
চট্টগ্রামের আবাসন শিল্পে ২০০৫ সালে সূর্যোদয়ের মতো আবির্ভূত হয় সিপিডিএল। নন্দনকাননে নন্দন ভ্যালি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও নগরীর প্রাণকেন্দ্র জামালখানে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে থাকে। তখনকার সময়ে আবাসন খাতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত ছিল না। কিন্তু সিপিডিএল নির্ধারিত সময়ের আগে প্রকল্প হস্তান্তরের চর্চা চালু করে। এ কারণে ভূমি মালিকদের অনেকে যেমন সিপিডিএলের কাছে ছুটে আসে তেমনি ফ্ল্যাট ক্রেতাদেরও পছন্দের শীর্ষে পৌঁছে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
ক্রেতাবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে করতে জামালখান, মেহেদীবাগ, খুলশী, পাথরঘাটা, নন্দনকানন, দেবপাহাড়, কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, ফয়’স লেকসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প নিয়েছে। পাশাপাশি নগরীর বাইরে আনোয়ারায় স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলার উদ্যোগও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু কি আনোয়ারা? চট্টগ্রামের গ-ি পেরিয়ে এখন ঢাকায়ও সদর্পে এগিয়ে চলছে সিপিডিএল। ২০২০ সালে ঢাকায় প্রকল্প নেওয়ার পর থেকে ইতিমধ্যে ছয়টির কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জামালখান এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও নগরীর মেহেদীবাগে তারা সর্বপ্রথম বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নির্মাণ করে। ‘ক্রিমসন ক্লোভার’ নামের একটি কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে প্রতিটি ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন আয়তন ছিল দুই হাজার বর্গফুটের ওপরে এবং সেটিতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অনেকটাই যুক্ত করায় অনেকের কাছে এখনো তা ঈর্ষণীয় প্রকল্প। আর এরই ধারাবাহিকতায় আরও বড় আকারে নগরের দেবপাহাড় এলাকায় পাহাড় ও সমতলের সংমিশ্রণে নেওয়া হয়েছে ‘সিপিডিএল সুলতানা গার্ডেনিয়া’ নামের একটি প্রকল্প। চার টাওয়ারের সেই প্রকল্পে রয়েছে ১৩৬০ থেকে ২৪৩৫ বর্গফুট সাইজের ১৫৫টি ফ্ল্যাট। গত ১৮ বছরে চট্টগ্রামে ২৬টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে, বর্তমানে চলমান রয়েছে আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ।
চট্টগ্রামে ব্যবসা শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বাইরের মানুষদেরও আমরা সেবা দিতে চাই। আমরা আমাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাই। এখন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দুটি, উত্তরায় দুটি, পুরানা পল্টনে একটি এবং আমেরিকান এমবাসিসংলগ্ন বারিধারায় একটি অত্যাধুনিক কনডোমিনিয়াম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামীতে কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় গ্রোথ সেন্টারভিত্তিক প্রকল্প নিতে চাই।’
ফ্ল্যাট শুধু একটি ঘর নয়, বসবাসের সব উপকরণের সংযুক্তি মানেই ফ্ল্যাট। আবাসন শিল্পে এ ধারার সঙ্গে নগরবাসীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সিপিডিএল যেখানে প্রকল্প নেয় সেই এলাকার পরিবেশও বদলে ফেলে। নান্দনিক চট্টগ্রাম সেøাগানে সর্বপ্রথম জামালখান এলাকায় সবুজ ও নান্দনিকের মিশ্রণ ঘটিয়ে সবুজায়ন কার্যক্রম শুরু করেছিল সিপিডিএল। আর এরই ধারাবাহিকতায় পরে পুরো নগরে ফুটপাত ও রোড ডিভাইডারে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া দেবপাহাড় এলাকায় সুলতানা গার্ডেনিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এলাকায় প্রবেশপথ থেকে শুরু করে পুরো এলাকার আউটলুকে পরিবর্তন এনেছে সিপিডিএল। এর আগে দক্ষিণ খুলশী এক নম্বর রোডে ‘বেলা দিস্তা’ প্রকল্পের জন্য পুরো একটি সড়ক নিজ খরচে করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ শুধু ফ্ল্যাট তৈরি এবং তা হস্তান্তর নয়, পুরো এলাকা নিয়ে কাজ করে তারা।
এ বিষয়ে সিপিডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘আমরা শুধু একটি ফ্ল্যাট নয়। এ ফ্ল্যাটে বসবাসকারী প্রতিটি বয়স গ্রুপের নাগরিকদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন ফিচার যুক্ত করে থাকি। যেমন শিশুদের জন্য কিডস জোন, বয়স্কদের জন্য বই পড়া কিংবা গল্প করার স্থান, জিম সুবিধা, ইয়োগা, হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে সব ফ্যাসিলিটি যুক্ত করা হয় আমাদের প্রকল্পে। একই সঙ্গে যে এলাকায় প্রকল্পটি নেওয়া হয় সেই এলাকাটিকে দৃষ্টিনন্দন করতেও প্রকল্প নেওয়া হয়। জামালখান, দেবপাহাড় ও খুলশীতে যেমনভাবে করা হয়েছে তেমনিভাবে অন্যান্য সব প্রকল্পে করা হচ্ছে।’
