নতুন কাপড়ের অর্ডার নিয়ে ছেঁড়া কাপড় ডেলিভারি: গ্রেপ্তার ৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৫২
অনলাইনে নতুন কাপড়ের অর্ডার নিয়ে ছেঁড়া ও ব্যবহার অযোগ্য কাপড় ডেলিভারি দেওয়ায় এক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ (ডিবি)।
রবিবার রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন শংকর এলাকায় একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. বাপ্পি হাসান, মো. আরিফুল ওরফে হারিসুল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. বিপ্লব শেখ ও নুর মোহাম্মদ।
মো. আইউব নামের এক ভুক্তভোগী দেশ রূপান্তরকে জানান, পূর্ব রাজাবাজারে তার বাসা। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে দুই মেয়ের জন্য কাপড়ের অর্ডার দিই। তাৎক্ষণিক বিকাশের মাধ্যমে দেড় শ টাকা পরিশোধ করি। পরে এসএ পরিবহন থেকে মাল বুঝে পেয়ে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু কাপড়ের প্যাকেট খুলে দেখি খুবই নিম্নমানের ব্যবহারের অনুপযোগী কাপড়। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলে পরিবর্তন করে দেবে। কিন্তু আর কোনো খোঁজ নেই তাদের।
আজিজ নামের আরেক ভুক্তভোগীও এ চক্রের নিলাচল শপিং ডটকম নামের একটি ফেসবুকে পেজ থেকে দুটি শাড়ির অর্ডার দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান।
ডিবি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০ থেকে ৩০টি পেজ খুলে বিভিন্ন পণ্যসহ শাড়ি ও থ্রি-পিসের চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে একটি চক্র। ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে বিশাল মূল্যছাড়ের ঘোষণাও দিচ্ছে তারা। পরে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে পণ্যের অর্ডার দিলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি দেয়। এসব পণ্য বুঝে পাওয়ার পরই ঘটে বিপত্তি। ক্রেতা প্যাকেট খুলে দেখেন তিনি যেই পণ্যটি অর্ডার করেছিলেন তার পরিবর্তে চক্রটি ছেঁড়া ও ব্যবহার অযোগ্য কাপড় পাঠিয়েছে।
পুলিশ জানায়, অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে চক্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্রেতারা। তখন ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে চক্রটি। সর্বশেষ ক্রেতাদের ফোন নম্বর ও ফেসবুক আইডি ব্লক করে দেয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ।
তিনি বলেন, পল্টন থানায় এক ভুক্তভোগী সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পর ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ (ডিবি)। এতে দেখা যায় চক্রটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলে আকর্ষণীয় পণ্য বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। স্বাভাবিক মূল্যের অনেক কম মূল্য লিখে তারা এসব পোশাকের বিজ্ঞাপন দেয়। চক্রটি প্রতিদিন ১০০-১৫০টি প্রতারণা পার্সেল পাঠায়। এভাবে চক্রটি মাসে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় করে। গত ৫-৬ বছর ধরে চক্রটি এই প্রতারণা ব্যবসা করে আসছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে চক্রটির সঙ্গে এসএ পরিবহনের লোকজনও জড়িত আছে। তারা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এসএ পরিবহনকে ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রতারণা করেছে। আমরা এসএ পরিবহনের কয়েকজনের নাম পেয়েছি যারা এ প্রতারণার বিষয়টি জানেন। তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
ডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, আমরা তাদের ২১টি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছি, যার মাধ্যমে তারা প্রতারণা করত। ১৭৭টি খারাপ শাড়ি, থ্রি পিস জব্দ করেছি। এসব কাপড় সাধারণত বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের পর পুরোনো হয়ে গেলে অনেকে বিক্রি করে দেয়, আবার অনেকে মানুষজনকে দিয়ে দেয়। চক্রটি এসব কাপড় কিনে মানুষজনকে ডেলিভারি দিত ভালো পণ্যের নামে।
এসএ পরিবহনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ডিসি আরও বলেন, এসএ পরিবহনের সঙ্গে চক্রটির একটি চুক্তি আছে। সেই অনুযায়ী চক্রটির পার্সেল তারা পাঠাত। এ ছাড়া এসএ পরিবহনের লোকজন জানত চক্রটি এসব খারাপ মালামাল ক্রেতাদের পাঠায়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি পার্সেল ৫০ টাকা করে নিত তারা।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৫২

