প্রতীকী ভাস্কর্য নির্মাণ-ব্যাঙ্গাত্বক চিত্রে শিল্পীদের প্রতিবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:৪৫
প্রতীকী ভাস্কর্য নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ জানিয়েছে শিল্পীরা। শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’ এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় মৌলবাদী ও উগ্রবাদীদের নানা রকম ব্যঙ্গাত্মক চিত্রও অঙ্কন করা হয়। দেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
‘স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের রুখে দাঁড়াও’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমের আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে মহাজাগরণ তৈরি হয়েছিল, তার মূল ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা, সকল মানুষের সমঅধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্র। যে সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে আমাদের জাতীয়তাবাদ তৈরি হয়েছে, তারা সেই জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করছে।”
প্রতীকী ভাস্কর্য নির্মাণের মাধ্যমে শৈল্পিক প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “যে ভাস্কর্য তারা ভেঙেছে, তার প্রতীকী ভাস্কর্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে। এটা একটা শৈল্পিক প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ থেকে প্রতিরোধ গড়তে হবে। তারা কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙেছে, বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভেঙেছে। এ ধরনের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড করেও তারা গর্বের সাথে জীবনযাপন করছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়, জাতির জন্য লজ্জার বিষয়। আমরা মনে করি, এদের শাস্তি দিতে হবে। সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধে তাদের শাস্তি দিতে হবে।”
আল আযম খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নাসির উদ্দীন ইউসুফ ছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, চিত্রশিল্প বীরেণ সোম, মনিরুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান বাদশা, যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম, জাসদ নেতা রোকুজ্জামান রোকন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য ডা. মামুন আল মাহতাব, গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন প্রমুখ।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা ও কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদ জানান চারু ও ভাস্কর্য শিল্পীরা। মানব বলয়ে প্রতীকী ভাস্কর্য তৈরিসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবয়ব ও তর্জনীর ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ভাস্কর্য শিল্পীরা। পাশাপাশি ‘মৌলবাদী অপশক্তির’ব্যঙ্গাত্মক চিত্র অঙ্কন করে শৈল্পিক প্রতিবাদ জানান চারুশিল্পীরা।
অসীম কুমার উকিল বলেন, ধর্মব্যবসায়ী জামাত-শিবির, রাজাকারদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অপশক্তি আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করেছে।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে কোনো রাজনীতি করেতে দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে বাঙালির জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমরা উর্ধ্বে তুলে ধরব।
অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, একদল কট্টর মৌলবাদী মধ্যযুগীয় চিন্তা ধারণ করে আছে এবং আমাদের সকল অগ্রযাত্রায় প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা তাদের কোনো রকম বোঝাপড়ার মধ্যে না গিয়ে তাদের চাহিদা মত কাজ করছি। এখন সময় এসেছে, এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। মসজিদের খুতবায় এদেশের সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অনেক কথা বলা হয়। সেখানে কেউ প্রতিবাদ করেন না। ফলে সেখানে উপস্থিত মানুষ এই কথা সত্য মনে করেন এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হন। সেখানে কোনো প্রতিবাদ না করে শুধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলে মৌলবাদীদের প্রতিহত করা যাবে না। তাদেরকে সেখানেই প্রতিহত করতে হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:৪৫

প্রতীকী ভাস্কর্য নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ জানিয়েছে শিল্পীরা। শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’ এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় মৌলবাদী ও উগ্রবাদীদের নানা রকম ব্যঙ্গাত্মক চিত্রও অঙ্কন করা হয়। দেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
‘স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের রুখে দাঁড়াও’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমের আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে মহাজাগরণ তৈরি হয়েছিল, তার মূল ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা, সকল মানুষের সমঅধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্র। যে সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে আমাদের জাতীয়তাবাদ তৈরি হয়েছে, তারা সেই জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করছে।”
প্রতীকী ভাস্কর্য নির্মাণের মাধ্যমে শৈল্পিক প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “যে ভাস্কর্য তারা ভেঙেছে, তার প্রতীকী ভাস্কর্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে। এটা একটা শৈল্পিক প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ থেকে প্রতিরোধ গড়তে হবে। তারা কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙেছে, বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভেঙেছে। এ ধরনের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড করেও তারা গর্বের সাথে জীবনযাপন করছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়, জাতির জন্য লজ্জার বিষয়। আমরা মনে করি, এদের শাস্তি দিতে হবে। সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধে তাদের শাস্তি দিতে হবে।”
আল আযম খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নাসির উদ্দীন ইউসুফ ছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, চিত্রশিল্প বীরেণ সোম, মনিরুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান বাদশা, যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম, জাসদ নেতা রোকুজ্জামান রোকন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য ডা. মামুন আল মাহতাব, গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন প্রমুখ।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা ও কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদ জানান চারু ও ভাস্কর্য শিল্পীরা। মানব বলয়ে প্রতীকী ভাস্কর্য তৈরিসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবয়ব ও তর্জনীর ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ভাস্কর্য শিল্পীরা। পাশাপাশি ‘মৌলবাদী অপশক্তির’ব্যঙ্গাত্মক চিত্র অঙ্কন করে শৈল্পিক প্রতিবাদ জানান চারুশিল্পীরা।
অসীম কুমার উকিল বলেন, ধর্মব্যবসায়ী জামাত-শিবির, রাজাকারদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অপশক্তি আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করেছে।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে কোনো রাজনীতি করেতে দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে বাঙালির জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমরা উর্ধ্বে তুলে ধরব।
অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, একদল কট্টর মৌলবাদী মধ্যযুগীয় চিন্তা ধারণ করে আছে এবং আমাদের সকল অগ্রযাত্রায় প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা তাদের কোনো রকম বোঝাপড়ার মধ্যে না গিয়ে তাদের চাহিদা মত কাজ করছি। এখন সময় এসেছে, এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। মসজিদের খুতবায় এদেশের সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অনেক কথা বলা হয়। সেখানে কেউ প্রতিবাদ করেন না। ফলে সেখানে উপস্থিত মানুষ এই কথা সত্য মনে করেন এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হন। সেখানে কোনো প্রতিবাদ না করে শুধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলে মৌলবাদীদের প্রতিহত করা যাবে না। তাদেরকে সেখানেই প্রতিহত করতে হবে।