যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:৪৩
মো. ইউসুফ।
লক্ষ্মীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ইকোনো বাসের ভেতরে সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনকে ঘুমন্ত অবস্থায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে সিআইডি।
রবিবার সকাল ১১ টায় রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাতে নরসিংদীর মাধবদী থানা এলাকা থেকে হত্যাকারী মো. ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার বাবুল ভূঁইয়া ও আফুজা দম্পতির ছেলে।
গত ৯ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ইকোনো বাসের ভেতরে সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে গাড়ির ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার লিটনের স্ত্রী হালিমা আক্তার লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার পর বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে ইউসুফের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে সিআইডির এলআইসি শাখার একটি টিম অভিযান চালিয়ে নরসিংদীর মাধবদী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ইউসুফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, সে ভবঘুরে জীবন-যাপন করত। ওবায়দুর নামে তার এক প্রতিবেশী তাকে বাসে হেলপারের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব করলে সে রাজি হয়। তখন ওবায়দুর তার পরিচিত ইকোনো সার্ভিসের চালক নাহিদকে বলে ওই বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করার ব্যবস্থা করে দেন।
গত ৮ এপ্রিল চালক নাহিদ ঢাকার মানিকনগরে ইকোনো সার্ভিসের বাস কাউন্টারে ইউসুফের সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও স্টাফ শিপনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তারা ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টায় যাত্রীদের গন্তব্যে নামিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ঝুমুর মোড়ের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বাসটি পার্কিং করা হয়।
পরে, চালক নাহিদ হোসেন, সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও স্টাফ শিপন তাদের সারা দিনের প্রাপ্য মজুরি ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেন। নাহিদ ও শিপন বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলে সুপারভাইজার লিটনের কাছে কাজে নতুন যোগ দেয়া ইউসুফ তার পারিশ্রমিক চায়। লিটন জানায়, তার ডিউটি এখনো শুরু হয়নি। ভোর থেকে তার ডিউটি শুরু হলে সে আপ-ডাউন ট্রিপের জন্য ৪০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পাবে। টাকা পয়সার বিষয়ে কোন কথা থাকলে বাসের চালক নাহিদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
কিন্তু ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত বাসের স্টাফ শিপনের সাথে কাজ শিখতে শিখতে এসেছে বিধায় তাকেও পারিশ্রমিক দিতে হবে দাবি করে লিটনের সঙ্গে তক-বিতর্ক ও হাতাহাতিতে লিপ্ত হয় ইউসুফ। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা লোহার হুইল রেঞ্জ দিয়ে ইউসুফ সুপারভাইজার লিটনের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে বাসের ভেতরেই তার মৃত্যু হয়। পরে লিটনের মরদেহ বাসের সিটের ওপর বসিয়ে পালিয়ে যায় ইউসুফ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:৪৩

লক্ষ্মীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ইকোনো বাসের ভেতরে সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনকে ঘুমন্ত অবস্থায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে সিআইডি।
রবিবার সকাল ১১ টায় রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাতে নরসিংদীর মাধবদী থানা এলাকা থেকে হত্যাকারী মো. ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার বাবুল ভূঁইয়া ও আফুজা দম্পতির ছেলে।
গত ৯ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ইকোনো বাসের ভেতরে সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে গাড়ির ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার লিটনের স্ত্রী হালিমা আক্তার লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার পর বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে ইউসুফের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে সিআইডির এলআইসি শাখার একটি টিম অভিযান চালিয়ে নরসিংদীর মাধবদী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ইউসুফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, সে ভবঘুরে জীবন-যাপন করত। ওবায়দুর নামে তার এক প্রতিবেশী তাকে বাসে হেলপারের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব করলে সে রাজি হয়। তখন ওবায়দুর তার পরিচিত ইকোনো সার্ভিসের চালক নাহিদকে বলে ওই বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করার ব্যবস্থা করে দেন।
গত ৮ এপ্রিল চালক নাহিদ ঢাকার মানিকনগরে ইকোনো সার্ভিসের বাস কাউন্টারে ইউসুফের সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও স্টাফ শিপনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তারা ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টায় যাত্রীদের গন্তব্যে নামিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ঝুমুর মোড়ের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বাসটি পার্কিং করা হয়।
পরে, চালক নাহিদ হোসেন, সুপারভাইজার রিয়াদ হোসেন লিটন ও স্টাফ শিপন তাদের সারা দিনের প্রাপ্য মজুরি ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেন। নাহিদ ও শিপন বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলে সুপারভাইজার লিটনের কাছে কাজে নতুন যোগ দেয়া ইউসুফ তার পারিশ্রমিক চায়। লিটন জানায়, তার ডিউটি এখনো শুরু হয়নি। ভোর থেকে তার ডিউটি শুরু হলে সে আপ-ডাউন ট্রিপের জন্য ৪০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পাবে। টাকা পয়সার বিষয়ে কোন কথা থাকলে বাসের চালক নাহিদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
কিন্তু ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত বাসের স্টাফ শিপনের সাথে কাজ শিখতে শিখতে এসেছে বিধায় তাকেও পারিশ্রমিক দিতে হবে দাবি করে লিটনের সঙ্গে তক-বিতর্ক ও হাতাহাতিতে লিপ্ত হয় ইউসুফ। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা লোহার হুইল রেঞ্জ দিয়ে ইউসুফ সুপারভাইজার লিটনের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে বাসের ভেতরেই তার মৃত্যু হয়। পরে লিটনের মরদেহ বাসের সিটের ওপর বসিয়ে পালিয়ে যায় ইউসুফ।