অনলাইনে নতুন কাপড়ের অর্ডার নিয়ে ছেঁড়া ও ব্যবহার অযোগ্য কাপড় ডেলিভারি দেওয়ায় এক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ (ডিবি)।
রবিবার রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন শংকর এলাকায় একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. বাপ্পি হাসান, মো. আরিফুল ওরফে হারিসুল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. বিপ্লব শেখ ও নুর মোহাম্মদ।
মো. আইউব নামের এক ভুক্তভোগী দেশ রূপান্তরকে জানান, পূর্ব রাজাবাজারে তার বাসা। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে দুই মেয়ের জন্য কাপড়ের অর্ডার দিই। তাৎক্ষণিক বিকাশের মাধ্যমে দেড় শ টাকা পরিশোধ করি। পরে এসএ পরিবহন থেকে মাল বুঝে পেয়ে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু কাপড়ের প্যাকেট খুলে দেখি খুবই নিম্নমানের ব্যবহারের অনুপযোগী কাপড়। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলে পরিবর্তন করে দেবে। কিন্তু আর কোনো খোঁজ নেই তাদের।
আজিজ নামের আরেক ভুক্তভোগীও এ চক্রের নিলাচল শপিং ডটকম নামের একটি ফেসবুকে পেজ থেকে দুটি শাড়ির অর্ডার দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান।
ডিবি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০ থেকে ৩০টি পেজ খুলে বিভিন্ন পণ্যসহ শাড়ি ও থ্রি-পিসের চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে একটি চক্র। ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে বিশাল মূল্যছাড়ের ঘোষণাও দিচ্ছে তারা। পরে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে পণ্যের অর্ডার দিলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি দেয়। এসব পণ্য বুঝে পাওয়ার পরই ঘটে বিপত্তি। ক্রেতা প্যাকেট খুলে দেখেন তিনি যেই পণ্যটি অর্ডার করেছিলেন তার পরিবর্তে চক্রটি ছেঁড়া ও ব্যবহার অযোগ্য কাপড় পাঠিয়েছে।
পুলিশ জানায়, অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে চক্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্রেতারা। তখন ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে চক্রটি। সর্বশেষ ক্রেতাদের ফোন নম্বর ও ফেসবুক আইডি ব্লক করে দেয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ।
তিনি বলেন, পল্টন থানায় এক ভুক্তভোগী সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পর ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ (ডিবি)। এতে দেখা যায় চক্রটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলে আকর্ষণীয় পণ্য বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। স্বাভাবিক মূল্যের অনেক কম মূল্য লিখে তারা এসব পোশাকের বিজ্ঞাপন দেয়। চক্রটি প্রতিদিন ১০০-১৫০টি প্রতারণা পার্সেল পাঠায়। এভাবে চক্রটি মাসে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় করে। গত ৫-৬ বছর ধরে চক্রটি এই প্রতারণা ব্যবসা করে আসছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে চক্রটির সঙ্গে এসএ পরিবহনের লোকজনও জড়িত আছে। তারা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এসএ পরিবহনকে ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রতারণা করেছে। আমরা এসএ পরিবহনের কয়েকজনের নাম পেয়েছি যারা এ প্রতারণার বিষয়টি জানেন। তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
ডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেন, আমরা তাদের ২১টি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছি, যার মাধ্যমে তারা প্রতারণা করত। ১৭৭টি খারাপ শাড়ি, থ্রি পিস জব্দ করেছি। এসব কাপড় সাধারণত বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের পর পুরোনো হয়ে গেলে অনেকে বিক্রি করে দেয়, আবার অনেকে মানুষজনকে দিয়ে দেয়। চক্রটি এসব কাপড় কিনে মানুষজনকে ডেলিভারি দিত ভালো পণ্যের নামে।
এসএ পরিবহনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ডিসি আরও বলেন, এসএ পরিবহনের সঙ্গে চক্রটির একটি চুক্তি আছে। সেই অনুযায়ী চক্রটির পার্সেল তারা পাঠাত। এ ছাড়া এসএ পরিবহনের লোকজন জানত চক্রটি এসব খারাপ মালামাল ক্রেতাদের পাঠায়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি পার্সেল ৫০ টাকা করে নিত তারা।