প্রবীণদের কূটকৌশলে আগ্রহ হারাচ্ছেন নবীনরা
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি | ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আগ্রহ নেই নবীনদের। দুই যুগ ধরে নেতৃত্বে থাকা বিতর্কিত প্রবীণরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন স্বপদে বহাল থাকতে। সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের আগেই আধিপত্য ধরে রাখার কূটকৌশল শুরু করেছেন তারা। ফলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনা না থাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে নতুনদের মধ্যে।
সুবিধাবাদী ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে নবীনদের নেতৃত্বে আনার দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কেন্দ্র ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের ছোঁয়া না লাগলে তৃণমূল নেতারা সম্মেলন নাটক মেনে নেবেন না এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ মহানগরের আওতায়। তাই জেলা ও মহানগরের মারপ্যাঁচে সম্মেলন অনিশ্চয়তার আশঙ্কা রয়েছে। পদে থাকা প্রবীণরা সম্মেলন বানচালের চেষ্টা করছেন। এমনিতেই দীর্ঘ দুই যুগ আগে গঠিত কমিটি দিয়ে চলছে থানা আওয়ামী লীগ। একটানা ২৬ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মজিবুর রহমান। মাঝে ২০০৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ইয়াছিন মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর ১৫ বছর ধরে সহসভাপতি, সাংগঠনিক ও যুগ্ম সম্পাদকসহ অধিকাংশ বড় পদ ঠিক রেখে কিছু রদবদল আর মৃত্যুবরণ করা নেতাদের শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আশীর্বাদপুষ্ট লোক দিয়ে। অবমূল্যায়ন আর কমিটিতে ঠাঁই না পেয়ে দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা। দুর্দিনের কা-ারি ও দলীয় কাজে সক্রিয় নেতারা অভিমানে রাজনৈতিক ময়দান থেকে হারিয়ে যাওয়ায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে থানা আওয়ামী লীগ। দলীয় পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে যারা অন্যায় অপকর্ম করে দলের বদনাম করছে, অর্থের জোরে তারাই কমিটিতে থাকার নীলনকশা করছে। যে কারণে নবীনরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া প্রবীণরা সরে গিয়ে নতুন প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কিন্তু তৃণমূলের আশা-আকাক্সক্ষার মূল্যায়ন না করে প্রবীণরাই তাদের পছন্দের লোক নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করে সম্মেলন নাটক মঞ্চস্থ করার পাঁয়তারা করছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের ছোঁয়া লাগছে না সিদ্ধিরগঞ্জে। ফলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্থের পাহাড় গড়ে তোলা বিতর্কিত নেতারা ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কমিটি গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তৃণমূলের সমর্থন পেতে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতারা মেজবানি প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। একজন ৩ হাজার লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করলে আরেকজন করছেন ৪ হাজার লোকের। স্থানীয় নিহত নেতাকর্মী ও আয়োজকদের মা-বাবার রুহের মাগফিরাতের জন্য করা হচ্ছে বলে দাওয়াতপত্রে উল্লেখ থাকলেও মূলত পদ ধরে রাখতে ‘মন জয় করার কৌশল’ বলে কানাঘুষা করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। এসব ভূরিভোজ আয়োজন নিয়ে নানা সমালোচনাও চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্তমান কমিটির এক নেতা জানান, দীর্ষদিন ধরে নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়ায় অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই ক্ষুব্ধ। যে কারণে কমিটির বর্ধিত বা অন্য কোনো সভায় প্রায় ১৫ বছর ধরে কোরাম পূর্ণ হয় না। মূল কমিটির ১৫ থেকে ২০ জন উপস্থিত হয়। অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে করতে হয় আলোচনা সভা। দলের এই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হলেও পদলোভী নেতাদের টনক নড়ছে না। এবারও আগে কমিটি গঠন করে পরে সম্মেলন করার ফন্দি-ফিকির করছে তারা।
সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, সম্মেলনের মাধ্যমেই কমিটি হবে। যারা যোগ্য তারাই কমিটিতে স্থান পাবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পরে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বহুবার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছি। কিন্তু নেতাকর্মীদের অনুরোধে ছাড়তে পারিনি। তবে নতুনদেরই দলের হাল ধরতে হবে। একই কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, অচিরেই সম্মেলন হবে। নবীনদের প্রাধান্য দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শক্তিশালী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শেয়ার করুন
