সংস্কৃতির বাজেট ৬৩৭ কোটি: হতাশ সংস্কৃতিকর্মীরা
পাভেল রহমান | ৯ জুন, ২০২২ ১৭:৪৫
২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্কৃতিতে প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ৬৩৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাতে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫৮৭ কোটি টাকা; যা সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৫৭৯ কোটি টাকায়।
গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে এবার ৫০ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৫৮ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
সংস্কৃতিজনেরা বলছেন, এবারও জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতিকে অবহেলা করা হয়েছে এবং এই বাজেটে সংস্কৃতিকর্মীরা হতাশ। দেশব্যাপী সংস্কৃতিচর্চাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এই বাজেট অপ্রতুল। এবার মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ আশা করেছিল সংস্কৃতিকর্মীরা। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিবারই জাতীয় বাজেটে আমরা দেখি সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা। সংস্কৃতি খাতে যে বাজেট দেওয়া হয়, সেটা তো বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় শেষ হয়ে যায়। তৃণমূলে সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিতে হলে রাষ্ট্রকে ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রের অবহেলা আমাদের ভীষণ রকম হতাশ করে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘সংস্কৃতির বাজেট কম হলে পিছিয়ে পড়বে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এটুকু বোঝা উচিত। সংস্কৃতিকর্মীরা এই বাজেটে খুবই হতাশ। সাংস্কৃতিক জোট সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। শুধু এটুকু বলবো, সংস্কৃতির প্রতি এই অবহেলা রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু হবে না।’
জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ। সাংস্কৃতিক জোটের সকল নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে বসে আমরা অফিশিয়ালি আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু এটুকু বলবো, সরকারকে বোঝা উচিত, সংস্কৃতির বাজেট শুধু সংস্কৃতির নয়। একটা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থাকে বজায় রাখার জন্য এবং মানুষের মানবিক বিকাশের জন্য জরুরি।’
উল্লেখ্য গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরও সেই দাবি লিখিতভাবে জানিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ আছে, সরকার বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, নাটক ইত্যাদি সুকুমার শিল্পের সৃজনশীল উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। দেশজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের গবেষণা, প্রদর্শন, প্রকাশনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ চিহ্নিতকরণ, খনন, সংস্কার, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপিরাইট সংরক্ষণসহ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন, একুশে পদক প্রদান এবং বাংলা নববর্ষসহ জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপনে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। প্রতি অর্থবছরে অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে সনাতন পদ্ধতির স্থলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করা হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
পাভেল রহমান | ৯ জুন, ২০২২ ১৭:৪৫

২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্কৃতিতে প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ৬৩৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাতে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫৮৭ কোটি টাকা; যা সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৫৭৯ কোটি টাকায়।
গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে এবার ৫০ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৫৮ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
সংস্কৃতিজনেরা বলছেন, এবারও জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতিকে অবহেলা করা হয়েছে এবং এই বাজেটে সংস্কৃতিকর্মীরা হতাশ। দেশব্যাপী সংস্কৃতিচর্চাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এই বাজেট অপ্রতুল। এবার মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ আশা করেছিল সংস্কৃতিকর্মীরা। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিবারই জাতীয় বাজেটে আমরা দেখি সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা। সংস্কৃতি খাতে যে বাজেট দেওয়া হয়, সেটা তো বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় শেষ হয়ে যায়। তৃণমূলে সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিতে হলে রাষ্ট্রকে ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রের অবহেলা আমাদের ভীষণ রকম হতাশ করে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘সংস্কৃতির বাজেট কম হলে পিছিয়ে পড়বে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এটুকু বোঝা উচিত। সংস্কৃতিকর্মীরা এই বাজেটে খুবই হতাশ। সাংস্কৃতিক জোট সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। শুধু এটুকু বলবো, সংস্কৃতির প্রতি এই অবহেলা রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু হবে না।’
জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ। সাংস্কৃতিক জোটের সকল নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে বসে আমরা অফিশিয়ালি আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু এটুকু বলবো, সরকারকে বোঝা উচিত, সংস্কৃতির বাজেট শুধু সংস্কৃতির নয়। একটা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থাকে বজায় রাখার জন্য এবং মানুষের মানবিক বিকাশের জন্য জরুরি।’
উল্লেখ্য গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরও সেই দাবি লিখিতভাবে জানিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ আছে, সরকার বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, নাটক ইত্যাদি সুকুমার শিল্পের সৃজনশীল উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। দেশজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের গবেষণা, প্রদর্শন, প্রকাশনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ চিহ্নিতকরণ, খনন, সংস্কার, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপিরাইট সংরক্ষণসহ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন, একুশে পদক প্রদান এবং বাংলা নববর্ষসহ জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপনে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। প্রতি অর্থবছরে অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে সনাতন পদ্ধতির স্থলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করা হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।