শুধু ফ্ল্যাট নয়, সিপিডিএল রেডি অফিস অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির ধারণাও যুক্ত করেছে নগরীতে। নগরীর খুলশীতে রহিমস প্লাজায় স্টুডিও অফিস চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন এ ধারণা প্রসঙ্গে সিপিডিএলের চিফ বিজনেস অফিসার জিয়াউল হক খান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে একটি অফিস কম্পাউন্ডের কনফারেন্স রুমসহ অন্যান্য অনেক রুম অপ্রয়োজনীয় অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই আমরা একটি অফিস কনফারেন্স রুমকে কেন্দ্র করে একাধিক স্টুডিও অফিস করেছি। এতে শিডিউলের ভিত্তিতে কনফারেন্স রুম ব্যবহার করা যায়। আবার একটি ফ্রন্ট ডেস্ক রেখে একাধিক অফিস পরিচালনা করা সম্ভব। আর্থিকভাবেও তা সাশ্রয়ী।’
আবাসিক ফ্ল্যাটের পাশাপাশি সিপিডিএল সেকেন্ড হোম কনসেপ্টও চালু করেছে নগরীতে। নগরীর ফয়’স লেকে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের আদলে চালু করেছে সেকেন্ড হোম। এতে বিনিয়োগকারীরা একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট কিনে পাঁচ তারকা হোটেলের সুবিধা নিয়ে থাকতে পারবে। ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রামে এলে এখানে থাকার সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে কেউ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কিনলে মাসিক ভাড়াও পাবে। মূলত মিরসরাই ইকোনমিক জোন, বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প আগামীতে চালু হতে যাচ্ছে। এসব প্রকল্পে অনেক বিদেশি এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামে আসবেন। তাদের পারিবারিক পরিবেশে আবাসন সুবিধা দিতে সিপিডিএল নতুন ধারার এ সেকেন্ড হোম স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট চালু করেছে।
চট্টগ্রামের আবাসন কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্যাটেলাইট সিটির কথা বলে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট ও নীতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে স্যাটেলাইট সিটি গড়ে উঠছে না। কিন্তু তাই বলে কি উন্নয়ন থমকে যাবে? সিপিডিএল আনোয়ারায় গড়ে তুলছে স্যাটেলাইট সিটি ‘অনিন্দ্য নগর’। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেলের মাধ্যমে সহজেই আনোয়ারার সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম নগর। নদীর ওপারের আনোয়ারায় জমির দাম সাশ্রয়ী হওয়ায় স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা গেলে গ্রাহকরা তুলনামূলক কম দামে ফ্ল্যাট পাবেন।’
সর্বোপরি শুধু ফ্ল্যাট তৈরি নয়, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং একটি নগরীর উন্নয়নেও কাজ করছে সিপিডিএল। একই সঙ্গে নতুন শহর গড়ে তুলতেও এগিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম শহরে লাইটিংয়ের জগতে অনন্য হোসেন লাইটিং। ৩২ বছর ধরে এ খাতে ব্যবসা করে আসা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘বেচা-বিক্রি কী করব, চাহিদা অনুযায়ী পণ্যই তো নেই। একটি ভবনের জন্য একই ধরনের ৫০টির কোনো আইটেমের দরকার হলে পাঁচ থেকে ছয়টির বেশি পাওয়া যায় না। আবার দামও আগের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ডলার সংকটের কারণে এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না বলে আমদানিও করা যাচ্ছে না।’ শুধু লাইটিংয়ের ক্ষেত্রে নয়, আবাসনে ব্যবহার্য প্রতিটি নির্মাণ উপকরণের ক্ষেত্রেই একই চিত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একটি সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের (ক্লিংকার, জিপসাম, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও লাইমস্টোন) দাম কিন্তু বাড়েনি। তারপরও দেশে ভোক্তা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এর কারণ টাকার অবমূল্যায়ন এবং সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে বাজারে।
এদিকে সিমেন্টের পাশাপাশি রডের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. কাজী আইনুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছয় মাস আগে যে রডের দাম ছিল টনপ্রতি ৬৫ হাজার টাকা সেই রড এখন লাখের কাছাকাছি। ভবন নির্মাণের প্রধান উপকরণই হলো রড। এখন রডের দাম এভাবে বাড়লে ভবন নির্মাণ করব কীভাবে?’
