
জামালপুরের বকশিগঞ্জে ড্রেজার মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে বাধা দেওয়ায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় বকশিগঞ্জ থানায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল গণি বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
আবদুল গণি বলেন, নিলাখিয়া ইউনিয়নের হাছেন মিয়া পাশর্^বর্তী বিনোদরচর গ্রামে তার জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কয়েকদিন থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। স্থানীয়রা বালু উত্তোলন বন্ধে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউর রাব্বীকে জানালে তিনি আমাকে সরেজমিনে বালু উত্তোলনের বিষয়টি দেখে আসার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে জমির মালিক হাছেন মিয়া ও ড্রেজার মালিক আবদুল কুদ্দুসকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বলা হয়। তারা বালু উত্তোলন বন্ধে অপারগতা জানিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু করে।
আবদুল গণি আরও বলেন, একপর্যায়ে হাছেন মিয়া, আবদুল কুদ্দুস, বেলাল মিয়াসহ ড্রেজার মেশিনের শ্রমিকরা তাকে মারধর করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নেওয়া হয়।
আবদুল গণিকে মারধরের খবর পেয়ে বকশিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউর রাব্বী এবং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার মেশিন, পাইপ ও বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম জব্দ করেন।
বকশিগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, মারধরের ঘটনায় নিলাখিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল গণি বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সরকারি গবেষণা কেন্দ্রে তিন হাজার আম-কাঁঠালগাছের বিশাল বাগান। এখানে প্রায় শত বছরের পুরনো গাছও রয়েছে। বছরে কয়েক লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হয় এ বাগান থেকে। পাওয়া যায় কয়েক হাজার মণ জ¦ালানি কাঠ। তবে অবহেলা আর অনাদরে বছরের পর বছর ধরে এ বাগানের বিশাল আকৃতির আম-কাঁঠালগাছ মরছে দেদার। বাগানটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তুলা গবেষণা কেন্দ্রে অবস্থিত।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানান, বড় বড় গাছ মরে মাটিতে পড়ে পচছে দিনের পর দিন; যা খাচ্ছে ঘুন আর উইপোকা। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার। তবে এমন ক্ষতি হলেও চিঠিতেই আটকে আছে গাছ কাটার অনুমতি কা-। আর দায়িত্বশীল কর্তারা এ ব্যাপারে একেবারে চুপ।
তুলা গবেষণা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক শ একরের তুলা গবেষণা কেন্দ্রের চারপাশেই আম-কাঁঠালের বিশাল বাগান। তুলাগাছের ভিড়ে সবার নজর কাড়ে বিশাল আকারের আম-কাঁঠালের গাছগুলো।
এর মধ্যে কাঁঠালগাছের সংখ্যাই বেশি। এখানে এমনও বড় কাঁঠালগাছ রয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য লাখ টাকার বেশি। তবে এমন বেশ কিছু বড় বড় কাঁঠালগাছ অন্তত ১০ বছর ধরে মরে পড়ে আছে মাটিতে। এরই মধ্যে কোনো কোনো গাছের ৭০-৮০ শতাংশ ঘুন আর উইপোকা খেয়ে ফেলেছে। বহু গাছ পচে মাটিতে মিশে গেছে পড়ে থাকতে থাকতে। এ সুযোগে আশপাশের মানুষ জ্বালানির জন্য কৌশলে মরা গাছের অংশ নিয়ে যাচ্ছে বাসাবাড়িতে।
মাঠের ভেতর দিয়ে যাওয়া নতুন বাজার-শ্রীপুর সড়কের পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে মাধখলা পর্যন্ত বেশ কিছু বিশাল আকারের বয়সী কাঁঠালগাছ কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গাছগুলোর কান্ডে ছাল-বাকল কিছুই নেই। এ ছাড়া তুলা উন্নয়ন বোর্ডের গবেষণা মাঠের প্রতিটি গলিতে পচন ধরা কাঁঠাল ও আমগাছ দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, এই গবেষণাকেন্দ্রে বিভিন্ন প্রজাতির তিন হাজারের বেশি ছোট-বড় গাছ রয়েছে।
ফার্মের বেশ কটি সূত্র জানিয়েছে, তুলা গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ১২০টি গাছ এখনো মরে পড়ে আছে। এর মধ্যে ১০৪টি বড় আকারের মূল্যবান গাছ কাটার জন্য আবেদন করা হয় জেলা প্রশাসনের কাছে। তবে এখনো অনুমতি মেলেনি।
