
রাজশাহীতে পুলিশ সেজে প্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগে তিনজনকে প্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রাজশাহীর তানোর থানার বাধাইড় ইউনিয়নের শিকপুর গ্রামের দিয়াড়াপাড়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত তিন ভুয়া পুলিশ সদস্য হলেন রাকিব হোসেন (৩০), তৌহিদুল ইসলাম (২৫) ও মুন্না সরকার (২৩)। রাকিব তানোরের মাসিন্দা গ্রামের আসাদুলের, তৌহিদুল আড়াদিঘি গ্রামের মোফাজ্জলের এবং মুন্না দেবীপুরের মহসিনের ছেলে।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম জানান, তানোরের ম-ুমালা তদন্তকেন্দ্রের পুলিশের একটি দল শুক্রবার সন্ধ্যার পর জানতে পারে বাধাইড় ইউনিয়নের শিকপুর গ্রামের দিয়ারাপাড়ায় আদিবাসীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হচ্ছে। পরে পুলিশ ওই গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ আরও জানায়, নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আদিবাসী গ্রামে যায় এবং আদিবাসী লোকদের হ্যান্ডকাফ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখায়। এ সময় তারা বিভিন্নজনের কাছে থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা গ্রহণ করে। একজনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা বাধে। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের আটক করে।
ওসি আরও বলেন, তানোর থানায় মামলা করে শনিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সই জাল করে জালিয়াতির মাধ্যমে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান ওরফে মিলনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ঝালকাঠি সদর থানায় মাসুদ সিকদার নামে এক যুবলীগ কর্মী এ মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মিলন হাওলাদার (৩৬), তরিকুল ইসলাম অপু (৩০), মনিরুজ্জামান মনির (৩৮), শাখাওয়াত হোসেন সুমন (৩৬), মারিয়াজ হাওলাদার (৩৫), তালাল আল আরাফাত (২৩), আসাদুজ্জামান তালুকদার পিকলু (৪০), আলীম আল রজিব (৪০), মাহমুদুল সাগর (২৫), রনি হাওলাদার (৩৫) ও বশির আহম্মেদ খলিফা। আসামিরা অধিকাংশই সাবেক জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর আসামিরা কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জেলা যুবলীগের ২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে বর্তমান আহ্বায়ক রেজাউল করিমকে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে সৈয়দ হাদিসুর রহমানকে। গত ৬ সেপ্টেম্বর বাদী বিষয়টি জানতে চাইলে হাদিসুর রহমানসহ অন্য আসামিরা তাকে কিল-ঘুষি মেরে জখম করেন। পরে বাদী বিষয়টি আহ্বায়ক রেজাউল করিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল শরীফকে জানালে তারা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এ ধরনের কোনো কমিটি হয়নি। পরে গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই কমিটিকে ভিত্তিহীন দাবি করে এই গুজব ও অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এদিকে এ নিয়ে শহরে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ হাদিসুর রহমানের অনুসারী আটজনকে আটক করে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়।
অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান বলেন, ‘কোনো কুচক্রী মহল আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধংস করার নোংরা খেলায় মেতেছে।’
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তালিকাটি সম্পূর্ণ ভুয়া। এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করা হয়েছে।’
বন্যার পানিতে বাড়ি ভেঙে যাওয়া চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের জেলেপাড়ার বাসিন্দা সনজিত জলদাস ও সুমন জলদাস এখনো বাড়ি ফিরতে পারেননি। এই দুই পরিবার পদুয়া ওয়ার্ডবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক মাস ধরে বসবাস করছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার তাগাদা দিলেও তারা বলেন, আঁরার বাড়ি ঘরত কিছু নাই। আঁরা এখন কডে যাইয়ুম।