রড, সিমেন্ট, লাইটিং, স্যানিটারি উপকরণ সব পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যে দিশেহারা আবাসন খাত। শহরে গত এক বছর আগেও প্রতি বর্গফুট ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে ফ্ল্যাট পাওয়া যেত। এখন সেই একই ফ্ল্যাটের দাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম জোনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম বলেন, ‘জামালখান এলাকায় এখন প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দর ৮ হাজার টাকার বেশি। অর্থাৎ কম দামে আর ফ্ল্যাট নেই। নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডেভেলপাররা দাম কমাতে পারছেন না।’
উপকরণের দাম বাড়ায় ফ্ল্যাটের দামেও তার প্রভাব পড়েছে। ফলে ক্রেতারাও আশাহত। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কর্ণধারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রচুর গ্রাহক রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ এখন প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই আশাও কমে গেছে।
আবু বকর বিন হাশেম নগরীর একটি প্রাইভেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দেবপাহাড় এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য ২০২১ সালে প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৫ হাজার টাকায় নেওয়ার কথা বললেও এখন এর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৮ হাজার টাকা।
দাম বাড়ার প্রসঙ্গে সিপিডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়লে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। ফলে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে ফ্ল্যাট রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে ৩০ বছরেও বাড়েনি নগরীতে ফ্ল্যাটের বিস্তৃতি। নগরীতে আবাসন ফ্ল্যাট প্রকল্প সর্বপ্রথম চালু হয় ১৯৯২ সালে। নগরীর ষোলশহর সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকায় আইডিয়াল হোম ডেভেলপমেন্ট ‘আপন নিবাস’ নামে আবাসন প্রকল্প চালু করেছিল। সেই শুরুর পর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, খুলশী, পাঁচলাইশ, চকবাজার, মেহেদীবাগ, জামালখান, নন্দনকানন ও কোতোয়ালি এলাকায় ব্যাপকহারে ফ্ল্যাট তৈরি হলেও অন্যান্য এলাকায় তেমনভাবে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ফ্ল্যাট নির্মাণে আগ্রহী নয়।
ফ্ল্যাট প্রকল্প কিছু এলাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণ কী? শহরের ভেতরে প্রতি বর্গফুট ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি হলেও প্রান্তীয় এলাকায় দাম আরও কমে আসার কথা। কিন্তু সেসব এলাকায় ডেভেলপাররা প্রকল্প নিচ্ছেন না। এ বিষয়ে এপিক প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি এসএম আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এখনো চট্টগ্রাম শহর মানেই খুলশী, নাসিরাবাদ, মেহেদীবাগ, পাঁচলাইশ, জামালখান, চকবাজার ও নন্দনকানন এলাকা। এসব এলাকার বাইরে মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে চায় না। আর ক্রেতারা যেসব এলাকায় থাকতে চাইবে ডেভেলপাররাও সেসব এলাকায় ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। এটাই স্বাভাবিক।’
ডেভেলপারদের মতে, নগরীর অন্যান্য এলাকায় সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, শপিং মলসহ নগরবাসীর বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে মানুষ ওইসব এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হবে। বর্তমানে জাকির হোসেন রোডের নাসিরাবাদ প্রপার্টিজ, পলিটেকনিক এলাকায় এয়াকুব ফিউচার পার্ক এলাকায় অনেক ডেভেলপার ফ্ল্যাট প্রকল্প নিয়েছেন। মূলত খুলশী এলাকার ফ্লেভার দিতেই নাসিরাবাদের পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছেন ডেভেলপাররা। নগরীর জামালখান এলাকায় সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে সিপিডিএল। চট্টগ্রাম মহানগরীর নগরীর বিশদ উন্নয়ন পরিকল্পনা করে থাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
পুরো শহরে উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার অসাম্য প্রসঙ্গে সংস্থাটির সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘ডেভেলপাররা সবসময় প্রফিটবেইজ প্রকল্প নিয়ে থাকেন। তাই যেখানে তারা বেশি লাভ করতে পারবেন সেখানে প্রকল্প নেয়। কিন্তু নগরীর অন্যান্য এলাকায় মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য চাইলে প্রকল্প নেওয়া যায়।’
আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠার পেছনে নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও বড় একটি ফ্যাক্টর। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমাদের মতো সরকারি সংস্থাগুলো হালিশহর, পতেঙ্গা বা বাকলিয়া এলাকাগুলোতে হাসপাতাল, স্কুল, শপিং মলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। একই সঙ্গে সিডিএকে ওইসব এলাকায় প্লট বা ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করে অন্যদের উৎসাহিত করতে হবে।’
