
ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা দেশে পালিত হয়েছে জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গতকাল মঙ্গলবার দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি অফিস। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মসূচির মধ্যে ছিল শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রভাতফেরি, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং দোয়া ও মোনাজাত। আলোচনা সভায় বক্তারা সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে ভাষাকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে বাংলা ভাষার ওপর আগ্রাসনের চেষ্টা হলে তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকার বাইরের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন :
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠের শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই ফুল হাতে মানুষের ঢল নামে। এদিন সবার আগে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আমিনুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গাজীপুর : প্রথম প্রহরে গাজীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। পরে আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা হয় এবং দুপুরে নগরীর নলজানী এলাকায় ভাষাশহীদ বরকতের মায়ের কবর জিয়ারত, দোয়া ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ডুয়েট পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে।
রাজশাহী : প্রথম প্রহরে রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ। মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ভুবনমোহন পার্কের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর একে একে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
খুলনা : প্রথম প্রহরে নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর কমান্ড, কেসিসির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, কেএমপির পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকালে নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের আয়োজনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
ঠাকুরগাঁও : প্রথম প্রহরে ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। এরপর পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
সিরাজগঞ্জ : মঙ্গলবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ছিল প্রভাতফেরি, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ম-ল।
ঝিনাইদহ : প্রথম প্রহরে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খালেদা খানম, জেলা প্রশাসক প্রশাসক মনিরা বেগম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রথীন্দ্রনাথ রায়। পরে পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সরকারি, বেসরকারি নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকালে শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রভাতফেরির আয়োজন করা হয়।
জামালপুর : প্রথম প্রহরে জামালপুর পৌর শহরের দয়াময়ী মোড়ে শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন, জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায়, পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ। পরে সকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
টাঙ্গাইল : সকালে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ছানোয়ার হোসেন এমপি, জোয়াহের ইসলাম জোয়াহের এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, খান আহমেদ শুভ এমপি, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার প্রমুখ। পরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনসাধারণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
নীলফামারী : প্রথম প্রহরে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ। এরপর পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন, বাংলায় সুন্দর হাতের লেখা, ভাষার গান, দেশাত্মবোধক গান ও রচনা লিখন প্রতিযোগিতা হয়।
মুন্সীগঞ্জ : প্রথম প্রহরে শহরের পুরাতন কাচারী এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানাভাবে দিবসটি পালিত হয়।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের পক্ষে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। দুপুরে প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিতসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে সুন্দর হাতের লেখা, চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়।
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) : ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। সকালে উপজেলার বলধারা ইউনিয়নে রফিকনগরে শহীদ রফিকের নিজ বাড়িতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ ও জেলা পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান।
