খুলনায় নদীভাঙন রোধের কাজে অনিয়ম
সুমন্ত চক্রবর্ত্তী, খুলনা | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের বারোআড়িয়া এলাকায় নদীভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় ভদ্রা নদীর ভাঙন রোধে জাইকার অর্থায়নে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহায়তায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পে রাতের আঁধারে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা, ভাঙনের গোড়ায় বস্তাগুলো ঠিকমতো না ফেলে এলোমেলোভাবে ফেলা, কাদাবালু দিয়ে বস্তা ভর্তি করা, বালুুর পরিমাণ কম দেওয়া ও বস্তার মুখ ২ নম্বর সুতা দিয়ে সেলাই করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
পাউবো ও জাইকা সূত্র জানায়, ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ৭৪ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হবে। এর মধ্যে ২২ হাজার ৬৫০টি জিও ব্যাগে বালু ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ভাঙনকবলিত এলাকায় ফেলা শুরু হয়েছে। খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি’ কাজটি করছে।
এলাকাবাসী জানায়, রাতের আঁধারে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে। ভাঙনের গোড়ায় সারিবদ্ধভাবে বস্তাগুলো না ফেলায় জোয়ারের পানিতে সরে যাচ্ছে। এক বস্তা দুইবার গোনা হচ্ছে। কাদাবালু দিয়ে বস্তা ভর্তি করা হচ্ছে। এই কাদাবালু উত্তোলন করা হচ্ছে ভাঙনের মাত্র কিলোমিটার খানেক দূর থেকে। অথচ সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নদীর ভাঙন এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। কাজের বিবরণসংবলিত কোনো সাইনবোর্ড টাঙানো নেই। সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তদন্তে এসে সত্যতা পান জাইকার জুনিয়ার প্রকৌশলী দেবপ্রতিম হাওলাদার।
স্থানীয় আকবর গাজী, সালমা খাতুনসহ কয়েকজন প্রতাক্ষদর্শী জানান, বস্তা ফেলার সময় দেখা যায় বস্তা ফেটে পানিতে বালু পড়ছে। খালি বস্তা নদীতে ভেসে যাচ্ছে। পরে স্থানীয় জনতার প্রতিবাদে বস্তা ফেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন দিনে ফেললে লোকজন দেখে ফেলার ভয়ে রাতের আঁধারেই বেশি ফেলছে। বস্তাগুলো ঠিকমতো গোনা হচ্ছে না। মাঝনদীতে ফেলায় তা কোনো কাজে আসছে না।
ঠিকাদারের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ বৈদ্য। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রথমে বালুভর্তি কিছু বস্তা ফেলা নিয়ে পাউবো দুই মাস দেরি করিয়ে দেওয়ায় কিছু বস্তা নষ্ট হয়েছে। তা দেখে জাইকা আমাদের জরিমানা করেছে। তা ছাড়া কাজ খুব ভালো হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. হাসনাত হোসেন বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় উচ্ছেদ কাজ চলছে। তাই আমাদের লোক সেখানে কাজ করছে। এই সুযোগে হয়তো তারা দুর্নীতি করতে পারে। সন্ধ্যার পরে বস্তা ফেলার কোনো সুযোগ নেই। এখনই খোঁজ নিচ্ছি।’
জাইকার জুনিয়ার প্রকৌশলী দেবপ্রতিম হাওলাদার বলেন, ‘অনিয়মের সত্যতা পেয়ে ২২০ বস্তা জিও ব্যাগ বাজেয়াপ্ত করি। আর কোনো দুর্নীতি করলে বিল পাবে না।’
পাউবো-২ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শেয়ার করুন
সুমন্ত চক্রবর্ত্তী, খুলনা | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের বারোআড়িয়া এলাকায় নদীভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় ভদ্রা নদীর ভাঙন রোধে জাইকার অর্থায়নে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহায়তায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পে রাতের আঁধারে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা, ভাঙনের গোড়ায় বস্তাগুলো ঠিকমতো না ফেলে এলোমেলোভাবে ফেলা, কাদাবালু দিয়ে বস্তা ভর্তি করা, বালুুর পরিমাণ কম দেওয়া ও বস্তার মুখ ২ নম্বর সুতা দিয়ে সেলাই করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
পাউবো ও জাইকা সূত্র জানায়, ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ৭৪ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হবে। এর মধ্যে ২২ হাজার ৬৫০টি জিও ব্যাগে বালু ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ভাঙনকবলিত এলাকায় ফেলা শুরু হয়েছে। খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি’ কাজটি করছে।
এলাকাবাসী জানায়, রাতের আঁধারে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে। ভাঙনের গোড়ায় সারিবদ্ধভাবে বস্তাগুলো না ফেলায় জোয়ারের পানিতে সরে যাচ্ছে। এক বস্তা দুইবার গোনা হচ্ছে। কাদাবালু দিয়ে বস্তা ভর্তি করা হচ্ছে। এই কাদাবালু উত্তোলন করা হচ্ছে ভাঙনের মাত্র কিলোমিটার খানেক দূর থেকে। অথচ সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নদীর ভাঙন এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। কাজের বিবরণসংবলিত কোনো সাইনবোর্ড টাঙানো নেই। সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তদন্তে এসে সত্যতা পান জাইকার জুনিয়ার প্রকৌশলী দেবপ্রতিম হাওলাদার।
স্থানীয় আকবর গাজী, সালমা খাতুনসহ কয়েকজন প্রতাক্ষদর্শী জানান, বস্তা ফেলার সময় দেখা যায় বস্তা ফেটে পানিতে বালু পড়ছে। খালি বস্তা নদীতে ভেসে যাচ্ছে। পরে স্থানীয় জনতার প্রতিবাদে বস্তা ফেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন দিনে ফেললে লোকজন দেখে ফেলার ভয়ে রাতের আঁধারেই বেশি ফেলছে। বস্তাগুলো ঠিকমতো গোনা হচ্ছে না। মাঝনদীতে ফেলায় তা কোনো কাজে আসছে না।
ঠিকাদারের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ বৈদ্য। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রথমে বালুভর্তি কিছু বস্তা ফেলা নিয়ে পাউবো দুই মাস দেরি করিয়ে দেওয়ায় কিছু বস্তা নষ্ট হয়েছে। তা দেখে জাইকা আমাদের জরিমানা করেছে। তা ছাড়া কাজ খুব ভালো হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. হাসনাত হোসেন বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় উচ্ছেদ কাজ চলছে। তাই আমাদের লোক সেখানে কাজ করছে। এই সুযোগে হয়তো তারা দুর্নীতি করতে পারে। সন্ধ্যার পরে বস্তা ফেলার কোনো সুযোগ নেই। এখনই খোঁজ নিচ্ছি।’
জাইকার জুনিয়ার প্রকৌশলী দেবপ্রতিম হাওলাদার বলেন, ‘অনিয়মের সত্যতা পেয়ে ২২০ বস্তা জিও ব্যাগ বাজেয়াপ্ত করি। আর কোনো দুর্নীতি করলে বিল পাবে না।’
পাউবো-২ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’