প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম
মানিক মজুমদার, হাতিয়া (নোয়াখালী) | ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০
হাতিয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) সমন্বয়হীনতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে ভেস্তে গেছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের দুই স্থানে একই সময়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে খাতা-কলমে দেখানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে শিক্ষকদের। সরেজমিন এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত চিঠি ও খাতাপত্র সূত্রে এসব খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, পিইডিপি-৪-এর আওতায় ডিউপার্ট সংবলিত বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞানে দুই এবং গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণে ৯ ব্যাচের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে বিজ্ঞানের দুই ব্যাচে ৬০ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে প্রথম ব্যাচে উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারীর ভাইসহ ১১ ও দ্বিতীয় ব্যাচে ১০ জন দুবার এবং তিন শিক্ষক ডিপিএডে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণে শিডিউল না মানাসহ গণিতের প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী রাজিব চন্দ্র দাস মোবাইল ফোনে জানান, তিনি মাইজদী পিটিআইতে ডিপিএড প্রশিক্ষণে আছেন। তিনি ছাড়াও ওই ব্যাচের রাশেদুল আলম এবং রেশমা বেগমও পিটিআইতে ডিপিএড করছেন। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ নেননি ইউআরসি থেকে পাঠানো এমন ৩০ শিক্ষকের নামের তালিকা প্রথম ব্যাচে বাদ দিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নতুন তালিকার শিক্ষকদের ডেপুটেশন দেন। ২১ জন শিক্ষক বিজ্ঞানে দুবার প্রশিক্ষণ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করা ছাড়াও সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে। ডিপিএডে প্রশিক্ষণরত শিক্ষকরা বিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। প্রসঙ্গত, উপজেলার ২২৭টির মধ্যে ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ নেননি। গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকা তৈরিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে দুই শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তার দেওয়া তালিকা থেকে তার স্কুলের এক শিক্ষকের নাম বাদ দিয়ে অন্যজনকে প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয়। গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে প্রশিক্ষণের বিরতির সময় ইউআরসির প্রশিক্ষণকক্ষে আলাপকালে প্রশিক্ষণার্থীদের কেউই তা স্বীকার করেননি। তবে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী জানান, ডেপুটেশন দেওয়ায় তারা প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য হন। ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন সব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইউআরসির সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই বিজ্ঞানের দুই ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকা পাঠান। আমার প্রশিক্ষণার্থীদের নাম পরিবর্তনের ক্ষমতা না থাকায় তারাই প্রশিক্ষণ নেন।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেউদ্দীন সব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি হিসাব সহকারীর প্রস্তুতকৃত তালিকার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ডেপুটেশন দিই।’
মাইজদী পিটিআইর সুপারিনটেনড্যান্ট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এক শিক্ষক একই বিষয়ে দুবার বা ডিপিএডে প্রশিক্ষণরত শিক্ষক অন্যত্র প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পিইডিপি-৪-এ প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগগুলো সত্য হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শেয়ার করুন
মানিক মজুমদার, হাতিয়া (নোয়াখালী) | ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০

হাতিয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) সমন্বয়হীনতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে ভেস্তে গেছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের দুই স্থানে একই সময়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে খাতা-কলমে দেখানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে শিক্ষকদের। সরেজমিন এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত চিঠি ও খাতাপত্র সূত্রে এসব খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, পিইডিপি-৪-এর আওতায় ডিউপার্ট সংবলিত বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞানে দুই এবং গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণে ৯ ব্যাচের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে বিজ্ঞানের দুই ব্যাচে ৬০ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে প্রথম ব্যাচে উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারীর ভাইসহ ১১ ও দ্বিতীয় ব্যাচে ১০ জন দুবার এবং তিন শিক্ষক ডিপিএডে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণে শিডিউল না মানাসহ গণিতের প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী রাজিব চন্দ্র দাস মোবাইল ফোনে জানান, তিনি মাইজদী পিটিআইতে ডিপিএড প্রশিক্ষণে আছেন। তিনি ছাড়াও ওই ব্যাচের রাশেদুল আলম এবং রেশমা বেগমও পিটিআইতে ডিপিএড করছেন। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ নেননি ইউআরসি থেকে পাঠানো এমন ৩০ শিক্ষকের নামের তালিকা প্রথম ব্যাচে বাদ দিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নতুন তালিকার শিক্ষকদের ডেপুটেশন দেন। ২১ জন শিক্ষক বিজ্ঞানে দুবার প্রশিক্ষণ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করা ছাড়াও সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে। ডিপিএডে প্রশিক্ষণরত শিক্ষকরা বিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। প্রসঙ্গত, উপজেলার ২২৭টির মধ্যে ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ নেননি। গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকা তৈরিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে দুই শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তার দেওয়া তালিকা থেকে তার স্কুলের এক শিক্ষকের নাম বাদ দিয়ে অন্যজনকে প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয়। গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে প্রশিক্ষণের বিরতির সময় ইউআরসির প্রশিক্ষণকক্ষে আলাপকালে প্রশিক্ষণার্থীদের কেউই তা স্বীকার করেননি। তবে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী জানান, ডেপুটেশন দেওয়ায় তারা প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য হন। ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন সব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইউআরসির সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই বিজ্ঞানের দুই ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকা পাঠান। আমার প্রশিক্ষণার্থীদের নাম পরিবর্তনের ক্ষমতা না থাকায় তারাই প্রশিক্ষণ নেন।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেউদ্দীন সব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি হিসাব সহকারীর প্রস্তুতকৃত তালিকার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ডেপুটেশন দিই।’
মাইজদী পিটিআইর সুপারিনটেনড্যান্ট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এক শিক্ষক একই বিষয়ে দুবার বা ডিপিএডে প্রশিক্ষণরত শিক্ষক অন্যত্র প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পিইডিপি-৪-এ প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগগুলো সত্য হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’