
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আগুন পোহাতে গিয়ে কমলা বেগম (৮৫) নামে এক নারী দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকার আজিমপুর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে । তিনি ওই গ্রামের মৃত গোপাল খাঁর স্ত্রী।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কমলা বেগম শনিবার সন্ধ্যায় শীত নিবারণের জন্য ঘরের মধ্যে মাটির পাত্রে খড়কুটা জ¦ালিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন। হঠাৎ ওই আগুন তার কাপড়ে লাগে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। নিহতের মেয়ে বছিরন পার্শ¦বর্তী বাজারে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে দেখতে পান তার মা উঠানে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর বছিরনের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এসে দেখতে পান কমলা বেগম মারা গেছেন।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে এক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এক পরিচালক গ্রাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা ফেরত পেতে গ্রাহকরা থানায় অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে উপজেলার বরাটি বাজারে এই এনজিও স্থাপিত হয়। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নেওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর টমি-১৯২৪। পরে এনজিওটি ভাতগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্রাহক তৈরি করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে। মূলধনের বিপরীতে অধিক মুনাফার লোভ দেখালে দুই বছরের মধ্যে তাদের গ্রাহকসংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়ে যায়।
এনজিওটির কার্যক্রম দেখে ভাতগ্রাম ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের জামাল ভুঞার দুই ছেলে দেলজু ও দেলুয়ার কয়েক বছর পূর্বে ১৫ লাখ টাকা জমা রাখেন। তাদের দেখে একই গ্রামের রহমত খান, শিউলী বেগম, রুমা বেগম ও রজ্জব ভুঞাসহ অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা ওই এনজিওতে জমা রাখেন। প্রথমদিকে এনজিওটির লেনদেন ভালো থাকলেও বিগত তিন বছর ধরে তাদের বরাটি বাজারের প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দিয়ে গোপনে সঞ্চয় সংগ্রহ করতে থাকে। পরে গ্রাহকের মুনাফার টাকা দিতে করতে থাকে নানা টালবাহানা।
এ নিয়ে ভাতগ্রাম ইউপি কার্যালয়ে একাধিক সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহক ভাতগ্রাম দাসপাড়া গ্রামের জামাল ভুঞার ছেলে দেলজুর রহমান সম্প্রতি মির্জাপুর থানায় একটি অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে ওই এনজিওর পরিচালক বাবুল হাসান বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, সম্প্রতি এনজিওটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিপি বেগমও বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন বলে দেলজুর রহমানসহ এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী গ্রাহক রহমত, রজ্জব, রুমা ও শিউলী বলেন, আমাদের কাছ থেকে অধিক মুনাফার কথা বলে ১০ লাখ করে টাকা জমা নেন এনজিওটির কর্মকর্তারা। আমাদের প্রয়োজনের সময় টাকা চাইলে ‘দেই, দিচ্ছি’ বলে গত তিনি বছর ধরে টালবাহানা করছে। এখন তাদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না।
এনজিওটির ব্যবস্থাপক লিপি বেগম, সহকারী ব্যবস্থাপক শাহ্ আলম এবং মাঠকর্মী পারভীন আক্তারের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দিয়েও সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে ভাতগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একাধিকবার বসা হলেও এনজিও কর্তৃপক্ষ তাদের দেওয়া কথা অনুযায়ী কাজ করেনি।
মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লালমনিরহাটে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া স্কুল শিক্ষক নূরুল আমিনের খোঁজ মেলেনি। অপহরণের তিন দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত শিক্ষককে উদ্ধার কিংবা অপহরণকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি।
