
ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ, টিকিটের কালোবাজারি রোধ ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ফেনীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে রেল বিভাগ।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ফেনী স্টেশন হয়ে আসা-যাওয়া করা তিনটি ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে ২৬ জনকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব যাত্রীর কাছ থেকে আইন অনুযায়ী ভাড়া আদায় ও বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে ৯ হাজার ৬৭৫ টাকা জরিমানা করে।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চৌধুরীর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল করিম, বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশের আমানতছফা বদরুননেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতনভাতা পাচ্ছেন না। এতে কলেজের প্রায় ৪০ জন শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষকরা গত সোমবার এবং এর আগের দিন গত রবিবার স্থানীয় সাংসদ, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীরবিক্রম)। শুরুতে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠাতার বড় সন্তান অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি আছেন সভাপতির দায়িত্বে।
শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, ওমর ফারুক দায়িত্বকালীন বিনা কারণে শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং বেতনভাতা বন্ধ করে রাখেন।
শিক্ষকদের ভাষ্যমতে, ২০২০ সাল থেকে কলেজের শিক্ষকরা মূল বেতনের ৬ শতাংশ পিএফ, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ১০ শতাংশ বাড়িভাড়া বাবদ কলেজ থেকেই পেতেন। কিন্তু সভাপতি স্বেচ্ছাচারিতা করে বন্ধ করে দেন এসব ভাতা। এ ছাড়া গত আগস্ট মাসের বেতন বিলে সভাপতি স্বাক্ষর না করায় বেতনের সরকারি অংশ পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা। কলেজের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-কর্মচারীরা দুর্গাপূজার আগে টাকার অভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কোনো কোনো শিক্ষক-কর্মচারী পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. সিরাজদ্দৌল্লা জানান, সভাপতিসহ পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে দুই বছর ধরে দেন-দরবার করেও আমাদের বৈধ পাওনাগুলো আদায় করতে পারিনি। তিনি মনে করেন এ কলেজ তার বাবার। শিক্ষকদের তিনি মনে করেন তার বাড়ির কর্মচারী। বিনা কারণে সভাপতি সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
চন্দনাইশ পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুল আলম খোকা বলেন, শিক্ষকদের বেতন বন্ধের অভিযোগ পেয়েছি। এটা অমানবিক। বিষয়টির সমাধানের জন্য চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক হোসাইন আহমেদ আরিফ ইলাহী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে আমানতছফা বদরুননেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শিপ্রা সিকদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
দুর্ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে আমানতছফা বদরুননেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি বলেন, ঘটনাটি অসত্য। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এ সমস্যা হয়েছে। অচিরেই এর সমাধান হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন গতকাল বুধবার বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন বর্ণাঢ্য উদ্যাপন করেছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, বৃক্ষরোপণ, দীর্ঘায়ু কামনা করেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনা, খাদ্য-নতুন বস্ত্র-ফল-মিষ্টি ইত্যাদি বিতরণ, কেক কাটা, আলোচনা সভা, রক্তদান, বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি। ঢাকার বাইরের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :
খুলনা : আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। বিকেলে নগরীর লোয়ার যশোর রোডের শঙ্খ মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলের আগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। মিছিলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিৎ অধিকারী, সাইফুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক সফিকুর রহমান পলাশ, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজনসহ আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেক কাটা ও আলোচনা সভা এবং শেষে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জ : উৎসবমুখর পরিবেশে কেক কাটাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে কেক কেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন পালন করা হয়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
জামালপুর : শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে উৎসব করেছে জেলা ছাত্রলীগ। সকালে সরকারি আশেক মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এ আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁদপুর : ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. হারুন অর রশিদ সাগরের উদ্যোগে সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া হাইস্কুলের ক্যাম্পে এই আয়োজন করা হয়।
বাগেরহাট : দুপুরে জন্মদিন উপলক্ষে শহরের রেলরোডস্থ আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এ ছাড়াও পিকআপ ভ্যানে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে দরিদ্র অসহায় মানুষদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন দলের নেতারা। এছাড়া শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও মন্দিরে প্রার্থনা করা হয়। আলোচনা সভা এবং কেক কাটার আয়োজনও ছিল।
বগুড়া : জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিনটি উদ্যাপন করেছে। বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের সাতমাথা মুজিব মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে। বাদ যোহর বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদে জেলা আওয়ামী লীগ ও বাদ আছর জেলা যুবলীগ দোয়া মাহফিল করেছে।
মাগুরা : যুবলীগ-ছাত্রলীগ বৃক্ষরোপণ করেছে। সকালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমানসহ নেতাকর্মীরা মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ চত্বরে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
কুড়িগ্রাম : জেলা স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে প্রতিকৃতি ভেসে ওঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ব্যতিক্রমী আয়োজনটি করে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ। ১১টায় কেক কাটা শেষে জেলা ছাত্রলীগের ৭০০ নেতাকর্মী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন।