তবে প্রকল্প যেখানেই নেওয়া হোক না কেন, নির্মাণ উপকরণের দাম না কমলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আবাসন খাত। ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং মধ্যবিত্তের নাগালেরই বাইরে চলে যাবে। এতে শুধু উচ্চবিত্তদের জন্যই তৈরি হবে ফ্ল্যাট।
আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী রিহ্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান
‘অনেকে বক্তৃতায় বলেন, কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বেগমপাড়া গড়ে উঠছে। আমি বলব, এই বেগমপাড়া গড়ে ওঠার পেছনে আমাদের পলিসি দায়ী। মানুষের অর্থ যদি এখানে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হতো, তাহলে কখনোই দেশের বাইরে বেগমপাড়া গড়ে উঠত না।’ রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী এমন দাবি করেছেন। তিনি আক্ষেপ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে বৈধ টাকা পদ্ধতিগত কারণে কালো টাকায় পরিণত হয়ে যায়। আর তখন সেই কালোটাকা মানুষ দেশের বাইরে নিয়ে যায়। এসব টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।’
নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় আবাসন খাতের জন্য অশনিসংকেত অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে আবদুল কৈয়ূম বলেন, ‘আবাসন কোম্পানিগুলো পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের সুনজর দেওয়া খুব প্রয়োজন।’
সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সুবিধা প্রত্যাশা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকার ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি কমাতে পারে, ফ্ল্যাটের ট্রান্সফার ফি কমাতে পারে আর সেকেন্ডারি মার্কেট (ব্যক্তিপর্যায়ে ফ্ল্যাট বিক্রি) গড়ে তুলতে ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে। তবেই এই খাত টিকে থাকতে পারবে। অন্যথায় কভিডের পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অনেক কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।’
বর্তমানে লাক্সারি ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে কি বিত্তশালীদের চাহিদা বাড়ছে? আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্ল্যাট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য নয়। মধ্যবিত্তদের বাজেটে যারা ফ্ল্যাট নির্মাণ করত, এক দশকে তাদের অনেকে বাজার থেকে হারিয়ে গেছে। ফলে মধ্যবিত্তদের নাগালে ফ্ল্যাট নেই, উচ্চবিত্তদের জন্যই মূলত ফ্ল্যাট গড়ে তোলা হচ্ছে।’
ডলার সংকটের কারণে দেশে আবাসনশিল্পের ফিটিংস আইটেম আনতে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কী করা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সুুযোগে দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের প্রসার বাড়াতে পারে।’
ডা. কাজী আইনুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট
নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় আবাসন খাতের উত্তরণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, আর এতে এ খাতের জন্য অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আইনুল হক।
চট্টগ্রামে আবাসন খাতের অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব আইনুল হকের এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় একচেটিয়া ব্যবসা করেছিল। পরবর্তীতে অনেক কোম্পানি গড়ে উঠায় প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়েছেন। তবে প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন খুব ভালোভাবেই।
প্রায় দুই দশক আগের তুলনায় এখনকার আবাসন খাতের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা. আইনুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে খুঁটি গেড়ে দিলেই ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যেতো। গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরবর্তীতে ভবন নির্মাণ করতো ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন আর সেদিন নাই।’
তিনি বলেন, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করায় এখন গ্রাহক আগে ফ্ল্যাট চায়, পরে বুকিং। অর্থাৎ নিজের টাকায় ভবন নির্মাণের পর গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা যাবে। ব্যবসা অনেক কঠিন। আর এই কঠিনের মধ্যে নির্মাণ উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।
ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই উল্লেখ করে আইনুল হক বলেন, একটি প্রকল্পের যেসব ফ্ল্যাট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে চুক্তির সময় সেগুলোর যে দাম ছিল। এখন সেই দামে দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ নির্মাণ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো না হলে ব্যবসায় টিকে থাকা যাবে না বলে তিনি দাবি করেন।
