‘হামাগের ছাওয়াল হক কথা কয়, হ্যারে ভোট দিমু’
পরিমল মজুমদার, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি | ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
কুড়িগ্রাম রৌমারীর থানা মোড়ে জিলাপি ভাজছেন দোকানি। পাশের একটা স্টলে চায়ের কাপে উঠেছে নির্বাচনী ঝড়। বেশ কয়েকজন নিজ নিজ প্রার্থীদের সমর্থনে তর্কে মশগুল। সেখানে উপস্থিত এক তরুণ ভোটারের পছন্দের প্রার্থী ইমরান এইচ সরকার। কুড়িগ্রামের-৪ আসন (চিলমারী-রৌমারী-রাজীবপুর) থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন ইমরান। তার প্রতীক মোটরগাড়ি।
নাম প্রকাশ না করে ওই তরুণ ভোটার বলেন, ‘২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগে সারা দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগিয়ে তুলেছিল গণজাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মুখপাত্র ছিলেন ইমরান এইচ সরকার। ফলে স্থানীয় তরুণদের পছন্দের প্রার্থী ইমরান।
তবে ইমরানের জয় নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে সংশয়, ইমরান কি পারবেন নির্বাচনে জিতে সংসদে আসতে? অনেকে মনে করেন, এলাকায় কম উপস্থিতি ও স্থানীয়দের সঙ্গে ওঠা-বসা কম থাকায় ভোটের মাঠে তার খুব সুবিধা হবে না। আবার অনেকে বলছেন, তিনি প্রধান রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে সংযুক্ত না থাকায়, ভোটের মাঠ গরম করতে পারছেন না।
রৌমারীর আলোকচিত্রী সৈয়দ কাকন একজন ছাত্রলীগের কর্মী। গণজাগরণ মঞ্চেও কাজ করেছেন তিনি। তার মতে, শহরাঞ্চলের মানুষজনদের কাছে তিনি খুব পরিচিত হলেও, ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বিচ্ছিন্ন রৌমারী-রাজীবপুরে তেমন পরিচিত নন। এলাকায় গণসংযোগও করছেন কম। ভোটের আগমুহূর্তে এসে ভোট চাইছেন।
রাজীবপুরের বালিয়ামারী গ্রামের কৃষক জাবের আলী বলেন, ‘অঁয় হামার জায়গার ছাওয়াল। কিন্তু ভালো মার্কা আনবার পারে নাই।’ ভালো মার্কা বলতে তিনি মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেন। আবার এর বিপরীত চিত্রও আছে এখানে। ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শুকুর মামুদ, গেন্দলা মিয়া, আবুল কালাম বলেন, ‘হামাগের ছাওয়াল হক কথা কয়, হ্যারে ভোট দিমু।’
গণমাধ্যমকর্মী রফিকুল ইসলাম মনে করেন, ইমরান এইচ সরকার ভোট করবেন এমন প্রস্তুতি তার ছিল না। যে কারণে তিনি নির্বাচনের আগমুহূর্তে গণসংযোগে নেমেছেন। এ এলাকার ভোট মূলত তিন-চার দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে থাকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী জেতার নজির এ আসনে নেই। সেদিক থেকে ইমরান নতুন মুখ।
চিলমারী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পিয়াল। নতুন ভোটার, এবারই প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছেন। অকপটে বললেন, ভোট দেবেন ইমরানকে।
কুড়িগ্রাম জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক শ্যামল ভৌমিক বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চের ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল একাট্টা হয়েছিলেন তার নেতৃত্বে। কিন্তু নির্বাচনের ইস্যুটি আলাদা। এখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূলধারার পক্ষে-বিপক্ষে ভোটারদের অবস্থান থাকবে। সে ক্ষেত্রে ইমরান এইচ সরকার কতটা ভোটারদের কাছে যেতে পারবেন সেটা সময় বলে দেবে।’
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘কাদের মোল্লা ইস্যুতে ইমরান এইচ সরকারের আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছিল। এখন তিনি বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। এই দলগুলোর বাইরে তার জন্য এই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভোটারদের পাওয়া কঠিন।’
তবে ইমরান এইচ সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কাছে অতীতের মতো সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছি। আগের চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষের ভোট পাব।’
