
নানা আয়োজনে গত রবিবার দৈনিক দেশ রূপান্তরের পাঁচ বছরে পদার্পণ উদযাপন করা হয়েছে। বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ উপলক্ষে কেক কাটা হয়। অনুষ্ঠানমালায় আরও ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। বিশিষ্টজনরা দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবকে স্মরণ করে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পত্রিকাটি নতুন ধারা তৈরি করে চার বছরেই গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :
পঞ্চগড় : সন্ধ্যায় পঞ্চগড় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দেশ রূপান্তরের জেলা প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম শহীদ। বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক এ রহমান মুকুল, এ হোসেন রায়হান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন পেশার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে কেক কাটা হয়।
নড়াইল : দুদিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, এজেন্ট ও গ্রাহকদের সঙ্গে মতবিনিময়। গতকাল সোমবার সকালে নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ চত্বর থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ সময় শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব কুমার ভদ্র, শিক্ষক নেতা আবদুর রশীদ, রবীন্দ্রনাথ ম-ল, শংকর কুমার সাহা, সাংবাদিক কাজী আনিচুর রহমান প্রমুখ। এর আগে গত রবিবার নড়াইলের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়।
সাতক্ষীরা : দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মেধাবী শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহযোগিতা আর ফুলেল শুভেচ্ছায় সাতক্ষীরায় দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির ও বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব খান কেক কেটে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। পরে আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমানউল্লাহ আল হাদী। অতিথিদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সাতক্ষীরার কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির অনুষ্ঠানস্থল ভরে ওঠে আনন্দ আয়োজনে। আলোচনা করেন আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদ্জ্জুামান বাবু, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, জাসদের জেলা কমিটির সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, সিপিবির সভাপতি আবুল হোসেন, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকম-লীর সদস্য অধ্যাপক সাবীর হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুনসুর রহমান, মহিলা পরিষদের সাতক্ষীরার সাধারণ সম্পাদক জোসনা দত্ত, শ্রমিক নেতা মকবুল হোসেন প্রমুখ।
ঝালকাঠি : রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রেস ক্লাব হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেক কাটেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল। ঝালকাঠি প্রেস ক্লাব সভাপতি কাজী খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান সোনালী, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা চিত্ত রঞ্জন দত্ত প্রমুখ।
কিশোরগঞ্জ : কেক কেটে ও নাচে-গানে হাজারো দর্শক মাতিয়ে কিশোরগঞ্জে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বর মঞ্চে প্রথমে আলোচনা সভা ও পরে কেক কাটা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ।
যশোর : অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যশোর প্রতিনিধি শিকদার খালিদ।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : উপজেলা প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্লাবটির আহ্বায়ক এরশাদ আলী। দেশ রূপান্তর সংবাদদাতা জালাল উদ্দিন লস্করের সঞ্চালনায় এতে অতিথি ছিলেন মাধবপুর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : সকালে সোনারগাঁ প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও কেক কাটা হয়। সোনারগাঁ প্রতিনিধি রবিউল হুসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রেস ক্লাবের অর্থ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ান-উল-ইসলাম প্রমুখ।
শিবচর (মাদারীপুর) : শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে বিকেলে কেক কাটা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শিবচর প্রতিনিধি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সাত থানার এরিয়া কমান্ডার আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন খান। শিক্ষক জসিম মাদবরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) আনিসুর রহমান ও সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর বাবুল আশরাফ।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : শিমরাইল তাজমহল চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বিকেলে আলোচনা সভা ও কেক কাটা হয়। এতে অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ প্রমুখ। প্রতিনিধি সোহেল রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) : দুপুরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন দেশ রূপান্তরের মির্জাপুর প্রতিনিধি ও প্রেস ক্লাব মির্জাপুরের নবনির্বাচিত সভাপতি শামসুল ইসলাম সহিদ। বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, শহীদ ভরানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা জাহান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহামুদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু আহমেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি হজরত আলী মিঞা প্রমুখ।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) : প্রেস ক্লাবে দেশ রূপান্তরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন হাকিমপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম, হাকিমপুর (হিলি) পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন, হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মিনহাজুল ইসলাম প্রমুখ। এরপর কেক কাটার পর বের করা হয় শোভাযাত্রা।