অপহৃত শিক্ষক নূরুল আমিন (৫৫) জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি গ্রামের দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গত শুক্রবার সকালের দিকে তাকে নামুড়ি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। ওইদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় পুলিশের কেউ তাকে তুলে আনেনি। অন্য কেউ এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এন এম শরিফুল ইসলাম বলেন, রবিবার (গতকাল) অপহৃত শিক্ষক নূরুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে আদিতমারী থানার অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।
অপহৃতের পরিবার জানায়, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস ও সাদা রঙের একটি কার নামুড়ি গ্রামে শিক্ষক নূরুল আমিনের বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। পরে গাড়ি থেকে নেমে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল বাড়ির প্রধান ফটক টপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে নূরুল আমিনের খোঁজ করতে থাকে। পরে নূরুল আমিনকে তার শয়ন কক্ষ থেকে বের করে এনে মারধর শুরু করে। এ সময় বাড়ির লোকজন এগিয়ে এলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পল্লী চিকিৎসক চাচা আবু তালেব (৭০) ও ভাই স্কুল শিক্ষক রুহুল আমিনকে আঘাত করে। এক পর্যায়ে নূরুল আমিনকে গাড়িতে উঠিয়ে তারা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’
মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ গত ৭ জানুয়ারি জেলার ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে স্ব-প্রণোদিত আদেশ জারি করেছেন। আদেশে অবৈধ ভাটাগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিশেষ পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়া এবং উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেহেরপুরে ইটভাটার জন্য বহন করা মাটি পড়ে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার বিভিন্ন সড়ক, যা সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওই মাটি সরকারি নতুন রাস্তাগুলোকে খুব দ্রুত চলাচলের অনুপযুক্ত করে দিচ্ছে। এছাড়া, অবৈধ ইটভাটার অস্তিত্ব পরিবেশকে হুমকিতে ফেলছে বলে এগুলো বন্ধে বিচারক এ আদেশ জারি করেছেন।
এছাড়া, ইটভাটার মাটি পড়ায় সড়কে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকি বিবেচনা করে বিষয়টিকে দ-বিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে আদালত। সেই সঙ্গে জেলায় ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন হওয়ার বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদ- ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এ আদেশ দিয়েছে আদালত।
আদেশে পিবিআইকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা সুষ্ঠু তদন্ত ও অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পরিবেশ অধিপ্তরের নিয়মের তোয়াক্কা না করে মেহেরপুরে যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন এবং ইটভাটার মাটিতে সড়ককে পিচ্ছিল করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংবাদপত্রে এবং টেলিভিশনে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কিছুতেই থামছে না ইটভাটা স্থাপনের নামে এই দুর্বৃত্তায়ন। ফলে, প্রতি বছর সামান্য কুয়াশা কিংবা বৃষ্টিতে ইটভাটার মাটি পড়ে রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। বেড়ে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। আবার সড়কের পাশে এবং শহরের মধ্যে ইটভাটা করে যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, তেমনি আবাদি জমির মধ্যে ভাটা করে আশপাশের ফসলি জমির ফসলহানিসহ বিস্তীর্ণ আবাদি জমির ক্ষতি করছে। সেই সঙ্গে ইটভাটায় প্রতিদিন দেদার শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে বৃক্ষ সম্পদকে উজাড় করা হচ্ছে। ফিক্টস ভাটা বন্ধ এবং অবৈধ ইটভাটা স্থাপনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরও মেহেরপুরে ৯৯ ভাগ ইটভাটা এখনো চলছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিবারের মতো এবারও শুরু হয়েছে ইটভাটার কার্যক্রম। ফলে, বিস্তীর্ণ জমি ধ্বংস করে প্রধান উপকরণ মাটি কেনাবেচা এখন তুঙ্গে। ভাটা মালিকরা জমির উপরিঅংশ (কৃষিজমির টপ সয়েল) কিনে নিয়ে জমির উর্বরাশক্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কেউবা সরকারি পুকুর কিংবা মৎস্য বিলের মাটি পাচার করে সেই মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে জলাশয় ধ্বংস করছে।
ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান আতু ইটভাটার মাটিতে রাস্তার ক্ষতি প্রসঙ্গ স্বীকার করে বলেন, আমরা বিষয়টি দেখেছি। প্রতিটি ভাটা মালিককে স্ব-এলাকা পরিষ্কার করতে বলেছি।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মনসুর আলম খান বলেন, এই ধরনের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে মোবাইল কোর্ট পাঠানো হচ্ছে। ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, মেহেরপুরে একটি ইটভাটা ছাড়া সবই অবৈধ। কোনো ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই।
দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের সবজি। গত ডিসেম্বরে কয়েক দফায় শুধু মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কয়েক কোটি টাকার বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন সবজি রপ্তানি হয়েছে। জানুয়ারিসহ আগামী তিন মাসে এ উপজেলা থেকে আরও সাত কোটি টাকার সবজি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতে পারে বলে প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষি বিভাগের।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আড়াইহাজারে চলতি বছর ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এসব জমিতে বিষমুক্ত বাঁধাকপি, ফুলকপি, রজবপাতা, লাউপাতা, লাউশাক, বরবটি, কাঁকরোল, উচ্ছে, ঝিঙে, লালশাক, ডাঁটা, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, পটোল, চালকুমড়া, লাউ, কাঁচাপেঁপে, কাঁচাকলা, শসা, শিম, লাউ, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, মুলাসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়। এসব সবজি আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, দুবাই, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের প্রায় ৩৫টি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে।
এ ছাড়া আড়াইহাজারের উৎপাদিত সবজি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলায়।
জানা যায়, আড়াইহাজার উপজেলা ও গোপালদী পৌরসভার ব্রাহ্মনদী, সাতগ্রাম, দুপ্তারা, হাইজাদী, ফতেপুর, উচিৎপুরা, খাগকান্দা, বিশনন্দী, মাহমুদপুর ও কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ কৃষক রপ্তানির উপযোগী বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। এবছর বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার লাভ করেন আড়াইহাজারের কৃষক শফিকুল ইসলাম।
উপজেলার সরাবদী গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ২০ বিঘা জমিতে লাউ, বেগুন, টমেটো, শিমের আবাদ করেছি। ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে সবজি কিনে নিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেন। তাই নগদে ও বেশি দামে বিক্রি করে চাহিদামতো মুনাফা হয়।’ ২৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন নগর জোয়ার গ্রামের শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘আগে অনেক সময় লোকসানে সবজি বিক্রি করতে হতো। এখন বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় সবজি বিক্রিতে আর কোনো সমস্যা হয় না।’
পাইকার কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা জমি থেকে সবজি সংগ্রহ করে ঢাকায় যাত্রাবাড়ী ও কাওরানবাজারে আড়তদারদের কাছে নিয়ে যাই। সেখান থেকে প্রসেসিং করে রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ফারুকী বলেন, ‘উপজেলার প্রায় ৩০০ কৃষক রপ্তানির উপযোগী বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ করছেন। কৃষি অফিস থেকে বিষমুক্ত সবজি চাষে সেক্স ফেরোমন, হলুদ আটা টেপ ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতিসহ নেওয়া হয়েছে বিশেষ পদ্ধতি।’ নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল মাজেদ বলেন, ‘আড়াইহাজারের লাউ, ঢেঁড়শ, বেগুন যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। ইংল্যান্ডে একটি বাংলা মার্কেট রয়েছে। সেখানে প্রচুর চাহিদা দেশের সবজির।’
