভাগ থাকবে, যার মধ্যে ১৪টি ফিল্ম/ ড্রামা/ গল্পের জন্য, ৪টি সঙ্গীতের জন্য, ৪টি সমালোচক পুরস্কার এবং ৬টি বিভাগ থাকছে কন্টেন্ট নির্মাতাদের জন্য।
ইস্পাহানি টি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার জনাব ওমর হান্নানের মতে, বাংলাদেশি শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রসারে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে ইস্পাহানির সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশের ওটিটি এবং ডিজিটাল কন্টেন্ট এর প্রসারে যারা পর্দার সামনে এবং নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিযোগিতামূলক উদ্দীপনার স্বীকৃতি, প্রশংসা ও অনুপ্রাণিত করার প্রচেষ্টা হিসেবেই ইস্পাহানি এবং দ্য ডেইলি স্টারের যৌথ উদ্যোগে ব্লেন্ডার'স চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২২'-এর আবারও আয়োজন হতে যাচ্ছে।
ওমর হান্নান আশা প্রকাশ করেন যে এ উদ্যোগটি সৃষ্টিশীলতা এবং সংস্কৃতির উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে, যা ইতিবাচক এবং উদ্ভাবনী ডিজিটাল কন্টেন্ট-এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই অ্যাওয়ার্ড শো-টির বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টার এর চিফ বিজনেস অফিসার তাজদীন হাসান বলেন, আমাদের বিনোদনের মাধ্যমগুলোর মাঝে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ক্রমেই একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছে। আমাদের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অসাধারণ শিল্পীদের পুরস্কৃত করাই নয়, বরং নতুন এবং উঠতি শিল্পীদের ও উৎসাহিত করা যেন তারা সাফল্যের সংজ্ঞাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন। এ বছর আমরা এই ওটিটি অ্যাওয়ার্ডসের দ্বিতীয় সংস্করণ আয়োজন করতে যাচ্ছি, এবং আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সামনের বছরগুলোতে আমরা এই ওটিটি ইন্ড্রাস্ট্রিকে সাফল্যের নতুন উচ্চতায় দেখতে পাবো।
সমাজকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জানা ও বোঝার অসাধারণ মাধ্যম হলো সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান পাঠ করলে পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে যেমন সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায়, তেমনি সামাজিক সমস্যা দূর করতেও হওয়া যায় সদা সচেতন। তবে আসল কথা হলো শুধু জ্ঞান কেন, সমাজবিজ্ঞান পড়ে ভবিষ্যত কাজের সুযোগ কেমন? কোন কোন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে- সেটা জানাও তো জরুরি। আর এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই সফলতার সঙ্গে ‘সমাজবিজ্ঞান বিভাগ’ পরিচালনা করে যাচ্ছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
অনেক শিক্ষার্থীই ভাবতে পারেন সমাজবিজ্ঞান পড়ে ভালো কোন চাকরি পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো সমাজবিজ্ঞান বর্তমান বিশ্বে অধিক গ্রহণযোগ্য একটি বিষয়। শুধু বাংলাদেশেই নয় পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে নিত্য-নতুন গবেষণা হচ্ছে। সামাজিক যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য সবাই সমাজবিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি করানো হচ্ছে। এই ৪৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হয়। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর অনেক নতুন শিক্ষক যোগদান করেন, যারা সমাজবিজ্ঞান থেকে ভালো ফলাফল করে বের হচ্ছেন বা হবেন তাদের জন্য নিজের বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার অনেক বড় সুযোগ থেকে যাচ্ছে।
সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক নানাবিধ সমস্যা তথা ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, বেকারত্ব, মাদকাসক্ত, বিবাহ বিচ্ছেদ, কিশোর অপরাধ, চুরি, ছিনতাই, শিশু-কিশোর, যুবক ও বয়স্ক স্বাস্থ্য সমস্যার মাত্রা ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করছে, সামাজিক এই সকল সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তার জন্য সবচেয়ে বেশি সামাজিক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. আবুল হোসেন বললেন, শিক্ষার্থীবান্ধব বিভাগ গ্রিন ইউনিভার্সিটির ‘সমাজবিজ্ঞান’। তুলনামুলক অধিক যোগ্য শিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠদান করাই এই বিভাগের বৈশিষ্ট। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থীদের দেশীয় চাকরির উপযোগী করে গড়ে তুলতেও তারা সদা সচেষ্ট। বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করে থাকে গ্রিন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার সৌম্য সরকারসহ মহিলা ক্রিকেট দলের সানজিদা ও সুরাইয়া এই বিভাগের শিক্ষার্থী। এছাড়াও জাতীয় ফুটবল দলে ৪জন এবং জাতীয় হকি দলে ৬জন খেলোয়ার এখানকার সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
অগাধ কর্মের হাতছানি রয়েছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়াদের জন্য। বিসিএস থেকে শুরু করে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাশাপাশি দাতব্য এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থায় পেশাগতভাবে কাজ করার সুযোগ এই বিভাগের ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীরা। সমাজবিজ্ঞানের ছাত্ররা বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান যেমন ইউএনডিপি, ইউনেসকো, ইউনিসেফে চাকরি করে আন্তর্জাতিক স্কেলে বেতনপ্রাপ্ত হন। দেশের বাইরে তথা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতে সমাজবিজ্ঞানে ডিগ্রীধারীদের রয়েছে বিশেষ কদর।
গ্রিন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানে কেন পড়বেন?
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে গ্রিন ইউনিভার্সিটি একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক প্রচেষ্টায় এটি এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা গ্রুপের সঙ্গে গ্রিন ইউনিভার্সিটির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তির আওতায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এ্যাসেটসহ গ্রুপের ১০প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরির সুযোগ পাচ্ছেন এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চাকরির বাইরেও শতভাগ ডিজিটাল ক্যাম্পাস ও ক্লাসরুমে বাংলা ও ইংরেজী উভয় মাধ্যমে পড়াশোনা এবং চাকরিরত ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে এখানকার সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
সুযোগ-সুবিধাসমূহ: গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে চার বছর মেয়াদি বিএসএস ইন স্যোশিওলোজি প্রোগ্রামে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে অপেক্ষাকৃত কম স্বচ্ছল ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ফলাফলের উপর ওয়েভার দিয়ে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, উপজাতি, ছাত্রী, আপন ভাইবোন এবং জাতীয় দলের খেলোয়ারদের বিশেষ ছাড়ে ভর্তি করাচ্ছে এই ইউনিভার্সিটি। ভর্তির পর পরীক্ষার ফলাফলের উপরও বৃত্তি দেয়া হয়।
যোগাযোগ: গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ২২০/ডি বেগম রোকেয়া সরণী, ঢাকা-১২০৭। ফোন: ০১৭৫৭০৭৪৩০২-৪ ওয়েব: www.green.edu.bd
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।