
চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চোর সিন্ডিকেটের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং সাতটি অটোরিকশা উদ্ধার করেছে।
থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরি হলে বাঁশখালী থানায় মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয় মহিউদ্দিন (৩০) ও জিয়াউর রহমানকে (২৭)। তারা আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে অটোরিকশা চুরির তথ্য দেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে বাঁশখালী থানার পুলিশ গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রামে অভিযান পরিচালনা করে ওয়াজিদিয়া বায়েজিদ এলাকার পারভেজ মোশারফ (২৪) ও মিরসরাই উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার আলী আজগরকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, সীতাকু- থানার বারবকু- ইউপি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় সিএনজিচালিত সাতটি অটোরিকশা।
ফেনীতে মিটার না দেখেই প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিরুদ্ধে। ফলে ব্যবহৃত ইউনিটের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বাসায় বাসায় গিয়ে মিটারের রিডিং না দেখে অফিসে বসেই অনুমাননির্ভর ভুতুড়ে বিল তৈরি করায় এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন গ্রাহকরা। গত জুলাই মাসে ফেনীতে ৭৭ লাখ টাকার ভুতুড়ে বিল গ্রাহকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমন্বয় করা হয়েছে। তবে ভুতুড়ে বিলের পরিমাণ আরও বেশি বলে জানা গেছে। কারণ অনেকে হয়রানি কিংবা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে অভিযোগ না করে ভুতুড়ে বিলই পরিশোধ করে দেন।
বিপিডিবি ফেনী সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে বিদ্যুৎ বিল ছিল ১১ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৭৭ লাখ টাকার বিল গ্রাহক অভিযোগের ভিত্তিতে সমন্বয় করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন গ্রাহক বিল সংক্রান্ত নানা অভিযোগ নিয়ে আসেন। সামান্য সমস্যা হলে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা ছাড়াই সমাধান করা হয়।
ফেনীতে বিপিডিবির মোট গ্রাহক সংখ্যা ৯৩ হাজার। এরমধ্যে ১৪ হাজার প্রিপেইড গ্রাহক। বাকি ৭৯ হাজার পোস্ট পেইড গ্রাহকের মিটার রিডিংয়ের রয়েছেন মাত্র ৩৯ জন। অন্যদিকে ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ৪ লাখ গ্রাহকের জন্য রয়েছেন ১৬৬ জন মিটার রিডার। সময় স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ মিটার রিডার গ্রাহকের মিটার না দেখেই আগের মাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিল করে দেন। অনেক সময় দেরিতে মিটার রিডিংয়ে গিয়ে ৩৫ দিনের বিলও কাউন্ট করা হয়। এতে গ্রাহকের মূল ব্যবহৃত ইউনিটের তারতম্য ঘটে। আর মোট ইউনিটের তারতম্য হলে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের রেটেরও তারতম্য হয়। মাত্র ১ ইউনিটের তারতম্যের কারণে কোনো গ্রাহকের ধাপ পরিবর্তন হয়ে যায় এবং বিদ্যুতের রেটও বেড়ে যায়। এর ফলে অনুমাননির্ভর ইউনিটে গ্রাহকরা অধিকাংশ সময়ই অতিরিক্ত হারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। পরের মাসে তা সমন্বয় করা হলেও গ্রাহকের লাভ হয় না।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কাসেম অর্ধশতাধিক বিদ্যুৎ বিলের কপি উত্থাপন করে অভিযোগ করেন, গত মাসে যে বিল ছিল ৬০০ টাকা, পরবর্তী মাসে সে মিটারে বিল এসেছে ৫ হাজার টাকার মতো। কয়েকটি বিলের সঙ্গে মিটারে ইউনিটের সংখ্যার সম্পর্ক নেই। মিটার না দেখেই ইচ্ছেমতো বাড়তি বিল করায় প্রতি ইউনিটে যোগ হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। কোনো কোনো মাসে দুই থেকে তিনগুণ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর বিল পরিশোধ না করতে পারলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মিটারে উল্লেখ রয়েছে ৬ হাজার ৩২৩ ইউনিট। অথচ বিদ্যুৎ অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৫ ইউনিটের বিল। অতিরিক্ত বিলের ইউনিট পরবর্তী মাসে সমন্বয় করে দেবেন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।’ বিপিডিবির ফেনী নির্বাহী প্রকৌশলী আ স ম রেজাউন নবী বলেন, ‘গ্রাহকদের অভিযোগ থাকলে আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করি। শিগগিরই আমরা ফেনীতে ৭৭ হাজার অনলাইন প্রিপেইড মিটার নিয়ে আসছি। ফলে সমস্যাও অনেকাংশে কমে যাবে।’