১০ ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে স্বাভাবিক হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরি চলাচল। এর আগে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে গেলে দুর্ঘটনা এড়াতে গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া প্রান্তে আটকে পরে শতাধিক যানবাহন।
গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফেরি বন্ধ থাকায় জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়ক এলাকায় তৈরি হয়েছে যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবোঝাই ট্রাকের সারি। সাড়ে ৮টায় ফেরি চলাচল শুরু হলে যানবাহনের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
ফেরি চলাচল বন্ধের সময় গ্রিন বাংলা পরিবহনের যাত্রী রায়হান বলেন, গতকাল (গত শনিবার) রাত ১১টা থেকে ঘাট এলাকায় এসে বসে আছি।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আলীম ডাইয়ান বলেন, কুয়াশার জন্য দুর্ঘটনা এড়াতে রাত থেকেই ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অপরদিকে, সকাল সোয়া ৯টার দিকে ফেরি চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবদুস সালাম।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
ফুটবল কিংবদন্তী পেলের গোটা জীবন কেটেছে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে যিনি আলো ছড়িয়েছেন, তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় যাননি ইউরোপের কোনো ক্লাবে।
তবে ১৯৭৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে সান্তোসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ফুটবল সম্রাট। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসে যোগ দেন। সেই বছরের ১৫ জুন ক্লাবটিতে নাম লিখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষজন একটা সময় ফুটবল খেলাই দেখতে যেতেন না, পেলে যোগ দেওয়ার পর ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই পেলে নিউইয়র্ক জয় করেছিলেন।
পেলে কসমসে যাওয়ার ১৫ বছর পর ফের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টুর্নামেন্টের অভিষেক আসরের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে শুধুমাত্র ২০১৮ সাল ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে তারা। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন। কাতার বিশ্বকাপেও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়ে হয়েছে ১৪তম দল হয়ে।
বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন জুড বেলিংহাম। অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কেড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের। আর তাই তো নতুন মৌসুম শুরু করবেন এই ক্লাবের জার্সি গায়ে। ইংল্যান্ডের এই মিডফিল্ডারকে দলে নিতে ১০৩ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে রাজি হয়েছে ব্ল্যাঙ্কোরা।
এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ডর্টমুন্ড। তারা জানিয়েছে, স্প্যানিশ দলটি ১০৩ মিলিয়ন ইউরো দিতে সম্মত হয়েছে। যেখানে আনুসাঙ্গিক আরও অনেক বিষয় জড়িয়ে। যদি সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়, তবে চুক্তিটি ১৩৩.৯ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছতে পারে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে বার্মিংহাম সিটি থেকে ডর্টমুন্ডে যোগ দেন ১৯ বছর বয়সী বেলিংহাম। কাতার বিশ্বকাপেও ইংলিশদের সেরা পারফরমার ছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল উভয় ক্লাবই তাকে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদে পাড়ি দিচ্ছেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে বেলিংহামে বিশ্বের তৃতীয় দামি তরুণ ফুটবলার হতে চলেছেন। ২০১৯ সালে ইডেন হ্যাজার্ড ১১৫ মিলিয়ন ইউরোতে চেলসি থেকে রিয়ালে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
বেলিংহাম এই মৌসুমে তার ক্লাবের হয়ে ৪২ ম্যাচ খেলে ১৪ গোল করেছেন। সাতটি গোল তিনি করিয়েছেন।
ডারিও স্পোর্ট ও মুন্ডো দেপোর্তিভোর সঙ্গে লিওনেল মেসির সাক্ষাৎকারের চুম্বক আংশ
বার্সেলোনায় ফিরবেন না জানার পর, আপনি কি সিদ্ধান্ত নিলেন? সৌদি আরব না, মায়ামি?