ওই পরিবারের ভাষ্যমতে, তারা শুধু কিছু খাদ্যদ্রব্য পেয়েছেন। কিন্তু কেউ তাদের পুনর্বাসনের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের বাসস্থানের ব্যাপারে কিছু করেনি।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, এ দুই পরিবার বিদ্যালয়ে বসবাস করছে। তাদের বাড়িঘর বন্যার কারণে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। জেলেপল্লীতে আরও ১০-১৫টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সনজিত জলদাস ও সুমন জলদাস বলেন, বন্যায় বাড়ি হারিয়ে আমরা প্রায় ১ মাস ধরে বিদ্যালয়ের কক্ষে অবস্থান করছি। সরকারিভাবে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিলে নিজের ভিটেবাড়িতে ফিরে যেতে পারতাম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলক দাশ বলেন, জেলেপাড়ার অনেক পরিবার বন্যার কারণে বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সবাই চলে গেলেও এ দুই পরিবার এখনো বিদ্যালয়ে রয়ে গেছে। তাদের চলে যেতে বলা হলেও যাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ বলেন, ইউনিয়নে বিগত বন্যায় ২৩০টি মাটির ঘর বিলীন হয়ে যায়। সরকারি বরাদ্দ পেলে এ দুই পরিবারকে দেওয়া হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ জানান, বন্যায় লোহাগাড়া উপজেলায় ১২শ মাটির ঘর ভেঙে যায়। আমরা কেবল ৩শ পরিবারকে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হয়েছি। এ দুই পরিবারের ব্যাপারে মাত্র শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখব। আরও সরকারি বরাদ্দ প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।
ফেনীর ছাগলনাইয়ায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে এক সালিশদার খুন হয়েছেন। ভোলায় সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে তর্কের জেরে ছুরিকাঘাতে এক জেলে খুন হয়েছেন। এছাড়া রাজশাহী ও দিনাজপুরে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার বিকেলের মধ্যে পৃথক ঘটনাগুলো ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :
ফেনী : ফেনীতে নিহত সালিশদার আবদুর রউফ (৬৫) ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের গন্ধর্ব্যপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। জানা যায়, গন্ধর্ব্যপুর গ্রামের মৃত মফিজুর রহমান ভূঁঞার দুই ছেলে মোকসেদুর রহমান মামুন (৪৫) ও মিজানুর রহমান স্বপনের (৪৮) মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার রাতে বিরোধ মীমাংসার জন্য বাড়ির উঠানে সালিশ বসে। সালিশে নিহত রউফসহ স্থানীয় ১৫ থেকে ২০ জন উপস্থিত ছিলেন। সালিশের একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোকসেদুর ও মিজানুরের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারের মধ্যে মোকসেদুর, তার ছেলে আরমান (১৮) ও কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আবদুর রউফের ওপর হামলা করে। তখন স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিলে রাত ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি সুদ্বীপ রায় বলেন, ‘রাতেই অভিযান চালিয়ে মোখসেদুর, তার স্ত্রী ও আবুল মনসুর নামে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
ভোলা : ভোলায় নিহত জেলে রাসেল পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের তোফাজ্জল ভা-ারীর ছেলে।
ভোলা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন চন্দ্র সরকার জানান, শনিবার সকালে উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকায় মাছ ধরা শেষে নৌকায় রিয়াজ ও রাসেল নামে ২ কিশোর জেলে সিগারেটে আগুন ধরায়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাসেল রিয়াজকে চড় মারে। রিয়াজ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাসেলের পেটে ছুরি বসিয়ে দেয়। পরে রাসেলকে স্থানীয়রা ভোলা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা রিয়াজকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
দিনাজপুর : দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গলির ড্রেনের সøাবের ওপর থেকে আমেনা খাতুন (৮০) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। নিহত আমেনা পার্বতীপুর উপজেলার চ-িপুর ইউনিয়নের উত্তর শালন্দর (নয়াপাড়া) গ্রামের মৃত আফছার আলীর স্ত্রী।
কোতোয়ালি থানার ওসি ফরিদ হাসান জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের চতুর্থ তলার মহিলা ওয়ার্ডে আমেনা খাতুনকে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাত ৩টা থেকে আমেনা খাতুনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
