
যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগে স্বামীর বন্ধু নুরুদ্দিনকে (৩৮) রাজধানীর তুরাগ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। তুরাগের রাজাবাড়ী থেকে শুক্রবার রাতে (৩০ ডিসেম্বর) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার নুরুদ্দিন রাজধানীর তুরাগের রাজাবাড়ী এলাকার শুক্কর আলীর ছেলে।
র্যাব ১-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নোমান আহমদ জানান, গ্রেপ্তারকৃত নুরুদ্দিন তার বন্ধু রাসেলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা হত্যায় অভিযুক্ত।
হত্যার শিকার মুক্তার মার অভিযোগ, সম্প্রতি রাসেল তার স্ত্রী মুক্তাকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। মুক্তার পরিবার অনেক কষ্টে দুই লাখ টাকা দিলেও তাতে রাজি হয়নি রাসেল। একপর্যায়ে নুরুদ্দিনের সহায়তায় তার মেয়েকে খুন করে রাসেল।
র্যাব ১ এর ওই কর্মকর্তা আরো জানান, মুক্তাকে হত্যার অভিযোগে তার মা বাদী হয়ে নুরুদ্দিন ও রাসেলসহ চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় নুরুদ্দিনকে। গ্রেপ্তারের পর নুরুদ্দিনকে টঙ্গী পশ্চিম থানায় সোপর্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ একাধিক অভিযোগ আছে বলেও জানা গেছে।
টঙ্গী পশ্চিম থানায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ মুক্তার মার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মুক্তা ও রাসেল প্রেমের সম্পর্ক করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পারিবারের অমতে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ব্যবসার জন্য রাসেল মুক্তার পরিবারের কাছে ৭ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে রাসেল সম্প্রতি মুক্তার মার কাছে তার মেয়ে মুক্তাকে খুন করবেন বলে হুমকিও দেন। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাটুলী গ্রামে।
কৌশলে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতে ‘ফিটিং পার্টি’, ‘টানা পার্টি’, ‘খর পার্টি‘ ও ‘অজ্ঞান পার্টির’ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবগত রয়েছে। তবে এবার উদ্ভব হয়েছে নতুন আরেক পার্টির। যাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাম দিয়েছে ‘থাপ্পড় পার্টি’। তাদের অবস্থান ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকার মহাসড়কের পাশে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা বাস স্ট্যান্ডে।
পুলিশ জানায়, পথচারীদের একা পেলে সুযোগ বুঝে চক্রের একজন গিয়ে বলে, ‘তোর কাছে আমি টাকা পাই। আমার পাওনা টাকা দে।’ এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সজোরে মাথায় থাপ্পড় দেয় চক্রের ওই সদস্য। ভুক্তভোগী পথচারী কিছু বুঝে ওঠার আগেই আশপাশে থাকা চক্রের অন্যরাও চর-থাপ্পড় দিতে শুরু করে। এরই ফাঁকে তারা ছিনিয়ে নেয় মানিব্যাগ, মোবাইলফোনসহ কাছে থাকা অন্যান্য জিনিস। ভুক্তভোগীদের মধ্যে কেউ বাধা দিলেই সুইচগিয়ার চাকু ঢুকিয়ে দেয় তার শরীরে।
এমনই এক চক্রের হাতে গত ২৫ মে রাতে খুন হয়েছেন আশুলিয়ার কসমোপলিটন ইন্ডাসট্রিজ প্রা. লি. এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পলাশ চন্দ্র মিস্ত্রী (৩৭)।
তাকে খুনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এই থাপ্পড় পার্টির সন্ধান পেয়েছে ঢাকা জেলার সাভার থানা পুলিশ। সোমবার সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে এ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃ হলেন মনির হোসেন ওরফে মনির কসাই (৩০) ও হাবিব মোল্লা (২৫)।
তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার চাকুও উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় চক্রের চারজন অংশ নেয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হাবিব মোল্লার সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। হাবিব মোল্লা জানান, তিনি অটোরিকশা চালানোর আড়ালে ছিনতাই করে থাকেন। চক্রের অন্য সদস্যরা চর-থাপ্পড় মারলেও তিনি টাকা ছিনিয়ে নেয়ার কাজ করতেন।
পুলিশের ভাষ্য, এই চক্র হুট করে কাউকে থাপ্পড় দিয়ে হতবিহ্বল করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ও দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ধরনের চক্রের সন্ধান আগে পাওয়া যায়নি। থাপ্পড় পার্টির সদস্যরা মাদকসেবী। মাদকের টাকা জোগাড়ের অদম্য চেষ্টা থাকে তাদের। টাকার জন্য হিংস্র হয়ে যায় তারা, কাউকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। তারা সড়কের ফাঁকা স্থানগুলোতে সুযোগ বুঝে সব ছিনিয়ে নিচ্ছে। তাদের বাধা দিলেই হত্যা করছে।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের হাতে বেশকিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও দেখা গেছে বাধা দিলেই হত্যা করছে। সবক্ষেত্রে দেখেছি এরা মাদকসেবী।