মেসি: আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমি মিয়ামিতে যাব। আমি এখনও এ ব্যাপারে শতভাগ জানিনা, কিছু ব্যাপার বাকি আছে, তবে আমি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আপনি কি বুসকেটস, আলবার সাথে কথা বলেছিলে? মেসি: কথা উঠেছিল যে আমি নাকি বুসি, জর্দির সাথে সৌদিতে যাচ্ছিলাম। বলবো সবাই যার যার ভবিষ্যত বেছে নিচ্ছে। আমি তাদের ব্যাপারটা জানাতাম কিন্তু কখনোই কোনো মুহূর্তে আমরা একসঙ্গে কোথাও যেতে রাজি হইনি। আমি নিজের জন্য আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি জানি না তারা কী করতে যাচ্ছে। আমি কারও সাথে কিছু সেটআপ করিনি।
কি বলবেন, ফোকাস ছেড়ে যাচ্ছেন?মেসি: হ্যাঁ. ইউরোপ ছেড়ে। সত্যি বলতে আমার কাছে অন্য ইউরোপীয় দল থেকে অফার ছিল, কিন্তু আমি তা মূল্যায়নও করিনি কারণ ইউরোপে আমার একমাত্র চিন্তা ছিল বার্সেলোনায় যাওয়া। বিশ্বকাপ জেতার পরে এবং বার্সায় যেতে না পারায় এখন সময় ফুটবলকে অন্যভাবে উপভোগ করতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিগে যাওয়া। অবশ্যই দায়িত্ব একই এবং আকাঙ্খা, জয়।
আপনি কি বার্সাকে মিস করেছেন?মেসি: হ্যাঁ, স্পষ্টতই হ্যাঁ, আমি তাকে মিস করেছি। এবং শুরুতে প্রথম বছরটি আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। বার্সা আমার মনের মধ্যে ছিল, খেলা দেখেছি সবসময়। স্মৃতিগুলো অনুরোণিত হতো।
বার্সা যে লিগ জিতলো নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছিলনমেসি: অবশ্যই। সারা বছর ক্লাবকে অনুসরণ করেছি এবং আমি বার্সেলোনা সমর্থকদের মতোই বার্সার শিরোপা দেখতে চেয়েছিলাম। এমনকি প্রথম বছরেও, আমি কয়েকটি খেলার পর জাভির সাথে অনেক কথা বলেছিলাম।
বার্সায় ফিরে আসা সম্ভাবনা সম্পর্কে, আপনি কি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?মেসি: হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি খুব খুব উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু, অন্যদিকে, আগে যা ঘটেছিল একই ব্যাপারটা ঘটুক চাচ্ছিলাম না। একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে চাইনি। আমি আমার ভবিষ্যৎ অন্যের হাতে ছেড়ে দিতে চাইনি। কোনোভাবে, আমি নিজের সম্পর্কে, আমার পরিবারের কথা ভেবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। যদিও আমি শুনেছি যে বলা হয়েছিল যে লা লিগা সবকিছু মেনে নিয়েছে এবং আমার ফিরে আসার জন্য সবকিছু ঠিক আছে... এখনও অনেক কিছুর ঘাটতি ছিল। শুনেছি যে ক্লাবে খেলোয়াড়দের বিক্রি করতে হয়েছে বা খেলোয়াড়দের বেতন কমানো হয়েছে এবং সত্য হল যে আমি এর মধ্য দিয়ে যেতে চাইনি, দায়িত্ব নিতে চাইনি বা এই সমস্ত কিছুর সাথে কিছু করতে চাইনি।...?বার্সেলোনায় আমি যখন ছিলাম তখনকার অনেক কিছুর জন্য আমাকে দায়ী করা হয়েছিল। এসব শুনে কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম। আমি চাইনি এসবের মধ্যে আর যেতে। আমি যখন ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলাম বলা হয়েছিল যে লা লিগা সবকিছু মেনে নিয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করা যায়নি। এবার ভয়ে ছিলাম যে একই জিনিস আবার ঘটবে এবং আমাকে তখন দৌড়াতে হবে যেমনটি ঘটেছিল। এখানে প্যারিসে আসা, আমার পরিবারের সাথে একটি হোটেলে দীর্ঘ সময় থাকা, আমার বাচ্চাদের সাথে স্কুলে যাওয়া এবং এখনও সেখানেই থাকা। আমি আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই বার্সায় ফেরাটা হলো না।
মন কি বলে?মেসি: ফিরে যেতে পারলো ভালো হতো। আমিও এমন একটি মুহুর্তে আছি যেখানে আমি একটু ফোকাস থেকে বেরিয়ে আসতে চাই, আমার পরিবার সম্পর্কে আরও ভাবতে চাই। আমি যেমন বলছিলাম, মাত্র দুই বছর সময়.. পারিবারিক পর্যায়ে এতটাই খারাপ ছিলাম যে আমি এটা উপভোগ করিনি। সেই মাসটা ছিল অসাধারণ যে সময় বিশ্বকাপ জিতলাম। কিন্তু এরপর খুবই কঠিন সময় কেটেছে। পরিবারের সঙ্গে, বাচ্চাদের সঙ্গে ভালো সময় খুজে বেড়াতাম। আর একারণেই বার্সেলোনার ঘটনা ঘটল না।
এ সব কারণই কি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করলো? মেসি: আমি নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আবার অপেক্ষা করতে বাধ্য হইনি। ঝুকি নিতে চাইনি যা দুবছর আগে ঘটেছিল। যেমনটা বলছিলাম, আমার আরাধ্য বিশ্বকাপ অর্জনের পর ভিন্ন কিছু এবং কিছুটা মানসিক শান্তি চাচ্ছিলাম