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি | ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আগ্রহ নেই নবীনদের। দুই যুগ ধরে নেতৃত্বে থাকা বিতর্কিত প্রবীণরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন স্বপদে বহাল থাকতে। সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের আগেই আধিপত্য ধরে রাখার কূটকৌশল শুরু করেছেন তারা। ফলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনা না থাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে নতুনদের মধ্যে।
সুবিধাবাদী ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে নবীনদের নেতৃত্বে আনার দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কেন্দ্র ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের ছোঁয়া না লাগলে তৃণমূল নেতারা সম্মেলন নাটক মেনে নেবেন না এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ মহানগরের আওতায়। তাই জেলা ও মহানগরের মারপ্যাঁচে সম্মেলন অনিশ্চয়তার আশঙ্কা রয়েছে। পদে থাকা প্রবীণরা সম্মেলন বানচালের চেষ্টা করছেন। এমনিতেই দীর্ঘ দুই যুগ আগে গঠিত কমিটি দিয়ে চলছে থানা আওয়ামী লীগ। একটানা ২৬ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মজিবুর রহমান। মাঝে ২০০৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ইয়াছিন মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর ১৫ বছর ধরে সহসভাপতি, সাংগঠনিক ও যুগ্ম সম্পাদকসহ অধিকাংশ বড় পদ ঠিক রেখে কিছু রদবদল আর মৃত্যুবরণ করা নেতাদের শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আশীর্বাদপুষ্ট লোক দিয়ে। অবমূল্যায়ন আর কমিটিতে ঠাঁই না পেয়ে দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা। দুর্দিনের কা-ারি ও দলীয় কাজে সক্রিয় নেতারা অভিমানে রাজনৈতিক ময়দান থেকে হারিয়ে যাওয়ায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে থানা আওয়ামী লীগ। দলীয় পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে যারা অন্যায় অপকর্ম করে দলের বদনাম করছে, অর্থের জোরে তারাই কমিটিতে থাকার নীলনকশা করছে। যে কারণে নবীনরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া প্রবীণরা সরে গিয়ে নতুন প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কিন্তু তৃণমূলের আশা-আকাক্সক্ষার মূল্যায়ন না করে প্রবীণরাই তাদের পছন্দের লোক নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করে সম্মেলন নাটক মঞ্চস্থ করার পাঁয়তারা করছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের ছোঁয়া লাগছে না সিদ্ধিরগঞ্জে। ফলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্থের পাহাড় গড়ে তোলা বিতর্কিত নেতারা ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কমিটি গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তৃণমূলের সমর্থন পেতে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতারা মেজবানি প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। একজন ৩ হাজার লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করলে আরেকজন করছেন ৪ হাজার লোকের। স্থানীয় নিহত নেতাকর্মী ও আয়োজকদের মা-বাবার রুহের মাগফিরাতের জন্য করা হচ্ছে বলে দাওয়াতপত্রে উল্লেখ থাকলেও মূলত পদ ধরে রাখতে ‘মন জয় করার কৌশল’ বলে কানাঘুষা করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। এসব ভূরিভোজ আয়োজন নিয়ে নানা সমালোচনাও চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্তমান কমিটির এক নেতা জানান, দীর্ষদিন ধরে নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়ায় অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই ক্ষুব্ধ। যে কারণে কমিটির বর্ধিত বা অন্য কোনো সভায় প্রায় ১৫ বছর ধরে কোরাম পূর্ণ হয় না। মূল কমিটির ১৫ থেকে ২০ জন উপস্থিত হয়। অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে করতে হয় আলোচনা সভা। দলের এই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হলেও পদলোভী নেতাদের টনক নড়ছে না। এবারও আগে কমিটি গঠন করে পরে সম্মেলন করার ফন্দি-ফিকির করছে তারা।
সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, সম্মেলনের মাধ্যমেই কমিটি হবে। যারা যোগ্য তারাই কমিটিতে স্থান পাবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পরে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বহুবার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছি। কিন্তু নেতাকর্মীদের অনুরোধে ছাড়তে পারিনি। তবে নতুনদেরই দলের হাল ধরতে হবে। একই কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, অচিরেই সম্মেলন হবে। নবীনদের প্রাধান্য দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শক্তিশালী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।