পঞ্চগড় বাজারের চালহাটিতে আব্দুস সাত্তার নামের এক ব্যবসায়ীর গুদামে ২০ মেট্রিক টন সরকারি চালের বস্তা মজুদ থাকার খবর পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে পুলিশ ওই দোকানটি ঘিরে রাখে। এর মধ্যেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা, পঞ্চগড় চেম্বারের ট্রেজারার আব্দুস সামাদ পুলক ও পঞ্চগড় সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আরেফিন ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু তারা ব্যবসায়ীর দেওয়া কিছু কাগজপত্র দেখে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
অপরদিকে, ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ছবি তোলার সময় ইউটিউবভিত্তিক একটি চ্যানেলের পঞ্চগড় প্রতিনিধির ওপর চড়াও হন আব্দুস সাত্তারের চাচা শাহীনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী। এ সময় তারা ওই গণমাধ্যমকর্মীকে লাঞ্ছিত করলেও নীরব ছিলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা।
ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার জানান, নাটোরের গুরুদাসপুরের গৌতম ট্রেডার্স থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল কিনেছেন তিনি। চালগুলো টিআর কাবিখার চাল স্বীকার করে তিনি জানান, গুদামে খাদ্য বিভাগের লোগো ও লেখাসংবলিত প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি করে ৬৬৭টি বস্তা চাল রয়েছে।
তবে নাটোরের গৌতম ট্রেডার্সের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আরেফিন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি চালগুলো সরকারি। টিআর, জিআর ও কাবিখার চাল।’
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছি, সেগুলো ঠিক আছে। আপনারা আপনাদের মতো যাচাই করে দেখেন।’
পঞ্চগড় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল হক খন্দকার বলেন, ‘আমাদের গুদাম থেকে কোনো চাল বেরিয়ে গেলে আমাদের আর কোনো দায়দায়িত্ব নেই। কোনো গুদামে সরকারি বস্তায় চাল পাওয়া গেলেও আমাদের দেখার কোনো বিষয় নেই।’
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত প্রকল্প ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাবে’ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্লাবে সদস্যদের পূর্ণ উপস্থিতি না থাকলে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি কিশোর-কিশোরীকে ৩০ টাকা মূল্যের পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের নিয়ম থাকলেও ১০ থেকে ১৫ টাকার অপুষ্টিকর নাশতা দিয়ে ৩০ টাকার ভাউচার তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি কিশোর-কিশোরী ক্লাবে সরেজমিনে কয়েক দিন গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও মাদকের মতো নানা সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় ১১টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ৩ ডিসেম্বর। এসব ক্লাব স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে পরিচালিত হয়। যেখানে প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। প্রতিটি ক্লাবের সদস্য ৩০ জন। এর মধ্যে ২০ জন কিশোরী ও ১০ জন কিশোর। তাদের সংগীত, আবৃত্তি ও কারাতের মতো সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব কিশোর-কিশোরীকে ৩০ টাকা মূল্যের পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের নিয়ম আছে।
সরেজমিনে উপজেলার ক্লাবগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, নিয়মিত ক্লাস হয় না। কোথাও নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থী নেই। পোশাক, ডায়েরি, পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণও বিতরণ করা হয়নি।
পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত ক্লাবে গত শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ে এক ঘণ্টার ক্লাস নিয়ে ছুটি দেন শিক্ষিকা। বিকেলে ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে কেন জানতে চাইলে ওই শিক্ষিকা বিকেলে তার কাজ আছে বলে জানান। ওই ক্লাসে ১২ কিশোরী উপস্থিত ছিল। ২০ টাকা মূল্যের ড্রাই কেক দেওয়া হয় তাদের।
পার্বতীপুর শহরের আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের নাশতা হিসেবে দেওয়া হয় ১৫ টাকা মূল্যের কেক ও বিস্কুট। ওই ক্লাবের কিশোর-কিশোরীরা জানায়, বেশিরভাগ সময় ১০ টাকার নাশতা দেওয়া হয়। ক্লাবের দেওয়া বিস্কুট খেয়ে কিশোর হিমেল দাস ও কিশোরী রুবাইয়া আক্তার অসুস্থ হয় বলে জানায় তারা।
বেলাইচন্ডি-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাবে গত শনিবার দেখা গেছে ১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। সেখানে আবৃত্তির শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলেন। ওই ক্লাবে নাশতা হিসেবে ১০ টাকা মূল্যের ড্রাই কেক ও পাঁচ টাকার শরবত পাউডারের মিনিপ্যাক দেওয়া হয়। ওই ক্লাবের শিক্ষার্থীরা জানায়, বেশিরভাগ সময় তাদের ১০ টাকার নাশতা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের ১৫ টাকার নাশতা দেওয়া হলেও ভুয়া ভাউচারে ৩০ টাকার নাশতা উল্লেখ করা হয় এবং উপস্থিতিও দেখানো হয়েছে ৩০ জন। এমন একটি ভাউচার এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
কালিকাপুর ও বেলাইচন্ডিসহ পাঁচটি ক্লাবের দায়িত্বে থাকা জেন্ডার প্রমোটর রতœা মোহন্তের কাছে এ ভাউচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
ক্লাবগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা পার্বতীপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা খন্দকার শাকিলা বিনতে শরীফ বলেন, ‘৩০ টাকার ভ্যাট, ট্যাক্স বাদ দিয়ে দেখা যায় ২০-২২ টাকা থাকে। কিশোর-কিশোরীদের সিজনাল ফল, আপেল, দই, মিষ্টি, রুটি ও কলা দেওয়া হয়েছে।’
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘আমরা জীবনেও ভোট দেই নাই। ভোট ক্যামতে দেয়, হেইয়াও জানি না। হুজুর এই এলাকার নারীগো পর্দা করতে কইছে, ভোট দিতে মানা করছে, হেলিগ্যা আমরা কহনো ভোট দিতে যাই নাই। আমার স্বামী কহনই আমারে ভোট দিতে যাইতে কয় নাই। উল্ডা মানা করছে। না যাইতে যাইতে অহন আর ইচ্ছাও করে না।’
নিজের ভোট দেওয়া নিয়ে বলছিলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের ধনীদার বাড়ির সোলেমান মিয়ার স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব খাইরুন্নেছা।
মওদুদুল হাসান জৈনপুরী (র.) নামের এক পীরের উপদেশ মেনে এই ইউনিয়নের নারীরা বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকে কোনো জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন না। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তাদের এই মনোভাবের কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। প্রায় ৫০ বছর ধরে এসব নারীকে ভোটকেন্দ্রমুখী করতে দৃশ্যত সরকারি-বেসরকারি তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
শাশুড়ির মতোই ভোট দেন না পাশর্^বর্তী রূপসা উত্তর ইউনিয়ন থেকে খাইরুন্নেছার ছেলের বউ হয়ে আসা রাবেয়া বেগমও (৩৫)। তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে ভোট দিতে যেতে নিষেধ করেছেন। তবে আমার স্বামী ভোট দিতে যেতে কখনো নিষেধও করেননি, আবার যেতেও বলেননি। যেহেতু এলাকার কোনো নারীই ভোট দিতে যান না, তাই আমিও যাই না।’
খাইরুন্নেছা বলেন, ‘প্রার্থীরা জানে মহিলারা ভোট দেয় না। হেলিগ্যা হেরা আমগো কাছে ভোট চাইতেও আহে না।’ কখনো এই এলাকার নারীদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কাউকে কাজ করতে দেখেননি তিনি।
এ ব্যাপারে ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া, কাউনিয়া, চর মান্দারীসহ প্রায় প্রতিটি গ্রামের নারীদের মনোভাব একই রকম লক্ষ করা গেছে। ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৯৪৫ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৪৪৬ আর নারী ৯ হাজার ৪৯৯ জন।
ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আমির হোসেন (৬৫) বলেন, প্রায় ৫৫ বছর আগে ইউনিয়নে হঠাৎ একবার কলেরা মহামারী দেখা দেয়। মহামারী থেকে রক্ষা পেতে দোয়ার আয়োজন করা হয়। তখন জনৈক পীর মওদুদুল হাসান জৈনপুরী নারীদের পর্দা মেনে চলার জন্য উপদেশ দেন। ইউনিয়ন ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে একই রকম তথ্য জানা গেছে।
গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের তাছলিমা বেগমের নাম ২০১৫ সালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচন, ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ২০২২ সালে ইউপি নির্বাচন হলেও তিনি ভোট দেননি। তাছলিমা বলেন, ‘আমি কখনো ভোট দেই নাই। আমাদের বাড়ির কোনো নারী ভোট দেয় না, হুজুরের নির্দেশ।’
তাছলিমার বাবা মো. তছলিম বলেন, ‘আমি হুজুরকে দেখেছি। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই ইউনিয়নের যেন কোনো মহিলা ভোট দিতে না যায়, সবাই যেন পর্দার মধ্যে থাকে। তার আদেশ মেনে কোনো নারী ভোট দিতে যান না। তাই আমি আমার মেয়েদের কখনো ভোট দিতে যেতে বলিনি, ভবিষ্যতেও বলব না।’
মওদুদুল হাসান জৈনপুরীর (র.) ভাতিজা মাওলানা তারগিব আহমেদ সিদ্দিকী জৈনপুরী বলেন, ‘ধর্ম প্রচার করার জন্য আমার চাচা বড় হুজুর সৌদি আরব থেকে এ দেশে আসেন। তিনি নারীদের পর্দার মধ্যে থাকার জন্য ভোট না দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। এখন অনেক কিছু বদল হচ্ছে, নারীরা হাটবাজার করে।’ তার মতে, দেশের আইন অনুযায়ী নারীদেরও ভোট দেওয়ার হক আছে। যার ইচ্ছা ভোট দিতে যেতে পারে।
ইউপির (সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১, ২, ৩) সদস্য সাজেদা আক্তার বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা নারী সদস্যরাও পুরুষের ভোটে নির্বাচিত হই, যা অত্যন্ত কষ্টের বিষয়। ২০২২ সালে আমি সম্ভবত ৬৫৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই। এর মধ্যে মাত্র ২০ নারী ভোট দিয়েছেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান মো. শরীফ হোসেন বলেন, এই ইউনিয়নের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিএফ কার্ডসহ সরকারের সব সুযোগ-সুবিধায় নারীরা আছেন। বাজার, পোশাক কারখানাসহ সব জায়গায় নারীরা আছেন। শুধু ভোটকেন্দ্রে নেই, এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনে আমার কেন্দ্রে প্রায় ১০০ নারী ভোট দিয়েছেন। এরা আমার আত্মীয়-স্বজন। আমি তাদের বুঝিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। আমি না দাঁড়ালে হয়তো তারাও ভোট দিত না। তবে প্রতিটি নির্বাচনের আগে নারীদের সচেতন করতে সভা-সমাবেশ করা হয়েছে।’
ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ইসকান্দার আলী বলেন, পীরের নামে গুজব ছড়িয়ে নারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। গেল ইউপি নির্বাচনে কিছু নারী ভোট দিয়েছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নারীদের ভোট দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন খান বলেন, ‘আমরা সব সময়ই নারীদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছি। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নারীদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করে আসছে।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন বলেন, ২০২২ সালে ইউপি নির্বাচনের আগে তারা ওই ইউনিয়নের নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে সভা করেছিলেন। কিন্তু তা খুব একটা কাজে আসেনি। ওই নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছিল ৫ হাজার ৫৯৪টি। আনুমানিক ১০০ থেকে ১২০ জন নারী ভোট দিয়েছিলেন। এখানে নারী-পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে জেনে নারীদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করব। প্রয়োজনে পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সচেতন করতে আলাদাভাবে সভা করব।’ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের সভাপতি ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, কুসংস্কারকে আঁকড়ে রেখে এখানকার নারীরা নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারছেন না। তাদের পিছিয়ে রাখা আমাদের একটি বড় অপরাধ। এই অন্ধকার থেকে নারীদের মুক্তির আলোয় আনা দরকার।
মাগুরায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের চৌরাঙ্গী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোরসহ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শহরের ইসলামপুর পাড়ায় বিএনপির কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় মাগুরার ৩৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড থেকে বিএনপি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে আসার পথে শহরের চৌরাঙ্গী মোড় এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা এহসানুল হক পলাশসহ ৫ জন আহত হন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ খান বলেন, শহরের নতুন বাজার এলাকা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিল ইসলামপুর পাড়ায় বিএনপির কার্যালয়ে যাচ্ছিল। মিছিলটি শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পৌঁছালে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মাগুরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কলিমুল্লাহ বলেন, জেলা বিএনপির কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এই সমাবেশে নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে সেখানে যাচ্ছিল। পথে শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।