বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে টর্চার সেলে আটকে মুক্তিপণ আদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:৫৪
অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপর বিভিন্ন দেশে লোভনীয় চাকরির ফাঁদ পেতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে টর্চার সেলে আটকে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মানবপাচার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর পল্লবী ও উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মল্লিক রেজাউল হক ওরফে সেলিম (৬২), মো. বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)। তাদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, নকল ভিসা ও দলিল-দস্তাবেজ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, চক্রটি বিভিন্ন সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে থেকে ভারতে নিয়ে দুটি টর্চার সেলে আটকে মুক্তিপণ আদায় করেছে। তারা জন প্রতি ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ আদায় করে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে এ চক্রে দেশে আরো ৫-৭ সদস্য রয়েছে। তা ছাড়া ভারতেও তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। এদের মধ্যে কলকাতার রাজিব খান, মানিক এবং দিল্লির রবিন সিং দের নাম পাওয়া যায়। গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এই চক্রটি মানবপাচারের নামে মুক্তিপণ আদায় করছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন-পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স এবং মালটায় উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বাংলাদেশ থেকে পাঠানোর কথা বলে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দেয়। তবে এখন পর্যন্ত তারা কাউকে সেসব দেশে পাঠাতে পারেনি।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে তারা।
গ্রেপ্তারদের বিষয়ে তিনি বলেন, রেজাউল হক মানবপাচার চক্রের হোতা। সে ১৯৮৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যান। সেখানে ৩ বছর থেকে দেশে ফিরে এসে গার্মেন্টস পণ্য ও আদম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯২ সালে পুনরায় তিনি আরব আমিরাতের দুবাইতে যান। দুবাইতে থাকা অবস্থায় মূলত সে ভারতে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ২০১০ সালে দেশে ফিরে কক্সবাজারে ফিশিং ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার বুলবুল আহম্মেদ মল্লিকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ২৪টি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের অন্যতম হোতা নিরঞ্জন পাল ২০০৭ সালে দেশে থাকা তার সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমায়। তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
২০১৯ সালে সে মানবপাচার চক্রের হোতা রেজাউলের হাত ধরে চক্রে জড়িয়ে পড়ে। সে মূলত ভারতের সেফ হাউস পরিচালনা করে আসছে। তার পাঁচ বোন এবং এক ভাই কলকাতায় থাকে। এ ছাড়া তার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেক আত্মীয়স্বজন সেখানে অবস্থান করে। পাচারকৃত ব্যক্তিদের কলকাতায় এবং দিল্লিতে সেফ হাউসে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন করা এবং মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়গুলো মূলত নিরঞ্জন সমন্বয় করে।
জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ভুক্তভোগী র্যাব মিডিয়া সেন্টারে দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বছরের নভেম্বরে তাকে অস্ট্রেলিয়া এবং তার ভাগনেকে ডিসেম্বরে নেদারল্যান্ডস পাঠানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে আটকে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। জাহাঙ্গীরকে ভারতের কলকাতার টর্চার শেলে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে দেশে থাকা পরিবারকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন ধাপে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার ভাগনে এখনো চক্রের টর্চার সেলে আটক রয়েছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:৫৪

অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপর বিভিন্ন দেশে লোভনীয় চাকরির ফাঁদ পেতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে টর্চার সেলে আটকে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মানবপাচার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর পল্লবী ও উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মল্লিক রেজাউল হক ওরফে সেলিম (৬২), মো. বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)। তাদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, নকল ভিসা ও দলিল-দস্তাবেজ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, চক্রটি বিভিন্ন সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে থেকে ভারতে নিয়ে দুটি টর্চার সেলে আটকে মুক্তিপণ আদায় করেছে। তারা জন প্রতি ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ আদায় করে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে এ চক্রে দেশে আরো ৫-৭ সদস্য রয়েছে। তা ছাড়া ভারতেও তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। এদের মধ্যে কলকাতার রাজিব খান, মানিক এবং দিল্লির রবিন সিং দের নাম পাওয়া যায়। গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এই চক্রটি মানবপাচারের নামে মুক্তিপণ আদায় করছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন-পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স এবং মালটায় উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বাংলাদেশ থেকে পাঠানোর কথা বলে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দেয়। তবে এখন পর্যন্ত তারা কাউকে সেসব দেশে পাঠাতে পারেনি।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে তারা।
গ্রেপ্তারদের বিষয়ে তিনি বলেন, রেজাউল হক মানবপাচার চক্রের হোতা। সে ১৯৮৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যান। সেখানে ৩ বছর থেকে দেশে ফিরে এসে গার্মেন্টস পণ্য ও আদম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯২ সালে পুনরায় তিনি আরব আমিরাতের দুবাইতে যান। দুবাইতে থাকা অবস্থায় মূলত সে ভারতে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ২০১০ সালে দেশে ফিরে কক্সবাজারে ফিশিং ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার বুলবুল আহম্মেদ মল্লিকের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ২৪টি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের অন্যতম হোতা নিরঞ্জন পাল ২০০৭ সালে দেশে থাকা তার সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমায়। তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
২০১৯ সালে সে মানবপাচার চক্রের হোতা রেজাউলের হাত ধরে চক্রে জড়িয়ে পড়ে। সে মূলত ভারতের সেফ হাউস পরিচালনা করে আসছে। তার পাঁচ বোন এবং এক ভাই কলকাতায় থাকে। এ ছাড়া তার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেক আত্মীয়স্বজন সেখানে অবস্থান করে। পাচারকৃত ব্যক্তিদের কলকাতায় এবং দিল্লিতে সেফ হাউসে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন করা এবং মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়গুলো মূলত নিরঞ্জন সমন্বয় করে।
জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ভুক্তভোগী র্যাব মিডিয়া সেন্টারে দেশ রূপান্তরকে জানান, গত বছরের নভেম্বরে তাকে অস্ট্রেলিয়া এবং তার ভাগনেকে ডিসেম্বরে নেদারল্যান্ডস পাঠানোর কথা বলে ভারতে নিয়ে আটকে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। জাহাঙ্গীরকে ভারতের কলকাতার টর্চার শেলে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে দেশে থাকা পরিবারকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন ধাপে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার ভাগনে এখনো চক্রের টর্চার সেলে আটক রয়েছে।