হত্যার পরে ফজরের আজান, পরে তাবলিগে ‘আত্মগোপন’ মুয়াজ্জিনের
অনলাইন ডেস্ক | ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:০৮
কিশোরগঞ্জের আলোচিত গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন (৬৫) হত্যাকাণ্ডে জড়িত জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক মুয়াজ্জিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
হাতুড়ির আঘাতে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যার পর তিনি ফজরের আজান দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি তাবলিগ জামাতের চিল্লায় যোগ দিয়ে গা ঢাকা দিতে চেয়েছিলেন। প্রায় আড়াই মাস পর লক্ষ্মীপুরের একটি মসজিদ থেকে মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাকে গ্রেপ্তারের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বুধবার কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করে আসছেন জাকির।
গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের পাশে নরসিংদীর গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন (৬৫) খুন হওয়ার পর জাকির লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘রমিজের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে কম দামে গরু কেনার জন্য ঘটনার ১০-১২ দিন আগে তাকে নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে যান জাকির। রমিজ ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে ছয় লাখ টাকা তোলেন এবং ২ অক্টোবর রাতে জাকিরকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী এবং পরবর্তীতে বড়পুল এলাকায় যান। পরে রমিজকে রিকশায় করে কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় নির্জন স্থানে নিয়ে যান জাকির। সেখানে রমিজকে জানান, গাড়িতে করে গরু আসবে এবং ওইখানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে হবে।’
মঈন বলেন, ‘রমিজকে কৌশলে ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নেওয়ার পর জাকির তার সঙ্গে থাকা হাতুড়ি দিয়ে পেছন থেকে রমিজের মাথায় আঘাত করে। রমিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে জাকির তাকে আরও কয়েকটি আঘাত করেন। পরে রমিজকে মৃত ভেবে তার সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে সে চলে যায়।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জাকির প্রথমে নিজের গ্রাম কিশোরগঞ্জে যান এবং সেখান থেকে নরসিংদীর মনোহরদী চলে আসেন। সেখানে তিনি মসজিদে আজান দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এর মধ্যে রমিজ উদ্দিনের ছেলে কিশোরগঞ্জ মডেল থাকায় একটি মামলা করেন। রমিজের মৃত্যুর খবর নরসিংদীতেও ছড়িয়ে পড়ে। তখন মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান জাকির।
নরসিংদীর মাধবদী, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সদর, সিলেট জেলার ফেঞ্জুগঞ্জ এবং সিলেট হয়ে আবারও ময়মনসিংহে যান জাকির। পরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে যান এবং সেখান থেকে ৪০ দিনের চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় যান। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মঈন বলেন, ‘রমিজ উদ্দিন ছিলেন একজন বিত্তশালী উঠতি ব্যবসায়ী। মূলত তার টাকা আত্মসাৎ করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।’
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন রমিজ। পরে দেশে ফিরে তিনি গরু বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন।
জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মঈন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর রমিজের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া ছয় লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ টাকা জাকির খরচ করেছেন। বাকি পাঁচ লাখ টাকা বিভিন্ন জনের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।’
জাকির আরো জানিয়েছেন, রমিজকে হত্যার পর তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে আসেন এবং নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেন ও নামাজে অংশগ্রহণ করেন ও মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে পড়ান।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:০৮

কিশোরগঞ্জের আলোচিত গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন (৬৫) হত্যাকাণ্ডে জড়িত জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক মুয়াজ্জিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
হাতুড়ির আঘাতে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যার পর তিনি ফজরের আজান দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি তাবলিগ জামাতের চিল্লায় যোগ দিয়ে গা ঢাকা দিতে চেয়েছিলেন। প্রায় আড়াই মাস পর লক্ষ্মীপুরের একটি মসজিদ থেকে মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাকে গ্রেপ্তারের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বুধবার কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করে আসছেন জাকির।
গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের পাশে নরসিংদীর গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন (৬৫) খুন হওয়ার পর জাকির লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘রমিজের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে কম দামে গরু কেনার জন্য ঘটনার ১০-১২ দিন আগে তাকে নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে যান জাকির। রমিজ ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে ছয় লাখ টাকা তোলেন এবং ২ অক্টোবর রাতে জাকিরকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী এবং পরবর্তীতে বড়পুল এলাকায় যান। পরে রমিজকে রিকশায় করে কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় নির্জন স্থানে নিয়ে যান জাকির। সেখানে রমিজকে জানান, গাড়িতে করে গরু আসবে এবং ওইখানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে হবে।’
মঈন বলেন, ‘রমিজকে কৌশলে ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নেওয়ার পর জাকির তার সঙ্গে থাকা হাতুড়ি দিয়ে পেছন থেকে রমিজের মাথায় আঘাত করে। রমিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে জাকির তাকে আরও কয়েকটি আঘাত করেন। পরে রমিজকে মৃত ভেবে তার সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে সে চলে যায়।’
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জাকির প্রথমে নিজের গ্রাম কিশোরগঞ্জে যান এবং সেখান থেকে নরসিংদীর মনোহরদী চলে আসেন। সেখানে তিনি মসজিদে আজান দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এর মধ্যে রমিজ উদ্দিনের ছেলে কিশোরগঞ্জ মডেল থাকায় একটি মামলা করেন। রমিজের মৃত্যুর খবর নরসিংদীতেও ছড়িয়ে পড়ে। তখন মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান জাকির।
নরসিংদীর মাধবদী, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সদর, সিলেট জেলার ফেঞ্জুগঞ্জ এবং সিলেট হয়ে আবারও ময়মনসিংহে যান জাকির। পরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে যান এবং সেখান থেকে ৪০ দিনের চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় যান। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মঈন বলেন, ‘রমিজ উদ্দিন ছিলেন একজন বিত্তশালী উঠতি ব্যবসায়ী। মূলত তার টাকা আত্মসাৎ করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।’
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন রমিজ। পরে দেশে ফিরে তিনি গরু বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন।
জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মঈন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর রমিজের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া ছয় লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ টাকা জাকির খরচ করেছেন। বাকি পাঁচ লাখ টাকা বিভিন্ন জনের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।’
জাকির আরো জানিয়েছেন, রমিজকে হত্যার পর তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে আসেন এবং নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আজানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেন ও নামাজে অংশগ্রহণ করেন ও মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে পড়ান।