মাভাবিপ্রবি : মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শহীদ মিনারে প্রথম প্রহরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এআরএম সোলাইমান, ট্রেজারার অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, হল, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি ও ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় : প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। এরপর বিভিন্ন সংগঠন, বিভাগ ও দপ্তরের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর সকাল ১১টায় কালো ব্যাজ ধারণ শেষে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে এক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর।
পবিপ্রবি : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত। সকাল সাড়ে ৭টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে প্রভাতফেরি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এক সময়ে প্রধান সড়ক। উপজেলার শ্রীফলতলী ইউনিয়নের সোনাখালী থেকে বাজহিজলতলী পর্যন্ত ওই সড়কটির বর্তমানে নামকরণ করা হয়েছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার নামফলকটি নতুন করে লাগানো হলেও সড়কটির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের মধ্যে একটি কালভার্টের দুপাশের মাটি ভেঙে যাওয়ায় এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েকটি গ্রামের ১৫-২০ হাজার মানুষ। মুক্তিযোদ্ধার নামের অবহেলিত এ সড়কটি বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শ্রীফলতলী ইউনিয়নের সোনাখালী-বাজহিজলতলী সড়কটি গত ২৫-৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। কালিয়াকৈর-ধামরাই সড়কের সোনাখালী গ্রামের সেতুর পাশ থেকে সড়কটির উৎপত্তি। জয়দেবপুর-রাজশাহী রেললাইন যখন ছিল না, তখন উপজেলা শহরে চলাচলের জন্য এটিই ছিল ওই এলাকাবাসীর প্রধান সড়ক। বাজহিজলতলী ছাড়াও এ সড়ক দিয়ে সোনাখালী, নয়ানগর, ভিঙ্গরাজ, বামন্দসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। বাজহিজলতলী গ্রামে সড়কের মধ্যে ছোট একটি কালভার্ট রয়েছে। ২০০০ সালের দিকে ওই সড়কের মধ্যে দিয়ে জয়দেবপুর-রাজশাহী রেললাইন নির্মাণ করা হলে ছোট ওই কালভার্টে বন্যার স্রোতের চাপ পড়ে। স্রোতের কারণে একপর্যায়ে কালভার্টের সংযোগের মাটি ও সড়কের কিছু অংশ ভেঙে যায়। ফলে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে চলাচল শুরু করেন গ্রামবাসী। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সড়কটি তার অস্তিত্ব হারাতে থাকে। এরমধ্যেই ২০২০ সালে প্রায় বিলীন এই সড়কের নামকরণ করা হয় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ডিএডি কাজীমউদ্দীন সড়ক’ নামে। বেশ কয়েকবার মাপ ঝোঁক হলেও সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েন ওই গ্রামগুলোর স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ। অসুস্থ রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল খালেক বলেন, ‘এই সড়কের বিষয়ে উপজেলা মিটিংয়ে একাধিকবার কথা বলেছি। সড়কটি করা এখন খুব জরুরি। এটা ঠিক হলে মানুষের কষ্ট অনেকটা লাগব হবে। খুব সহজেই শহরে চলাচল করা যাবে।’
স্থানীয় শ্রীফলতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিবর রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে রাস্তাটির সেংশন (অনুমোদন) হয়ে গেছে। ওই স্থানে আরেকটু বড় ব্রিজ করা হবে। আর বিলীন প্রায় সড়কটিতে মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগী করা হবে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সারোয়ার আলম বলেন, ‘খুব শিগগিরই ওই সড়কের কাজ শুরু হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, ‘ওই সড়কের কাজ আমাদের টেন্ডারের মধ্যে আছে। এখনো কাজ শুরু না হলে খুব দ্রুত শুরু করা হবে।’
কুলসুম আক্তার কাকলী পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে, রোল ৬। তার বাবা কবির হোসেন অটোরিকশা চালান। দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। কাকলীর সহপাঠীদের ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে কেনা হয়ে গেছে ‘পপির’ গাইড বই, যা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
বাবা কবির হোসেন যা উপার্জন করেন তা থেকে সংসার চালিয়ে ৯০০ টাকা মূল্যের ‘পপি’ গাইড বই মেয়েকে কিনে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। এদিকে, মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিতও দেখতে চান বাবা। কী আর করা, অবশেষে মেয়েকে কথা দিয়েছেন ঋণ-কর্জ করে হলেও কিছুদিনের মধ্যে তাকে কিনে দেওয়া হবে ‘স্বপ্নের’ সেই ‘পপি’ গাইড বই। এটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ১৬৩ নম্বর নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।
একই চিত্র উপজেলার ধামঘর পূর্ব, রানীমুহুরী, সুবিলারচর, বোড়ারচর, নেয়ামতকান্দি, জাহাপুর, ধনীরামপুর, ১০১ নম্বর রহিমপুর, মুরাদনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে এবং সরেজমিনে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের জাঁতাকলে পড়ে ঝরে পড়ছে অনেক দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী। ব্যয় মেটাতে না পেরে আগের বছরের তুলনায় স্কুলগুলোতে কমছে ছাত্র-ছাত্রী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক আগেই প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও মুরাদনগরে দেদার বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ সেসব নোট ও গাইড বই।
