‘কাজে না গেলে বাড়িতে চুলো জ্বলে না’
রাজীব আহম্মেদ রাজু, গোপালগঞ্জ | ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
‘কাজে না গেলে বাড়িতে চুলো জ্বলে না, ছেলেমেয়ে না খেয়ে থাকে, তাই পেট চালাতে কাজে এসেছি। করোনার ব্যাপারে আমরা জানি, এই রোগে মানুষ মারা যায় তা-ও জানি, একজনের হলে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায় তা-ও জানি। তারপরও আমাদের কাজে আসতে হয়েছে। আমরা কাজে না আসলে না খেয়ে থাকব, কেউ আমাদের বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসবে না। তা ছাড়া আমরা যেসব লোকের জমিতে কাজ করি, এ সময়ে কাজ না করলে সেসব জমির ফসলও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ফসলের কথা চিন্তা করে এবং নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যই আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে বেরিয়েছি।’ এভাবেই বলছিলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া গ্রামের বিলে চিনাবাদামের জমিতে কাজ করতে আসা দিনমজুর সঞ্জিত সরকার।
শুধু দিনমজুর সঞ্জিত সরকারই নন, ওই এলাকায় কাজ করতে আসা দিনমজুর রেণুকা সরকার, ভানু কীর্ত্তনীয়া, শীলা দত্ত, দাউদ মোল্লা, নাছিমা খানম, মমতাজ বেগমসহ অনেকে একই কথা বললেন। তাদের বক্তব্য, করোনা সম্পর্কে তারা জেনেছেন, দশজনের কাছেও শুনেছেন, চারদিকের পরিবেশ সম্পর্কেও তারা জানেন; কিন্তু তাদের করার কিছুই নেই। পেট মানে না, জন বিক্রি না করলে বাড়িতে হাঁড়ি জ¦লবে না। না খেয়ে মরতে হবে। এ জন্যই তারা কাজে বেরিয়েছেন। তা ছাড়া তারা বছরব্যাপী যেসব মহাজনের জমিতে জন বিক্রি করে খান, তাদের ফসল নষ্ট হচ্ছে, পরিষ্কার না করলে ফসল হবে না, সেটাও তদের দেখার দরকার আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক দিনমজুরকে দেখা যায় কাজ করতে। তারা একে অন্যের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। বছরের অন্য সময়ের মতোই স্বাভাবিকভাবে চলছে তাদের জীবনযাত্রা। শুধু করপাড়ার এই বিলেই নয় জেলার সব বিল এলাকায় দিনমজুররা কাজে ব্যস্ত। কোনো আতঙ্ক ছাড়াই কোনোরূপ সচেতনতা ছাড়াই চলছে এই সব লোকের জীবনযাপন।
মরণঘাতী ভাইরাস করোনা থেকে বাঁচতে সব শ্রেণি-পেশার লোকজনকে ঘরে থাকার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করেছে সরকার। করোনা প্রতিরোধে যেসব নির্দেশনা মেনে চলা উচিত, তা কেবল শহর বা বড় বড় বাজারে মানতে দেখা গেলেও গ্রামে কিন্তু এর প্রভাব পড়েনি। সচেতনার অভাব, আর্থিক অনটন, কোথাও কোথাও ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং অন্যান্য কারণে গ্রামাঞ্চলে এসব নিয়মকানুনের বালাই খুব একটা চোখে পড়ে না। আড়ালে-আবডালে বসে আড্ডা দেওয়া, চায়ের দোকানে চা বিক্রিসহ আগের মতো সবকিছুই স্বাভাবিক গতিতে চলছে গ্রামাঞ্চলে।
শেয়ার করুন
রাজীব আহম্মেদ রাজু, গোপালগঞ্জ | ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

‘কাজে না গেলে বাড়িতে চুলো জ্বলে না, ছেলেমেয়ে না খেয়ে থাকে, তাই পেট চালাতে কাজে এসেছি। করোনার ব্যাপারে আমরা জানি, এই রোগে মানুষ মারা যায় তা-ও জানি, একজনের হলে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায় তা-ও জানি। তারপরও আমাদের কাজে আসতে হয়েছে। আমরা কাজে না আসলে না খেয়ে থাকব, কেউ আমাদের বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসবে না। তা ছাড়া আমরা যেসব লোকের জমিতে কাজ করি, এ সময়ে কাজ না করলে সেসব জমির ফসলও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ফসলের কথা চিন্তা করে এবং নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যই আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে বেরিয়েছি।’ এভাবেই বলছিলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া গ্রামের বিলে চিনাবাদামের জমিতে কাজ করতে আসা দিনমজুর সঞ্জিত সরকার।
শুধু দিনমজুর সঞ্জিত সরকারই নন, ওই এলাকায় কাজ করতে আসা দিনমজুর রেণুকা সরকার, ভানু কীর্ত্তনীয়া, শীলা দত্ত, দাউদ মোল্লা, নাছিমা খানম, মমতাজ বেগমসহ অনেকে একই কথা বললেন। তাদের বক্তব্য, করোনা সম্পর্কে তারা জেনেছেন, দশজনের কাছেও শুনেছেন, চারদিকের পরিবেশ সম্পর্কেও তারা জানেন; কিন্তু তাদের করার কিছুই নেই। পেট মানে না, জন বিক্রি না করলে বাড়িতে হাঁড়ি জ¦লবে না। না খেয়ে মরতে হবে। এ জন্যই তারা কাজে বেরিয়েছেন। তা ছাড়া তারা বছরব্যাপী যেসব মহাজনের জমিতে জন বিক্রি করে খান, তাদের ফসল নষ্ট হচ্ছে, পরিষ্কার না করলে ফসল হবে না, সেটাও তদের দেখার দরকার আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক দিনমজুরকে দেখা যায় কাজ করতে। তারা একে অন্যের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। বছরের অন্য সময়ের মতোই স্বাভাবিকভাবে চলছে তাদের জীবনযাত্রা। শুধু করপাড়ার এই বিলেই নয় জেলার সব বিল এলাকায় দিনমজুররা কাজে ব্যস্ত। কোনো আতঙ্ক ছাড়াই কোনোরূপ সচেতনতা ছাড়াই চলছে এই সব লোকের জীবনযাপন।
মরণঘাতী ভাইরাস করোনা থেকে বাঁচতে সব শ্রেণি-পেশার লোকজনকে ঘরে থাকার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করেছে সরকার। করোনা প্রতিরোধে যেসব নির্দেশনা মেনে চলা উচিত, তা কেবল শহর বা বড় বড় বাজারে মানতে দেখা গেলেও গ্রামে কিন্তু এর প্রভাব পড়েনি। সচেতনার অভাব, আর্থিক অনটন, কোথাও কোথাও ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং অন্যান্য কারণে গ্রামাঞ্চলে এসব নিয়মকানুনের বালাই খুব একটা চোখে পড়ে না। আড়ালে-আবডালে বসে আড্ডা দেওয়া, চায়ের দোকানে চা বিক্রিসহ আগের মতো সবকিছুই স্বাভাবিক গতিতে চলছে গ্রামাঞ্চলে।