
দেশের তরমুজ উৎপাদনের সিংহভাগ আবাদ হয় দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। খেতে সুস্বাধু ও মিষ্টি হওয়ায় সারাদেশেই রয়েছে বরগুনার তরমুজের চাহিদা। সারাদেশে বরগুনার তরমুজের চাহিদাকে মাথায় রেখে এবছর বরগুনায় ব্যাপক তরমুজ আবাদ হয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবছর উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় লাভ নিয়ে শঙ্কিত বরগুনার কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবছর কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। এরমধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর ও আমতলী উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। প্রতিবছর জেলার আমতলী উপজেলায় বেশি তরমুজ আবাদ হলেও এবছর সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হয়েছে বরগুনায়।
কিন্তু, আবাদ বেশি হলেও গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আদৌ লাভ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। বরগুনার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবছর ১০০ গ্রাম তরমুজের বীজের দাম ছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এবছর সেই একই তরমুজের বীজের দাম প্রতি ১০০ গ্রামে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় এক হাজার টাকা। এবছর এক কৌটা (১০০ গ্রাম) বিগ ফ্যামিলি বীজ ৩ হাজার টাকা, জাগুয়া ৩ হাজার ২০০ টাকা ও এশিয়ান বীজ ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জ¦ালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষে বেশি খরচ হওয়ায় এবার তরমুজের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে করে আসলে কতটা লাভবান হবেন তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সবজায়গাতেই বীজতলা তৈরি হয়ে গেছে। এখন কর্মব্যস্ত সময় কাটছে বীজ বপণে। নারী-পুরুষ উভয়ে সমান তালে মাঠে বীজ বপণের কাজ করছেন। অনেকের ক্ষেতে বীজ বপণ শেষে বীজ লাগানো স্থানটিতে ওষুধ স্প্রে করছেন বিভিন্ন পোকামাকড়ের হাত থেকে বীজ রক্ষা করার জন্য। কিছু কিছু ক্ষেতে বীজ থেকে চারা ফুটছে।
বরগুনার তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি নাসির খান বলেন, গত বছরে ঘূর্ণিঝড় অশনির বৃষ্টিতে তরমুজ ক্ষেত ডুবে সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল। তারপরও এ বছর ১৬ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। এ বছর সবকিছুর দাম আরও বেড়েছে, তাই গত বছরের মতো লোকসানে পড়তে হয় কি না আল্লায় জানেন।
উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মাইঠা গ্রামের চাষি আল আমিন বলেন, এ বছর ৮০০ শতক জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। এতে তিন লাখ টাকা ব্যয় হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত কৃষকদের উৎপাদন নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এবছর জেলায় ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হলেও প্রায় দ্বিগুণ তরমুজ আবাদ হবে।
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার দুরমুঠ-নিলক্ষিয়া সড়কের ছয় কিলোমিটার নির্মাণকাজ মাঝপথে বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তাও নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে অনেক স্থানে নির্মাণ করা সড়ক ধসে গেছে। প্রায় সাড়ে তিন বছরেও সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে সড়কটি নির্মাণ করার জন্য ‘ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় দুরমুঠ থেকে নিলক্ষিয়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৮ টাকা। কাজটি পায় চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স। তবে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন। ২০২০ সালের ২৯ মার্চ সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। তিনবার মেয়াদ বাড়ানোর পর সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে।