দোকানিদের দাবি, শিক্ষকরা যদি গাইড বইয়ে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করে তাহলে কমবে গাইড বই বিক্রি। কিন্তু, নোট ও গাইড প্রকাশনী সংস্থাগুলো বিদ্যালয় বা শিক্ষকদের নানারকম সুবিধা দিয়ে গাইড বইয়ের চাহিদা তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে পপি একাই দখল করে রেখেছে ৮০ শতাংশ বাজার।
ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোট ও গাইড ব্যবসা বহু বছর ধরে চলে এলেও বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতির দোহাই দিয়ে তা আরও বেড়ে গেছে। এই পদ্ধতিতে পাঠদানে শিক্ষকরা ‘যথেষ্ট দক্ষ নন’ বলে শিক্ষার্থীদের নোট ও গাইডের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।
এদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফাসহ অন্যান্য বিদ্যালয় প্রধানরা বলছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সবসময় গাইড বইয়ে নিরুৎসাহিত করি। অনেক সময় তারা নিজেদের প্রয়োজনে তা কিনে থাকতে পারে।
মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আকতার জানান, গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। যদি কোনো শিক্ষককে এ ধরনের কাজে জড়িত পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মুঠোফোনে বলেন, আমাদের প্রাইমারিতে কোনো গাইড বই অ্যালাউ না। শিক্ষার্থীদের গাইড বইয়ে উৎসাহিত করা সম্পূর্ণভাবে এটি একটি অনৈতিক কাজ যা মোটেও কাম্য নয়। যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঞা জনী বলেন, নিষিদ্ধ নোট ও গাইডের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচটি পদে জয়ী হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নয়টি পদে জয়ী হয়েছে।
গত সোমবার গভীর রাতে এ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আতোয়ার রহমান আলো এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ থেকে সভাপতি পদে ৩৫৩ ভোট পেয়ে মাইদুল ইসলাম শিশির ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৬৭ ভোট পেয়ে আবুল কাশেম মো. মুনসুর আহম্মেদ খান বিপন নির্বাচিত হন। এ ছাড়া এ পরিষদ থেকে সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক পদে জামিউল হক সুমন, নির্বাহী সদস্য আতোয়ার রহমান মল্লিক ও তোফাজ্জল হোসেন (আলম) নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সহসভাপতি ইমরুল কায়েস বুলবুল, জোয়াহেরুল ইসলাম, সহসাধারণ সম্পাদক জাহিদ শামস, লাইব্রেরি সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক অনুপম দে অপু, নির্বাহী সদস্য শাহীনুজ্জামান শাহীন, আল আমিন, সৈয়দ মুহাম্মদ শাহানুর আল আজাদ ও শামসুন্নাহার স্বপ্না নির্বাচিত হন।
অ্যাডভোকেট আতোয়ার রহমান আলো জানান, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে।
দিনাজপুরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মোবারক হোসেন (৪৭) নামে অপহৃত এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে এ সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে গত সোমবার বিকেলে দিনাজপুরে উপশহরের ৮ নম্বর ব্লকে অভিযান চালিয়ে মোবারককে উদ্ধার ও তিন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানকালে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন হারুন-অর-রশিদ, মোফাজ্জল হোসেন শিমুল ও সাকিরা আক্তার পুতুল। উদ্ধার হওয়া মোবারক জেলার কাহারোল উপজেলার গড়নুরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ওসি বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপশহরের ৮ নম্বর ব্লকে গেলে মোবারককে অপহরণ করে ওই এলাকার মৌসুমী বেগমের বাসায় আটকে রাখা হয়। এ সময় অপহরণকারীরা তাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মোবারকের স্ত্রী প্রথমে বিকাশে (মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানোর মাধ্যম) ২০ হাজার টাকা এবং পরে আরও ২ লাখ টাকা দেন।
সোমবার বিকেলে মোবারকের স্ত্রী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে মোবারককে উদ্ধার ও তিন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।
নরসিংদীর রায়পুরায় কলাগাছ দিয়ে তৈরি কে এস এ পাবলিক স্কুলের শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার পলাশতলী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা যায়, স্কুলে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণে গত সোমবার বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যায়। পরে ভোরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরিতে এসে দেখতে পায় শহীদ মিনারটি দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক আকলিমা আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ১৫০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ভোরে এসে দেখি, দুর্বৃত্তরা সেটি ভেঙে ফেলেছে।’
রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।