
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মধ্যকুল রাজবংশীপাড়া এলাকায় হরিহর নদের বুকে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কর্মহীন হয়ে পড়া মৎস্যজীবী প্রায় ২০টি পরিবার। শ্যাওলায় আবদ্ধ নদে মাছ ধরতে ব্যর্থ হয়ে এখন তারা সেখানেই ভাসমান সবজি চাষ করছেন।
উপজেলার মধ্যকুল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস জানান, হরিহর নদ শ্যাওলায় পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। এ কারণে নদের তীরবর্তী মধ্যকুল রাজবংশীপাড়ার জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় হরিহর নদের শ্যাওলাকে কাজে লাগিয়ে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কৃষি বিভাগ ভাসমান বেডে সবজি চাষের ওপর মধ্যকুল রাজবংশীপাড়ার শতাধিক কৃষক-কৃষাণিকে প্রশিক্ষণ দেয়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকরা নদের শ্যাওলা প্রথমে স্তূপ করে রাখেন। শ্যাওলা পচে বেড তৈরি হলে তার ওপর দেওয়া হয় ভার্মি কম্পোস্ট। এরপর সবজির বীজ বপন করা হয়। প্রত্যেক কৃষক ৩৬টি ধাপ তৈরি করে তার ওপর সবজি চাষ করেছেন। পযার্য়ক্রমে আরও সবজি বেড তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে।
শ্যাওলা দিয়ে তৈরি ওই ধাপে চাষ করা হয়েছে লাল শাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া, কচুশাক, পেঁয়াজ, রসুন এবং তার উপর মাচা করে লাউ ও চাল কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। তাদের সবজি ক্ষেত পরিচর্যা করার করার জন্য দুটি নৌকা দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষক নীল রতন বিশ্বাস জানান, সংসারের প্রয়োজন মিটিয়েও অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কর্মহীন হয়ে পড়া জেলে পরিবারের সদস্য মধ্যকুল রাজবংশীপাড়ার পারুল বিশ্বাস জানান, তিনি ওই নদে তিনটি ভাসমান বেড করেছেন। যার ওপর লালশাক, সবুজশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক এবং ভাসমান বেডের ওপর মাচা করে লাউ ও চাল কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। এতে তিনি সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাকি সবজি বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, যাদের কৃষিজমি নেই তারা এই পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করলে লাভবান হবেন। কোনো প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই তারা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। মধ্যকুল রাজবংশীপাড়ায় হরিহর নদের বুকে সবজি আবাদের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
লিচু উৎপাদনে দেশের অন্যতম জেলা দিনাজপুর। এ জেলায় উৎপাদিত লিচু দেশ ও বিদেশে সরবরাহ করা হয়। লিচুগাছে মুকুলের শিষ বের হওয়ার সময় চলছে এখন। কিন্তু দিনাজপুরের অধিকাংশ লিচুগাছে মুকুলের শিষের পরিবর্তে নতুন পাতা বের হয়েছে, যা কৃষকদের ভাবিয়ে তুলছে। কারণ নতুন পাতা বের হলে ওই গাছে লিচু ধরবে না। অনেক চাষি বাধ্য হয়ে বিষ দিয়ে নতুন পাতা পুড়িয়ে ফেলছেন। তাদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে গাছগুলোতে মুকুলের শিষ আসার পরিবর্তে নতুন পাতা বের হলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। এমনকি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ দেওয়ার জন্য মাঠে পর্যন্ত যান না কর্মকর্তারা। ফলে এ বছর নতুন পাতা বের হওয়ার হার অনেক বেড়েছে। চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, কৃষকদের সমস্যা সমাধানে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এই জেলায় ৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমি থেকে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর আবাদ হচ্ছে ৫ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে। ১৩ হাজার ৯৯১টি বাগানে এসব লিচুর আবাদ হচ্ছে।