জানা যায়, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার আওতায় এনেছে। ফলে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হবে জরিমানা। তারপরও কবে এই সড়কের কাজ শেষ হবে, জানে না কেউ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সংসদ সদস্যের হেঁয়ালিপনায় সড়কটি নির্মাণের কাজ খুবই ঢিমেতালে চলছিল। এখন তো পুরো কাজই বন্ধ রয়েছে। যেটুকু কাজ সম্পন্ন করেছে, সেটাও নিম্নমানের। কাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন স্থান ধসে পড়ছে। এই সড়কে গাইবান্ধা ইউনিয়নের লোকজন ইসলামপুর উপজেলা শহর ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াত করেন। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মহিষকুঁড়া গ্রামের আসমত আলী বলেন, ‘চানগঞ্জ নৌকাঘাট থেকে মহিষকুঁড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে বালু ও খোয়ার কাজ শেষ হয়েছিল। পরে কার্পেটিং করার জন্য সড়কে রোলারও করা হয়েছিল। ওই অবস্থায় রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৯ মাস থেকে লাপাত্তা। এখানে আমি এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি ফেলেছিলাম। এমপির লোকজন আমাকে দিয়ে মাটি ফেলায়। কিন্তু ৯ মাসেও আমার পাওনা টাকা দেওয়া হয়নি। প্রায় ২০ বার এমপির বাড়িতে গিয়েছি টাকার জন্য।’
এ বিষয়ে জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘কাজটি আমার নয়। এক ভদ্রলোক কাজটা চালাতে পারতেছে না। আমার নাম দেয়। তাও কাজ হইতেছে। সোয়া দুই কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। সরকার টাকা-পয়সা দেয় না। বাকি কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে টাকা দিতে বলেছি। দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ‘কোনো টাকা নেই, টাকা এলে পাবেন।’ তবে খুব দ্রুত সড়কের কাজটি শেষ হবে।’
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল হক বলেন, ‘কাজটির দুই কিলোমিটার কার্পেটিং শেষ হয়েছে। বাকি চার কিলোমিটার ম্যাকাডাম পর্যন্ত করা হয়েছে। মালামালের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে কাজটি করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সড়কের কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যা একটু ছিল তা সংশোধন করা হয়েছে’।
প্রতি বছরই শীতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয় আমাদের দেশ। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই শীতের অতিথি পাখিদের দেখা যায়। এর ব্যতিক্রম নয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপ-শহরের গোয়ালপাড়া, বাঘবেড় এলাকার লেকে প্রতি বছরই দেখা মেলে অতিথি পাখির। এখানে আসা অতিথি পাখিদের যাতে কেউ কোনো ক্ষতি না করতে পারে সেটি খেয়াল রাখেন স্থানীয়রা।
এ কারণে অতিথি পাখিরাও নির্বিঘে্ন এখানে প্রতি বছর পাড়ি জমায়। গোয়ালপাড়া ও বাঘবেড় এলাকার এ দুটি লেক যেন অতিথি পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা থেকে অতিথি পাখি দেখতে বাঘবেড় ও গোয়ালপাড়া এলাকায় এসে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা।
জানা গেছে, শীতকাল এলে শীতপ্রধান দেশের পাখিরা দেশ ভ্রমণে বের হয় বেঁচে থাকার জন্য। মূলত আমাদের দেশে আসে সাইবেরিয়া এবং হিমালয় অঞ্চলের পাখিরা। শীতকাল এলে ওইসব দেশের ভূভাগ ও জলাশয়গুলো বরফে ঢেকে যাওয়ায় সেখানকার পাখিরা, বিশেষ করে সেসব দেশের হাঁস, বক ইত্যাদি জলচর পাখি প্রয়োজনীয় খাবার পায় না। তখন তারা দেশান্তরী হতে শুরু করে। পাড়ি জমায় এমন দেশে যেখানে হাওর-বাঁওড়, নদী-নালার অভাব নেই, খাবারের সমস্যা নেই। এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নামটি উল্লেখযোগ্য। শীতটা কাটিয়ে আবার ওরা পাড়ি জমায় নিজ দেশে। এরই ভেতর পাখি-প্রেমিকরা মন ভরে দেখে নেয় তাদের।
তবে এক শ্রেণির লোভী শিকারির নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির অতিথি পাখি। এসব কারণে এদেশে আগের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কমে গেছে অতিথি পাখি আগমনের সংখ্যা। তবে অনেকটাই ব্যতিক্রম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বাঘবেড় ও গোয়ালপাড়া এলাকা। বাঘবেড় ও গোয়ালপাড়া এলাকায় অতিথিদের নিরাপদ আবাস্থল গড়ে উঠেছে।
ঘুরতে এসে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ রায়হান বলেন, অতিথি পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ ও উড়ে বেড়ানো দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেল।
অতিথি পাখি দেখতে আসা আলামিন জানান, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে। যে দেশে পাখি বেশি, সে দেশে পর্যটকের সংখ্যাও বেশি।
