
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চত্বরে গতকাল সোমবার দিনব্যাপী পিঠা উৎসব, বসন্ত মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় হরেক রকমের পিঠা-পুলি পসরা আর পিঠাপ্রিয় মানুষের সমাগমে সরগরম হয়ে ওঠে চত্বর।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত পিঠা উৎসবে ইউএনও মোসা. মারিয়াম খাতুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কেএম জাকির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন বক্তব্য দেন।
ময়মনসিংহের ভালুকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন বিভাগের প্রায় ৫ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামে পাকা সড়কের পাশের ওই জমির মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বন বিভাগের স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই ওই প্রতিষ্ঠান বনের জমি দখল করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শাখা সড়ক সিসটুর-সখিপুর সড়ক লাগোয়া পাড়াগাঁও মৌজার ৪৮৩ নম্বর দাগে বন বিভাগের ওই জমির অবস্থান। ডিবিএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘তফুরি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড’ এর সাইনবোর্ড টাঙিয়ে প্রায় ৫ একর জমি জবরদখল করা হয়েছে।
কাদিগড় বিটের বিট কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাড়াগাঁও মৌজায় ৪৮৩ দাগে মোট ১২ একর ৯০ শতাংশ জমির মধ্যে বন বিভাগের ৬ একর ৯০ শতাংশ। এরমধ্যে প্রায় ৫ একর জমি ডিবিএল গ্রুপ দখলের চেষ্টা করছে। ইতিপূর্বে বনের জমিতে কাজ করার সময় ওই গ্রুপের একজনকে আটক করে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের পাশজুড়ে পিলার পুঁতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভেতরে নির্মাণ কাজ করার জন্য লোহার অ্যাংগেল ঢালাই করে বসানো হয়েছে আরও উঁচু করে আবদ্ধ বেড়া দেওয়ার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবিএল গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হবিরবাড়ী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রইছ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেই আমরা বনের জমিতে নির্মাণ কাজ করছি।’
স্থানীয় শাহাব উদ্দিন, জাফর ও নয়ন ছামাদসহ আরও কয়েকজন অভিযোগ করেন, তাদের এলাকায় জমির কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও বন বিভাগকে টাকা না দিয়ে একটি বাড়িঘর করতে পারেন না। অথচ বনের কোটি কোটি টাকার জমি দখল হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, স্থানীয়রা নিজেদের জমিতে বাড়িঘর তুলতে গেলে সেই জমি বনের দাবি করে মারপিট ও ভাঙচুরের অভিযোগে হবিরবাড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা রইছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে জমির মালিকরা। এরমধ্যে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ সিনিয়র আদালতে একটি ও ভালুকা মডেল থানায় একটি। একটি মামলা শিল্প পুলিশ জোন-৫ এর ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামান তদন্ত করছেন, অপরটি তদন্ত করছে থানা-পুলিশ।
জানতে চাইলে হবিরবাড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন মামলার কথা স্বীকার করলেও বনের জমি দখলে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘বনের জমিতে নির্মাণ কাজ শুরু করলে লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ডিবিএল গ্রুপের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জামান বলেন, ‘বনের সঙ্গে ঝামেলা রয়েছে। তবে আমি জমির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না’ বলেই ফোন কেটে দেন। পরে আর তিনি ফোন ধরেননি।
ময়মনসিংহের সহকারী বনসংরক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ডিবিএল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান তফুরি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড যে বেড়া দিয়েছে তা সরিয়ে নিতে বলেছি। পাশাপাশি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে রাতের আঁধারে বাড়িঘর ও ফসলি জমি থেকে সেচের টিউবওয়েল (নলকূপ) ও শ্যালো পাম্প মেশিন চুরির হিড়িক পড়েছে। জেলার সিরাজদীখান উপজেলার বয়রাগাদি ইউনিয়নের বাহেরঘাটা ও উত্তর গোবরদী গ্রামে অহরহ এ চুরি হচ্ছে। গেল একমাসে গ্রাম দুটিতে অন্তত ৫০টি টিউবওয়েল ও শ্যালো পাম্প মেশিন চুরির খবর পাওয়া গেছে। দিনের পর দিন চোরের এমন উপদ্রবে আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাহেরঘাটা কবরস্থান ও মন্দিরের টিউবওয়েল চুরি হয় সম্প্রতি। রাতের আঁধারে চোর চক্র বাহেরঘাটা গ্রামের মজিদ বেপারী, রুবেল হাওলাদার, মোতালেব তালুকদার, ইউপি সদস্য ইয়াসিন শেখের বাড়ির টিউবওয়েল খুলে নিয়ে গেছে।
