ডিজেলের বাড়তি দামে উদ্বিগ্ন আগাম আলুচাষিরা
কুরবান আলী, দিনাজপুর | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
দেশের অন্যতম খাদ্য উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে গত এক সপ্তাহ ধরে আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণ শুরু হয়েছে। এসব আগাম জাতের আলু আগামী বছরের শুরুতেই বাজারে আসবে। তবে সেচকাজে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এমনিতেই এবার বৃষ্টির কারণে কিছু বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। তার সঙ্গে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইতিমধ্যে জেলায় ১০ ভাগ আগাম আলুর বীজ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর আগাম ও পরের জাত মিলেয়ে জেলার ১৩টি উপজেলায় ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৮ টন আলুু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের কৃষক কুশল চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগেরবার আলু লাগিয়ে কোনো লাভ পাই নাই। ২০ হাজার টাকা লস (লোকসান) হইছিল। শেষ পর্যন্ত গরু-বাছুর বেচে মহাজনের ঋণ শোধ করতে হইছে। এবারও টাকা ধার করছি। এবার আগাম আলু দুইবার লাগাতে হইছে। প্রথমবার আলু নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার আবার ডিজেলের দামও বাড়াইছে। এবার যদি লাভ করতে না পারি, মহাজনের ঋণ শোধ করতে পারব না। পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’
একই গ্রামের আলু চাষি আক্তারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণ করেছি। এর মধ্যে কিছুটা নষ্ট হয়েছে, কিছু ভালো আছে। সরকার যদি কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সার ও ডিজেলের দামে ভর্তুকি দেয়, তাহলে আমরা কৃষকরা বাঁচি।’
চার বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছেন একই গ্রামের রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘চার বিঘার মধ্যে এক বিঘার বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এমনিতেই সব কিছুর দাম বেশি। এর মধ্যে আবার ডিজেলের দাম বাড়ায় আমাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আগাম জাতের মধ্যে গ্যানোলা ও কারেজ জাতের আলুর বীজ রোপণ করা হয়েছে, যা আগামী ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও আমন ধান কাটার পর জমিগুলোতে সারা বছর খাওয়ার মতো আলুর বীজ রোপণ করা হবে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ডায়মন্ড, কার্টিলাল, স্টারিজ, দেশি জাতের চল্লিশা, রোমানা, পেট্রোনিজ এবং জানুয়ারির শুরুতে হাইব্রিড লেডিরোসেটা, বারী-২, বারী-৯, এটলাস ও দেশি জাতের স্থানীয় আলু লাল পাকড়ি, সাদা পাকড়ি, বগড়াই, সেলবিলাতী, কাবেরী, জলপাই, সাদপাটনায় ও লালপাটনায় আলুর বীজ রোপণ করা হবে। এসব আলু এপ্রিল মাসে বাজারে উঠবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণের সময় বৃষ্টি হওয়ায় কিছু বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের আবারও বীজ রোপণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
শেয়ার করুন
কুরবান আলী, দিনাজপুর | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

দেশের অন্যতম খাদ্য উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে গত এক সপ্তাহ ধরে আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণ শুরু হয়েছে। এসব আগাম জাতের আলু আগামী বছরের শুরুতেই বাজারে আসবে। তবে সেচকাজে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এমনিতেই এবার বৃষ্টির কারণে কিছু বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। তার সঙ্গে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইতিমধ্যে জেলায় ১০ ভাগ আগাম আলুর বীজ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর আগাম ও পরের জাত মিলেয়ে জেলার ১৩টি উপজেলায় ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৮ টন আলুু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের কৃষক কুশল চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগেরবার আলু লাগিয়ে কোনো লাভ পাই নাই। ২০ হাজার টাকা লস (লোকসান) হইছিল। শেষ পর্যন্ত গরু-বাছুর বেচে মহাজনের ঋণ শোধ করতে হইছে। এবারও টাকা ধার করছি। এবার আগাম আলু দুইবার লাগাতে হইছে। প্রথমবার আলু নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার আবার ডিজেলের দামও বাড়াইছে। এবার যদি লাভ করতে না পারি, মহাজনের ঋণ শোধ করতে পারব না। পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’
একই গ্রামের আলু চাষি আক্তারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণ করেছি। এর মধ্যে কিছুটা নষ্ট হয়েছে, কিছু ভালো আছে। সরকার যদি কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সার ও ডিজেলের দামে ভর্তুকি দেয়, তাহলে আমরা কৃষকরা বাঁচি।’
চার বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছেন একই গ্রামের রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘চার বিঘার মধ্যে এক বিঘার বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এমনিতেই সব কিছুর দাম বেশি। এর মধ্যে আবার ডিজেলের দাম বাড়ায় আমাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আগাম জাতের মধ্যে গ্যানোলা ও কারেজ জাতের আলুর বীজ রোপণ করা হয়েছে, যা আগামী ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও আমন ধান কাটার পর জমিগুলোতে সারা বছর খাওয়ার মতো আলুর বীজ রোপণ করা হবে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ডায়মন্ড, কার্টিলাল, স্টারিজ, দেশি জাতের চল্লিশা, রোমানা, পেট্রোনিজ এবং জানুয়ারির শুরুতে হাইব্রিড লেডিরোসেটা, বারী-২, বারী-৯, এটলাস ও দেশি জাতের স্থানীয় আলু লাল পাকড়ি, সাদা পাকড়ি, বগড়াই, সেলবিলাতী, কাবেরী, জলপাই, সাদপাটনায় ও লালপাটনায় আলুর বীজ রোপণ করা হবে। এসব আলু এপ্রিল মাসে বাজারে উঠবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণের সময় বৃষ্টি হওয়ায় কিছু বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের আবারও বীজ রোপণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’