শেয়ার করুন
পরিমল মজুমদার, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি | ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

কুড়িগ্রাম রৌমারীর থানা মোড়ে জিলাপি ভাজছেন দোকানি। পাশের একটা স্টলে চায়ের কাপে উঠেছে নির্বাচনী ঝড়। বেশ কয়েকজন নিজ নিজ প্রার্থীদের সমর্থনে তর্কে মশগুল। সেখানে উপস্থিত এক তরুণ ভোটারের পছন্দের প্রার্থী ইমরান এইচ সরকার। কুড়িগ্রামের-৪ আসন (চিলমারী-রৌমারী-রাজীবপুর) থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন ইমরান। তার প্রতীক মোটরগাড়ি।
নাম প্রকাশ না করে ওই তরুণ ভোটার বলেন, ‘২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগে সারা দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগিয়ে তুলেছিল গণজাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মুখপাত্র ছিলেন ইমরান এইচ সরকার। ফলে স্থানীয় তরুণদের পছন্দের প্রার্থী ইমরান।
তবে ইমরানের জয় নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে সংশয়, ইমরান কি পারবেন নির্বাচনে জিতে সংসদে আসতে? অনেকে মনে করেন, এলাকায় কম উপস্থিতি ও স্থানীয়দের সঙ্গে ওঠা-বসা কম থাকায় ভোটের মাঠে তার খুব সুবিধা হবে না। আবার অনেকে বলছেন, তিনি প্রধান রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে সংযুক্ত না থাকায়, ভোটের মাঠ গরম করতে পারছেন না।
রৌমারীর আলোকচিত্রী সৈয়দ কাকন একজন ছাত্রলীগের কর্মী। গণজাগরণ মঞ্চেও কাজ করেছেন তিনি। তার মতে, শহরাঞ্চলের মানুষজনদের কাছে তিনি খুব পরিচিত হলেও, ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বিচ্ছিন্ন রৌমারী-রাজীবপুরে তেমন পরিচিত নন। এলাকায় গণসংযোগও করছেন কম। ভোটের আগমুহূর্তে এসে ভোট চাইছেন।
রাজীবপুরের বালিয়ামারী গ্রামের কৃষক জাবের আলী বলেন, ‘অঁয় হামার জায়গার ছাওয়াল। কিন্তু ভালো মার্কা আনবার পারে নাই।’ ভালো মার্কা বলতে তিনি মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেন। আবার এর বিপরীত চিত্রও আছে এখানে। ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শুকুর মামুদ, গেন্দলা মিয়া, আবুল কালাম বলেন, ‘হামাগের ছাওয়াল হক কথা কয়, হ্যারে ভোট দিমু।’
গণমাধ্যমকর্মী রফিকুল ইসলাম মনে করেন, ইমরান এইচ সরকার ভোট করবেন এমন প্রস্তুতি তার ছিল না। যে কারণে তিনি নির্বাচনের আগমুহূর্তে গণসংযোগে নেমেছেন। এ এলাকার ভোট মূলত তিন-চার দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে থাকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী জেতার নজির এ আসনে নেই। সেদিক থেকে ইমরান নতুন মুখ।
চিলমারী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পিয়াল। নতুন ভোটার, এবারই প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছেন। অকপটে বললেন, ভোট দেবেন ইমরানকে।
কুড়িগ্রাম জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক শ্যামল ভৌমিক বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চের ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল একাট্টা হয়েছিলেন তার নেতৃত্বে। কিন্তু নির্বাচনের ইস্যুটি আলাদা। এখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূলধারার পক্ষে-বিপক্ষে ভোটারদের অবস্থান থাকবে। সে ক্ষেত্রে ইমরান এইচ সরকার কতটা ভোটারদের কাছে যেতে পারবেন সেটা সময় বলে দেবে।’
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘কাদের মোল্লা ইস্যুতে ইমরান এইচ সরকারের আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছিল। এখন তিনি বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। এই দলগুলোর বাইরে তার জন্য এই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভোটারদের পাওয়া কঠিন।’
তবে ইমরান এইচ সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কাছে অতীতের মতো সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছি। আগের চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষের ভোট পাব।’