
শিক্ষাবিদ ও লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের ১৯০৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পাবনা জেলায়। ১৯২৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। প্রথমে স্কুল সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন। পরে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের স্কুল শাখা, হাওড়া জেলা স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ এবং সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজে শিক্ষকতা করেন।
১৯৫২ সালে ছয় মাসের জন্য তিনি ঢাকায় ‘মাহে নও’ মাসিকপত্রের সম্পাদক ছিলেন। এ বছরই তিনি আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে লন্ডন যান। সেখানে ফোকলোর বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য হওয়ায় তাকে International Folksongs Council এর সদস্যপদ দেওয়া হয়।
লন্ডন থেকে ফিরে তিনি ঢাকা কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদ তাকে সংবর্ধিত করে।
লোকসংগীত সংকলন ও সম্পাদনা করে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি নানা বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় উত্তরসূরীর আয়োজন এশীয় দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী ও ঢাকা আর্ট সামিটকে কেন্দ্র করে দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীসমূহের চরিত্র, অবদান, সম্ভাবনা ও সুনির্দিষ্ট ব্যার্থতার ওপর আলোচনা 'প্রদর্শনীর পঞ্চতন্ত্র: স্মরণীয় ও অবিস্মরণীয় বর্তমান' অনুষ্ঠিত হবে।
'উত্তরসূরী: নুরজাহান-সারওয়ার মুরশিদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র'-এর উদ্যোগ এই সেমিনার 'প্রদর্শনীর পঞ্চতন্ত্র শিরোনামের' অনুষ্ঠানমালার প্রথম কিস্তি। 'প্রদর্শনীর পঞ্চতন্ত্র: স্মরণীয় ও অবিস্মরণীয় বর্তমান' ৭৬৫ সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডির উত্তরসূরী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনার সূত্রধর হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, উত্তরসূরীর পরিচালক মোস্তফা জামান ও লেখক-গবেষক তাহমিদ জামি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উত্তরসূরীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ।
শুরু হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। বাঙালির কাছে এটি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। বাঙালি জাতি পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষা শহীদদের প্রতি। এ উপলক্ষে রাজধানীর ধানমণ্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের প্রধান মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ আবৃত্তিনুষ্ঠানের।
‘বাংলা আমার ভাষা বাংলা আমার দেশ’ শীর্ষক এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে। এতে আবৃত্তি পরিবেশনা করবেন দেওয়ান সাঈদুল হাসান, ফারহানা তৃনা, লিজা চৌধুরী ও নাজমুল আহসান।
অনুষ্ঠানে আবৃত্তিপ্রেমীদের সবান্ধব আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তন ঝংকৃত হবে মোহাম্মদ হানিফের নিক্কনের ছন্দে। নৃত্যযোগ, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার অব ওয়ার্ল্ড ড্যান্স এলায়েন্স আয়োজন করেছে এই তরুণ কত্থক নৃত্যশিল্পীর একক নৃত্যানুষ্ঠান।
হানিফ ভারত সরকারের বৃত্তি পেয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত্থক নাচের ওপরেই অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তার নাচের গুরু কলকাতার রাজীব ঘোষ। মঙ্গলবারেরর অনুষ্ঠানের পুরো তত্ত্বাবধানে তিনিই রয়েছেন।
আয়োজক সংগঠনের প্রধান ও দেশের অন্যতম নৃত্যশিল্পী লুবনা মরিয়ম বলেন, ‘মোহাম্মদ হানিফ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম মেধাবী। তিনি অসাধরণ কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন। আমার নাচের দল সাধনার সঙ্গে এক দশক ধরে জড়িত। মেধা আর পরিশ্রম যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবদ্ধকতাকে জয় করতে পারে হানিফ তার উদাহরণ। শুধু তার জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিষ্ঠিত লোকদের সহায়তা।’
হানিফ বলেন, ‘গত ১২ বছরে জাপান, সাউথ কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, ইতালি, ভারতের নৃত্যোৎসবে অংশ নিয়েছি। বিশ্ববিখ্যাত কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের ড্যন্স কোম্পানি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মিত ‘ফাদার : ভিশন অব দ্য ফ্লোয়েটিং ওয়ার্ল্ড’ নৃত্যালেখ্যতেও কাজ করেছি কয়েক বছর আগে। তবে আন্তর্জাতিক কোরিওগ্রাফারদের সঙ্গে কাজ করছি আরও আগে থেকে। ২০১২ সালে জার্মান কোরিওগ্রাফার হেলেনা ওয়াল্ডম্যানের পরিচালনায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নৃত্যালেখ্যতে কাজ করি। সেটি ইউরোপ, ভারত ও বাংলাদেশে সফলভাবে মঞ্চায়ন হয়। মার্কিন কোরিওগ্রাফার বার্ডসের পরিচালনায় ‘লুকিং ফরোয়ার্ড টু দ্য পাস্ট’ নৃত্যালেখ্যতেও ছিলাম। এখন দেশেই নিয়মিত কাজ করছি।’
কারে দেখাব মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া, ভ্রমর কইয়ো গিয়া শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে, প্রাণ সখী রে ওই শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে-সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি। তিনি সাধক কবি, বৈষ্ণব বাউল ও ধামালি নৃত্যের প্রবর্তক। সংগীতানুরাগীদের কাছে তিনি রাধারমণ নামে পরিচিত।
আজ সেই লোকসংস্কৃতির উজ্জ্বল নক্ষত্র গীতিকবি রাধারমণ দত্তের ১০৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯১৫ সালের ১০ নভেম্বর ৮৩ বছরে বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী রাধারমণকে সুনামগঞ্জের কেশবপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।
রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থের জন্ম ১৮৩৩ সালে, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের খ্যাতিমান ও প্রভাবশালী এক পরিবারে। তার পূর্বপুরুষদের নামে যেখানে তিনটি এলাকার নাম আছে। এলাকাগুলো হলো জগন্নাথপুর, প্রভাকরপুর ও কেশবপুর।
কেশবপুরেই তৎকালীন খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও কবি রাধামাধব দত্ত পুরকায়স্থের ঘরে জন্ম নেন রাধারমণ দত্ত। তার মায়ের নাম সুবর্ণা দেবী। তার বাবা রাধামাধব পরম পণ্ডিত ও অশেষ গুণের অধিকারী ছিলেন। বাবার সংগীত ও সাহিত্যসাধনা রাধারমণকে প্রভাবিত করে। কালক্রমে তিনি একজন স্বভাবকবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বিভিন্ন সংগ্রাহকের মতে, রাধারমণের গানের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। তবে তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রমী হচ্ছে ধামাইল গান।
তিনি একাধারে ছিলেন- মরমি কবি, বৈষ্ণব সহজিয়া ঘরানার সাধক, ধামাইল গানের জনক কিংবা লোকায়ত বাংলার মহান কণ্ঠস্বর। জীবনের বড় একটা অংশ যিনি কাটিয়ে দিয়েছেন অনন্তের সন্ধানে, তেমনি প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ, দেহতত্ত্ব, ভজন, ভক্তি, রাধাকৃষ্ণের আকুলতা নিয়ে বেঁধেছেন গান। নিজে কখনো সেসব গান না লিখলেও তার ভক্তরা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই পুঁথিবদ্ধ করে ফেলতেন। এভাবে তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তিন সহস্রাধিক গান, যা তাকে একজন কিংবদন্তি অমর গীতিকবি ও সুরসাধকের আসনে আসীন করেছে।
জগন্নাথপুরের কেশবপুরে রাধারমণের নামে একটি সমাধিমন্দির আছে। রাধারমণ দত্তের স্মৃতি রক্ষায় ইতিমধ্যে সরকারও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাউল শাহ আবদুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্বশিক্ষিত বাউল শাহ আবদুল করিম পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।
১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা ইব্রাহীম আলী, মায়ের নাম নাইওরজান।
দারিদ্র্য ও জীবন-সংগ্রামের মধ্যে বড় হওয়া শাহ আবদুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। দারিদ্র্যের কারণে কৃষিকাজ করলেও গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখা যায়নি।
তিনি বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশের কাছ থেকে। তিনি শরিয়তি, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।
কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আবদুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।
বাউল শাহ আবদুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘ভাটির পুরুষ’। তাকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকের প্রদর্শনী করেছে সুবচন নাট্য সংসদ।
কবি, গীতিকার ও গায়ক অতুলপ্রসাদ সেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
‘মোদের গরব, মোদের আশা/আ মরি বাংলা ভাষা’ গানটিতে তার মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। এ গান বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের মধ্যে অফুরন্ত প্রেরণা জুগিয়েছে। গানটির আবেদন আজও অম্লান।
অতুলপ্রসাদ সেনের জন্ম ২০ অক্টোবর ১৮৭১ সালে ঢাকায়। ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাসের পর তিনি কিছুদিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে বিলাত থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে এসে কলকাতা ও রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
তিনি বঙ্গ-সাহিত্য সম্মিলন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন, পরে তিনি লিবারেলপন্থি হন। সমগ্র জীবনের উপার্জিত অর্থের বৃহৎ অংশ স্থানীয় জনকল্যাণে তিনি ব্যয় করেন।
বাংলাভাষীদের কাছে তিনি একজন সংগীতজ্ঞ ও সুরকার হিসেবেই পরিচিত। তার গানগুলো প্রধানত স্বদেশিসংগীত, ভক্তিগীতি ও প্রেমের গান এই তিন ধারায় বিভক্ত। তবে ব্যক্তিজীবনের বেদনা তার গানে কমবেশি প্রভাব ফেলেছে। রবীন্দ্র-প্রভাববলয়ের মধ্যে বিচরণ করেও যারা বাংলা কাব্যগীতি রচনায় নিজেদের বিশেষত্ব প্রকাশ করতে সক্ষম হন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম।
১৯০২ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত তিনি আইন ব্যবসা উপলক্ষে লক্ষে তে অতিবাহিত করেন। সে সময় তার বাংলোয় প্রায় সন্ধ্যায়ই গানের আসর বসত। সেই আসরে গান শোনাতে আসতেন আহম্মদ খলিফ খাঁ, ছোটে মুন্নে খাঁ, বরকত আলী খাঁ, আবদুল করিম প্রমুখ। বাংলা সংগীতে তিনিই প্রথম ঠুমরির চাল সংযোজন করেন।
আধুনিক বাংলা নাটকের অন্যতম সফল নাট্যকার সেলিম আল দীনের জন্মদিন আজ। ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট তিনি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলায় বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’ অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে যোগদান করেন। খ্যাতিমান অধ্যাপক ও নাট্যকার পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন গবেষক, সংগঠক, নাট্যনির্দেশক এবং শিল্পতাত্ত্বিক। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালে ‘ঢাকা থিয়েটার’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।
১৯৮১-৮২ সালে তিনি এবং নাট্য-নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার গড়ে তোলেন এবং দেশব্যাপী কাজ করতে থাকেন। তার অনুবাদ ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় নন্দিকেশ্বরের অভিনয় দর্পণ (১৯৮২)। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার গবেষণা গ্রন্থ ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’। তার কাব্যগ্রন্থ : কবি ও তিমি (১৯৯০), উপন্যাস : অমৃত উপাখ্যান (২০০৫)।
সেলিম আল দীনের উল্লেখযোগ্য নাটক ও নাট্যগ্রন্থসর্প বিষয়ক গল্প ও অন্যান্য নাটক (১৯৭৩), জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন (১৯৭৫), বাসন (১৯৮৫)। তিনটি মঞ্চ নাটক : মুনতাসির, শকুন্তলা ও কিত্তনখোলা (১৯৮৬), কেরামতমঙ্গল (১৯৮৮), প্রাচ্য (১৯৯৮), হাতহদাই (১৯৯৭), যৈবতী কন্যার মন (১৯৯৩), চাকা (১৯৯১), হরগজ (১৯৯২), একটি মারমা রূপকথা (১৯৯৫), বনপাংশুল (১৯৯৬), নিমজ্জন (২০০২), ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল (২০০৭), ঊষা উৎসব ও স্বপ্নরমণীগণ (নৃত্যনাট্য, ২০০৭), পুত্র (২০০৮) ইত্যাদি।
তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘নান্দীকার পুরস্কার’, ‘খালেকদাদ সাহিত্য পুরস্কার’, ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরআন খতম, দোয়া ও কবর জিয়ারত আয়োজন করা হয়।
স্বামী হুমায়ূনের কবর জিয়ারত ও দোয়ায় শরিক হওয়ার জন্য সোমবার রাতে মেহের আফরোজ শাওন দুই সন্তান নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, হিমু পরিবহনের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও দর্শনার্থীদের নিয়ে কবর জিয়ারত করেন তারা।