স্থানীয় যুবক রিপন মিয়া বলেন, বাড়ি লেকের পাশের হওয়ার কারণে শীতকালে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। ব্যাপারটি আমার মনে অনেক প্রশান্তি জোগায়। আমরা এলাকাবাসী পাখিগুলোকে দেখে রাখি। যাতে করে কেউ পাখিগুলোর ক্ষতি করতে না পারে। এ কারণে পাখিরাও আসে প্রতি বছর।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে রাতের আঁধারে একটি মৎস্য খামারে দুর্বৃত্তের বিষ প্রয়োগে বিপুল পরিমাণ মাছ মারা গেছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের নিচকাটা গ্রামের জহিরুল ইসলাম জসিমের মাছের খামারে এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার মাছ মারা গেছে বলে দাবি করেছেন ওই খামারি।
ক্ষতিগ্রস্ত খামারি জহিরুল ইসলাম জসিম বলেন, আমি দীর্ঘ ৩০ বছর মাছের খামার পরিচালনা করে আসছি। আমি খামার করেই কোনোরকম সংসার চালাই। কে বা কারা আমার ১ একর আয়তনের খামারের ছোট দুটি অংশে বিষপ্রয়োগ করেছে। এতে পুকুরে থাকা বিক্রি উপযোগী রুই, কাতল, মিরর কার্পসহ দেশীয় প্রজাতির প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার মাছ মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু এইবারই না আমার খামারে আরও একবার বিষ দিয়েছে। তখনো আমার অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এইবারও বড় ধরনের ক্ষতি করল। আমি এর বিচার চাই।’
রাঙ্গাবালী থানার ওসি (তদন্ত) সালাম মোল্লা বলেন, ‘এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জে অর্ধশতাধিক শ্যালো মেশিন ও গভীর নলকূপ দিয়ে (ডিপ টিউবওয়েল) ভূগর্ভস্থ থেকে বোরো ধানের ক্ষেতে সেচ বাণিজ্য চলছে। এর ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে বসতবাড়ির অগভীর নলকূপগুলোতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট ও বেশকিছু নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, শ্যালো মেশিনে ভূগর্ভ থেকে সেচ প্রদানে উপজেলা পরিষদ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার কথা থাকলেও তা কেউই মানছে না।
জানা গেছে, শ্যালো মেশিন ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে মাটির ৭০ ফুট থেকে ৩০০ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলনের মাধ্যমে সেচ দেওয়া হচ্ছে। শ্যালো মেশিন ও গভীর নলকূপের মালিকরা নিজেদের জমির পাশাপাশি কিয়ার প্রতি (৩৩ শতক) ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে সেচ প্রদান করছেন। ভূগর্ভ থেকে প্রতিনিয়ত পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নামতে শুরু করেছে। ফলে আশপাশের বসতবাড়ির অগভীর নলকূপগুলোতে বিশুদ্ধ পানি মিলছে না। কোনো কোনো নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার শমসেরনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ সতিঝির গ্রাম, মরাজানের পার, হাজীনগর গ্রাম, পতনউষার ইউনিয়নের মহেষপুর, শ্রীসূর্যসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে অসংখ্য শ্যালো মেশিন ও ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। এসব নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে আশপাশের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় বোরো ধানের ক্ষেতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে।
মরাজানের পার গ্রামের রুশনা বেগম, সালমা বেগম ও দক্ষিণ সতিঝির গ্রামের রাজু মিয়া জানান, গভীর নলকূপ ছাড়লেই টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা দেখা দেয়। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির নলকূপে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
শমসেরনগরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুর রহমান বলেন, ‘এখন বলতে গেলে ঘরে ঘরেই গভীর নলকূপ ও শ্যালো মেশি। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।’ কমলগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘শ্যালো মেশিনগুলোর বিষয়ে শিগগিরই তথ্য সংগ্রহ করব।’
পাটগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ওয়াজেদ আলীকে খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাটগ্রাম। ঘটনার পরদিন থেকে প্রতিদিনই চলছে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান এবং সড়ক অবরোধ।
পাটগ্রাম উপজেলাবাসী প্রতিদিন এসব কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় বাসায় যাওয়ার পথে ওয়াজেদ আলী দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক জেলা ডেপুটি কমান্ডার, পাটগ্রাম মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) ও ফাতেমা প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক ছিলেন।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।