পি কে হালদারের সঙ্গে ৬২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে দুদক
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:৫১
অর্থ পাচার ও আত্মসাতে প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সঙ্গে ৬২ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের আওতায় আনছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মু. আনোয়ারুল হাওলাদার বলেন, পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ৬২ জনের নাম পেয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। আসলে বিষয়টি এখন অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পি কে হালদারের বিভিন্নজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সম্পৃক্ত বিভিন্নজন থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
পি কে হালদারের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। গত বছরের ৮ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। মামলাটি তদন্ত করছেন দুদকের আরেক উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন।
এ মামলার তদন্তে নেমে গত বুধবার পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে দুদক। এক প্রশ্নে দুদক সচিব আনোয়ারুল হাওলাদার বলেন, অবন্তিকা বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর হয়তো পি কে হালদারের সহযোগিতায় তিনি কী পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়েছেন, তা জানা যাবে।
এর আগে মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত ৪ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে, যা মূলত পি কে হালদারের টাকায় কেনা বলে জানান দুদকের এক কর্মকর্তা।
দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যান। এনআরবি গেস্নাবাল ব্যাংকের সাবেক এ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে অভিযোগ, নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে তিনি শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্নজনকে পর্ষদে বসিয়ে চারটি ব্যাংকবহিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নেন।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকরা অভিযোগ করার পর দুদক তদন্ত শুরু করে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে সুখাদা লিমিটেড নামের কোম্পানিতে অবন্তিকা বড়াল, প্রীতিষ কুমার হালদার ও সুস্মিতা সাহার নামে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে, যা আসলে পি কে হালদারের টাকা বলে ধারণা করছেন দুদক কর্মকর্তারা।
পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদার, সহযোগী অবন্তিকা বড়ালসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:৫১

অর্থ পাচার ও আত্মসাতে প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সঙ্গে ৬২ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের আওতায় আনছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মু. আনোয়ারুল হাওলাদার বলেন, পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ৬২ জনের নাম পেয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। আসলে বিষয়টি এখন অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পি কে হালদারের বিভিন্নজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সম্পৃক্ত বিভিন্নজন থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
পি কে হালদারের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। গত বছরের ৮ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। মামলাটি তদন্ত করছেন দুদকের আরেক উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন।
এ মামলার তদন্তে নেমে গত বুধবার পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে দুদক। এক প্রশ্নে দুদক সচিব আনোয়ারুল হাওলাদার বলেন, অবন্তিকা বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর হয়তো পি কে হালদারের সহযোগিতায় তিনি কী পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়েছেন, তা জানা যাবে।
এর আগে মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত ৪ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে, যা মূলত পি কে হালদারের টাকায় কেনা বলে জানান দুদকের এক কর্মকর্তা।
দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যান। এনআরবি গেস্নাবাল ব্যাংকের সাবেক এ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে অভিযোগ, নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে তিনি শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্নজনকে পর্ষদে বসিয়ে চারটি ব্যাংকবহিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নেন।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকরা অভিযোগ করার পর দুদক তদন্ত শুরু করে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে সুখাদা লিমিটেড নামের কোম্পানিতে অবন্তিকা বড়াল, প্রীতিষ কুমার হালদার ও সুস্মিতা সাহার নামে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে, যা আসলে পি কে হালদারের টাকা বলে ধারণা করছেন দুদক কর্মকর্তারা।
পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদার, সহযোগী অবন্তিকা বড়ালসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট।