
দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গতকাল রবিবার উদযাপন করা হয়েছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ মিনারে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, কুচকাওয়াজ, তোপধ্বনি, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র-প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। ঢাকার বাইরের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :
রাজশাহী : নগরীর কোর্ট শহীদ মিনারের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে অভিবাদন গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, ডিআইজি আবদুল বাতেন, পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।
খুলনা : সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর গল্লামারী শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভসূচনা করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, কেসিসির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা, রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন প্রমুখ। জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ।
বরিশাল : সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিভাগীয় কমিশনার আমীন-উল আহসান। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সীমিত পরিসরে কুচকাওয়াজ এবং শরীরচর্চা প্রদর্শনী হয়। ওয়াপদা কলোনির স্মৃতি-৭১ নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমিতে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী ও অঙ্গসংগঠন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন।
গাজীপুর : শহরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ী মাঠসংলগ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম। পরে শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে সংবর্ধনা দেওয়া হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয় ও ডুয়েট নানা কর্মসূচিতে দিনটি পালন করে।
বগুড়া : বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে হয়। এতে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু। শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে হয় কুচকাওয়াজ।
গাইবান্ধা : পৌর পার্কের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, পুলিশ সুপার কামাল হোসেন প্রমুখ।
ঝিনাইদহ : প্রেরণা একাত্তর চত্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম, পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জেলা বিএনপি বের করে স্বাধীনতা শোভাযাত্রা।
জয়পুরহাট : শহরের আবুল কাশেম ময়দান স্মৃতিসৌধ ও স্টেডিয়ামে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার পারভেজ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খাজা সামছুল আলম প্রমুখ।
মাগুরা : ৩১ বার তোপধ্বনির পর নোমানী ময়দানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য কামরুল লায়লা জলি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ, জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ অমিত কুমার দে, পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা প্রমুখ।
মাদারীপুর : কুচকাওয়াজের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মাদারীপুুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মাদারীপুুর পুলিশ সুপার।
নাটোর : তোপধ্বনির পর শহরের মাদ্রাসা মোড়ে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সংক্ষিপ্ত আকারে কুচকাওয়াজের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
পঞ্চগড় : মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পরে শহীদদের মাগফিরাত ও দেশ-জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সীমান্তে যৌথ রিট্রিট প্যারেড করে বিজিবি-বিএসএফ।
নীলফামারী : স্বাধীনতা অম্লান স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
নোয়াখালী : জিলা স্কুলে ৩১ বার তোপধ্বনির পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
ঠাকুরগাঁও : পীরগঞ্জের পাবলিক ক্লাব মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক, পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকরামুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজার : জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খোন্দকার এতে সভাপতিত্ব করেন।
বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : তোপধ্বনির পর উপজেলা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
দুমকি (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর জয় বাংলার পাদদেশে শহীদদের প্রতি পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত।
বশেমুরবিপ্রবি : গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. একিউএম মাহবুব। এর আগে রাতে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
মাভাবিপ্রবি : মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় ও বিশ^বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এআরএম সোলাইমান।
এ ছাড়া উপজেলাগুলোসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহান স্বাধীনতা দিবস পালনের খবর এসেছে।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাড়ে তিন বছরেও সেই কাজ শেষ করতে পারেননি সাব-ঠিকাদার জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেন। জেলায় মোট আটটি মডেল মসজিদের মধ্যে বাকি সাতটির নির্মাণকাজ শেষ হয়ে উদ্বোধনও হয়ে গেছে। কিন্তু সাংসদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দেওয়ানগঞ্জের মসজিদটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। সাংসদের ভয়ে মসজিদের নির্মাণকাজ নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা মুখ খুলতে পারছেন না। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতর মসজিদটির অবস্থান। নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা। এ ছাড়া কাজের গুণগতমান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। শুরু থেকেই কাজটির বিভিন্ন অংশে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
জানা যায়, ‘মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি লাইসেন্সে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেন। সাংসদের স্থানীয় প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান কাজটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মডেল মসজিদের তিনতলা ভবনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা খুব ধীরগতিতে কাজ করছেন। মূল ভবনের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা, নকশার কাজ, অজুখানা, টাইলস, শৌচাগারের কাজ শুরুই হয়নি। এ ছাড়া স্যানিটারির সব কাজ বাকি রয়েছে।
মুসল্লি ও স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন সাংসদ মসজিদটির নির্মাণকাজ করছেন তার খেয়ালখুশি মতো। যখন তার মন চায় কাজ করেন, আবার বন্ধ রাখেন।
জেলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মসজিদটির নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সাব-ঠিকাদার হিসেবে সাংসদ মোজাফফর হোসেন ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। এক বছর পর ২০২০ সালের ২২ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন বছর আট মাস পার হতে চললেও এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
এ বিষয়ে সাংসদ মোজাফফর হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সাংসদের স্থানীয় প্রতিনিধি ও মসজিদটির নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। করোনা ও বন্যার কারণে কাজটি দেরি হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে মসজিদটি হস্তান্তর করা হবে।’
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ১০ মিনিট পরে ফোন করতে বলে। কিন্তু পরে আর ফোন ধরেনি।
এ বিষয়ে জামালপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘আটটি মসজিদের মধ্যে সাতটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ওই সাতটি উদ্বোধনও হয়েছে। শুধুমাত্র দেওয়ানগঞ্জের মডেল মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। কাগজপত্রে কাজটি পেয়েছেন মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স। তবে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সাংসদ মোজাফফর হোসেন।’
ধীরগতিতে কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, ওই কাজের শ্রমিকদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্যে ওই প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে না পারলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বগুড়ায় এবার গত বছরের তুলনায় ভুট্টার চাষ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে উৎপাদন খরচ কম এবং বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।
চলতি বছর জেলায় ভুট্টার চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলায়। সারিয়াকান্দির বিভিন্ন চরের চাষিরা ভুট্টা চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলায় এ বছর ১ লাখ ২২ হাজার টন ভুট্টার উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
জেলার সারিয়াকান্দি, গাবতলী, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলা উপজেলায় প্রতি বছর ভুট্টার চাষ হয়ে থাকে। এসব উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষে খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এক বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়। তবে চর এলাকায় বিঘাপ্রতি ভুট্টার ফলন হয় ৪০ থেকে ৫০ মণ।
সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীবেষ্টিত অনেক চর রয়েছে। উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল, হাটশেরপুর, কর্ণিবাড়ী, চন্দনবাইশা ও সদর ইউনিয়নের চরের জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। অথচ এই চরগুলোতে আগে বেশিরভাগ জমিতে মরিচের চাষ করতেন কৃষকরা। গত বছর উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল। এবার তা দ্বিগুণ অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আবাদের খরচ কম হওয়ায় অনেকেই চরে ভুট্টার চাষ করছেন। চরের যে দিকে চোখ যায় কেবল সবুজ ভুট্টাগাছ। আবার কোনো জমিতে গাছের পাকা মোচায় থরে থরে গাঁথা সোনালি ভুট্টার দানা।
উপজেলার চাষিরা বলছেন, আগে ফসল চাষ করে তেমন একটা লাভ থাকেনি। এ বছর ভুট্টা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তারা। হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের চাষি বাদল রহমান এবছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ৩৫ মণের বেশি ভুট্টা পেয়েছেন। বাজারে প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি করছেন ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। উৎপাদন খরচের দ্বিগুণের বেশি দামে ভুট্টা বিক্রি করতে পেরে খুশি তিনি।
কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ছোনপাচা চরের চাষি খয়ের উদ্দিন, বাবলা শেখ, আবদুল গফুর জানান, চরে অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টার ফলন বেশি হয়। ভুট্টায় কম খরচে লাভ হয় বেশি। এরই মধ্যে ভুট্টা জমি থেকে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন পাচ্ছেন ৪০ মণের বেশি। মাড়াই করা ভুট্টা বাজারে বিক্রি করছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় ভুট্টা চাষ করে চরের চাষিদের ভাগ্য বদলাচ্ছে। এ মৌসুমে ৭ হাজার ৫১০ টন ভুট্টা উৎপাদন হবে। আর তা ২৫৭ কোটি টাকায় বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, এ মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দামও ভালো। উপজেলায় ভুট্টা চাষে জড়িত রয়েছে প্রায় ২২ হাজার কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপপরিচলক (শষ্য) এনামুল হক জানান, আলুর চেয়ে ভুট্টা চাষ লাভজনক, পরিশ্রম কম, উৎপাদন খরচও কম। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় বগুড়ার কৃষকরা ভুট্টা চাষ বেছে নিয়েছেন। গত বছর প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বিঘাতে ৪০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ৭ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়। এ বছর ৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৯ হাজার ৬৮৮ টন। কিন্তু চলতি বছর জেলায় এ পর্যন্ত ভুট্টা চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৫২৩ টন ভুট্টা উৎপাদন হবে।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে রংপুর সদরের চন্দনপাট ইউপির বালাচওড়াহাট এলাকার ‘সাধ্যের বাজার।’ বাজারটি বসেছে বালাচওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে।
স্বাধীন বাংলা ফাউন্ডেশন, বালাচওড়া স্পোর্টস অ্যাকাডেমি এবং লাহিড়ীরহাট ক্রীড়াচক্র ও উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদের ব্যতিক্রমী আয়োজন সাধ্যের বাজার।
পবিত্র রমজান মাসজুড়ে এ বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষেরা অল্প টাকায় কেনাকাটা করতে পারবেন। বাজারটিতে পণ্য হিসেবে রাখা হয়েছে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগির মাংস, ডিম, তেল, চিনি, মসুর ডাল, আতপ চাল, ছোলা, খেজুর, লবণ, সেমাই, বিভিন্ন ধরনের মসলাসহ সবধরনের ছোট মাছ। এগুলো দুপুর থেকে আয়োজকরা সেখানে মজুদ করেন। পরে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিনা লাভে তা বিক্রি করেন। এই বাজারের বিশেষত্ব হচ্ছে ১০ টাকার মাংস কেউ কিনতে চাইলে ওজনে যা আসে সে হিসেবে বিক্রি করা হবে।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, তারা আড়ত থেকে মাছ কিংবা মাংস পাইকারি দামে কিনে এনে কোনো প্রকার লাভ না নিয়ে ওই দামেই বিক্রি করেন। মাছ ও মাংস ছোট ছোট পিস করে ওই পাইকারি কেনা দাম অনুযায়ী ১০০ গ্রাম বা ৫০ গ্রাম কেউ চাইলে তাও দেন। এ ছাড়াও ওই এলাকার পাশের সবজি ভা-ারখ্যাত মিঠাপুকুর থেকে শাক-সবজি এনে ৫-১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। তারা আরও জানান, প্রথম দিন ৯ হাজার ৭৩০ টাকা, দ্বিতীয় দিন ৮ হাজার ৯০০ টাকা ও তৃতীয় দিন ৯ হাজার ১২০ টাকার বিক্রি হয়েছে। তিন দিনে তাদের মোট ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ২৪০ টাকা। এই ঘাটতি সবাই মিলেমিশে বয়ে নেন।
আয়োজকদের প্রায় সবাই এখনো লেখাপড়া ও খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত।
গত শুক্রবার প্রথম রোজার বিকেলে প্রকৌশলী নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধন করা হয় সাধ্যের বাজারের কার্যক্রম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রংপুর সদর উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি আরজিনা বেগম ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
সাধ্যের বাজারের আয়োজক স্বাধীন বাংলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিত্যপণ্যের আকাশ ছোঁয়া দামের মাঝে স্বল্পআয়ের লোকজন যাতে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারে তার জন্যই এমন উদ্যোগ।
সাধ্যের বাজারে পণ্য কিনতে আসা আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘চাল সবজি কিনার টাকাই হয় না, গোস্ত কিনিম কি দিয়া। আইজ এটে ১০০ টাকাত গোস্ত কিননু। পোয়াতি (শেষ রাতে) ভাতোত ছাওয়াগুলাক নিয়া খাইম।’
আয়োজকরা আরও জানান, বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাধ্যের বাজারে বেচাকেনা চলমান থাকবে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পুরো একমাস রমজানে এ কার্যক্রম চলবে। রংপুরের সদরের চন্দনপাট ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের গণহত্যার স্মরণে এক মিনিট অন্ধকারে ছিল পুরো দেশ। গত শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত আলো নিভিয়ে প্রতীকী এ ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হয়। তবে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা ও সান্তাহার পৌর শহরে ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন হয়নি। সান্তাহারে নির্দিষ্ট সময়ে আলো নিভিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নেসকো লিমিটেডের বিরুদ্ধে।
আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম চম্পা বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই গণহত্যার স্মরণে এক মিনিট দেশ অন্ধকারে থাকার কথা থাকলেও সান্তাহারে তা পালন না হওয়ায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে সান্তাহার নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের কাছে ওপর থেকে কঠোরভাবে নির্দেশনা ছিল বিদ্যুৎ বন্ধ না করার। যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিজেদের মতো করে আলো নিভিয়ে ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করবে। আমরা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিলে যান্ত্রিক সমস্যা হতো।’