কিন্তু চুক্তির পর দাম বাড়ানো সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কোউন্নয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে রিহ্যাব বা সরকারের পক্ষ থেকেও নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বাহ্যিকভাবে নান্দনিক এবং বসবাসে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করবে উইকন প্রপার্টিজের ফ্ল্যাট। উইকনের পক্ষ থেকে এমন নিশ্চয়তাই দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যায়। আর এর অন্যতম কারণ বলে দাবি করা হয়, ফ্ল্যাট ক্রেতাদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধব উইকনের ডিজাইনের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হলে তারা আগেভাগেই বুকিং দিয়ে রাখেন নতুন প্রকল্পে যেন তাদের জন্য ফ্ল্যাট রাখা হয়। আর এই আত্মবিশ্বাস থেকে আবাসনশিল্পে আসার মাত্র চার বছরের মধ্যে ১২টি প্রকল্প নিয়েছে উইকন প্রপার্টিজ; যা বর্তমান বাজারে অকল্পনীয় বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
এই অকল্পনীয় কাজটি করছে একদল তুখোড় তরুণ তুর্কি। যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভবনের ডিজাইনের কাজ করছে, আবার কেউ নির্মাণে অভিজ্ঞ। সব মিলিয়ে উইকন প্রপার্টিজ চট্টগ্রাম শহরে ধূমকেতুর মতো আগমন ঘটলেও বাজারে নিজেদের অবস্থান মজবুত রাখার আভাস দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আশরাফুল ইসলাম আলভি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা রিয়েল এস্টেটে আসার আগে পিটুপির মাধ্যমে নকশা প্রণয়ন, ভবন নির্মাণ, নির্মাণ উপকরণ, ইন্টেরিয়রসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে আসছি ২০১৩ সাল থেকে। ২০১৪ সালে আমরা কাজ করেছি ভবনের নির্মাণ উপকরণ নিয়ে, ২০১৫ সালে নকশা প্রণয়নে ও ফার্নিচার তৈরিতে, ২০১৬ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করি। আর এই অভিজ্ঞতা পুঁজি করে ২০১৯ সালে আবাসনশিল্পে আসা। দেশে রড, সিমেন্ট, ফার্নিচারসহ সব ধরনের নির্মাণ উপকরণ আমাদেরই নিজস্ব। আর এতেই আমরা এগিয়ে থাকব এই শিল্পে।’
প্রায় পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর জাকির হোসেন রোডে দক্ষিণ খুলশী আবদুল মালেক সড়কে নির্মিত ‘উইকন নূহ’স কেভ’ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৮ মাসে। করোনাকালে এই অসাধ্য কাজটি করেছে উইকন প্রপার্টিজ। এটি উইকনের প্রথম প্রকল্প। যেখানে অনেক ডেভেলপারের প্রকল্প হস্তান্তরের গড় সময় পাঁচ বছর। সর্বোচ্চ ৬০ কিস্তিতে প্রকল্পের ফ্ল্যাট গ্রহণের সুবিধা দিয়ে থাকেন ডেভেলপাররা, সেখানে মাত্র ১৮ মাসে প্রকল্প হস্তান্তর কীভাবে সম্ভব? তবে শুধু এই প্রকল্পই নয়, ইতিমধ্যে উইকনের আওতায় নির্মাণাধীন বাকি প্রকল্পগুলোও দেড় বছরে হস্তান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কীভাবে এ কাজ করছে উইকন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আশরাফুল ইসলাম আলভির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অন্যরা যেখানে কাজ করে আট ঘণ্টা। আমরা সেখানে কাজ করি ২৪ ঘণ্টা (তিন শিফট)। এতে অন্যরা এক বছরে যে পরিমাণ কাজ করতে পারে, আমরা তা চার মাসে সম্পাদন করতে পারি।’
উইকন প্রপার্টিজ নগরীর পাঁচলাইশে ‘উইকন শুকরানা’ নামে একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রিমিয়াম সেই প্রকল্পের স্থাপত্য নিদর্শন অনন্য। ১২তলা ভবনের প্রতি ফ্লোরে তিনটি করে ইউনিট রয়েছে। সুইমিং পুল, গার্ডেন, ওয়াকওয়ে, জিম, কিডস প্লে জোন, নামাজের জন্য জায়গাসহ ভবনে বসবাসকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটির ডিজাইনেও রয়েছে পুরাকীর্তি ও আধুনিক স্থাপত্যের মিশেল। উইকনের প্রায় প্রতিটি ভবনেই আধুনিক স্থাপত্য এবং নির্মাণ উপকরণ বিলাসবহুল।
এ বিষয়ে কথা হয় উইকনের আর্কিটেক্ট ও পরিচালক মেহেদী ইফতেখারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভবন নির্মাণে ডিজাইন করতে গিয়ে গ্রাহককে সর্বোচ্চ লাক্সারিয়াস সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করি। একই সঙ্গে ভবনের ইন্টেরিয়র এবং বৈদ্যুতিক পয়েন্ট জুতসই স্থানে বসানো হয়। ফ্ল্যাটের প্রতিটি জায়গা পরিমাপ করে ডিজাইন করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানসম্মত অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা এই শহরে রয়েছে। তাই আমরা প্রিমিয়াম ফ্ল্যাট নির্মাণ করছি। একই সঙ্গে আমরা বাতাসে আয়তন মেপে কোনো মূল্য নিচ্ছি না; অর্থাৎ একজন ক্রেতা যত বর্গফুট জায়গা ব্যবহার করবেন, ঠিক ততটুকুর মূল্য পরিশোধ করবেন। প্রতিটি জায়গা ইঞ্চি পরিমাণ মেপে ক্রেতা বুঝে নিতে পারবেন।’
বর্তমানে দক্ষিণ খুলশী ভিআইপি আবাসিক এলাকায় উইকন মে বেরি, রহমান নগরে উইকন ইকরা, কাতালগঞ্জে উইকন ক্যানোপি, চট্টেশ্বরী রোডে উইকন এম এন টাওয়ার ও উইকন রেইন ফরেস্ট, আমিরবাগে উইকন জেএম সাউথ লন, উত্তর খুলশীতে উইকন নর্থ, ওআর নিজাম রোডে উইকন মমতাজ ম্যানোর, হালিশহর জি ব্লকে উইকন হকস বে ল্যান্ডমার্ক, গোলপাহাড়ে উইকন স্কাইরিজ নামে প্রকল্প নিয়েছে উইকন।
খুলশী চট্টগ্রামের সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকা। পাহাড়ের ওপর গড়ে ওঠা এই আবাসিক এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০ ফুট ওপরে। এ এলাকায় করা জুমাইরার বহুতল ভবনে থাকছে সুইমিং পুল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এতটা উচ্চায় সুইমিং পুলে গোসলের অনুভূতি যে কাউকে বিমোহিত করবে।
