শাবানার জন্মদিনে শ্রদ্ধা
ভালোর গুণ গাইবো না কেন?
দিলশাদুল হক শিমুল | ১৫ জুন, ২০২২ ১৪:৫৫
কোলাজ: শাবানা ও দিলশাদুল হক শিমুল
বিদ্যালয় বা ধর্মালয়ে যেমন খারাপ মানুষ আছে, তেমনি আছে রাস্তা-ঘাটে, বাসে-মাঠে, কারখানায়; সব জায়গায়। আবার এইসব জায়গায় ভালো মানুষও আছেন।
ডিজিটালের সুযোগে এই খারাপের প্রচার আমরা করছি হর হামেশা। অথচ চাইলেই আমরা ভালোটাকে বেশি প্রচার করে সমাজেরই ভালো করতে পারতাম। ভাইরালের যুগে সবাই যা করছে আমরাও তাই করছি। তাই সবার মাথার ছাঁট তৈরি হচ্ছে সেই একই রকম। তাতে খুব বেশি অসুবিধা নেই। অসুবিধা হচ্ছে ধীরে ধীরে। মাথার ভেতরটাও একই রকম হয়ে যাচ্ছে সবার। এই নষ্ট মাথা নিয়ে আমরা তৈরি করছি এক নষ্ট সমাজ। কে করবে ঠিক?
যেভাবেই পারো এগিয়ে যাও এমন চিন্তাশক্তি দিয়ে আমরা যে জেনারেশন তৈরি করছি তা একসময় আমাদেরই বুমেরাং হয়ে আঘাত দেবে, এটাই নিয়ম। অথচ এগিয়ে যাবার নেশায় না ফেলে ভালোটা তৈরির পেশায় তাদের তৈরি করতে পারতাম যদি আমরা কত ভালো হবে ভেবে দেখেন! আপনার নিজের সন্তানকে এটা বলবার পাশাপাশি নিজে চর্চা করেও এটা দেখানো খুব টাফ না। তাকে এটা শেখানো খুব জরুরি যে অনৈতিক হয়ে না এগিয়ে কখনও কখনও প্রবল নৈতিক থেকে একটু পিছিয়ে পড়াই ভালো। এটা ভালো যদি তাকে শেখাতে পারেন।
সবসময় জিততে নেই কখন কখনও হারতে হয়। কখনও কখনও ধীরে চলতে হয়। এত দ্রুত উন্নয়নের খুব বেশি দরকার নেই। বিশেষ করে যে উন্নয়ন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কর্মে চুরি করে এগিয়ে যাবার মতো বা হাসপাতালের শ’ খানেক টাকার পর্দাকে হাজার টাকায় দেখিয়ে জনগণের টাকা চুরি করবার মতো। তাকে এটা শেখানো খুব জরুরি যে এ জীবনটা একদিন ফুরাবে তাই প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর ও নৈতিকভাবে উপভোগ্য করে তুলতে। অনৈতিকতা থেকেই আসে অন্যায়, ভয়াবহ অন্যায় মাদক, ধর্ষণ আরও অন্যান্য।
আপনি হয়তো ভালো কাজ করে দেখানোর সময় পান না সন্তানকে; হয়তো হাতে-কলমে শেখাতে পারেন না। একটা কাজ করেই আপনি প্রতিদিন একটি ভালো কাজ করবার সমান আদর্শ তৈরি করতে পারেন। অন্তত, আপনার নিজের ফেসবুকের দেয়ালে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ভালো কাজ করছে তা প্রচার করুন। আমাদের সমাজে এখন সবচেয়ে বড় প্রচার মাধ্যম ফেসবুক। আপনার ফেসবুকের দেয়ালে আপনার আশপাশের আদর্শিক মানুষের কথা লিখে প্রচার করুন। প্রচার করতে পারেন আপনার প্রিয় আদর্শিক শিক্ষকের কথাও। অন্তত একটা ভালো চলচ্চিত্রের কথা প্রচার করুন। খুব কষ্ট হলে একটা ভালো গান অন্তত প্রচার করুন, একটা ভালো বই বা কবিতা, প্রচার করুন।