বারদী (সোনারগাঁ) : সকালে জ্যোতি বসু পাঠাগারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ঢাকায় বারদী সংসদের আহ্বায়ক ইউসুফ আলী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম মৃধা। আলোচনার পর কেক কাটা হয়।
ঝালকাঠির রাজাপুরে স্বামী রবিউল আউয়াল তালুকদারকে (৩৯) ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে জানিয়েছেন এক নারী। গত রবিবার রাত দেড়টার দিকে গালুয়া ইউনিয়নের পুটিয়াখালী সোনালী মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক স্ত্রী সাফিয়াকে আটক করে পুলিশ।
সাফিয়া স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আড়াই মাস আগে আমার স্বামী আরেকটি বিয়ে করে তার সব সম্পত্তি নতুন বউয়ের নামে লিখে দেয়। আমাকে প্রতিদিন মারধর করে, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মারধর করেছে, রাত ১০টায় ঘরে ফিরেও পিটিয়েছে। আমি আর সহ্য করতে না পেরে ছুরি দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করেছি।’
রাজাপুর থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন।’
যাত্রাপালায় অভিনয় করা অবস্থায় দুঃখের সংলাপ বলতে বলতে মঞ্চেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন অভিনেতা হাসেম আলী সরকার (৫২)। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের নান্দিনামধু গ্রামে গত রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি নান্দিনামধু দিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত নিজাব আলী সরকারের ছেলে।
হাসেম আলীর চাচাতো ভাই হান্নান সরকার ও প্রত্যক্ষদর্শী সুরুজ্জামান বলেন, নান্দিনামধু গ্রামে বিনোদনের জন্য মাঝেমধ্যে এলাকাবাসী যাত্রাপালার আয়োজন করেন। গত রবিবার রাতে ‘আলম-মালার প্রেম’ নামের যাত্রাপালায় নায়কের ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয়কালে হাসেম মঞ্চে ঢলে পড়েন। দর্শকরা ভেবেছিলেন এটা অভিনয়ের দৃশ্য। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরও তিনি না ওঠায় আয়োজক কমিটির একজন তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। এ সময় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেরপুরের ফসলের মাঠ থেকে ছয়টি সেচযন্ত্র চুরি হয়েছে। এতে বোরো ধানের প্রায় ৩০ একর জমিতে সেচকাজ বন্ধ থাকায় ক্ষতির শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। গত রবিবার রাতে শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের চকআন্ধারিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
যেসব কৃষকের মোটর চুরি হয়েছে তারা হলেন সিদ্দিক মিয়া, বাবুল মিয়া, মজিবর রহমান, আনার মিয়া, আল আমিন ও সমর উদ্দিন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে চলতি বোরো মৌসুমে চকআন্ধারিয়া গ্রামের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প বসিয়ে সেচ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন কৃষকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত সেচপাম্প মালিক বাবুল মিয়া বলেন, রবিবার রাত একটা পর্যন্ত আমি বিভিন্ন মানুষের জমিতে সেচ দিয়ে পাম্প বন্ধ করে বাড়িতে আসি। রাত ৩টার দিকে গিয়ে দেখি পাম্প নেই। শেরপুর সদর থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছয় মাস বয়সী মেয়ে শিশুকে হত্যার অভিযোগে বাবাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার রায় কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আনিছুর রহমান। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাজিমুল হক ওরফে নাজিমুল সদর উপজেলার শিংরোড পূর্ব জয়ধরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল সোমবার দুপুরে এ রায় দেওয়া হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, নাজিমুল ১১ বছর আগে একই উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের রশিদুল ইসলামের মেয়ে রশিদা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি রশিদাকে প্রায় সময়ই মারধর করতেন। তাদের সংসারে পরপর তিনটি মেয়েসন্তান জন্ম নিলে রশিদার প্রতি অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ রাতে রশিদাকে মারপিট শুরু করলে দুই মেয়ে এগিয়ে আসে। এ সময় নাজিমুল স্ত্রী ও তিন মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ছয় মাস বয়সী রত্নাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, ঝিনাইদহে ব্যবসায়ী নবী হোসেনকে অপহরণ করে হত্যা মামলায় পাঁচজনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক বাহাউদ্দিন আহমেদ এ দণ্ডাদেশ দেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমাইল হোসেন বাদশা জানান, ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর হরিণাকুন্ডু উপজেলার সাত ব্রিজ বাজারের ব্যবসায়ী নবী হোসেন বাড়ি থেকে ঝিনাইদহ শহরে আসার পর নিখোঁজ হয়। পরে তার পরিবারের কাছে মোবাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এরপর ওই মাসের ৩১ তারিখে যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রাম থেকে তার মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো আনিছুর রহমান, রেন্টু হোসেন, চান্দু, আতিয়ার রহমান ও মানিক হোসেন। তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। পাঁচ বছর করে কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো নাছরিন খাতুন, আকরাম হোসেন, জামির আলী, অজিফা বেগম, এছেম আলী, ইউনুস মোল্লা ও পারুল বেগম।