পরে হুমায়ূন ঘোষিত ক্যানসার হাসপাতাল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের যে স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ করার জন্য যে শক্তি যে সামর্থ্য দরকার হয় সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তাও আমার নেই।’
‘সমষ্টিগতভাবে আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি হয়তো বা হবে। সে ধৈর্যটা আমার আছে, সে ধৈর্য ধরে আমি ১০ বছর অতিক্রম করেছি। সে স্বপ্নটা আমি দেখেছি, দেখছি। এটা কম সময় না। যাদের সঙ্গে নিয়ে সে স্বপ্নটা পূরণ করা দরকার, আমি চাইলে একটা ছোটখাট হাসপাতাল করতে পারি। সেটা ৮-১০টা হাসপাতাল বাংলাদেশে যে রকম আছে সেটা সে রকম হবে না, সেই জোর আমার নেই।’
আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক বড় স্বপ্নের আগেও অনেকগুলো ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নগুলো যে একটু একটু করে পূরণ হচ্ছে সেটার ভালো একটা খবরটা দেই। হুমায়ূন আহমেদের নিজ গ্রামে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠটি যেটার কথা আমি প্রতিবারই বলেছি সেটি নিয়েও তার একটি স্বপ্ন ছিল। এ স্কুলটি ২০২০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণি) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল।’
‘কিন্তু সুখবর হলো, ওই স্কুলটি হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীর মাসেই ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এ রকম ছোট-ছোট স্টেপ দিয়ে আমরা সামনের দিকে আগাব। কিন্তু আমি এখনো শক্তি অর্জন করতে পারিনি যে, আমি একটা ডাক দিব বা আমি কাউকে বলব। আমি বিভিন্নজনকে বলবার চেষ্টা করছি বা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের সরকার তথা নীতি নির্ধারকদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদ যে ধরনের ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছিলেন তা নির্মাণের উদ্যোগ নেবার জন্য অনুরোধ করছি।’
এ সময় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের পরিবার থেকে ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি তাদের পাশে থাকবে। ’
তিনি দাবি করেন, নূহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারি, বেসরকারি অথবা পারিবারিক উদ্যোগে একটি স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
এ সময় মিলেনিয়াম পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী এস এম লুৎফর রহমান, ধ্রুবপদ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, মাতৃভাষা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী নেছার উদ্দিন আইয়ুব, অনিক পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন তিনি। পরে ২৪ জুলাই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার স্বপ্নের নুহাশপল্লীর লিচুগাছ তলায় সমাহিত হন।
চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে ২২ ও ২৩ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ছয়টি প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বরেণ্য নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের তত্ত্বাবধানে চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ শিক্ষকেরা। প্রযোজনা করেছে মুক্তিযুদ্ধ ৭১ ও বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট।
আয়োজকেরা জানান, ২২ জুলাই বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হবে ‘জনযুদ্ধ ৭১’। বিকেল ৫টায় দেখানো হবে ‘বীর চট্টলার প্রতিরোধযুদ্ধ’। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দেখানো হবে ‘বিলোনিয়ার যুদ্ধ’।
দ্বিতীয়দিন বিকেল ৩টায় তাজউদ্দীন আহমদের ৯৭তম জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর দেখানো হবে ‘মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকার’। বিকেল ৫টায় দেখানো হবে ‘একাত্তরের নৌ-কমান্ডো’। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘আকাশে মুক্তিযুদ্ধ: কিলোফ্লাইট’ দেখানোর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই আয়োজন।
আয়োজকদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গবেষণাধর্মী চলচ্চিত্রের এই প্রদর্শনী সবার জন্যে উন্মুক্ত।
‘কবি আবদুল হাকিম পুরস্কার ২০২২’ পেয়েছেন কবি, গবেষক ও সাংবাদিক শাবিহ মাহমুদ। বৃহত্তর নোয়াখালীর ওপর গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘নোয়াখালী লেখক ফোরাম’ এ পুরস্কার প্রদান করে।
নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠার ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী শিল্পকলা একাডেমি পুরাতন ভবনে এ পুরস্কারের স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম ফজলুল হক বাদল ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমদাদ হোসেন কৈশোর।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কবি ও নজরুল বিশেষজ্ঞ ড. আবু হেনা আবদুল আউয়াল।
গবেষণায় আরও পুরস্কৃত হয়েছেন মো. ফখরুল ইসলাম, গাজী গিয়াস উদ্দিন, ম পানা উল্যাহ্, একেএম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ ও এএসএম ইউনুছ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠান উপ-কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইউছুফ।
এ ছাড়া কবিতার জন্য ‘কবি আবদুল হাকিম পুরস্কার ২০২১’ পেয়েছেন কবি আবু হেনা আবদুল আউয়াল।
প্রথম দশকের কবি-গবেষক শাবিহ মাহমুদ ‘নবীনচন্দ্র সেন : চিন্তা ও দর্শন’ গ্রন্থে উনিশ শতকের প্রখ্যাত কবি নবীন সেনের উন্নয়ন দর্শনকে জন স্টুয়ার্ট মিলের ‘উপযোগবাদী’ দর্শনের সমিল চেহারায় ব্যাখ্যা করেছেন।
সম্প্রতি একেএম মক্রমবিল্ল্যা চৌধুরী ও শ্রীঅশ্বিনীকুমার সোম তত্ত্বনিধি লিখিত প্রায় শতবষের্র প্রাচীন ‘নোয়াখালীর ইতিহাস’ গ্রন্থটির সম্পাদনা ও ভূমিকা লিখেছেন শাবিহ। এ গ্রন্থে নোয়াখালীর ভূমি গঠন বিষয়ে নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি।
শাবিহ মাহমুদের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে আরও রয়েছে ‘ময়মনসিংহের কবিতা: ১৯৪৭-২০০৭’ (গবেষণা) ও ‘না নৈহাটি না পুষ্পস্তবক’ (কবিতা)।
শাবিহ মাহমুদ ১৯৭৭ সালের ৭ জানুয়ারি ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। ফেনী সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ২০০৯ সালে নাট্যাচার্য ড. সেলিম আল দীন কর্তৃক ওয়ার্ল্ড কালচারাল সেন্টারের প্রথম শাখার (ফেনী) সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। দৈনিক সংবাদে কর্মরত শাবিহ মাহমুদ বর্তমানে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর অধীনে ‘গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
দেশবরেণ্য নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা প্রয়াত মান্নান হীরার ৬৭তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই)। এ উপলক্ষে আরণ্যক নাট্যদল ‘মান্নান হীরা স্মারক বক্তৃতা’ প্রবর্তন করতে যাচ্ছে।
প্রতিবছর এ নাট্য ব্যক্তিত্বের জন্মবার্ষিকীতে নিয়মিতভাবে এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হবে বলেও জানায় নাট্যদলটি।
এ বছর প্রথমবার আয়োজিত মান্নান হীরা স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন শিল্প সমালোচক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার রুমে এই স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে।
কথা, কবিতা ও গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে সাহিত্যিক, অনুবাদক হায়াৎ মামুদের ৮৩তম জন্মদিন। রবিবার (৩ জুলাই) ঢাকার কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে ‘নান্দিক সন্ধ্যা’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে নান্দিকের ‘কবিতা-ভাবনা’ বিষয়ক জুন ২০২২ ৬ষ্ঠ বর্ষ ৮ম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উদ্বোধক ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। বিশেষ আলোচনায় ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ ও অনুবাদক জাভেদ হুসেন।
হায়াৎ মামুদের ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা করেন সাহিত্যিক সরকার আবদুল মান্নান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- নান্দিক সম্পাদক কবি ইসমত শিল্পী।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ ও গান অনুষ্ঠিত হয়।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।