অরফানেজ মামলায় দ্বিগুণ হলো খালেদার সাজা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ অক্টোবর, ২০১৮ ১৪:২১
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে হাইকোর্ট। মামলার অপর আসামিদের বিচারিক আদালতে দেয়া ১০ বছর সাজা বহাল রয়েছে।
খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে মঙ্গলবার এ রায় দেয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ।
একইসঙ্গে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির আপিল খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। অপর তিন আসামি পলাতক।
খালেদা জিয়া ছাড়া অপর দুই কারাবন্দি আসামি হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
পলাতক তিন আসামি হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও তারেক রহমানের ফুফাত ভাই মমিনুর রহমান।
সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে এজলাসে বসেন বিচারকরা। এরপর রায়ের মূল অংশটি পড়ে আদালতের কার্যক্রম শেষ করা হয়। রায় ঘোষণার প্রাক্কালে আদালত বলেন, আমরা রায়ের অপারেটিভ অংশ ঘোষণা করব।
রায় ঘোষণায় প্রথমেই খালেদা জিয়ার পক্ষে খালাস চেয়ে করা আবেদন এবং অন্য আসামিদের সাজা কমানোর দুই আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয় আদালত। পরে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদকের করা রিভিশন আবেদন গ্রহণ করে আদালত এই সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন।
এসময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খানসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তবে খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। একইসঙ্গে তারেক রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। কারা হেফাজতে বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ মামলায় ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হয়। এরপর ১২ জুলাই হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু হয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করে আদালত। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই আপিল আবেদনে তার খালাস চেয়েছেন। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চেয়েছেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজাই বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছে।
এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুদক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সোমবার খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে দুদক। চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানকেও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ অক্টোবর, ২০১৮ ১৪:২১

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে হাইকোর্ট। মামলার অপর আসামিদের বিচারিক আদালতে দেয়া ১০ বছর সাজা বহাল রয়েছে।
খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে মঙ্গলবার এ রায় দেয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ।
একইসঙ্গে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির আপিল খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। অপর তিন আসামি পলাতক।
খালেদা জিয়া ছাড়া অপর দুই কারাবন্দি আসামি হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
পলাতক তিন আসামি হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও তারেক রহমানের ফুফাত ভাই মমিনুর রহমান।
সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে এজলাসে বসেন বিচারকরা। এরপর রায়ের মূল অংশটি পড়ে আদালতের কার্যক্রম শেষ করা হয়। রায় ঘোষণার প্রাক্কালে আদালত বলেন, আমরা রায়ের অপারেটিভ অংশ ঘোষণা করব।
রায় ঘোষণায় প্রথমেই খালেদা জিয়ার পক্ষে খালাস চেয়ে করা আবেদন এবং অন্য আসামিদের সাজা কমানোর দুই আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয় আদালত। পরে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদকের করা রিভিশন আবেদন গ্রহণ করে আদালত এই সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন।
এসময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খানসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তবে খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। একইসঙ্গে তারেক রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। কারা হেফাজতে বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ মামলায় ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হয়। এরপর ১২ জুলাই হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু হয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করে আদালত। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই আপিল আবেদনে তার খালাস চেয়েছেন। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চেয়েছেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজাই বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছে।
এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুদক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সোমবার খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে দুদক। চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানকেও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।