পীরগঞ্জে বাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
পীরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা | ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
রংপুরের পীরগঞ্জে প্রভাবশালী একটি মহল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসেবে দেওয়া নদীর পাড় কেটে নিচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড দুবছর ধরে আখিরা নামের নদীটি খনন করে তৈরি করে এ বাঁধ। ইতিমধ্যে বাঁধটির ছয় কিলোমিটার অংশ চলে গেছে ভাটায়। নদীর পাড়কে জমি হিসেবে ভোগদখলে রাখা লোকজন প্রভাবশালীদের চাপ ও অর্থের লোভে পড়ে বিক্রি করে দিয়েছে এসব মাটি।
স্থানীয়রা জানান, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী, দালাল, ইটভাটা মালিক ও জমির মালিক পরিচয়ে প্রভাবশালী মহল এই মাটি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। মহলটি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে নদীর পাড়ের মাটি কেটে ট্রলি ও মাহিন্দ্র গাড়িযোগে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় বেচাকেনা করছে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভও করেছেন এলাকাবাসী।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযান চালিয়ে ধনশালা নামক স্থানে মাটি লুটে নেওয়ার সময় দুটি মাহিন্দ্র ট্রাক্টর আটক ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও আবার শুরু হয়েছে নদীপাড়ের মাটি লুট।
স্থানীয়রা আরও জানান, গত দু’বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড আখিরা নদী খনন করে উত্তোলিত মাটিগুলো দিয়ে নদীর দু’পাশের পাড় বেঁধে দেয়। যাতে করে বন্যা হলে দু’পাড়ে গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে না যায়। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়ার একটি প্রভাবশালী মহল কয়েক মাস ধরে নদীর পাড়ে স্তূপ করে রাখা মাটিগুলো বিক্রি করে নদীর তীরবর্তী আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তাগুলোকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়ে নিজেরা কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের জামদানি, চেরাগপুর, দারিয়াপুরসহ কাবিলপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর, কৃষ্ণপুর, সরলিয়া নদীপাড়সংলগ্ন গ্রামগুলো থেকে প্রতিদিনই আখিরা নদীর পাড়ের স্তূপ করে রাখা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিষ্ণুপুর, জামদানির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আখিরা পাড় থেকে মাটি খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন) দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি চলছে। এ ছাড়াও উপজেলার, গাড়াবেড় ও ধনশালা নামক স্থানে বিশটিরও বেশি মাহিন্দ্র চালক নদী পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে।
বিষ্ণুপুর গ্রামের লিমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বাড়ি নদীর পার্শ্ববর্তী। নদীর পাড়ে আমার জমি আছে, এই পাড় কেটে নেওয়ার কারণে বাড়ি ও আবাদি জমি এখন হুমকির মুখে।’
এ ব্যাপারে রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি এই মাটি কাটা রোধে ব্যাপক চেষ্টা করেছি, গ্রামপুলিশ-থানা পুলিশ পাঠিয়েছি, কিন্তু পাড় রক্ষা করা যাচ্ছে না।
কাবিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, নদী পাড়ের মাটি অন্যের জমিতে পড়েছে, তাই তারা এ মাঠি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় দেশ রূপান্তরকে জানান, এসব মাটি কাটা রোধে বিভিন্ন সময় পুলিশ পাঠিয়েছি, জরিমানা করেছি। মাটি কেটে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেয়ার করুন
পীরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা | ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

রংপুরের পীরগঞ্জে প্রভাবশালী একটি মহল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসেবে দেওয়া নদীর পাড় কেটে নিচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড দুবছর ধরে আখিরা নামের নদীটি খনন করে তৈরি করে এ বাঁধ। ইতিমধ্যে বাঁধটির ছয় কিলোমিটার অংশ চলে গেছে ভাটায়। নদীর পাড়কে জমি হিসেবে ভোগদখলে রাখা লোকজন প্রভাবশালীদের চাপ ও অর্থের লোভে পড়ে বিক্রি করে দিয়েছে এসব মাটি।
স্থানীয়রা জানান, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী, দালাল, ইটভাটা মালিক ও জমির মালিক পরিচয়ে প্রভাবশালী মহল এই মাটি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। মহলটি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে নদীর পাড়ের মাটি কেটে ট্রলি ও মাহিন্দ্র গাড়িযোগে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় বেচাকেনা করছে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভও করেছেন এলাকাবাসী।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযান চালিয়ে ধনশালা নামক স্থানে মাটি লুটে নেওয়ার সময় দুটি মাহিন্দ্র ট্রাক্টর আটক ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও আবার শুরু হয়েছে নদীপাড়ের মাটি লুট।
স্থানীয়রা আরও জানান, গত দু’বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড আখিরা নদী খনন করে উত্তোলিত মাটিগুলো দিয়ে নদীর দু’পাশের পাড় বেঁধে দেয়। যাতে করে বন্যা হলে দু’পাড়ে গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে না যায়। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রছায়ার একটি প্রভাবশালী মহল কয়েক মাস ধরে নদীর পাড়ে স্তূপ করে রাখা মাটিগুলো বিক্রি করে নদীর তীরবর্তী আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তাগুলোকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়ে নিজেরা কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের জামদানি, চেরাগপুর, দারিয়াপুরসহ কাবিলপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর, কৃষ্ণপুর, সরলিয়া নদীপাড়সংলগ্ন গ্রামগুলো থেকে প্রতিদিনই আখিরা নদীর পাড়ের স্তূপ করে রাখা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিষ্ণুপুর, জামদানির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আখিরা পাড় থেকে মাটি খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন) দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি চলছে। এ ছাড়াও উপজেলার, গাড়াবেড় ও ধনশালা নামক স্থানে বিশটিরও বেশি মাহিন্দ্র চালক নদী পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে।
বিষ্ণুপুর গ্রামের লিমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বাড়ি নদীর পার্শ্ববর্তী। নদীর পাড়ে আমার জমি আছে, এই পাড় কেটে নেওয়ার কারণে বাড়ি ও আবাদি জমি এখন হুমকির মুখে।’
এ ব্যাপারে রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি এই মাটি কাটা রোধে ব্যাপক চেষ্টা করেছি, গ্রামপুলিশ-থানা পুলিশ পাঠিয়েছি, কিন্তু পাড় রক্ষা করা যাচ্ছে না।
কাবিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, নদী পাড়ের মাটি অন্যের জমিতে পড়েছে, তাই তারা এ মাঠি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় দেশ রূপান্তরকে জানান, এসব মাটি কাটা রোধে বিভিন্ন সময় পুলিশ পাঠিয়েছি, জরিমানা করেছি। মাটি কেটে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।