জেলা সদরের পুলহাট, মাশিমপুর, শিকদারহাট, সৈয়দপুর, উলিপুর গ্রামে সবচেয়ে বেশি লিচুর ফলন হয়। সরেজমিনে এসব এলাকার কয়েকটি লিচুবাগান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ গাছে মুকুলের শিষ বের হওয়ার পরিবর্তে নতুন পাতা বের হচ্ছে। সৈয়দপুর গ্রামের চাষি সাইদুর রহমান নিজের বাগানের নতুন পাতা বিষ প্রয়োগ করে পুড়িয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাগানে মোট ৮০টি বেদেনা লিচুর গাছ রয়েছে। বাগানের অধিকাংশ গাছে বর্তমানে নতুন পাতার কুশি বের হচ্ছে। তাই আমি আমার বাগানে গবেষণা চালাচ্ছি। গাছের নতুন পাতা নষ্ট করার জন্য একটা ওষুধ ব্যবহার করেছি। এতে কুশি পুড়ে গেছে। এখন এরপর যদি মুকুলের শিষ বের হয়। মুকুল হলে লিচু ধরার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা এত সমস্যার মধ্যে আছি, কিন্তু কৃষি কর্মকর্তারা কোনো দিন আমাদের কাছে আসে নাই। তারা কী ধরনের কাজ করে, তাও আমরা জানি না।’
দক্ষিণ উলিপুর গ্রামের চাষি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘নতুন পাতার কারণে আমরা চিন্তায় পড়ে গেছি। কারণ নতুন পাতায় লিচুর মুকুল বা লিচু ধরে না। আমি বাগানের পাশাপাশি এই এলাকার বেশ কয়েকটি লিচুবাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। প্রতিটি বাগানের একই অবস্থা। অনেক টাকা দিয়ে বাগান নিয়েছি। ফল না পেলে অনেক ক্ষতি হবে।’
একই এলাকার চাষি আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে পাট, গম, ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের গবেষণাগার স্থাপন করা হলেও লিচুর গবেষণাগার স্থাপন করা হয়নি। অবিলম্বে দেশে লিচু গবেষণাগার স্থাপনের দাবি জানাই।’
উদ্ভিদবিদ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে দিনাজপুরের লিচুর বাগানগুলোতে ক্রমাগতভাবে ফলন কমে আসছে। এটা যে বৈশি^ক জলবায়ুর প্রভাব তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে আসছে। এটি ক্রমাগত আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করতে হবে।’
দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘এ বছর দিনাজপুরে বৃষ্টিপাত খুব কম হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় লিচুর মুকুলের পরিবর্তে নতুন কুশি বের হচ্ছে বেশি। তাই এ বছর লিচুর ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও আমরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
তিন দশকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ঘনত্ব অনেক কমে গেছে। দুই দশক আগেও শুষ্ক মৌসুমে বনের ভেতরের ছড়া ও জলাধারে পানি থাকত। বনের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় এখন শুষ্ক মৌসুমে ছড়াগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে বন্য প্রাণীরা পানির সংকটে পড়ছে। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজিসমৃদ্ধ লাউয়াছড়া উদ্যানে অনেক গাছ ক্রমান্বয়ে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে বনের ছড়া শুকিয়ে বন্যপ্রাণীর খাওয়ার পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও খাবারের জোগান না থাকার কারণে প্রাণীগুলো লোকালয়ে বেরিয়ে বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুমুখে পড়ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, লাউয়াছড়ার প্রবেশমুখের ছড়াটিতে পানি নেই। ছড়ার আয়তন ছোট হয়ে পানি কমে তলদেশের বালু দেখা যাচ্ছে। পাশের আরেকটি ছড়ারও একই অবস্থা। কালভার্টের তলা ভেসে উঠেছে। বন্যপ্রাণীরা খাবার পানি না পেয়ে গাছের পাতা চিবাচ্ছে। স্থানীয় বনকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, গত কয়েক দশকে লাউয়াছড়া বনের ঘনত্ব অনেকটা কমেছে। শুষ্ক মৌসুমে বনের ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় জলজ প্রাণীরাও সংকটে রয়েছে। বিরল প্রজাতির ব্যাঙ, সাপ, হরিণ, মেছোবিড়াল, বন্য শূকরও ছড়ার ওপর নির্ভরশীল। ছড়া থেকে তারা পানি পান করত। কিন্তু বর্তমানে পানিসংকটে ওই সব প্রাণী বন ছেড়ে লোকালয়ে যাচ্ছে।
লাউয়াছড়া উদ্যানের ফটকের কাছের কয়েকজন দোকানদার এবং লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারচিয়াং বলেন, ‘বছর দশেক আগেও শুকনো মৌসুমে বনের ভেতরের ছড়া ও খালে পানি থাকত। এখন পানি নেই। বনের ভেতরের ছড়ার কিছু কিছু স্থান খনন করে পানির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’
বন্য প্রাণীর খাওয়ার পানি সংকটের কথা স্বীকার করেছেন লাউয়াছড়া বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যায়। তা ছাড়া ১০-১৫ বছরে বনে গাছের ঘনত্ব কমেছে। ফলে সূর্যের তাপ বেশি পাওয়ায় পানি শুকিয়ে যায়। এ মৌসুমে ছড়ায় বন্য প্রাণীর জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।’
