বিল্লালের প্রতিবন্ধিতা জয়
চাঁদপুর প্রতিনিধি | ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
সত্তরোর্ধ্ব কৃষক বিল্লাল। ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে হারিয়েছেন তার দুটি পা। কিন্তু প্রতিবন্ধিতার কাছে হার মেনে থেমে যাননি তিনি। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও এলাকার কৃষক বিল্লাল হোসেন গাজী কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে অতিকষ্টে হাঁটাচলা ও কৃষিকাজ করে টানছেন সংসারের বোঝা। আত্মমর্যাদা আর দৃঢ় মানসিকতায় নিজেকে করেছেন সমাজের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মদনেরগাঁও গিয়ে দেখা যায়, বিল্লাল হোসেন গাজী আপন মনে কাজ করছেন বর্গা নেওয়া জমিতে। ক্ষেতের পাশেই কৃত্রিম পা খুলে রেখে শতকষ্ট বুকে চেপে মুখে হাসি মেখে একমনে কাজ করে চলছেন তিনি।
বিল্লাল গাজী বলেন, ১২ বছর আগে ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত কিছুর সংস্পর্শে পায়ে পচন ধরে। পা ভালো না হয়ে পচন আরও বাড়তে থাকায় ১০ বছর আগে কেটে ফেলা হয় পা দুটি। এ অবস্থায় স্ত্রী, ৪ ছেলে ও এক মেয়ের সংসার নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। সংসারের খচর মেটাতে চোখেমুখে অন্ধকার দেখি। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে আবারও কাজে নামি। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করি। বর্তমানে ২ একর জমি বর্গা নিয়ে আলু ও আখ চাষ করছি।
বিল্লাল গাজী বলেন, অনেক প্রতিবন্ধি আছে যারা অন্যের কাছে হাত পেতে খায়। আমার দ্বারা তা সম্ভব না। নিজে কষ্ট করে উপার্জন করি, এতে অনেক আনন্দ আছে।
তিনি বলেন, দুই পা হারিয়েও আমি কোনো প্রতিবন্ধী কার্ড পাইনি। বয়স সত্তরের বেশি হলেও আমার কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতা। সরকারি কত সহায়তা আছে, আমি কিছুই পাইনি। আমার একখ- জমিও নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এতে কষ্ট বেশি আর মুনাফা কম হয়। সরকার যদি আমাকে একটা বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী কার্ড দেয়, আমার চাষাবাদে সহায়তা করে, তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারতাম।
বিল্লাল গাজীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, স্বামীর এই দুর্দিনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে কেউই এগিয়ে আসেনি। চার ছেলের তিনজনই বিবাহিত। ছেলেদের স্বল্প উপার্জনে সংসারের খরচ চলে না। একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়ে।
বিল্লাল গাজীর কলেজে পড়ুয়া মেয়ে লিজা বলেন, আমার বাবা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শত অভাবের মাঝেও অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু ফিরে তাকাত, বাবার কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।
মদনেরগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. হাবিব ও কাওসার মিজি বলেন, অনেকে সুস্থ সবল থেকেও মানুষের কাছে হাত পাততে দ্বিধাবোধ করেন না। কিন্তু তার দুটি পা না থাকলেও তিনি কারও কাছে হাত পাতেন না। তা দেখে আমাদের গর্ব হয়।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, প্রশাসন অবশ্যই এই কৃষকের পাশে দাঁড়াবে। অচিরেই তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড বা বয়স্ক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
শেয়ার করুন
চাঁদপুর প্রতিনিধি | ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

সত্তরোর্ধ্ব কৃষক বিল্লাল। ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে হারিয়েছেন তার দুটি পা। কিন্তু প্রতিবন্ধিতার কাছে হার মেনে থেমে যাননি তিনি। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও এলাকার কৃষক বিল্লাল হোসেন গাজী কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে অতিকষ্টে হাঁটাচলা ও কৃষিকাজ করে টানছেন সংসারের বোঝা। আত্মমর্যাদা আর দৃঢ় মানসিকতায় নিজেকে করেছেন সমাজের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মদনেরগাঁও গিয়ে দেখা যায়, বিল্লাল হোসেন গাজী আপন মনে কাজ করছেন বর্গা নেওয়া জমিতে। ক্ষেতের পাশেই কৃত্রিম পা খুলে রেখে শতকষ্ট বুকে চেপে মুখে হাসি মেখে একমনে কাজ করে চলছেন তিনি।
বিল্লাল গাজী বলেন, ১২ বছর আগে ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত কিছুর সংস্পর্শে পায়ে পচন ধরে। পা ভালো না হয়ে পচন আরও বাড়তে থাকায় ১০ বছর আগে কেটে ফেলা হয় পা দুটি। এ অবস্থায় স্ত্রী, ৪ ছেলে ও এক মেয়ের সংসার নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। সংসারের খচর মেটাতে চোখেমুখে অন্ধকার দেখি। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে আবারও কাজে নামি। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করি। বর্তমানে ২ একর জমি বর্গা নিয়ে আলু ও আখ চাষ করছি।
বিল্লাল গাজী বলেন, অনেক প্রতিবন্ধি আছে যারা অন্যের কাছে হাত পেতে খায়। আমার দ্বারা তা সম্ভব না। নিজে কষ্ট করে উপার্জন করি, এতে অনেক আনন্দ আছে।
তিনি বলেন, দুই পা হারিয়েও আমি কোনো প্রতিবন্ধী কার্ড পাইনি। বয়স সত্তরের বেশি হলেও আমার কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতা। সরকারি কত সহায়তা আছে, আমি কিছুই পাইনি। আমার একখ- জমিও নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এতে কষ্ট বেশি আর মুনাফা কম হয়। সরকার যদি আমাকে একটা বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী কার্ড দেয়, আমার চাষাবাদে সহায়তা করে, তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারতাম।
বিল্লাল গাজীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, স্বামীর এই দুর্দিনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে কেউই এগিয়ে আসেনি। চার ছেলের তিনজনই বিবাহিত। ছেলেদের স্বল্প উপার্জনে সংসারের খরচ চলে না। একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়ে।
বিল্লাল গাজীর কলেজে পড়ুয়া মেয়ে লিজা বলেন, আমার বাবা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শত অভাবের মাঝেও অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু ফিরে তাকাত, বাবার কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।
মদনেরগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. হাবিব ও কাওসার মিজি বলেন, অনেকে সুস্থ সবল থেকেও মানুষের কাছে হাত পাততে দ্বিধাবোধ করেন না। কিন্তু তার দুটি পা না থাকলেও তিনি কারও কাছে হাত পাতেন না। তা দেখে আমাদের গর্ব হয়।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, প্রশাসন অবশ্যই এই কৃষকের পাশে দাঁড়াবে। অচিরেই তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড বা বয়স্ক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।