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহার পদ ২০তম গ্রেডের। বেতন হতে পারে সর্বসাকল্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। তিনিই কিনা নেপালের কাঠমান্ডু ও ধলেশ্বরীর বিভিন্ন ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যেতেন নিয়মিত। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল ৬০ লাখ টাকা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে নেপাল যান ক্যাসিনো জুয়া খেলতে। অতিরিক্ত ডলার রাখার দায়ে নেপালের ত্রিভুবন বিমানমন্দরে এক সহযোগীসহ আটক হন দেবাশীষ। সেখানে ২৩ দিন জেল খেটেছেন। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
দেবাশীষের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল বুধবার রাজউক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সংস্থার চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, রাজউকের জরিপসাথি পদে কর্মরত দেবাশীষ কুমার সাহার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার এ ধরনের কার্যকলাপ রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী প্রতারণার শামিল। কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ এবং প্রতারণার জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই আদেশে।
সাবেক এক সচিবের মেয়ের প্রতারণার মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে দেবাশীষকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের তদন্ত করছে ডিবি। তবে দেবাশীষ গ্রেপ্তার হলেও আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগী ওই নারীর।
গত মঙ্গলবার ডিএমপির রামপুরা থানায় করা মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেছেন, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে তিনটি প্লট ভুক্তভোগীকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন দেবাশীষ। এই টাকা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী তার নিজের নামের দুটি ফ্ল্যাট, ১৫০ ভরি স্বর্ণ, একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র, প্রাইভেট কার বিক্রি করে টাকা দেন। প্লট না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে দেবাশীষ গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর তার রামপুরার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাসায় গিয়ে মারধর করেন। এতে তার গর্ভে থাকা সন্তান মারা যায়।
ভুক্তভোগী গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দেবাশীষের হাত অনেক লম্বা। সে আমার ও আমার স্বামীর যেকোনো ক্ষতি করে দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। কখনো বাইরের জগৎ সম্পর্কে ভালো জানতাম না। বাবা-মার মৃত্যুর পর আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে দেবাশীষ সর্বস্বান্ত করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেবাশীষকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।’
দেবাশীষের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘দেবাশীষ যেসব নারীকে জিম্মি করেছে, তাদের তথ্য আমরা পাচ্ছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
দেবাশীষের ক্যাসিনোকান্ড : দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেবাশীষের ক্যাসিনোকা-ের বিস্তারিত তথ্য। প্রতিবেদনটি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল করতোয়া এলাকায় যাওয়ার সময় ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দেবাশীষ ও তার সঙ্গী মো. মফিজুল ইসলামকে আটক করে বিমানবন্দর পুলিশ। ইমিগ্রেশনের পর নিরাপত্তা তল্লাশি গেটে তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার ডলার উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের দুজনকে ৩০ হাজার ডলার করে জরিমানা করে এবং পরিশোধ শর্তে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেয়। পরে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করলে ১০ লাখ নেপালি রুপি জমা দিয়ে ২৩ দিন পর হাজত থেকে জামিনে ছাড়া পান এবং পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, দেবাশীষ রাজউকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং পেশাদার ক্যাসিনো জুয়াড়ি। তিনি অনেক অবৈধ সম্পত্তির মালিক, তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেবাশীষের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক নারী। সম্পত্তিসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে রাজউকে যাওয়া নারীদের টার্গেট করেন তিনি; বিশেষ করে সহজ-সরল নারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন। অনেক নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণও করেছেন দেবাশীষ। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলাও আছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।