তবে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লাউয়াছড়ায় পানির জন্য জলাধার তৈরির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বনের ভেতরের ছড়াটি খনন করে বড় করা হলে বন্যপ্রাণীর জন্য সমস্যা হবে। তাই বর্তমানে যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। আর ছড়ার কিছু কিছু স্থানে যে পরিমাণ পানি আছে, তাতে বন্যপ্রাণীর সমস্যা হবে না।’
নাটোরের বড়াইগ্রামে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বহিরাগতদের হামলায় শিক্ষক ও অভিভাবকসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতদের মধ্যে দুজনকে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষে বিকেলে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় ওই গ্রামের গোলাম মাসুদ ও সজীবের নেতৃত্বে বহিরাগত কয়েক যুবক অনুষ্ঠানে বিঘœ সৃষ্টি করে। পরে স্কুলের সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল হোসেন তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে তারা পুনরায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অনুষ্ঠানে হামলা করলে পাঁচজন আহত হন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক শামীম আহমেদকে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বড়াইগ্রাম থানার ওসি আবু সিদ্দিক বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যশোরের শার্শায় নিখোঁজের পাঁচ দিন পর সেফটিক ট্যাংক থেকে জেসমিন আক্তার পিংকি (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদ থেকে পাঁচ দিন আগে নিখোঁজ এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে ঘটনা দুটি ঘটে।
শার্শার বুরুজবাগান এলাকায় সহপাঠী আহসান কবির অংকুরের (২০) বাসার সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে গতকাল বেলা ৩টার দিকে কলেজছাত্রী জেসমিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জেসমিন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাউরিয়া কেরালকেতা গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে। তিনি যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। জেসমিনকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সহপাঠী অংকুরকে আটক করেছে র্যাব।
সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) নিশাদ আল-নাহিয়ান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রেমের সম্পর্ক ধরে জেসমিনকে এখানে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হয়।’
এদিকে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বরযাত্রীর সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে দুধকুমার নদে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া বাবুল মিয়ার (২২) মরদেহ পাঁচ দিন পর গতকাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নদের সামাদের ঘাট এলাকায় লাশটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। বাবুল উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের মাওলানাপাড়ার আনিছ আলীর ছেলে।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফুপাতো ভাইয়ের বিয়েতে বরযাত্রীর সঙ্গে নৌকায় ফেরার পথে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে নদে ঝাঁপ দিয়ে তিনি নিখোঁজ হন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার নোয়াপাড়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর একরাম হোসেন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. হেলালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গতকাল বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, ২০১৫ সালে লুডু খেলাকে কেন্দ্র করে তুচ্ছ ঘটনার জেরে একরাম হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে হেলালসহ তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় করা মামলায় আদালত হেলালের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা ও ১০ হাজার টাকা অর্থদ-ের রায় ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে র্যাব-৩-এর সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।