তাছাড়া ওই ইউপি সদস্যের জমিতে সেচ কাজে ব্যবহৃত শ্যালো পাম্পের মেশিন, জয়নাল দেওয়ান, কাদির শেখের জমির সেচের পাম্প মেশিন চুরি হয়েছে। আবার গোবরদী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের বাড়ির টিউবওয়েল খোয়া গেছে।
বয়রাগাদি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তন্ময় ইসলাম স্বপন বলেন, একটি টিউবওয়েল ও শ্যালো পাম্প মেশিনের মাধ্যমে উত্তর বাহেরঘাটা গ্রামের বিস্তীর্ণ জমিতে সেচ দেওয়া হতো। রাতের আঁধারে চোরের দল ওই টিউবওয়েল ও পাম্প মেশিন চুরি করে নিয়ে যায়। এতে সেচ কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকরা।
একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইয়াসিন শেখ বলেন, আমার ও ছোট ভাইয়ের টিউবওয়েল ও পাম্প মেশিন চুরি হয়েছে।
বয়রাগাদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাবিবুর রহমান সোহাগ বলেন, আমার ইউনিয়নে এক মাসে অসংখ্য বাড়ি ও জমি থেকে টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিন নিয়ে গেছে চোরের দল। এখনই চোর শনাক্ত করে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জনগণের নিরাপত্তা ভেঙে পড়বে।
সিরাজদীখান থানার ওসি একেএম মিজানুল হক বলেন, ছিঁচকে চোরের উপদ্রব বেড়েছে। পুলিশ চোর ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চোর শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে রাতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চিকনদ-ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান জামান বাচ্চুর বিরুদ্ধে একটি বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগে আদালতে মামলার আবেদন করেছে স্থানীয় খন্দকিয়া ছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কমিটির সভাপতি এসএম শওকত ওসমান এ মামলার আবেদন করলেও বিষয়টি এখন জানাজানি হয়। আদালত মামলার আবেদন আমলে নিয়ে অভিযোগের তদন্ত করে আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য গত ২৮ জানুয়ারি চেয়ারম্যান হাসান জামান বাচ্চুর কাছে একটি আবেদন করেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি। কিন্তু সহযোগিতা না করে রহস্যজনক আচরণ করতে থাকেন চেয়ারম্যান বাচ্চু। ১৩ জানুয়ারি পুনরায় তার দপ্তরে গেলে বাদীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন চেয়ারম্যান বাচ্চু।
অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান হাসান জামান বাচ্চু বলেন, স্কুল পরিচালনা পর্ষদ যে জায়গায় শহীদ মিনার করতে চাচ্ছে সেটি চিকনদ-ী ইউনিয়ন পরিষদের নামে খতিয়ান সৃজিত। তবে স্থানীয় কিছু লোক জায়গাটির মালিকানা দাবি করছেন। তারা ‘ভুল জরিপ’ সংশোধনের জন্য আদালতে মামলাও করেছেন। আমি স্কুল পরিচালনা পর্ষদকে বলেছি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এখানে শহীদ মিনার করা যাবে না। এ কথা বলায় পর্ষদের সভাপতি আমার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মিথ্যা অভিযোগে মামলার আবেদন করেছেন।
বগুড়ায় পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে হত্যা ও লাশ গুমের দায়ে দুজনকে মৃত্যুদন্ড ও একজনের যাবজ্জীবন, রাজবাড়ীতে কলেজছাত্রীকে হত্যায় দ্বিতীয় পক্ষের মা ও তার প্রেমিককে যাবজ্জীবন এবং খুলনায় চিকিৎসককে খুনের অভিযোগে রোগীর দুই স্বজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার এসব রায় দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