তারা আরও জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি জায়গার গাছে হাত দিলেই সর্বনাশ। পচে গেলে সমস্যা নেই, কিন্তু যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাজে লাগালে সোজা জেল।
এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুনুল করিম জানান, অনেক দিন আগে আবেদন করা হয়েছিল। এরপর তারা আর যোগাযোগ করেনি।
এতে বিষয়টি আড়ালে পড়ে গেছে।
স্থানীয় পরিবেশ আন্দোলন ও মানবাধিকারকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, ‘এগুলো কেটে সেখানে নতুন করে গাছ রোপণের ব্যবস্থা করা উচিত।’
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকার্তা (কটন অ্যাগ্রোনমিস্ট) আবদুল ওহাব প্রথম বলেন, ‘তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ১০৪টি গাছ মরে নষ্ট হচ্ছে। অনুমতি দিলেই গাছগুলো কেটে ফেলব। এরপর প্রয়োজনমতো চারা রোপণ করা হবে।’
প্রশংসাপত্র দেওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ৬১নম্বর আঙ্গারগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহম্মেদের বিরুদ্ধে। পরে, প্রশাসনিক চাপে ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, ২০২২ সালে পঞ্চম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ আঙ্গারগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বিদ্যালয় থেকে প্রশংসাপত্র আনতে গেলে প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহম্মেদ তাদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করেন। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নান্নু নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। আঙ্গারগাড়া গ্রামের আবু হানিফ জানান, তার মেয়েসহ গত বছর উপজেলার আঙ্গারগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করে। পরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্যে ওই বিদ্যালয় থেকে প্রশংসাপত্র আনতে গেলে প্রধান শিক্ষক তার কাছে প্রশংসাপত্রের জন্যে ৫০০ এবং পিকনিকের জন্যে ২০০ টাকা দাবি করেন। তিনি কষ্টভরা হৃদয়ে প্রধান শিক্ষকের হাতে ৭০০ টাকা দিয়ে মেয়ের প্রশংসাপত্র আনেন। তবে, কয়েকদিন আগে প্রধান শিক্ষক তার মেয়ের কাছে ৫০০ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আঙ্গারগাড়া বাজারের একজন চা বিক্রেতা জানান, ছেলের প্রশংসাপত্রের জন্যে শিক্ষক তোফায়েল আহাম্মেদ তার কাছে ৫০০ টাকা দাবি করেন। পরে, তিনি ৫০০ টাকা দিয়ে ছেলের মাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে প্রশংসাপত্র আনিয়েছেন। ওই বিদ্যালয়ের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, প্রধান শিক্ষক তাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করেছেন। কথা হলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সরকার যেখানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি মওকুফ করেছেন। আর তোফায়েল স্যার প্রশংসাপত্রের জন্যে ছেলে-মেয়েদের কাছে থেকে টাকা আদায় করছেন।
অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম নান্নু জানান, এলাকার মানুষের স্বার্থে তিনি ওই অভিযোগটি করেছেন। ৭০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ওই প্রধান শিক্ষক টাকা নিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, বনভোজনের জন্য আমি ৪৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম। পরে, এটিইও স্যার টাকা ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ জানান, আঙ্গারগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত এনামুল হক হাওলাদার, তারাই হাওলাদার, ধলু মাতুব্বর, মুন্না হাওলাদার, ইউনুস হাওলাদার, অলি মাতুব্বর, জাহিদুল মোল্লা, শওকত ফকির, ইসরাফিল ফকির ও সাখাওয়াত হোসেনকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর জয়নাল হাওলাদারকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বালিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তানভীর হাওলাদারের সঙ্গে মাহাবুব মোল্লার আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জেরে