ঘুষ ছাড়া সমিতি নিবন্ধন হয় না!
নেত্রকোনা প্রতিনিধি | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
সমবায় সমিতির নিবন্ধন করতে নেত্রকোনার বারহাট্টা সমবায় কার্যালয়ে যান হুমায়ুন কবির নামে এক যুবক। আজকাল করে কিছুদিন সময়ক্ষেপণ করার পর কর্মকর্তারা জানান নিবন্ধন পেতে লাগবে মোটা অঙ্কের টাকা। বিষয়টি কাউকে জানালে বা কোনো রকম তদবির করলে ফল উল্টো হওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
শুধু হুমায়ুন কবিরই নন, সমিতির নিবন্ধন করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন উপজেলার অসংখ্য মানুষ। কোনো প্রতিকার না পেয়ে শেষে কর্মকর্তাদের ঘুষের দাবি মেনে নিয়েই সমিতির নিবন্ধন নিচ্ছেন অনেকে। ঘুষ গ্রহণের এমন অভিযোগ বারহাট্টা সমবায় কর্মকর্তা আতাউর রহমান ও সহকারী পরিদর্শক পান্না আক্তারের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মল্লিকপুর মহিলা সমবায় সমিতি’ গঠন করার পর নিবন্ধন করাতে কার্যালয়ে যাই। ফাইলপত্র কেনার জন্য পাঁচ হাজার টাকা চায় তারা। পাঁচ হাজার নেওয়ার পর আরও টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা জানায়, ওই পাঁচ হাজার ফাইলপত্র-খাতা-কলম কিনেই শেষ। নিবন্ধন পেতে হলে আরও ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। শেষে বাধ্য হয়ে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য রাজিও হই। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। এক টাকাও কম হবে না বলে তারা সাফ জানিয়ে দেয়। ওই কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক পান্না মূলত ঘুষ চাওয়ার কাজটি করেন। তবে এ বিষয়ে কর্মকর্তা আতাউর রহমানকে জানালেও তিনি নীরব থাকেন। তাদের মধ্যে একটা যোগসাজশ আছে।’
আরেক ভুক্তভোগী আলোকদিয়া গ্রামের লিয়ন আহমেদ বলেন, ‘“আলোকদিয়া সমাজ কল্যাণ সমিতি” নামে আমাদের একটা সমিতি আছে। কয়েক দিন আগে ওই সমিতির নিবন্ধন করানোর জন্য গেলে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চায় পান্না। চাহিদার পরিমাণ কিছুটা কমানোর জন্য অনেক অনুরোধ করলেও কোনো কাজ হয়নি। তার সাফ কথা, এক টাকা কম হলেও কাজ হবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কাউকে জানাব ভাবছি।’
বিষয়টি জানতে বারহাট্টা সমবায় কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তা আতাউর ও সহকারী পরিদর্শক পান্না দুজনই এই প্রতিবেদকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে তাদের কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা পাশের আলমিরা থেকে বের করে দিয়ে পান্না বলেন, ‘এই নেন টাকা, এই সমিতি আর কোনো দিনও নিবন্ধন হবে না।’
এ সময় তাদের চিৎকার শুনে সিংধা ইউপির সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য সন্ধ্যা রানী রায় এসে তাদের থামান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ অফিসটা একটা ঘুষের আখড়া। ঘুষ চাওয়ার কাজটা পান্না করলেও ভাগ দুজনই নেয়।
এই দুজনের অভিযোগের বিষয় জানালে বারহাট্টা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘আপনারা জেনেও কিছু করতে পারবেন না। কারণ আমি না চাইলে সমিতির নিবন্ধন কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও দিতে পারবে না।’
বিষয়টি অবগত করলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, ‘একটি সমবায় সমিতির নিবন্ধন পেতে রাজস্বসহ সব মিলিয়ে খুব বেশি হলেও আড়াই হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শেয়ার করুন
নেত্রকোনা প্রতিনিধি | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

সমবায় সমিতির নিবন্ধন করতে নেত্রকোনার বারহাট্টা সমবায় কার্যালয়ে যান হুমায়ুন কবির নামে এক যুবক। আজকাল করে কিছুদিন সময়ক্ষেপণ করার পর কর্মকর্তারা জানান নিবন্ধন পেতে লাগবে মোটা অঙ্কের টাকা। বিষয়টি কাউকে জানালে বা কোনো রকম তদবির করলে ফল উল্টো হওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
শুধু হুমায়ুন কবিরই নন, সমিতির নিবন্ধন করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন উপজেলার অসংখ্য মানুষ। কোনো প্রতিকার না পেয়ে শেষে কর্মকর্তাদের ঘুষের দাবি মেনে নিয়েই সমিতির নিবন্ধন নিচ্ছেন অনেকে। ঘুষ গ্রহণের এমন অভিযোগ বারহাট্টা সমবায় কর্মকর্তা আতাউর রহমান ও সহকারী পরিদর্শক পান্না আক্তারের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মল্লিকপুর মহিলা সমবায় সমিতি’ গঠন করার পর নিবন্ধন করাতে কার্যালয়ে যাই। ফাইলপত্র কেনার জন্য পাঁচ হাজার টাকা চায় তারা। পাঁচ হাজার নেওয়ার পর আরও টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা জানায়, ওই পাঁচ হাজার ফাইলপত্র-খাতা-কলম কিনেই শেষ। নিবন্ধন পেতে হলে আরও ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। শেষে বাধ্য হয়ে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য রাজিও হই। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। এক টাকাও কম হবে না বলে তারা সাফ জানিয়ে দেয়। ওই কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক পান্না মূলত ঘুষ চাওয়ার কাজটি করেন। তবে এ বিষয়ে কর্মকর্তা আতাউর রহমানকে জানালেও তিনি নীরব থাকেন। তাদের মধ্যে একটা যোগসাজশ আছে।’
আরেক ভুক্তভোগী আলোকদিয়া গ্রামের লিয়ন আহমেদ বলেন, ‘“আলোকদিয়া সমাজ কল্যাণ সমিতি” নামে আমাদের একটা সমিতি আছে। কয়েক দিন আগে ওই সমিতির নিবন্ধন করানোর জন্য গেলে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চায় পান্না। চাহিদার পরিমাণ কিছুটা কমানোর জন্য অনেক অনুরোধ করলেও কোনো কাজ হয়নি। তার সাফ কথা, এক টাকা কম হলেও কাজ হবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কাউকে জানাব ভাবছি।’
বিষয়টি জানতে বারহাট্টা সমবায় কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তা আতাউর ও সহকারী পরিদর্শক পান্না দুজনই এই প্রতিবেদকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে তাদের কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা পাশের আলমিরা থেকে বের করে দিয়ে পান্না বলেন, ‘এই নেন টাকা, এই সমিতি আর কোনো দিনও নিবন্ধন হবে না।’
এ সময় তাদের চিৎকার শুনে সিংধা ইউপির সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য সন্ধ্যা রানী রায় এসে তাদের থামান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ অফিসটা একটা ঘুষের আখড়া। ঘুষ চাওয়ার কাজটা পান্না করলেও ভাগ দুজনই নেয়।
এই দুজনের অভিযোগের বিষয় জানালে বারহাট্টা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘আপনারা জেনেও কিছু করতে পারবেন না। কারণ আমি না চাইলে সমিতির নিবন্ধন কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও দিতে পারবে না।’
বিষয়টি অবগত করলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, ‘একটি সমবায় সমিতির নিবন্ধন পেতে রাজস্বসহ সব মিলিয়ে খুব বেশি হলেও আড়াই হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’