কী হবে জানেন? আপনার এই প্রচারে সমাজের রুচি পরিবর্তন হবে। এই সমাজ পরিবর্তিত হবে ভালো, আদর্শিক এক সমাজে। নষ্ট হতে যাওয়া এই সমাজকে বাঁচান। কারণ, আপনিই পারেন; কারণ এখানেই বড় হবে আপনার সন্তান, আপনার পরবর্তী প্রজন্ম।
খারাপ সব পেশায় আছে। খারাপকে খারাপ বলেন, ভালোকে মেনে চলেন। ছোটবেলায় মামাদের সঙ্গে প্রচুর সিনেমা দেখেছি। রাতে ঘুমানোর সময় গল্প শুনতাম বড় মামার কাছে। প্রায়ই বড় মামা বলতেন, ‘ফুলে মধু থাকে, থাকে বিষও। ভ্রমর নেয় বিষ, মৌমাছি নেয় মধু। এই সমাজেও তেমনি ভালো-খারাপ সব জায়গায় আছে। তুমি কী নেবে তা তোমার ওপর নির্ভর করবে।’
হয়েছে কী পত্রিকা থেকে শুরু করে ফেসবুক পর্যন্ত এত বিষ আমরা প্রচার করছি সব মাধ্যমে যে আমাদের সন্তানেরা মধু আর খুঁজে পাচ্ছে না। তাই এই ফুলগুলোকে বাঁচান। প্লিজ।
আপনি আমি সমাজের কোন জায়গা থেকে কী নেবো, তা একান্তই আমাদের ওপর নির্ভর করে। কেউ একজন খারাপ হলেই আমরা তার মতো হবো কেন! খারাপ করলে তাকে খারাপ বলে সরে থাকার পাশাপাশি ভালোওতো আছে সব পেশায়, তাহলে ভালোর গুণ গাইবো না কেন?
ভালো গানের প্রচার না হলে কাঁচা বাদামই সমাজের আইডল হবে। আপনার সন্তানকে টিকটকে এ গান গাইতেই দেখবেন। তাই ভালোর প্রচারটাও করুন, এটা সমাজ গঠনে আপনার দায়িত্ব।
আজ আমাদের চলচ্চিত্রের নায়িকা শাবানার জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন শাবানা আপা। আপনাদের সময়ের চলচ্চিত্রে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা অতিবাহিত করেও আপনারা সংসার ধর্ম পালন করেছেন। সমাজে নীতি-আদর্শের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে প্রহণযোগ্য করবার পাশাপাশি সামাজিক ও আদর্শিক উদাহরণ সৃষ্টিতে আপনারাই এক একজন মহানায়িকা এবং আপনি তাদের অন্যতম।
ভালো থাকবেন। আপনার সুস্থ ও আনন্দময় জীবন কামনা করি।
দিলশাদুল হক শিমুল: চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
দিলশাদুল হক শিমুল | ১৫ জুন, ২০২২ ১৪:৫৫

বিদ্যালয় বা ধর্মালয়ে যেমন খারাপ মানুষ আছে, তেমনি আছে রাস্তা-ঘাটে, বাসে-মাঠে, কারখানায়; সব জায়গায়। আবার এইসব জায়গায় ভালো মানুষও আছেন।
ডিজিটালের সুযোগে এই খারাপের প্রচার আমরা করছি হর হামেশা। অথচ চাইলেই আমরা ভালোটাকে বেশি প্রচার করে সমাজেরই ভালো করতে পারতাম। ভাইরালের যুগে সবাই যা করছে আমরাও তাই করছি। তাই সবার মাথার ছাঁট তৈরি হচ্ছে সেই একই রকম। তাতে খুব বেশি অসুবিধা নেই। অসুবিধা হচ্ছে ধীরে ধীরে। মাথার ভেতরটাও একই রকম হয়ে যাচ্ছে সবার। এই নষ্ট মাথা নিয়ে আমরা তৈরি করছি এক নষ্ট সমাজ। কে করবে ঠিক?