রাজশাহী : রাজশাহীতে চুরি হওয়া একটি ট্রাকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করছে পুলিশ। নাটোর থেকে চুরি হওয়া ওই ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রাজশাহী নগরীর বিমানবন্দরের সামনে শনিবার বিকেলে লাশসহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজশাহী এয়ারপোর্ট থানার ওসি এমরান আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করেও আবাসিক চুলায় গ্যাস পাচ্ছে না নারায়ণগঞ্জবাসী। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে এলেও স্থানীয় তিতাস গ্যাস অফিস কিছুই করতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা নারায়ণগঞ্জের কোথাও গ্যাস পাওয়া যায় না। শহর, বন্দর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ সর্বত্রই গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। প্রতি মাসে বিল দিয়েও কাক্সিক্ষত গ্যাস না পাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শহরের মাসদাইর এলাকার শিপন আহমেদ বলেন, গ্যাস না থাকায় রান্না করতে গৃহিণীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে হোটেল-রেস্তোরা থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। রাত ১২টার পরও রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় লেগে থাকছে। গ্যাসের সংকটে চুলা না জ্বলায় খেয়ে-না খেয়ে থাকছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আর ঘরে ঘরে গৃহিণীদের রাত জেগে রান্না করে আবার সকালে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এতে করে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের মাসদাইর, জামতলা, দেওভোগ, পঞ্চবটি, বাবুরাইল, সিদ্ধিরগঞ্জের কান্দাপাড়া, সাহেবপাড়া, রহিম মার্কেট, বন্দরের খানবাড়ী, একরামপুর, মদনগঞ্জ, কুড়িপাড়া, মদনপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেক বাসাবাড়িতে এখন মাটির চুলায় রান্না করতে হচ্ছে। বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের। এ ছাড়া পোশাকশ্রমিকদেরও সময় নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও জানায়, উল্লিখিত বেশ কিছু এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ কারখানা গড়ে উঠেছে। যেখানে গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে বৈধ গ্যাস গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না।
বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, আমাদের ধামগড়, মদনপুরে অবৈধ মশার কয়েলসহ বেশ কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করেও আমরা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস পাচ্ছি না। এরই মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে মশার কয়েলসহ ছোট-বড় কারখানা চালাচ্ছে কিছু লোক। মাঝেমধ্যে অভিযান হয়। জরিমানা হয়। লাইন কেটে দেওয়া হয়। কয়েক দিন পর ফের চালু হয়ে যায় এগুলো।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গ্যাস সংকট নিরসনে একাধিকবার গ্যাস অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলে, এই কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। সেই ‘কিছুদিন’ আর শেষ হচ্ছে না।
বন্দর প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা কবির হোসেন বলেন, বন্দরে শুধু গ্যাস নয়, বিদ্যুৎ ও পানি সংকটও প্রকট হয়ে উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশীদ জানান, জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সংকটের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। যখন গ্যাসের চাপ বেশি থাকে তখন ওই এলাকায় ঠিকমতো গ্যাস পৌঁছাতে পারে। কিন্তু এখন চাপ কম থাকায় সব এলাকায় গ্যাস পৌঁছাতে পারছে না। আশা করছি এই সমস্যা শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চোরাই প্রসাধনী সামগ্রীসহ ফজলু মিয়া (২৬) ও মামুন মিয়া (১৯) নামে দুই চোরাকারবারিকে আটক করেছে র্যাব। গতকাল শনিবার ভোরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফলের মার্কেট এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি ট্রাক জব্দ করা হয়। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৪ এর কমান্ডিং অফিসার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আক্কাছ আলী।
তিনি জানান, ভোর ৪টার দিকে ঢাকাগামী একটি মালবাহী ট্রাক আটক করে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় ৮০ হাজার ৬০০ পিস ভারতীয় কিটকেট চকলেট, ১৩ হাজার ৬৩২ পিস ডাব সাবান, ১১ হাজার ৫২০ পিস কাবেরী মেহেদি, ৪ হাজার ৩২০ পিস নবরতœ হেয়ার অয়েলসহ বিপুল পরিমাণ হেয়ার অয়েল, টুথপেস্ট, হরলিক্স, সাবান, শ্যাম্পু, বিউটি ক্রিম জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, আটক ফজলু মিয়া ও মামুন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ ভারতীয় প্রসাধনী সামগ্রী দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছে বলে স্বীকার করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।