রাজশাহীতে মূল লড়াই নৌকা আর ধানের শীষে
আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী | ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনের সবকটিতেই নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। এখানে মোট ২৫ প্রার্থী
থাকলেও মূল লড়াইটা হবে ১২ জনের মধ্যেই। প্রচারের মাঠে রয়েছেন সব প্রার্থীই। অবশ্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ করেছে বিএনপি।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আমিনুল এবং দুইবারের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ওমর ফারুক দুজনেই হেভিওয়েট প্রার্থী।
জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটর মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিনবারের মেয়র ছিলেন। পাশাপাশি ২০০১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত আসনটি বরাবরই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সাল থেকে জোটগতভাবে দুইবার সংসদ সদস্য এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় এ মুহূর্তে আসনটিতে শক্ত অবস্থানে আছে ১৪ দলীয় জোটও। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মহাজোটর মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। ধানের শীষের হয়ে লড়ছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। ২০০৮ সালে এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। ২০১৪ সালে মেরাজকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন আয়েন উদ্দিন। আসনটিতে জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি সাহাবুদ্দিন বাচ্চু মহাজোটের প্রার্থী হতে চেয়ে ব্যর্থ হন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে মনোনয়ন চান জামায়াত নেতাও। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির ভোট কতটা আয়েন পাচ্ছেন আর জামায়াতের ভোট কতটা মিলন পাবেন, তা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিতে পারে। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হক। ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আবু হেনা। দলের বিপক্ষে কথা বলে সমালোচিত হয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর আবার বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মুনসুর রহমান। গত দুইবারের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ একাট্টা হওয়ায় এবার তিনি মনোনয়ন পাননি। মনসুর মনোনয়ন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের এক করার কাজ করেন। সব গ্রুপই এখন মাঠে নেমেছে নৌকার পক্ষে।
এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কয়েক দফা বদল হয়। শেষ পর্যন্ত আদালত নাদিম মোস্তফার বদলে ধানের শীষ প্রতীক দেন নজরুল ইসলামকে। এ কারণে বিএনপি এখনো এই আসনে সেভাবে গোছাতে পারেনি।
এবারের নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন বেশ আলোচিত। এখানে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চারঘাট উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাইদ চাঁদ। পরিচ্ছন্ন ইমেজ নিয়ে মাঠে আছেন শাহরিয়ার। অপরদিকে আবু সাইদ লড়ছেন কারাগারে থেকে।
শেয়ার করুন
আহসান হাবীব অপু, রাজশাহী | ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনের সবকটিতেই নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। এখানে মোট ২৫ প্রার্থী
থাকলেও মূল লড়াইটা হবে ১২ জনের মধ্যেই। প্রচারের মাঠে রয়েছেন সব প্রার্থীই। অবশ্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ করেছে বিএনপি।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আমিনুল এবং দুইবারের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ওমর ফারুক দুজনেই হেভিওয়েট প্রার্থী।
জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটর মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিনবারের মেয়র ছিলেন। পাশাপাশি ২০০১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত আসনটি বরাবরই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সাল থেকে জোটগতভাবে দুইবার সংসদ সদস্য এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় এ মুহূর্তে আসনটিতে শক্ত অবস্থানে আছে ১৪ দলীয় জোটও। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মহাজোটর মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। ধানের শীষের হয়ে লড়ছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। ২০০৮ সালে এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। ২০১৪ সালে মেরাজকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন আয়েন উদ্দিন। আসনটিতে জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি সাহাবুদ্দিন বাচ্চু মহাজোটের প্রার্থী হতে চেয়ে ব্যর্থ হন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে মনোনয়ন চান জামায়াত নেতাও। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির ভোট কতটা আয়েন পাচ্ছেন আর জামায়াতের ভোট কতটা মিলন পাবেন, তা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিতে পারে। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হক। ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আবু হেনা। দলের বিপক্ষে কথা বলে সমালোচিত হয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর আবার বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মুনসুর রহমান। গত দুইবারের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ একাট্টা হওয়ায় এবার তিনি মনোনয়ন পাননি। মনসুর মনোনয়ন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের এক করার কাজ করেন। সব গ্রুপই এখন মাঠে নেমেছে নৌকার পক্ষে।
এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কয়েক দফা বদল হয়। শেষ পর্যন্ত আদালত নাদিম মোস্তফার বদলে ধানের শীষ প্রতীক দেন নজরুল ইসলামকে। এ কারণে বিএনপি এখনো এই আসনে সেভাবে গোছাতে পারেনি।
এবারের নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন বেশ আলোচিত। এখানে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চারঘাট উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাইদ চাঁদ। পরিচ্ছন্ন ইমেজ নিয়ে মাঠে আছেন শাহরিয়ার। অপরদিকে আবু সাইদ লড়ছেন কারাগারে থেকে।