
পটুয়াখালীর বাউফলে রূপালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে ফাঁসাতে অর্থ আত্মসাৎ নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর আগে ধলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অভিযুক্ত মার্জিয়া ইসলাম রূপালী ব্যাংকের কালিশুরী বন্দর শাখা ব্যবস্থাপক মো. তৈয়বুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি স্থানীয় একটি পত্রিকা ও অনলাইনে খবর প্রকাশ হলে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় হয়।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মার্জিয়া ইসলাম ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর রূপালী ব্যাংক কালিশুরী বন্দর শাখা থেকে তার বেতনের বিপরীতে ১০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ওই ঋণের টাকা মাসিক কিস্তি ১৬ হাজার ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করে আসছেন। ইতিমধ্যে মার্জিয়া ১১টি কিস্তিতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধও করেন। সম্প্রতি ওই গ্রহীতা ব্যাংকে এসে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে দাবি করেন। শাখা ব্যবস্থাপক তার নামে ১০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও দাবি করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রূপালী ব্যাংকের ওই শাখার নিরাপত্তা প্রহরী সাইদুল ইসলামের মাধ্যমে দীর্ঘ বছর ধরে ওই শিক্ষিকা ব্যাংকের লেনদেন করে আসছেন। ২০২১ সালে মার্জিয়া সাইদুলের পাকা ভবন নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাকে ধার হিসেবে দেন। ওই টাকা শোধ দিতে না পেরে গত বছর ২ নভেম্বর থেকে গা ঢাকা দেন সাইদুল। সাইদুলকে না পেয়ে মার্জিয়া কৌশলে ব্যাংকের ওপর দায় চাপাতে ঋণের টাকা অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষিকা মার্জিয়া ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। পলাতক সাইদুলের বাবা জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘মার্জিয়ার কাছ থেকে আমার ছেলে সাইদুল টাকা নিয়েছে। আমি সে টাকা কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের জন্য মার্জিয়াকে একটি অঙ্গীকারনামা লিখিতভাবে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকে কোনো ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেনি। আমাকে ঘিরে প্রকাশিত সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ব্যাংকের আবেদনের ভিত্তিতে সাইদুলকে ইতিমধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
সাধারণত বাংলা ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে চৈত্র মাসে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংকট তৈরি হয়। তবে এবছর মাঘ মাসের শুরুতেই যশোরের অধিকাংশ স্থানে পানির স্তর ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এ অবস্থায় বর্তমানে যশোরে আট হাজারেরও বেশি নলকূপে পানি উঠছে না। এমনিতে এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে এখানকার নলকূপগুলোকে পানি ওঠে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব ও অপরিকল্পিতভাবে গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ জানান, জেলার কোথাও কোথাও ভূগর্ভস্থ পানি ৩০ থেকে ৩৫ ফুটের নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর স্বাভাবিক ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে পানি পাওয়া যায় না। বিশেষ করে যশোর সদর, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও শার্শা এলাকায় এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। তবে অভয়নগর উপজেলা ও মণিরামপুরে পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র যশোর সদরে ৫৬২৫টি নলকূপ, সাবমার্সিবল ও তারা টিউবওয়েল রয়েছে। এ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় পানি রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে। সামনে পানির স্তর আরও নামতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। কী কারণে এ পরিস্থিতি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে খরা মৌসুমে এমনটা দেখা দেয় এ অঞ্চলে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী যশোরে মোট অগভীর নলকূপের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩২৩টি। অন্য বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেলে নলকূপগুলোতে মার্চ মাস থেকে ক্রমান্বয়ে পানি ওঠা বন্ধ হতে থাকে। তবে এবছর চলতি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে জেলার অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নলকূপে পানি উঠছে না। এই হিসাবে বর্তমানে যশোরে আট হাজারেরও বেশি নলকূপে পানি উঠছে না। খরা প্রলম্বিত হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা।
যশোর বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) সোহেল রানা বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে পানির স্তর সর্বোচ্চ নিচে নেমে যায়। তবে এবার একটু আগেভাগেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানির স্তর নামছে। বর্তমানে পানির স্তর ৩২ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এ কারণে নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমেছিল ২৫ ফুটে। আর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে তা ৩১ ফুটে নেমেছিল। তিনি আরও জানান,
কৃষিকাজের সেচের কারণেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এখন চলছে রবি মৌসুম। এসময়ে ভূগর্ভ থেকে গভীর নলকূপ ও স্যালো মেশিনে অপরিকল্পিতভাবে পানি ওঠানো হয়। অধিক সংখ্যক গভীর নলকূপের কারণে পানির স্তর নিচে নামে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) বিএম কামাল আহম্মেদ বলেন, সাধারণত অন্য বছরে ফাল্গুন মাসে এ অঞ্চলের পানির স্তর নিচে নেমে গেলেও এই প্রথম মাঘ মাসে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। আগামী দিনের জন্য খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।
যশোর শহরে পৌরসভার গভীর নলকূপ রয়েছে ২৯টি। আর তারা পাম্প রয়েছে ৫০০টি। এর বাইরে টিউবওয়েল, সাবমর্সিবল পাম্পের সংখ্যা রয়েছে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার। কিন্তু পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এর দুই-তৃতীয়াংশে ইতিমধ্যে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। বাকি জমিতে কয়েক দিনের মধ্যে চারা রোপণ সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, অন্য বছরে বোরোর আবাদের আগে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও এবছর এখনো সেই বৃষ্টির দেখা মেলেনি। আশা করছি খুব দ্রুত বৃষ্টিপাত হলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে। ফলে সেচের অভাবে বোরো আবাদের কোনো ক্ষতি হবে বলে আপাতত মনে করছি না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় দুটি কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার করেছে পুলিশ ও বিজিবি। গত সোমবার ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের পুরাতন বারইপাড়া গ্রাম থেকে মূর্তি দুটি উদ্ধার করা হয়।
দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, দলদলীর পুরাতন বারইপাড়ায় ড্রেন করার জন্য মাটি খনন করার সময় শ্রমিকরা কষ্টিপাথরের দুটি মূর্তি দেখতে পেয়ে পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দেয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আমীর হোসেন মোল্লা বলেন, ‘পুরাতন বড়াইপাড়া ডাইং নামক স্থান থেকে টাস্কফোর্স মূর্তি দুটি উদ্ধার করে।’
বিজিবি অধিনায়ক জানান, মূর্তি দুটির মধ্যে একটির ওজন ৮২ কেজি ৪০০ গ্রাম এবং অন্যটি ৬৯ কেজি।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ এবং জগতবেড় ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ফাতেমা প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড কিন্ডারগার্টেন মাঠ থেকে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ ও বিকেল ৪টায় সোহাগপুর ধরলা সেতু মোড় থেকে জগতবেড় ইউনিয়নবাসী মিছিল নিয়ে পৌর শহরের প্রধান সড়ক হয়ে পশ্চিম চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সম্মিলিত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক শমসের আলী, পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল। অন্যদিকে জগতবেড় ইউনিয়নবাসীর প্রতিবাদ সমাবেশে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল আলমের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
গত ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাটগ্রাম পৌরসভার নিউ পূর্বপাড়ার নিজ বাসায় যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলী ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
খেলা তখন গড়িয়েছিল ৪৩ মিনিটে। বাংলাদেশ এগিয়ে ২-১ গোলে। আর সেই সময়েই মাথায় চোট পান অনূর্ধ্ব–২০ নারী দলের অধিনায়ক শামসুন্নাহার। নেপালের এক ডিফেন্ডার ট্যাকল করলে মাটিতে পড়ে যান তিনি। মাথায় আঘাত পেয়ে প্রায় মিনিট দুয়েক মাটিতে শুয়ে ছিলেন।
ম্যাচের বিরতির সময় শামসুন্নাহার ডাগআউটে শুয়ে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। এরপর ম্যাচ শেষ হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে দলের ফিজিও গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাকে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও খেলার মতো ফিট ছিলেন না তিনি। বিরতিতে শামসুন্নাহারকে উঠিয়ে কোচ গোলাম রব্বানী মাঠে নামান আইরিন খাতুনকে।
শামসুন্নাহারের চোট যদিও তত গুরুতর নয় বলেই জানিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী। তারপরও তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না তিনি। যে কারণে শামসুন্নাহারকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কোচ বলেন, ‘শামসুন্নাহার ব্যথা পাওয়ার পর কিছু সময় স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তারপরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য দলের সঙ্গে থাকা চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তবে আমি আশা করি, পরশু দিন সে ঠিক হয়ে যাবে।’
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে রুদ্ধশ্বাস এক খেলায় টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে। কিলিয়ান এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করলেও শেষ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠেছে লিওনেল মেসির হাতে। এ দুই ফাইনালিস্টের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে অনেকের কৌতূহল।
পিএসজিতে মেসির সতীর্থ এমবাপ্পে। দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষার শুরু বিশ্বকাপ জেতার পর আর্জেন্টাইন দলের উৎসবকে কেন্দ্র করে। কাতার থেকে দেশে ফেরার পর আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এমবাপ্পের পুতুল হাতে নিয়ে তাকে কটাক্ষ করে বিতর্কের জন্ম দেন। পাশে থাকলেও মেসি কেন বাধা দেননি, এমন কথাও বলেন কেউ কেউ।
বিশ্বকাপের পর মেসি-এমবাপ্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন! আর্জেন্টিনার ‘ওলে’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক সেই কৌতূহল মিটিয়েছেন।
বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে দুজনের মধ্যে প্যারিসে আড্ডাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেসি, ‘বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে আমরা দুজন কথা বলেছি। আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ জেতার পর যে উৎসব হয়েছে, এমবাপ্পে সেটি নিয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছে। এর বাইরে আর কিছু হয়নি। ভালো, খুবই ভালো আমাদের দুজনের সম্পর্ক।’
বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার অনুভূতিটা এমবাপ্পের কেমন ছিল, তা নিয়ে মেসি সতীর্থের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি বলে জানিয়েছেন, ‘দেখুন, আমিও ফাইনালে খেলেছি। আমিও হেরে যেতে পারতাম। আমি তাঁর কাছে এ নিয়ে কিছু জানতে চাইনি। আসল কথা হচ্ছে, এমবাপ্পের সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং মানুষ যেটা ভাবে আমাদের সম্পর্ক তার ঠিক উল্টো।’
কয়েকদিন ধরেই পায়ের চোটে ভুগছিলেন জার্মানির গোলরক্ষক ও অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার। এ কারণে তাকে অনেকে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে ক্লাব ফুটবলে মন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি এখনই অবসর নিতে চান না, চোট থেকে সেরে উঠলে আবার জার্মানির জার্সি গায়ে মাঠে ফিরতে চান তিনি।
শুক্রবার জার্মান গণমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন ৩৬ বছর বয়সী নয়্যার। এ বিষয়ে হ্যান্সি ফ্লিকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জানান।
সাক্ষাৎকারে নয়্যার বলেছেন, ‘হ্যানসি ফ্লিকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তিনি ধরে নিয়েছেন চোট সেরে আমি ফিরব। আমি নিশ্চিতি আবারও মাঠে ফেরার বিষয়ে।’
কিছুদিন আগে পশ্চিম জার্মানির প্রাক্তন গোলরক্ষক টনি শুমাখার নয়্যারকে জাতীয় দল থেকে অবসরের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।