ক্লাবের বিভিন্ন স্তর থেকে বলা হচ্ছিল আপনার ফিরে আসা আপনার উপর নির্ভর করে। জাভি এমনকি আপনার হাতেই ৯৯% বলেছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক যে কিছু মিসিং ছিল। এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা দেবেন?মেসি: ঠিক আছে, আমি যা কিছু বলা হয়েছিল, যা বেরিয়ে আসছে, জাভি যা বলেছে তার কিছুটা শুনেছি, তবে তা ছিল সাম্প্রতিক। লা লিগাও ওকে করেছে। কিন্তু এটা ঠিক নয় সিদ্ধান্তটা আমার, কারণ এখনও অনেক কিছুই মিসিং ছিল। একটি লম্বা প্রত্যাশিত ছিল যে আমি ইতিমধ্যে যা অতিক্রম করেছি তার জন্য আমি আর যেতে চাই না। আমি এটা শেষ করতে চেয়েছি, শান্ত মনে ভবিষ্যত সম্পর্কে ভেবেছি। পরিকল্পনা নিয়েছি যা হওয়া সম্ভব তাই।
প্যারিসে এই দুই বছর আপনি বলেছেন যে আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না- এটা কি আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে?মেসি: একটু, হ্যাঁ, একটু হ্যাঁ, কারণ আমি সম্প্রতি বলেছিলাম, সত্য হল যে দুটি বছর ছিল যেখানে আমি সুখী ছিলাম না, যেখানে আমি নিজেকে উপভোগ করিনি এবং এটি আমার পারিবারিক জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। বাচ্চারা অনেক কিছু মিস করছিল। আমার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সেসব কারণেও। পরিবারের সাথে মিলিত হওয়া, বাচ্চাদের সঙ্গে থাকা এবং প্রতিটা দিন উপভোগ করা। আমি আগে যেমন বলেছিলাম যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে তিনি আমাকে ফুটবলের সবকিছু অর্জন করতে দেননি। এজন্যই আজ আমি খেলার বাইরে থাকাতে পারি, যা আমার আগ্রহকে জাগিয়ে তোলে, পরিবারকে নিয়ে আগ্রহী করে তোলে, তাদের মঙ্গল ভাবতে পারি।
প্রেসিডেন্ট লাপোর্তার কথা, জাভির কথা বলি। তারা কি আপনার সাথে যোগাযোগ করেছে, এই প্রক্রিয়া জুড়ে কি তাদের সাথে কোনো সংলাপ হয়েছে?মেসি: বাস্তবে, আমি প্রেসিডেন্ট লাপোর্তার সাথে খুব কম কথা বলেছি। এই দুই বছরে আমরা একবার বা দুবার কথা বলেছি। জাভির সাথে আমার অনেক যোগাযোগ আছে, ক্লাবে আসার পর থেকে বেশি। আমার ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে কথা হতো। এবং আমরা খুব উত্তেজিত ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি সত্যিই আমাকে ফেরা দেখতে চাও, আমার ফেরাটা কি দলের জন্য ভালো হবে। এসব কথা হতো।
এই পুরো প্রক্রিয়ায়, আপনার সিদ্ধান্ত নিতে অর্থনৈতিক বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এমনও তো বলা হচ্ছিল ফ্রিতেও খেলতে পারেন? মেসি: অর্থ আমার জন্য কোন সমস্যা ছিল না, বা কোন বাধা ছিল না। আমরা চুক্তির কথাও বলিনি। একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছিল, কিন্তু এটি একটি আনুষ্ঠানিক, লিখিত, স্বাক্ষরিত প্রস্তাব ছিল না কারণ আদৌ আমার ফেরাটা সম্ভব ছিল না জানা ছিল না। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থের কথাও বলি না। যদি টাকার প্রশ্ন থাকত, আমি আরব বা অন্য কোথাও চলে যেতাম, সেখানে তারা আমাকে প্রচুর অর্থের প্রস্তাব দেয়। আমার সিদ্ধান্ত গেছে অন্য কারণে টাকার জন্য নয়।
এই যে ক্ষতটা তৈরি হলো..এর মধ্যে কোনোদিন কি বার্সেলোনায় টেকনিক্যাল সেক্রেটারি বা অ্যাম্বাসেডর হয়ে আসতে চান?মেসি: অবশ্যই। আমি সবসময় ক্লাবের কাছাকাছি থাকতে চাই। আরও কী, আমি বার্সেলোনায় বাস থাকতে যাচ্ছি। এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা আমার স্ত্রী এবং আমার সন্তানদের সম্পর্কে খুব স্পষ্ট। আশাকরি। আমি জানি না কোন সময়ে, কি, বা কখন, তবে আমি আশা করি আমি একদিন কিছু অবদান রাখতে এবং সাহায্য করতে ফিরে আসতে পারব কারণ এটি এমন একটি ক্লাব যা আমি ভালোবাসি। আমার ক্যারিয়ার জুড়ে আমি মানুষের স্নেহ পেয়েছি এবং আমি আবার সেখানে থাকতে চাই।
পুরো প্রক্রিয়াটি উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে মনে করি। এমন কিছু কি আছে যা আপনাকে বিশেষভাবে আঘাত করেছে, নাকি আপনি এসব পাত্তাই দিচ্ছে না?মেসি: না, না, আমি আগেই বলেছি, অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে, অনেক কিছু ফাঁস হয়েছে, অনেক মিথ্যা... কোনটাই অস্বীকার করতে পারি না। অনেক সাংবাদিক আছেন যারা অনেক মিথ্যা বলেন এবং ছবি তোলেন এবং কিছুই হয় না। পরের দিন সে আবার আরেকটি মিথ্যা বলে এবং কিছুই হয় না। এবং আমি তাই মনে করি, এমন অনেক বিষয় ছিল যা আমাকে বিরক্ত করেছিল।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।