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ড থেকে এক প্রসূতি নিখোঁজ হয়েছেন। তার নিখোঁজের পরই শৌচাগার থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে।
নবজাতকটির মা-বাবার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া হাসপাতালের খাতায় নিখোঁজ প্রসূতির যে ঠিকানা লেখা হয়েছে সেখানে সন্ধান করেও তাকে বা তার অভিভাবকদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে রহস্যের তৈরি হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। সেখানে নবজাতকের চিকিৎসা চলছে।
জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু রেজওয়ানুল কবীর জানান, শিশুটি শ^াসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিল।
উন্নত চিকিৎসার জন্য রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরবর্তী করণীয় স¤পর্কে সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ পুলিশ ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে নবজাতকের মায়ের নাম শিউলী আক্তার। বয়স ১৪, ঠিকানা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রাম রয়েছে।
ওই কিশোরী প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসে। হাসপাতালে কাউকে কিছু না জানিয়ে শৌচাগারে প্রসবের পর বাচ্চা রেখে পালিয়েছে।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রমতে, গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে প্রসব ব্যথা নিয়ে ওই কিশোরী ভর্তি হয়। তাকে মহিলা ওয়ার্ডের বিছানায় দেওয়া হয়। সঙ্গে বেশ কিছু লোক ছিল। ভর্তির পর লোকগুলো হাসপাতালের বাহিরে চলে যায়।
জলঢাকা থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, ‘হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে ওই নামের কাউকে খুঁজে পাইনি। এলাকাবাসী ওই নামের কাউকেই চেনেনা। ধারণা করা হচ্ছে হাসপাতালে ভুল ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ, নেপথ্যের নায়ক ও সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, যুব ছাত্রদের মনে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র এবং সকল সংগ্রাম আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার অন্যতম কৌশল প্রণয়নকারী তিনি।
সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এই নিউক্লিয়াসই ছাত্র জনতার আন্দোলন, ৬ দফা ১১ দফা সহ প্রতিটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে রূপ দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরের পূর্বেই সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসেবে রেখে, বিএল এফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
জয়বাংলা বাহিনী গঠন, জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন,জাতীয় সংগীত নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে স্বাধীনতার ইশতেহার প্রণয়ন, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের ভাষণ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সাথে সমন্বয় সাধনে ঐতিহাসিক ও যুগান্তরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনন্য ইতিহাসের নায়ক তিনি।
সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের পর 'বিপ্লবী জাতীয় সরকার' গঠন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর গঠন এবং সমবায় ভিত্তিক অর্থনীতিসহ ১৫ দফা করণীয় উত্থাপন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের
রূপরেখা প্রদান করেন। ১৯৭২ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার গণ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল খান। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনার নেপথ্য নায়ক তিনি।
পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণ কে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী সামাজিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দফা সম্মিলিত সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক মডেলসহ রাজনৈতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
ব্যক্তিগত সম্পদ - স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের বাইরে অকৃতদার সিরাজুল আলম খান অনন্য সাধারণ বাঙালি। ইতিহাস তাকে বাঙালির দেদীপ্যমান 'বাতিঘর' হিসেবে ইতিহাসের ঐতিহাসিকতায় ধারণ করবে।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন আমার রাজনৈতিক দার্শনিক শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশ অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। সিরাজুল আলম খান বাঙালির অন্তরাত্মায় সদা সর্বদা সর্বাগ্রে জাগ্রত থাকবেন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আরও পড়ুন—
সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন
আমার মৃত্যুর পর শোকসভা হবে না, শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাপালিক— সিরাজুল আলম খান
'সিরাজুল আলম খান: বাঙালির বাতিঘর'
যেভাবে রহস্য পুরুষ হলেন দাদাভাই
রাত করে হলে ফেরায় বহিষ্কৃত হন দাদাভাই
মায়ের শাড়ি মুড়িয়ে দাফন করা হবে দাদাভাইকেসিরাজুল আলম খান আর নেই
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমু আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ৪১ বছর বয়সী মুমুর লাশ বাসার বাথরুমের জানালার সঙ্গে রশি থেকে ঝুলছিল। বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) রাতে শাহরিয়ার কবিরের মহাখালীর বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করেন তারা। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি উপ-কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে শাহরিয়ার কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।