পলাশ চন্দ্র মিস্ত্রী হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মে রাত ৮টার দিকে আশুলিয়ার কসমোপলিটন ইন্ডাসট্রিজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পলাশ চন্দ্র মিস্ত্রী (৩৭) অফিসের কাজ শেষে নবীনগরে বাসায় ফিরছিলেন। পথে সিএন্ডবি মোড়ের পশ্চিম পাশের ফুটওভার ব্রিজের নিচে ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়কে পৌঁছালে চার ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। তাদের মধ্যে হাসান নামের একজন পলাশকে বলে, ‘তোর কাছে আমি টাকা পাই। আমার পাওনা টাকা দে।’ এ সময় কসাই মনির পলাশকে থাপ্পড় মারে এবং তার কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিতে চায়। পলাশ বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাকে সুইচগিয়ার চাকু দিয়ে আঘাত করে। পলাশের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাত করলে দৌড়ে পালাতে গিয়ে পাকা সড়কের ওপর পড়ে যান তিনি। তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই পীযুষ কুমার মিস্ত্রী বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বাদী পীযুষ কুমারের মিস্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখতে পাই। হত্যাকারীরা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আমার ভাইকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।’
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী দেশ রূপান্তরকে বলেন, পলাশ হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর নতুন পদ্ধতিতে ছিনতাই ও নানা অপরাধ করা থাপ্পড় পার্টির সন্ধান পাওয়া গেছে। নতুন এ পদ্ধতিতে তারা যেন আর অপরাধ করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক আছে।
রাজধানীর ডিএমপি বাড্ডা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১৫ পিস ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির নগদ টাকাসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে ১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (১ এপিবিএন), উত্তরা, ঢাকা।
গ্রেপ্তাররকৃত মাদক কারবারি আফতাব উদ্দিন ওরফে আতা (৫১)।
১ এপিবিএনের অধিনায়ক জানান, নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির বাড্ডা থানায় অভিযান পরিচালনা করে কুখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অভিনব কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে কামাল হোসেন নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হীরাঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।
সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল হোসেইন তুহিন জানান, প্রতিদিন ভোর ৬টায় ভিকটিমদের ফোন দেন গ্রেপ্তার কামাল। তিনি নিজেকে ডিবির সদস্য দাবি করেন। তারপর ভুক্তভোগীদের বলেন, আপনার ছেলে কী করে খোঁজখবর রাখেন? এরপর ছেলের কী হয়েছে জানতে চাইলে উত্তরে বলেন, ছেলেকে একটি মেয়েসহ হোটেল থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে চাইলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না। অন্যথায় ছেলের অনেক বড় ক্ষতি হবে। এভাবে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ১০০-১৫০টি নম্বরে ফোন দিতেন। এর মধ্যে ২/৩ জনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ১ থেকে ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেন।
পুলিশ জানায়, কামাল ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে বাংলালিংক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিম কিনে নারীদের টার্গেট করতো। তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেকে বড় লোকের ছেলে পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো। পরে তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য গন্তব্যস্থলে পৌঁছার আগে বলতো তার এক্সিডেন্ট হয়েছে। এভাবে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে এক্সিডেন্টের কথা বলে প্রেমিকাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত। এখন পর্যন্ত ৪ কোটি টাকারও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতারণার টাকা দিয়ে সে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ২ কোটি টাকা সুদের কারবারে বিনিয়োগ করেছে। বাকি টাকা দিয়ে ৪৩ শতক জমি ক্রয় ও একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছে।
হারিয়ে যাওয়া ৬৪টি মোবাইল ফোন ও বিকাশ প্রতারণার ৪০ হাজার ৩৯০ টাকা উদ্ধার করেছে এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্সের সাইবার টিম। আজ বুধবার (২৪ মে) দুপুরে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন ও টাকা প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মে মাসে এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্স ইন্টেলিজেন্স উইং এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফজলুল করিমের নেতৃত্বে এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্সের সাইবার টিম অভিযান পরিচালনাকরে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে এ সব মোবাইল ফোন ও টাকা উদ্ধার করেছে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স এর অতিরিক্ত ডিআইজি প্রশাসন, মো. ফিরোজ আল মুজাহিদ খান উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন ও টাকা প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করেন। মোবাইল ফোন ও বিকাশ প্রতারণার টাকা ফেরত পেয়ে তারা এপিবিএনের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি প্রশাসন মো. ফিরোজ আল মুজাহিদ খান সেবা গ্রহীতাদের উদ্দেশ্যে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করেন এবং এপিবিএন হতে সেবা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন সাইবার ক্রাইম, মানব পাচারসহ অন্যান্য অপরাধের তথ্য পেলে আপনারা সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নসহ এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্সকে অবহিত করবেন এবং প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করবেন। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স, উত্তরা, ঢাকা এর ইন্টেলিজেন্স উইং (সিআইএ) শাখা কর্তৃক জানুয়ারী/২০২৩ হতে এপ্রিল/২০২৩ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৬৮টি মোবাইল ফোন, বিকাশ প্রতারনার ৪,৮০,৪৩৯/-টাকা, ১ জন ভিকটিম উদ্ধার, ভূয়া পুলিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত ২ জন প্রতারক গ্রেফতার, ১ জন জিনের বাদশা গ্রেপ্তার ও ৬টি ফেসবুক আইডি রিকভার করা হয়।
অনুষ্ঠানে একেএম মোশাররফ হোসেন মিয়াজী, অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ১ এপিবিএন, মো. কামরুল আমীন, পুলিশ সুপার ইন্টেলিজেন্স, মো. ফজলুল করিম পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন্টেলিজেন্স উইং এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্স উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ফিরোজ আল মুজাহিদ খান, অতিরিক্ত ডিআইজি, এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্স এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সাধারণ নাগরিকের জন্য এ ধরনের সেবা দিতে এপিবিএন সদস্যরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
গাজীপুরের সালনায় কলেজছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা এবং নিহতের মা ও ২ বোনকে মারাত্মকভাবে জখম করার ঘটনায় একমাত্র আসামি মো. সাইদুল ইসলাম নামে গৃহশিক্ষককে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গতকাল বুধবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি দল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে সাইদুলকে গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।
এর আগে, ৮ মে রাতের এই ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল জানিয়েছে, ২০২০ সালে করোনাকালীন ভিকটিমের পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে ভিকটিমের বাবা তাকে নিয়োগ দেন। আরবি পড়ানোর সুবাদে সে প্রতিনিয়ত ভিকটিমের বাসায় যাওয়া-আসা করত। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। বিভিন্ন সময় সাইদুল ভিকটিমের প্রতি কুনজর দেয় এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
র্যাব জানায়, ৫-৬ মাস আরবি শিখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে গত ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ভিকটিমকে মৌখিকভাবে বিবাহ করে। পরবর্তীতে সাইদুল বিয়ের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে ভিকটিমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ভিকটিম গাজীপুর সদর থানায় বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। যার কারণে সাইদুল কিছুদিন ভিকটিমকে উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকে।
কিন্তু গত ২ মাস ধরে ভিকটিমের কলেজে এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে ভিকটিমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সাইফুল জানতে পারে যে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে ভিকটিম ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, ভিকটিমকে হত্যার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৭ মে বিকালে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেয়। পর দিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় গিয়ে তার রুমে ঢুকে ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় ভিকটিমের চিৎকারে তার মা ও দুই বোন দৌড়ে তার ঘরে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সাইদুল ছুরি দিয়ে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি কুপিয় জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন এবং ভিকটিমের মা ও ছোট ২ বোনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে তাদের শারিরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাদের উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ভিকটিমের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
খন্দকার মইন বলেন, সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাস করে। সে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করত এবং এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াত। ২ মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দেয়। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য সে নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকার সময়ে গত রাতে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।