
২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হারের দিক থেকে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে প্রথম স্থানে আছে কুমিল্লা বোর্ড। এই বোর্ডে মেয়েদের পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এবার কুমিল্লা বোর্ডের আওতাধীন ছয় জেলার ৪০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৫ হাজার ৮৮০ পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭৭ হাজার ৯০৭ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৯১ শিক্ষার্থী; যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছেন মেয়েরা। এই বোর্ডে ৯ হাজার ৩০৭ ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আর ৫ হাজার ৬৮৪ ছাত্র পেয়েছেন জিপিএ-৫।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে শতভাগ পাস করেছে ৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি।
গতকাল বুধবার দুপুরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জামাল নাসের বলেন, ‘এ ফলাফলে সন্তুষ্ট আমি।’
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮১ দশমিক ৬০। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২১ হাজার ৮৫৫ শিক্ষার্থী। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি গতবারের চেয়ে কমেছে। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষানিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বোর্ডে এ বছর শতভাগ পাস করেছে ৩১ কলেজের শিক্ষার্থীরা। শতভাগ ফেল করেছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯টি।
পরীক্ষানিয়ন্ত্রক বলেন, এবার বোর্ডে পাস করেছে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৫ জন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে ছাত্রীরা। ছাত্রীদের পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ ভাগ। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ১১ হাজার ৯৫৭। আর জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র ৯ হাজার ৮৯৮ জন।
আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বোর্ডের আওতায় বিভাগের আট জেলায় এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৪২৩ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ জন।
বিভাগ সেরা রাজশাহী জেলা
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সেরা হয়েছে রাজশাহী জেলা। পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাপ্তির দিক থেকে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে ভালো ফল করেছে রাজশাহী জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজশাহী জেলায় পাস করেছে ২১ হাজার ৭০৯ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৬২৪ জন, পাসের হার ৮৭ দশমিক ৭৩। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাস করেছে ৭ হাজার ৫৯৩ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৪১ জন। পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩৩।
নাটোরে পাস করেছে ৮ হাজার ৭৫৪ জন। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪২৭ জন। পাসের হার ৮০ দশমিক ২৩। নওগাঁয় পাস করেছে ৯ হাজার ১১২ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ১০৪ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৮১।
পাবনায় পাস করেছেন ১৩ হাজার ৭৩৪ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ১০৫ জন। পাসের হার ৮০ দশমিক ০৬। সিরাজগঞ্জে পাস করেছে ১৭ হাজার ৪৮৭ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৮৩৩ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮৫।
বগুড়ায় পাস করেছে ২০ হাজার ৭৯১ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ১০৪ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৬৬। জয়পুরহাটে পাস করেছে ৪ হাজার ২০৫ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬১৭ জন। পাসের হার ৭২ দশমিক ৮৩।
৯ কলেজে শতভাগ ফেল
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থী পাস করেননি। এই ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ২৭ শিক্ষার্থী।
শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকার মধ্যে রয়েছে, রাজশাহী, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁর একটি করে এবং বগুড়ার দুটি ও নাটোরের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই এবারের আলিম পরীক্ষায় হাবিব জিপিএ ৪.৫৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি অদম্য হাবিবকে।
হাবিবুর রহমান হাবিবের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালী গ্রামে। কৃষক আব্দুস সামাদের চার সন্তানের মধ্যে হাবিব তৃতীয়। হাবিব এ বছর পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশ নেন।
জানা যায়, জন্ম থেকেই হাবিবের দুই হাত নেই। ছোটবেলায় বাড়ির পাশের সমবয়সী সবার বিদ্যালয়ে যেতে দেখে হাবিব তাদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যেতেন। কিন্তু হাত না থাকায় পড়তে পারলেও লিখতে পারতেন না। তখন মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের কথায় হাবিব পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকেন।
এভাবে নিজের গ্রামের হিমায়েতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৬৭ পেয়ে পিইসি পাস করেন। পিইসি পাসের পর ভর্তি হন বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায়। মাদ্রাসাটি থেকে জেডিসি পরীক্ষায় হাবিব জিপিএ ৪.৬১ এবং ২০১৯ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে পাস করেন।
হাবিব বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। কারণ আমার বন্ধুরাও আমাকে পড়ালেখার শুরু থেকে অনেক সাহায্য করে। ব্যাগ থেকে বই বের করে দেওয়া, কলমের মাথা খুলে দেওয়াসহ নানাভাবে ওরা আমাকে সাহায্য করে এসেছে। শিক্ষক এবং পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। এ রেজাল্টে আমি অনেক খুশি। আমি একজন বড় আলেম হতে চাই।’
হাবিবের মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। হাবিব নিজে যখন রোজগার করা শিখবে, তখন আমি শান্তি পাব।’
পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাইদ আহম্মেদ বলেন, হাবিব অনেক পরিশ্রমী আর সংগ্রামী ছেলে। দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে হাবিবের এ রেজাল্ট অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা।
দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে। এ বছর এই বোর্ডে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। একই সঙ্গে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। তবে গত বছরের তুলনায় অকৃতকার্য কলেজের সংখ্যা বেড়েছে। এই বোর্ডে এবার ১৩টি কলেজে কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেননি।
গতকাল বুধবার দুপুরে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছর এইচএসসিতে পাসের হার ৭৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৬৭১টি কলেজ থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৯৩ জন পরীক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেন ৯৯ হাজার ৭০৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৮৪৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১১ হাজার ৮৩০ জন। এর মধ্যে ৬ হাজার ২৫৫ জন ছাত্রী ও ৫ হাজার ৫৭৫ জন ছাত্র। গত বছর এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৩৪৯ জন শিক্ষার্থী। সে তুলনায় চলতি বছর জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা কমেছে ৩ হাজার ৫১৯।
জানা গেছে, গত বছর এই বোর্ডে অকৃতকার্য কলেজের সংখ্যা ছিল দুটি। তবে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩টিতে। এই ১৩টি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মাত্র ৬৫ জন।
কলেজগুলো হলো ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার গগড় কলেজ (১৩ জন), ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর মহিলা কলেজ (১১ জন), কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সিংগার ডাবরিরহাট বিএল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (৭ জন), পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ তমিজ উদ্দীন কলেজ (৭ জন), পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মারেয়া মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (৭ জন), লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার নাসির উদ্দীন কলেজ (৬ জন), একই জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দুহুলা এসসি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (৪ জন), নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চৌধুরীরানী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (৩ জন), দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সনকা আদর্শ কলেজ (৩ জন), গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা মহিলা কলেজ (১ জন), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া মহিলা কলেজ (১ জন), দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (১ জন) ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পীরগঞ্জ কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১ জন)।
এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৭০৩ জন। বোর্ডে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তি গত বছরের চেয়ে কমেছে। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২০ হাজার ৮৭৮ শিক্ষার্থী।
গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যশোর বোর্ডের ফলাফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সমীর কুমার কুন্ডু।
সমীর কুমার কু-ু বলেন, গত বছর তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫-এর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এবার সব বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ায় ফলাফল একটু খারাপ হয়েছে।
নীলফামারীর ডিমলায় মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে চার সন্তানের জননী মারুফা পাস করলেও ফেল করেছেন তার মেয়ে। মা মারুফা ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেন। গতকাল বুধবার ফল প্রকাশিত ফলে তিনি জিপিএ ৪ দশমিক ৩৮ পান। আর মেয়ে একই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অকৃতকার্য হয়েছেন।
২০২২ সালের ৬ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলে মা ও মেয়ে এক সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছেন এ নিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তরের শেষের পাতায় ‘এইচএসসি পরীক্ষায় মা-মেয়ে’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়।
ডিমলার শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, মা মারুফা একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয়। তিনি সেটা প্রমাণ করে দিলেন। মারুফা আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।
সূত্র মতে, ২০০৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মারুফা। কিন্তু পরীক্ষার আগেই পরিবার থেকে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। তারপর কেটে গেছে ১৫ বছর। একে একে জন্ম হয় দুই ছেলে ও দুই মেয়ের। এরপর ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন তিনি। এবার মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন।
মারুফার পাসের খবরে দারুণ খুশি পরিবারের সবাই। মারুফার বাবার বাড়ি উপজেলার নাউতারা গ্রামে। বিয়ে হয় একই উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যাঝার গ্রামের সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। স্বামী পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।
মারুফা আক্তার জানান, মেয়ে উত্তীর্ণ না হওয়ায় মন খারাপ তার।
মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম গর্ব করে বলেন, আমার একটু কষ্ট হলেও আমি স্ত্রীর ইচ্ছের মর্যাদা দিয়েছি। বেশ আনন্দ অনুভব করছি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।