খুলশী ৩(ক) নম্বর রোডে ‘জুমাইরা ইসলাম প্যালেস’ নামের ১৪তলা ভবনটির তিনটি ফ্লোরই পার্কিং হিসেবে ব্যবহৃত হবে। রয়েছে কার লিফটও। জুমাইরা ইসলাম প্যালেসের মতো প্রতিটি ভবনেই লাক্সারি ফ্ল্যাট দিচ্ছে নগরবাসীকে।
ভবনটিতে প্রবেশ করতেই ওপরের দিকে অনেক উঁচু মনে হবে। প্রকৃতপক্ষে তা উঁচু বটেই। নিচতলার ছাদটি ১৭ ফুট ওপরে আর ভবনে প্রবেশের সময় একটু অন্য রকম অনুভূতি দেবে যে কাউকে। অনেক ভবনে নামাজের কক্ষ ছাদের ওপরে কিংবা প্রথম তলায় থাকে। কিন্তু এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় মনোরম নকশার একটি প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে। প্রতি ফ্লোরে দুই ইউনিটের ফ্ল্যাট, প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ২৭০০ বর্গফুট। দুটি লিফট ও দুটি সিঁড়ির সমন্বয়ে গড়ে তোলা ভবনটির ছাদ পর্যন্ত লিফট সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া সুইমিং পুলের ওপরে ভবনের অন্য প্রান্তে রয়েছে ব্যাডমিন্টন কোর্ট। রয়েছে শিশুদের খেলার জায়গা, জিম, চেঞ্জরুম, লাইব্রেরি রুমসহ নানা সুবিধা।
দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন, নান্দনিক লবি, সবুজের সমারোহ এবং সুইমিং পুল সুযোগ-সুবিধাসংবলিত লাক্সারি ফ্ল্যাট দিচ্ছে জুমাইরাহ হোল্ডিংস। দুই দশক ধরে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এই প্রতিষ্ঠান নগরীতে গুলশানের ফ্ল্যাটের স্বাদ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্মিত এবং আগামীতে নির্মাণ হতে যাওয়া বিভিন্ন প্রকল্পে এমনই নকশা দেখা যাচ্ছে। নগরীর আমিরবাগ আবাসিক এলাকা, ওআর নিজাম রোড, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, হিলভিউ হাউজিং সোসাইটি, লাভলেইন, খুলশীসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করছে জুমাইরা।
বৈচিত্র্যময় নকশা, গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণ উপকরণ এবং লাক্সারিয়াস আইটেম ব্যবহারের কারণে ভবন নির্মাণে এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের ভবনগুলোর নকশা অন্যান্য ভবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দৃষ্টিনন্দন নকশার পাশাপাশি ভবন নির্মাণে সেরা উপকরণ ব্যবহার করি। এতে ফ্ল্যাট ব্যবহারকারীরা স্বাচ্ছন্দ্য পান।’
কিন্তু এত ভালো নির্মাণ উপকরণ ও ভবন সাজাতে ভালো আইটেম দিতে গেলে ফ্ল্যাটের মূল্য তো বেড়ে যাবে। এত দাম দিয়ে কি মানুষ ফ্ল্যাট কিনবে? মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ভালো জিনিস পেলে মানুষ দাম দিতেও রাজি। আমরা এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছি। দাম দিয়েই মানুষ কিনছে এবং তাদের আস্থায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে নির্মাণ উপকরণের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু তারপরও আমরা গ্রাহকের সঙ্গে যে দরে চুক্তি করেছি, সেই দরেই ফ্ল্যাট হস্তান্তর করছি। নান্দনিক ডিজাইনের পাশাপাশি ভালো সার্ভিসের মাধ্যমে আমরা এই শহরেই নগরবাসীকে গুলশানের ফ্ল্যাটের স্বাদ দিচ্ছি।’ আবাসন ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় ফ্ল্যাট মানে ছিল একটি বাসা। কিন্তু বর্তমানে একটি ফ্ল্যাটে নাগরিকদের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকতে হয়। এমনকি হ্যালিপ্যাডও যুক্ত করা হচ্ছে। আর তাই একসময় ডেভেলপাররা ৫ থেকে ৭ কাঠায় প্রকল্প নিতেন, কিন্তু এখন ১০ কাঠার কম আয়তনের জমিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না। এর কারণ কী? জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘বর্তমানে ফ্ল্যাটের কনসেপ্ট বদলে গেছে। ফ্ল্যাট মানে শুধু ঘর নয়। ফ্ল্যাট মানে হলো একটি পরিবার বসবাস করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সবই থাকতে হবে ফ্ল্যাটের কম্পাউন্ডের মধ্যে। আর তা করতে গিয়ে জায়গার পরিমাণ বাড়াতে হয়। কম জায়গায় সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় না।’
জুমাইরা প্রকল্পগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন ও বিপণনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম (নয়ন)। জুমাইরার সব প্রকল্পে সুইমিং পুল যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু সুইমিং পুল নয়, নাগরিক সুবিধার সব উপাদান আমরা ফ্ল্যাটে বসবাসকারীদের দিয়ে আসছি। নগরসভ্যতায় এখন শিশুরা সাঁতার জানে না। তাই সাঁতার শেখার জন্য যেমন সুইমিং পুল রাখা হচ্ছে, তেমনিভাবে শিশুদের বিকাশের জন্য খেলার জায়গা, গেম জোন, জিম জোন, লাইব্রেরি, ব্যাডমিন্টনসহ নানাবিধ কম্পোনেন্ট রাখা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে জুমাইরাহ গড়ে ওঠার পর থেকে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে নগরীতে প্রায় শীর্ষে রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের প্রকল্পের সংখ্যাও বেশি। নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষিত। আর এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের আস্থাও বেড়েছে কয়েক গুণ।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