বগুড়া : ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট বগুড়ায় পারিবারিক শত্রুতার জেরে শিশু রোমানকে (৫) হত্যার পর লাশ গুম করা হয়। এ ঘটনায় আদালত দুজনের মৃত্যুদন্ডও একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডদিয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন শাজাহানপুরের ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের আব্দুল খালেক ও চোপিনগর দক্ষিণ পাড়ার আব্দুল মাজেদ। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আব্দুর রাজ্জাক একই গ্রামের বাসিন্দা। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুজনই পলাতক। রোমান চোপিনগর এলাকার মাহবুব রহমানের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রোমানের দাদার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসামি খালেক ও মাজেদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ ছাড়া নিহতের পরিবারের সঙ্গে তাদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধও ছিল। এসব বিরোধের জেরে প্রতিশোধ নিতে খালেক ও মাজেদ রোমানকে রাজ্জাকের মাধ্যমে চকলেটের লোভ দেখিয়ে এনে হত্যা করে লাশ গুম করেন।
রাজবাড়ী : কলেজছাত্রীকে হত্যার দায়ে দ্বিতীয় পক্ষের মা এবং তার প্রেমিককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন এ রায় ঘোষণা করেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন হাফশিয়া বেগম (৪০) ও তার প্রেমিক খোরশেদ মোল্লা (৫০)। মামলা সূত্রে জানা যায়, মাটিপাড়ার আজগর আলী সরদারের প্রথম স্ত্রী মারা গেলে হাফশিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। আজগরের আগের স্ত্রীর এক মেয়ে ছিল। বিয়ের পর হাফশিয়া বেগম প্রতিবেশী খোরশেদের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি আজগরের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে মর্জিনা দেখতে পেয়ে বাবাকে বলে দেওয়ার কথা বলে। এতে ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর হাফশিয়া ও তার প্রেমিক খোরশেদ বালিশচাপা দিয়ে মর্জিনাকে হত্যা করেন।
খুলনা : ডা. আব্দুর রকিব খান হত্যা মামলায় আদালত দুজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। গতকাল খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ রায় ঘোষণা করেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন জমির আলী শেখ ও আব্দুল কুদ্দুস।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৪ জুন খুলনা মহানগরীর গল্লামারী এলাকায় অবস্থিত রাইসা ক্লিনিকে এক নারীর সিজার অপারেশনের পর মারা গেলে দ-প্রাপ্তরা ওই হাসপাতালে হামলা চালান। এর দুদিন পর শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. রকিব খান।
রাজবাড়ীর পাংশায় নিখোঁজের দুই দিন পর আকাশ মোল্লা (১০) নামে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার সকালে উপজলার হাবাসপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরের একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
আকাশ মোল্লা একই উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের নাসির মোল্লার ছেলে। সে সেনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
স্বজন ও পাংশা থানা সূত্র জানায়, আকাশ মোল্লা তার বাবা-মাসহ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সেনগ্রামে নানাবাড়িতে থাকত। গত শনিবার বিকেলে বাবার ভ্যান নিয়ে সে বাইরে বের হয়। রাতে বাসায় না ফেরায় অনেক খোঁজ করেও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় রবিবার আকাশের বাবা থানায় অভিযোগ করেন। সোমবার সকালে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে পদ্মার চরের একটি ভুট্টাক্ষেতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহটি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
পাংশা থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভ্যানটি ছিনতাই করার জন্য আকাশকে হত্যা করা হয়েছে। দ্রুত হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার বাসায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হাজার হাজার সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী আসছেন তার ছয়দানার বাসায়। শনিবারও সেখানে ফুল আর মিষ্টির ছড়াছড়ি। মানুষের ভালোবাসার জবাব দিচ্ছেন নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
তবে এত উচ্ছ্বাসের মধ্যেও আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীরের শিবিরে অস্বস্তি আছে। কারণ তার সহযোগীরা মূল আওয়ামী লীগের। দলের প্রার্থী হেরে যাওয়ার পর পদ-পদবি পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বাস ভবনে বিরাজ করছে নীরবতা। নেতাকর্মীদের কোনো আনাগোনা নেই।
শনিবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তার মায়ের নির্বাচনে কাজ করা কর্মী ও সমর্থকরা দল বেঁধে তার বাস ভবনে আসছেন। অনেকের হাতে ফুল ও মিষ্টি। তারা মেয়র জায়েদা খাতুনের বাস ভবনের নিচতলা, দোতলা, তিনতলা ও বাড়ির প্রাঙ্গণে ভিড় করে আছেন। কিছুক্ষণ পরপর জায়েদা খাতুন বের হয়ে এসে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শুভেচ্ছার জবাব দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীর আলম তার কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ সৃষ্টি করা যাবে না। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করব।
জাহাঙ্গীর আলমের সান্নিধ্যে থেকে এবং তার মায়ের নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে অনেক নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছেন। কাউকে কাউকে শোকজ করা হয়েছে। তারা এখন কিছুটা উজ্জীবিত হলেও তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটা শঙ্কার মধ্যে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সালনা এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম যখন দলের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তখন আমিসহ প্রায় সব নেতাকর্মীই তার সঙ্গে ছিলাম। তিনি দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর তার কাছ থেকে অনেকে চলে গেছে আবার অনেকে গোপনে বা প্রকাশ্যে সম্পর্ক রেখেছে। এখন মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাকি আছে। এই কমিটিতে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে তারা কোনো পদ-পদবি পাবেন কি না, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এছাড়া মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচন অনেকে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। আবার বেশিরভাগ গোপনে তার পক্ষে কাজ করেছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা বেশ চিন্তায় আছি।
তিনি মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেবেন না। কারণ জাহাঙ্গীর ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে ওই আওয়ামী লীগ নেতা আশা প্রকাশ করেন, যেহেতু জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন তার ছেলের জনপ্রিয়তার কারণেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, সেহেতু তার জনপ্রিয়তা দেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর আলমকে ফের দলে ফিরিয়ে নেবেন; যা দলের অনেক নেতাকর্মীই বিশ্বাস করেন।
অন্যদিকে টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, আজমত উল্লা খান মেয়র মনোনয়ন পাওয়ার পর অনেকে ধরে নিয়েছিলেন বিজয় নিশ্চিত। নেতাকর্মীদের মাঝেও ছিল এমন আত্মবিশ্বাস। কিন্তু নির্বাচন শেষে ফলাফল দেখে সবাই হতবাক। তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাদের এমন ফল বিপর্যয় হবে। তিনি জানান, দুপুরের দিকে গিয়ে তিনি জানতে পারেন আজমত উল্লা খান বাসায় নেই। কোনো নেতাকর্মীকেও দেখতে পাননি।
জয়দেবপুর এলাকার আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, গাজীপুরের ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের একটিতেও কোনো কর্মীর বুকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের ব্যাজ ছিল না। কেন্দ্রগুলোতে কোনো এজেন্ট না থাকার পরও ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তায় অপরিচিত এক নারী আওয়ামী লীগের বাঘা প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন, যা আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা বলেন, তারা সবকিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রের কেন্দ্র কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি, থানা কমিটিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে তাদের এলাকায় নৌকা প্রতীকের ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইব। তার পর এ বিষয়ে কী করণীয় তা নিয়ে দলের মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এগিয়ে যাব। এখন সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দলের জন্য চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা খানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের কী ভুলত্রুটি ছিল, নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী ছিল, এসব বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। উপযুক্ত সময়ে আমরা সব বিষয়ে কথা বলব।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।