আগেও দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাহাবুব মোল্লার সমর্থক আরমান মোল্লার সঙ্গে তানভীর হাওলাদারের সমর্থক আরাফাত হাওলাদারের তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কথাকাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয়। একপর্যায় দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতদের মধ্যে রাত ১২টা পর্যন্ত মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ১১ জনকে ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষে আহত সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কিশোরদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাওলাদার আর মোল্লার বংশের লোকজনের মধ্যে মারামারি হয়। মূলত এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য মাহাবুব মোল্লার লোকজন হাওলাদার বংশের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমরা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত হয়েছি।’
তবে মাহাবুব মোল্লা বলেন, ‘এলাকায় কিশোররা মারামারি করেছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই। মারামারি সম্পর্কে আমি কিছু জানিও না। এলাকায় শান্ত পরিবেশে বজায় থাকুক তা আমিও চাই। কিন্তু হাওলাদাররা সুযোগ পেলেই বিনা উসকানিতে মোল্লাদের ওপর হামলা চালিয়ে উল্টো দোষ চাপিয়ে দেয়।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তন্ময় মন্ডল বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের লোকজনই আহত হয়েছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাটোরের বড়াইগ্রামের জোনাইল-রাজাপুর রাস্তা সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের দিঘইর মোড়ে সংস্কারাধীন জোনাইল-রাজাপুর সড়কে এ মানববন্ধন হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর জোনাইল পাগলা বাজার থেকে রাজাপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও বর্ধিতকরণ কাজ শুরু হয়। গত বছরের ১২ এপ্রিল কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো মেয়াদও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রায় আড়াই বছরেও কাজ শেষ হয়নি। ফলে খোয়া বিছানো রাস্তায় যান চলাচলে ও সামান্য বাতাসে সারাদিন ধূলা উড়ছে। বাড়িঘর, দোকান-পাট ধুলাময় হয়ে পড়ছে। এতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বক্তারা অবিলম্বে রাস্তার অসমাপ্ত সংস্কার কাজ শেষ করার দাবি জানান।
উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল আলম বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিজেও রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। একাধিকবার চিঠি দেওয়াসহ মৌখিকভাবে ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছি।’
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় শুরু হচ্ছে বাউল সাধক ফকির লালন শাহ’র স্মরণে তিন দিনের দোল পূর্ণিমা স্মরণোৎসব।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে তিন দিনের এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ এমপি কুষ্টিয়া-৩, আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান এমপি কুষ্টিয়া-১, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, পুলিশ সুপার খাইরুল আলম প্রমুখ।
প্রথম দিনের প্রধান আলোচক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শানিনুর রহমান এবং আলোচনা করবেন লালন সাঁইজির মাজার খাদেম মোহম্মাদ আলী শাহ।
এরই মধ্যে আখড়াবাড়িতে এসে মিলন মেলায় একীভূত হয়েছেন লালন ভক্ত, অনুসারীরা। জীবদ্দশায় বাউল শিরোমনি লালন শাহ দোল পূর্ণিমার রাতে শিষ্যদের নিয়ে বসতেন সাধুসংঘে। তারই ধারাবাহিকতায় লালন শাহ এর তিরোধানের পরও কালীগঙ্গার ধারে প্রতি বছর দিবসটি ঘিরে পালিত হচ্ছে এ উৎসব।
ব্যক্তি লালনের জাতপাতের পরিচয় নিয়ে নানা মতভেদ থাকলেও আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহ সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠেছেন তার মানব দর্শনালোকের দ্যুতি ছড়িয়ে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।