পঞ্চগড় : তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও সদর উপজেলার ৬৯ জন সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য, তিন উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং পঞ্চগড় পৌরসভার সংরক্ষিত কাউন্সিলররা শেখ হাসিনার জন্মদিনে বিশেষ আয়োজন করে। তবে, সম্প্রতি পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে হতাহতের কারণে কেক কাটা থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য অংশ বাদ দেওয়া হয়।
নীলফামারী : ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের নওদাবস এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন বিশেষভাবে পালন করেছে। তারা প্রকল্প এলাকাটি নিজেদের মতো করে সাজিয়ে কেক, মিষ্টি, ফলমূলের ব্যবস্থা করেন।
পীরগঞ্জ (রংপুর) : শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ র্যালি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করে। পরে ৭৫ পাউন্ড ওজনের কেক কাটা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বর্ণাঢ্য র্যালি উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : সোনারগাঁয়ে একটি হাসপাতাল ও একটি মাদ্রাসায় খাবার বিতরণ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। পরে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও প্রতিবন্ধী-এতিমদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদ।
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) : দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের অয়োজনে পরিষদের সভাকক্ষে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু প্রমুখ।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) : বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, কেক কাটা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা হয়। দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটওয়ারী।
মাভাবিপ্রবি : মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) জন্মদিন পালন করা হয়েছে। বিকেলে ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ আর এম সোলাইমান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মতু মুন্সী আজিজ (৩০) নামে এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের মৃধাকান্দি এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানায়, মোক্তারেরচর ইউনিনের মৃধাকান্দি গ্রামের করিম মুন্সীর ছেলে মতু মুন্সী আজিজ পরিবারের সঙ্গে একই গ্রামের টিপু মৃধার দীর্ঘদিন যাবৎ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।
নিহত মতু মুন্সীর ভাই রিপন মুন্সী বলেন, সন্ত্রাসী টিপু মৃধাদের ভয়ে এক মাস যাবৎ আমরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। আজ মতু বাড়ি এলে টিপু মৃধার নেতৃত্বে সোবাহান মৃধা, ইকবাল মৃধা, বাদল মৃধা, বিল্লাল মৃধা, মোকলেছ মৃধা, রুবেল মৃধা, সলেমানসহ ১০-১৫ সন্ত্রাসী আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও টিপু মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) এস এম মিজানুর রহমান বলেন, হত্যাকা-ের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি সন্দেহভাজনদেরও আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা হলে অধিকতর তদন্ত ও ময়নাতদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নির্মাণকাজে লোক নিয়োগ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। সৈয়দপুর শহরের নীচুকলোনি এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার রাতে তাকে আটক করা হয়। তার সাম ফুলচান প্রামাণিক। তিনি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকার বাসিন্দা।
অভিযোগে জানা যায়, ফুলচান নিজেকে একটি কো¤পানির ফোরম্যান দাবি করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নির্মাণকাজে ৪০০ লোক নিয়োগ করা হবে বলে প্রচার চালিয়ে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫০ জনের কাছ থেকে ৫-৬ হাজার করে টাকা এবং জীবনবৃত্তান্ত নেন। ভুক্তভোগীরা জানান, নিয়োগের কথা বলে তাদের ১০ দিন ধরে সৈয়দপুরে এনে রাখা হয়েছে। বসে বসে খেয়ে তাদের জমা টাকা শেষ হয়ে গেছে।
গাইবান্ধার পূর্ব ইদাখালীর সাদেক আলী জানান, বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৫ হাজার ৬৪০ টাকা নেওয়া হয়েছে। সৈয়দপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বগুড়ায় বাঙালি নদী খননের বালু ফেলে খালের মুখ বন্ধ হওয়ায় পানির নিচে তলিয়ে আছে প্রায় ৫০০ একর ফসলি জমি। পানি জমে থাকায় ওই এলাকার ৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং পানিবন্দি হয়েছে বেশ কিছু পরিবার। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ৪ গ্রামের সাড়ে ১১ হাজার মানুষ।
জেলার সারিয়াকান্দির বাঙালি নদী খননের সময় বালু ফেলে উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির বাঁশহাটা গ্রামে ঘটেছে এ ঘটনা। দুর্ভোগে পড়া মানুষজন উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নতুন কাজলা, কালারতাইড়, শোলারতাইড় এবং ছোট কুতুবপুর গ্রামের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সব এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলো প্রায় তিন মাস ধরে কলার ভেলা বা নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছেন। এতে শিশুসহ গৃহপালিত পশু নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। পানিতে নিমজ্জিত হওয়া জমিগুলোতে
কৃষকরা নানা ধরনের ফসলাদি চাষ করতেন। পানি জমে থাকার কারণে তারা এ বছর স্থানীয় জাতের ‘গাই›জা ধান’ রোপণ করতে পারেননি। পানি না সরায় জমিতে কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন এবং দুশ্চিন্তায় দিন গুনছেন।
বাঁশহাটা গ্রামের কৃষক মৃত ভিখা মণ্ডলের ছেলে লাল মিয়া মণ্ডল জানান, বাঙালি নদী খননের বালু খালের মুখে স্তূপ করে রাখার কারণে খালটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে কয়েকশ বিঘা জমি পানির নিচে রয়েছে। তার ১২ বিঘা জমি প্রায় ৩ মাস ধরে খালের পানির নিচে। কুতুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন বলেন, খালের মুখে বাঁধ দেওয়ায় প্রায় ৫০০ একর জমি পানির নিচে রয়েছে।
এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, এভাবে যদি জমিতে পানি জমে থাকে তাহলে কৃষকরা কীভাবে ফসল ফলাবেন! খননকারীরা কৃষকদের কথা চিন্তা করেনি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। সরেজমিন তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুর রহমান তাযকিয়া বলেন, ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নদী খনন প্রকল্প চলছে। বাঙালি নদী খননও চলছে সেই প্রকল্পের আওতায়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নৌবাহিনী কাজটি করছে। বাঁশহাটা গ্রামে বালুর বাঁধ দিয়ে খালের মুখ বন্ধ হওয়ার বিষয়টি অবগত নই। যত দ্রুত সম্ভব আমরা বালু অপসারণ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।