জীবনালেখ্য
কারি আবদুল খালিক। এক নামে তাকে ঢাকার আলেমরা চেনেন। হাজার হাজার আলেমের ওস্তাদ। কোরআন শিক্ষায় নিবেদিত শ্যামবর্ণের মানুষটির জীবন ত্যাগ ও সাধনার। দুনিয়াবিমুখ এই মনীষীর জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের দ্যুতি তার জীবনের কর্মশক্তি। লিখেছেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ
ধর্মপ্রাণ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে দ্বীন দরদি মানুষের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়। সাধারণ সম্পদশালীরা তাদের সম্পত্তির কিছু অংশ মসজিদন্ডমাদ্রাসা, খানকা-ঈদগাহ ও গোরস্তানসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে দান করে থাকেন। এর ব্যতিক্রম দৃষ্টান্তও আছে। রয়েছে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঘর-বাড়িসহ ভিটেমাটি দান করার নজির। ইসলামের প্রচার-প্রসার আর কোরআন-হাদিস শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ আছেন বলেই এখনো দুনিয়ার বুকে ইসলাম টিকে আছে। দুনিয়ার কোনো স্বার্থ নয়, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের নিমিত্তে এমন আত্মত্যাগের ঘটনা সমাজে বিরল। কখনো তা ইতিহাসে পাতায় লেখা হয়, আবার কখনো তা থাকে অনুচ্চারিত।
আজ এমনই এক মহৎপ্রাণ মানুষের কথা আলোচনা করব, যিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ একমাত্র ঘরটি ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। আলোকিত এই মানুষের নাম হাফেজ কারি আবদুল খালিক আসআদী।
কারি আবদুল খালিকের জন্ম বর্তমান বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জে ১৮৩৮ সালে। পিতা মৌলভী আরশাদ আলী (রহ.)। ১২ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। মাতৃবিয়োগের শোক তাকে দ্বীনের পথে আসতে অনুপ্রেরণা দেয়। গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মোরেলগঞ্জ রাজৈর সিনিয়র মাদ্রাসায় কিছুদিন পড়ালেখা করেন। পরে ভগ্নিপতি মরহুম মাওলানা ইউসুফের হাত ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন পড়াশোনা শেষে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে হেফজ শেষ করেন। হেফজ শেষে হেদায়াতুন্নাহু কিতাব পড়ার পর তিন বছর (১৯৬২-৬৪) পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসায় কারি ইহসান আহমদ থানভী (রহ.) ও কারি শাকের আহমদ (রহ.)-এর কাছে ইলমুল কেরাত পড়েন। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় তার আব্বার ইন্তেকাল হয়।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে খুলনা শিরোমণি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই বছরই তিনি বাগেরহাট জেলার রামপাল নিবাসী মরহুম মাওলানা আতহারুল ইসলাম খানের বড় মেয়ে আমিনা খাতুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
এখন থেকে ৬১ বছর আগে বাগেরহাটের মতো একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ইলমে দ্বীন শিক্ষার জন্য ঢাকা-পাকিস্তান গমন সোজা কথা নয়। তখনকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার প্রতিকূলতা জয় করতে সক্ষম হন শুধু কোরআনের ভালোবাসায়। নানা কারণে শিক্ষা জীবনের আনুষ্ঠানিক সফল পরিসমাপ্তি তার হয়ে ওঠেনি। এই না পাওয়াকে তিনি অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতায় তার একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা তাকে সাফল্য এনে দেয়। তিনি পরিচিতি পেয়েছেন, কিন্তু থেমে যাননি, এই পরিচয়কে দুনিয়ার পদন্ডপদবি লাভ ও সহায়-সম্পত্তি উপার্জনের হাতিয়ার বানাননি। তার স্বপ্ন ও ধ্যান ছিল ইসলামকে বিজয়ীরূপে দেখা। সমাজের আনাচে-কানাচে কোরআনের শিক্ষা প্রসার ঘটানো।
ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে ছিলেন। গেণ্ডারিয়া জামালুল কোরআন মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি, এর নামকরণও তার। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তার ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারিরা আরজাবাদ মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেয়। তখন তিনি সতীশ সরকার রোড, জোরপুল লেন মসজিদে নামাজ পড়াতেন। সেখানে একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতার জন্য দোয়া করলে রাজাকাররা তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করে। পরে মসজিদের মোতোয়ালি রাতের আঁধারে তাকে নিরাপদে সরিয়ে দেন। ওই সময় তিনি কিছুদিন চট্টগ্রামের শোলকবহর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের এক-দেড় বছর পর পুনরায় আরজাবাদ মাদ্রাসায় যোগ দেন।
যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় আরজাবাদ ফিরে আসেন। এখন পর্যন্ত তিনি আরজাবাদেই শিক্ষকতা করছেন। বার্ধক্যজনিত নানাবিধ অসুস্থতার দরুন তিনি বাসা থেকে খুব একটা বের হন না। তার পরও নিয়ম করে মাদ্রাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেন।
সাদামাটা জীবনের অধিকারী কারি আবদুল খালিক কখনো সহায়-সম্পদের দিকে আগ্রহী হননি। হাজার হাজার ছাত্রই তার কাছে সাত রাজার ধন। আশির দশক পর্যন্ত তার নিজ গ্রামে কোনো কওমি মাদ্রাসা ছিল না। এমনকি এখনো ওই এলাকার মানুষ কওমি মাদ্রাসাকে ‘খারেজি’ মাদ্রাসা বলে ডাকে। এমন পরিবেশে তিনিই প্রথম মাদ্রাসা হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মৌলভীরহাট ও সায়্যিদ আরশাদ মাদানি মাদ্রাসাতুল বানাত নামে দুটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদানি পরিবারের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে সায়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.), সায়্যিদ আরশাদ মাদানি ও সায়্যিদ আসজাদ মাদানিও তাকে ভালোবেসে, দুর্গম এলাকায় অবস্থিত তার প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার সফর করেছেন।
১৯৮০ সালে দক্ষিণ চিংড়াখালী গ্রামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময় তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ ঘরটি মাদ্রাসার জন্য ওয়াকফ করে দিয়ে স্ত্রী এবং ছোট ছোট ৬ সন্তানকে নিজের চাচার ঘরে রেখে ঘর খুলে মাদ্রাসার ঘর নির্মাণের জন্য নিয়ে যান। পরবর্তীতে তার শ্বশুর জায়গার দাম পরিশোধ করে নতুন করে ঘর তুলে দেন। সম্পদ বলতে তার এতটুকুই।
কারি আবদুল খালিকের নয় সন্তান। ছয় ছেলে, তিন মেয়ে। বড় ছেলে হাফেজে কোরআন। পরের চারজন মাওলানা। দুই মেয়ের একজন আলেম। দুই জামাতার একজন দারুল উলুম দেওবন্দ পড়–য়া আলেম, অন্যজন মুফতি। তৃতীয় মেয়ে হেফজ শেষ করার পর এবং এক ছেলে ১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করে জান্নাতের মেহমান হয়েছেন। এখন সাত সন্তান নিয়ে তার সংসার। কারি সাহেবের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের মাঝে হাফেজে কোরআন ১০ জন, মাওলানা ৯ জন, (দাওরা শেষ করে) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা লাভকারী ২ জন। বর্তমানে কারি সাহেবের পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের ১৫ জন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। কারি আবদুল খালিক শুধু শিক্ষকতাতেই মনোনিবেশ করেননি। সুলুক-তাসাউফের মেহনতও করেছেন। প্রথমে সায়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.) ও পরে সায়্যিদ আরশাদ মাদানির হাতে বায়াত হন। এদিকে আরজাবাদ মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মুফতি তাজুল ইসলামও তাকে খেলাফত প্রদান করেছেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন।
ষাটের দশকে পড়াশোনার জন্য পাকিস্তান সফর করেছেন। এ ছাড়া একাধিকবার ভারত সফর করেছেন। পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশে তিনি সৌদি আরবও গমন করেছেন। আজীবন প্রতিবাদী চেতনার কারি আবদুল খালিক ওস্তাদ হিসেবে মোজাহেদে মিল্লাত আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আল্লামা কাসেমীর নেতৃত্বে ইসলামবিরোধী নানাবিধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে তৌহিদি জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি মসজিদের স্থলে খুতবা পাঠের সময় পুলিশের বেয়নেট চার্জে রক্তাক্ত হন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো শিক্ষাচুক্তি না থাকায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য দেওবন্দ কর্র্তৃক মনোনীত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সত্যায়নপত্র নিতে হয়। বিগত ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সত্যায়নপত্র দাতাদের একজন কারি আবদুল খালিক আসআদী। এ ছাড়া গত চার দশক ধরে বাংলাদেশে সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর পরিবারের সদস্যদের দ্বীনি সফরের ব্যবস্থাপনায় জড়িত।
স্পষ্টবাদী ও আমানতদার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তার। পরিচিত যে কেউ তাকে একবাক্যে দ্বীনের একজন নিঃস্বার্থ খাদেম হিসেবে অভিহিত করেন। নিজের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের অনেকেই তার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। তার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পেয়ে অসংখ্য পরিবার স্বাবলম্বী হলেও তিনি ছয় দশক ধরে ঢাকায় বাস করলেও এখনো ভাড়া বাসায় থাকেন। ঢাকায় তার কোনো সহায়-সম্পদ নেই এবং গ্রামেও কোনো ফসলি জমিজমা নেই। সারাজীবন মসজিদন্ডমাদ্রাসা, দ্বীনি সংগঠন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের পেছনে নিজের সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করছেন।
কারি আবদুল খালিকের মতো নিঃস্বার্থ মানুষ এ সময়ে বিরল। ছাত্র অন্তঃপ্রাণ এই দরদি শিক্ষকের স্নেহ, মায়া-মমতা আর ভালোবাসার ফসল হিসেবে দেশের আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার আলেম, হাফেজ ও কারি। আলোকিত এক সমাজের দিকপাল তিনি। দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থতার সঙ্গে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত থাকার তওফিক দান করুন। তার স্বপ্নগুলো আলোর মুখ দেখুক।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।