যেভাবেই পারো এগিয়ে যাও এমন চিন্তাশক্তি দিয়ে আমরা যে জেনারেশন তৈরি করছি তা একসময় আমাদেরই বুমেরাং হয়ে আঘাত দেবে, এটাই নিয়ম। অথচ এগিয়ে যাবার নেশায় না ফেলে ভালোটা তৈরির পেশায় তাদের তৈরি করতে পারতাম যদি আমরা কত ভালো হবে ভেবে দেখেন! আপনার নিজের সন্তানকে এটা বলবার পাশাপাশি নিজে চর্চা করেও এটা দেখানো খুব টাফ না। তাকে এটা শেখানো খুব জরুরি যে অনৈতিক হয়ে না এগিয়ে কখনও কখনও প্রবল নৈতিক থেকে একটু পিছিয়ে পড়াই ভালো। এটা ভালো যদি তাকে শেখাতে পারেন।
সবসময় জিততে নেই কখন কখনও হারতে হয়। কখনও কখনও ধীরে চলতে হয়। এত দ্রুত উন্নয়নের খুব বেশি দরকার নেই। বিশেষ করে যে উন্নয়ন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কর্মে চুরি করে এগিয়ে যাবার মতো বা হাসপাতালের শ’ খানেক টাকার পর্দাকে হাজার টাকায় দেখিয়ে জনগণের টাকা চুরি করবার মতো। তাকে এটা শেখানো খুব জরুরি যে এ জীবনটা একদিন ফুরাবে তাই প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর ও নৈতিকভাবে উপভোগ্য করে তুলতে। অনৈতিকতা থেকেই আসে অন্যায়, ভয়াবহ অন্যায় মাদক, ধর্ষণ আরও অন্যান্য।
আপনি হয়তো ভালো কাজ করে দেখানোর সময় পান না সন্তানকে; হয়তো হাতে-কলমে শেখাতে পারেন না। একটা কাজ করেই আপনি প্রতিদিন একটি ভালো কাজ করবার সমান আদর্শ তৈরি করতে পারেন। অন্তত, আপনার নিজের ফেসবুকের দেয়ালে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ভালো কাজ করছে তা প্রচার করুন। আমাদের সমাজে এখন সবচেয়ে বড় প্রচার মাধ্যম ফেসবুক। আপনার ফেসবুকের দেয়ালে আপনার আশপাশের আদর্শিক মানুষের কথা লিখে প্রচার করুন। প্রচার করতে পারেন আপনার প্রিয় আদর্শিক শিক্ষকের কথাও। অন্তত একটা ভালো চলচ্চিত্রের কথা প্রচার করুন। খুব কষ্ট হলে একটা ভালো গান অন্তত প্রচার করুন, একটা ভালো বই বা কবিতা, প্রচার করুন।
কী হবে জানেন? আপনার এই প্রচারে সমাজের রুচি পরিবর্তন হবে। এই সমাজ পরিবর্তিত হবে ভালো, আদর্শিক এক সমাজে। নষ্ট হতে যাওয়া এই সমাজকে বাঁচান। কারণ, আপনিই পারেন; কারণ এখানেই বড় হবে আপনার সন্তান, আপনার পরবর্তী প্রজন্ম।
খারাপ সব পেশায় আছে। খারাপকে খারাপ বলেন, ভালোকে মেনে চলেন। ছোটবেলায় মামাদের সঙ্গে প্রচুর সিনেমা দেখেছি। রাতে ঘুমানোর সময় গল্প শুনতাম বড় মামার কাছে। প্রায়ই বড় মামা বলতেন, ‘ফুলে মধু থাকে, থাকে বিষও। ভ্রমর নেয় বিষ, মৌমাছি নেয় মধু। এই সমাজেও তেমনি ভালো-খারাপ সব জায়গায় আছে। তুমি কী নেবে তা তোমার ওপর নির্ভর করবে।’
হয়েছে কী পত্রিকা থেকে শুরু করে ফেসবুক পর্যন্ত এত বিষ আমরা প্রচার করছি সব মাধ্যমে যে আমাদের সন্তানেরা মধু আর খুঁজে পাচ্ছে না। তাই এই ফুলগুলোকে বাঁচান। প্লিজ।
আপনি আমি সমাজের কোন জায়গা থেকে কী নেবো, তা একান্তই আমাদের ওপর নির্ভর করে। কেউ একজন খারাপ হলেই আমরা তার মতো হবো কেন! খারাপ করলে তাকে খারাপ বলে সরে থাকার পাশাপাশি ভালোওতো আছে সব পেশায়, তাহলে ভালোর গুণ গাইবো না কেন?
ভালো গানের প্রচার না হলে কাঁচা বাদামই সমাজের আইডল হবে। আপনার সন্তানকে টিকটকে এ গান গাইতেই দেখবেন। তাই ভালোর প্রচারটাও করুন, এটা সমাজ গঠনে আপনার দায়িত্ব।
আজ আমাদের চলচ্চিত্রের নায়িকা শাবানার জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন শাবানা আপা। আপনাদের সময়ের চলচ্চিত্রে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা অতিবাহিত করেও আপনারা সংসার ধর্ম পালন করেছেন। সমাজে নীতি-আদর্শের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে প্রহণযোগ্য করবার পাশাপাশি সামাজিক ও আদর্শিক উদাহরণ সৃষ্টিতে আপনারাই এক একজন মহানায়িকা এবং আপনি তাদের অন্যতম।
ভালো থাকবেন। আপনার সুস্থ ও আনন্দময় জীবন কামনা করি।
দিলশাদুল হক শিমুল: চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক