
প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন পরিচালক, এপিক প্রপার্টিজ
আমরা তিন বন্ধু (আমি, আবু সুফিয়ান ও নসরুল হক) চুয়েটে (চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) একই রুমে কাটিয়েছি সাত বছর। ১৯৯৭ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর বন্ধু নসরুলের প্রেরণায় একসঙ্গে শুরু করি প্র্যাকটিসিং। ১৯৯৮ সালে এপিক ইঞ্জিনিয়ারিং ‘এন’ আর্কিটেক্ট নামে একটি ফার্মও গঠন করি। সেই ফার্মের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক কাজও শুরু করি। বিনা পুঁজিতে শুরু করা সেই কার্যক্রমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বন্ধু সুফিয়ানের বড় ভাই লোকমান কবির। যিনি এখন এপিক প্রপার্টিজের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তার নিজস্ব গাড়িটি ব্যবহার করে আমাদের কাজ করতে পাহাড়ে ছুটে যেতাম। চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক ভবনের নকশা ও নির্মাণকাজ তখন আমরা শুরু করেছিলাম। আমরা তিন বন্ধু মিলে তখন দুই লাখ টাকায় একটি হাইলাক্স গাড়িও কিনেছিলাম। অফিস হিসেবে ব্যবহার করতাম লোকমান ভাইয়ের রেডিমেড অফিস।
ভালোই চলছিল। কিন্তু নয় মাস পরেই তিনজন থেকে দুজন হয়ে গেলাম। নসরুল সরে যাওয়ার পর আমাদের দুজনের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে যুক্ত করি লোকমান ভাইকে। সেই যে আমাদের তিনজনের যুগপৎ পথ চলা, আজও তা মসৃণভাবেই চলছে।
আমাদের এপিক প্রপার্টিজের আওতায় বিডকো, এপিক অ্যাগ্রো, এপিক এনার্জি, এপিক হেলথ কেয়ার, হোটেল সি ইন, এপিক ইঞ্জিনিয়ারিং ‘এন’ আর্কিটেক্টস, এপিক রেডিমিক্স অ্যান্ড কংক্রিট নামে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তিনজনই প্রকৌশলীর ছাত্র হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরে স্থাপনা নির্মাণ ও ডিজাইনে আলাদা প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) পেতাম। আমরা কুমিরায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস, বিএসআরএম, কেএসআরএম, সানম্যান গ্রুপ, এসআলম গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপের বিভিন্ন স্থাপনা এবং সেন্ট প্লাসিড স্কুলের ভবন, এশিয়ান এসআর হোটেল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের পর ২০০৩ সালে গঠন করি এপিক প্রপার্টিজ।
দক্ষিণ খুলশীতে আমার নিজের কেনা ভূমিতে ‘এপিক সূচনা’ নামে ছয়তলার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে সূচনা হয় এপিক প্রপার্টিজের। সেই যে শুরু, এখন পর্যন্ত আমরা ৬০টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। এসব প্রকল্পে আড়াই হাজারের বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এসবের বাইরে বর্তমানে ১৫টি প্রকল্প (রেডি ও চলমান) রয়েছে, যেখানে বিক্রয়যোগ্য অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ২০০-এর বেশি।
গড়ে তোলার পর থেকেই এপিক ক্রিটিক্যাল ডিজাইনে আগ্রহী ছিল এবং এখনো সেই অবস্থায় রয়েছে। এপিকের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো পাহাড়ে ডিজাইন ও এর সফল বাস্তবায়ন। চট্টগ্রাম শহরে খুলশী ১ নম্বর রোডে এপিক নির্মাণ করেছে নান্দনিক প্রকল্প। একসময় এখানে কেউ ভবন নির্মাণের সাহস দেখায়নি। কিন্তু এপিক দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৌশলবিদ্যার সঠিক প্রয়োগে বহুতল ভবন নির্মাণ করা যায়। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের বিপরীত দিকে পাহাড়ে ‘এপিক অঙ্গন’ নামে একটি প্রকল্প নির্মাণ শেষে সফলভাবে তা হস্তান্তর করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নগরীর চকবাজার পার্সিভিল হিলেও একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সঠিক নির্মাণ পরিকল্পনায় পাহাড় রেখেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করি এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) যাচাই-বাছাই করেই আমাদের অনুমোদন দেয়।
এপিকের এই দীর্ঘ পথচলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন ‘এপিক হেলথ কেয়ার’। মানুষকে সেবা দেওয়ার সফলতায় প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এগিয়েছে। বর্তমানে এর তিনটি শাখাও চালু করা হয়েছে। আমরা গরিব রোগীদের বিশেষভাবে সার্ভিস দিয়ে থাকি; বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে আনা-নেওয়ার মাধ্যমে প্যাথলজি টেস্ট করে থাকি নামমাত্র মূল্যে। আমাদের সেবা আরও ছড়িয়ে দিতে চাই।
সবশেষে একটি কথা না বললেই নয়, অংশীদারি ব্যবসায় সেক্রিফাইস মেন্টালিটি (ত্যাগী মনোভাব) না হলে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস রেখেই এগিয়ে যাচ্ছি, যেতে চাই বহুদূর।
চট্টগ্রামের আবাসন শিল্পে ২০০৫ সালে সূর্যোদয়ের মতো আবির্ভূত হয় সিপিডিএল। নন্দনকাননে নন্দন ভ্যালি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও নগরীর প্রাণকেন্দ্র জামালখানে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে থাকে। তখনকার সময়ে আবাসন খাতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত ছিল না। কিন্তু সিপিডিএল নির্ধারিত সময়ের আগে প্রকল্প হস্তান্তরের চর্চা চালু করে। এ কারণে ভূমি মালিকদের অনেকে যেমন সিপিডিএলের কাছে ছুটে আসে তেমনি ফ্ল্যাট ক্রেতাদেরও পছন্দের শীর্ষে পৌঁছে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
ক্রেতাবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে করতে জামালখান, মেহেদীবাগ, খুলশী, পাথরঘাটা, নন্দনকানন, দেবপাহাড়, কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, ফয়’স লেকসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প নিয়েছে। পাশাপাশি নগরীর বাইরে আনোয়ারায় স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলার উদ্যোগও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু কি আনোয়ারা? চট্টগ্রামের গ-ি পেরিয়ে এখন ঢাকায়ও সদর্পে এগিয়ে চলছে সিপিডিএল। ২০২০ সালে ঢাকায় প্রকল্প নেওয়ার পর থেকে ইতিমধ্যে ছয়টির কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জামালখান এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও নগরীর মেহেদীবাগে তারা সর্বপ্রথম বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নির্মাণ করে। ‘ক্রিমসন ক্লোভার’ নামের একটি কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে প্রতিটি ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন আয়তন ছিল দুই হাজার বর্গফুটের ওপরে এবং সেটিতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অনেকটাই যুক্ত করায় অনেকের কাছে এখনো তা ঈর্ষণীয় প্রকল্প। আর এরই ধারাবাহিকতায় আরও বড় আকারে নগরের দেবপাহাড় এলাকায় পাহাড় ও সমতলের সংমিশ্রণে নেওয়া হয়েছে ‘সিপিডিএল সুলতানা গার্ডেনিয়া’ নামের একটি প্রকল্প। চার টাওয়ারের সেই প্রকল্পে রয়েছে ১৩৬০ থেকে ২৪৩৫ বর্গফুট সাইজের ১৫৫টি ফ্ল্যাট। গত ১৮ বছরে চট্টগ্রামে ২৬টি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে, বর্তমানে চলমান রয়েছে আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ।
চট্টগ্রামে ব্যবসা শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বাইরের মানুষদেরও আমরা সেবা দিতে চাই। আমরা আমাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাই। এখন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দুটি, উত্তরায় দুটি, পুরানা পল্টনে একটি এবং আমেরিকান এমবাসিসংলগ্ন বারিধারায় একটি অত্যাধুনিক কনডোমিনিয়াম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামীতে কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় গ্রোথ সেন্টারভিত্তিক প্রকল্প নিতে চাই।’
ফ্ল্যাট শুধু একটি ঘর নয়, বসবাসের সব উপকরণের সংযুক্তি মানেই ফ্ল্যাট। আবাসন শিল্পে এ ধারার সঙ্গে নগরবাসীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সিপিডিএল যেখানে প্রকল্প নেয় সেই এলাকার পরিবেশও বদলে ফেলে। নান্দনিক চট্টগ্রাম সেøাগানে সর্বপ্রথম জামালখান এলাকায় সবুজ ও নান্দনিকের মিশ্রণ ঘটিয়ে সবুজায়ন কার্যক্রম শুরু করেছিল সিপিডিএল। আর এরই ধারাবাহিকতায় পরে পুরো নগরে ফুটপাত ও রোড ডিভাইডারে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া দেবপাহাড় এলাকায় সুলতানা গার্ডেনিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এলাকায় প্রবেশপথ থেকে শুরু করে পুরো এলাকার আউটলুকে পরিবর্তন এনেছে সিপিডিএল। এর আগে দক্ষিণ খুলশী এক নম্বর রোডে ‘বেলা দিস্তা’ প্রকল্পের জন্য পুরো একটি সড়ক নিজ খরচে করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ শুধু ফ্ল্যাট তৈরি এবং তা হস্তান্তর নয়, পুরো এলাকা নিয়ে কাজ করে তারা।
এ বিষয়ে সিপিডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘আমরা শুধু একটি ফ্ল্যাট নয়। এ ফ্ল্যাটে বসবাসকারী প্রতিটি বয়স গ্রুপের নাগরিকদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন ফিচার যুক্ত করে থাকি। যেমন শিশুদের জন্য কিডস জোন, বয়স্কদের জন্য বই পড়া কিংবা গল্প করার স্থান, জিম সুবিধা, ইয়োগা, হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে সব ফ্যাসিলিটি যুক্ত করা হয় আমাদের প্রকল্পে। একই সঙ্গে যে এলাকায় প্রকল্পটি নেওয়া হয় সেই এলাকাটিকে দৃষ্টিনন্দন করতেও প্রকল্প নেওয়া হয়। জামালখান, দেবপাহাড় ও খুলশীতে যেমনভাবে করা হয়েছে তেমনিভাবে অন্যান্য সব প্রকল্পে করা হচ্ছে।’
শুধু ফ্ল্যাট নয়, সিপিডিএল রেডি অফিস অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির ধারণাও যুক্ত করেছে নগরীতে। নগরীর খুলশীতে রহিমস প্লাজায় স্টুডিও অফিস চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন এ ধারণা প্রসঙ্গে সিপিডিএলের চিফ বিজনেস অফিসার জিয়াউল হক খান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে একটি অফিস কম্পাউন্ডের কনফারেন্স রুমসহ অন্যান্য অনেক রুম অপ্রয়োজনীয় অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই আমরা একটি অফিস কনফারেন্স রুমকে কেন্দ্র করে একাধিক স্টুডিও অফিস করেছি। এতে শিডিউলের ভিত্তিতে কনফারেন্স রুম ব্যবহার করা যায়। আবার একটি ফ্রন্ট ডেস্ক রেখে একাধিক অফিস পরিচালনা করা সম্ভব। আর্থিকভাবেও তা সাশ্রয়ী।’
আবাসিক ফ্ল্যাটের পাশাপাশি সিপিডিএল সেকেন্ড হোম কনসেপ্টও চালু করেছে নগরীতে। নগরীর ফয়’স লেকে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের আদলে চালু করেছে সেকেন্ড হোম। এতে বিনিয়োগকারীরা একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট কিনে পাঁচ তারকা হোটেলের সুবিধা নিয়ে থাকতে পারবে। ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রামে এলে এখানে থাকার সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে কেউ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কিনলে মাসিক ভাড়াও পাবে। মূলত মিরসরাই ইকোনমিক জোন, বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প আগামীতে চালু হতে যাচ্ছে। এসব প্রকল্পে অনেক বিদেশি এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামে আসবেন। তাদের পারিবারিক পরিবেশে আবাসন সুবিধা দিতে সিপিডিএল নতুন ধারার এ সেকেন্ড হোম স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট চালু করেছে।
চট্টগ্রামের আবাসন কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্যাটেলাইট সিটির কথা বলে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট ও নীতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে স্যাটেলাইট সিটি গড়ে উঠছে না। কিন্তু তাই বলে কি উন্নয়ন থমকে যাবে? সিপিডিএল আনোয়ারায় গড়ে তুলছে স্যাটেলাইট সিটি ‘অনিন্দ্য নগর’। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেলের মাধ্যমে সহজেই আনোয়ারার সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম নগর। নদীর ওপারের আনোয়ারায় জমির দাম সাশ্রয়ী হওয়ায় স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা গেলে গ্রাহকরা তুলনামূলক কম দামে ফ্ল্যাট পাবেন।’
সর্বোপরি শুধু ফ্ল্যাট তৈরি নয়, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং একটি নগরীর উন্নয়নেও কাজ করছে সিপিডিএল। একই সঙ্গে নতুন শহর গড়ে তুলতেও এগিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম শহরে লাইটিংয়ের জগতে অনন্য হোসেন লাইটিং। ৩২ বছর ধরে এ খাতে ব্যবসা করে আসা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘বেচা-বিক্রি কী করব, চাহিদা অনুযায়ী পণ্যই তো নেই। একটি ভবনের জন্য একই ধরনের ৫০টির কোনো আইটেমের দরকার হলে পাঁচ থেকে ছয়টির বেশি পাওয়া যায় না। আবার দামও আগের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ডলার সংকটের কারণে এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না বলে আমদানিও করা যাচ্ছে না।’ শুধু লাইটিংয়ের ক্ষেত্রে নয়, আবাসনে ব্যবহার্য প্রতিটি নির্মাণ উপকরণের ক্ষেত্রেই একই চিত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একটি সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের (ক্লিংকার, জিপসাম, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও লাইমস্টোন) দাম কিন্তু বাড়েনি। তারপরও দেশে ভোক্তা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এর কারণ টাকার অবমূল্যায়ন এবং সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে বাজারে।
এদিকে সিমেন্টের পাশাপাশি রডের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. কাজী আইনুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছয় মাস আগে যে রডের দাম ছিল টনপ্রতি ৬৫ হাজার টাকা সেই রড এখন লাখের কাছাকাছি। ভবন নির্মাণের প্রধান উপকরণই হলো রড। এখন রডের দাম এভাবে বাড়লে ভবন নির্মাণ করব কীভাবে?’
রড, সিমেন্ট, লাইটিং, স্যানিটারি উপকরণ সব পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যে দিশেহারা আবাসন খাত। শহরে গত এক বছর আগেও প্রতি বর্গফুট ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে ফ্ল্যাট পাওয়া যেত। এখন সেই একই ফ্ল্যাটের দাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম জোনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম বলেন, ‘জামালখান এলাকায় এখন প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দর ৮ হাজার টাকার বেশি। অর্থাৎ কম দামে আর ফ্ল্যাট নেই। নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডেভেলপাররা দাম কমাতে পারছেন না।’
উপকরণের দাম বাড়ায় ফ্ল্যাটের দামেও তার প্রভাব পড়েছে। ফলে ক্রেতারাও আশাহত। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কর্ণধারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রচুর গ্রাহক রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ এখন প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই আশাও কমে গেছে।
আবু বকর বিন হাশেম নগরীর একটি প্রাইভেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দেবপাহাড় এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য ২০২১ সালে প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৫ হাজার টাকায় নেওয়ার কথা বললেও এখন এর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৮ হাজার টাকা।
দাম বাড়ার প্রসঙ্গে সিপিডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়লে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। ফলে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে ফ্ল্যাট রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে ৩০ বছরেও বাড়েনি নগরীতে ফ্ল্যাটের বিস্তৃতি। নগরীতে আবাসন ফ্ল্যাট প্রকল্প সর্বপ্রথম চালু হয় ১৯৯২ সালে। নগরীর ষোলশহর সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকায় আইডিয়াল হোম ডেভেলপমেন্ট ‘আপন নিবাস’ নামে আবাসন প্রকল্প চালু করেছিল। সেই শুরুর পর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, খুলশী, পাঁচলাইশ, চকবাজার, মেহেদীবাগ, জামালখান, নন্দনকানন ও কোতোয়ালি এলাকায় ব্যাপকহারে ফ্ল্যাট তৈরি হলেও অন্যান্য এলাকায় তেমনভাবে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ফ্ল্যাট নির্মাণে আগ্রহী নয়।
ফ্ল্যাট প্রকল্প কিছু এলাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণ কী? শহরের ভেতরে প্রতি বর্গফুট ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি হলেও প্রান্তীয় এলাকায় দাম আরও কমে আসার কথা। কিন্তু সেসব এলাকায় ডেভেলপাররা প্রকল্প নিচ্ছেন না। এ বিষয়ে এপিক প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি এসএম আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এখনো চট্টগ্রাম শহর মানেই খুলশী, নাসিরাবাদ, মেহেদীবাগ, পাঁচলাইশ, জামালখান, চকবাজার ও নন্দনকানন এলাকা। এসব এলাকার বাইরে মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে চায় না। আর ক্রেতারা যেসব এলাকায় থাকতে চাইবে ডেভেলপাররাও সেসব এলাকায় ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। এটাই স্বাভাবিক।’
ডেভেলপারদের মতে, নগরীর অন্যান্য এলাকায় সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, শপিং মলসহ নগরবাসীর বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে মানুষ ওইসব এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হবে। বর্তমানে জাকির হোসেন রোডের নাসিরাবাদ প্রপার্টিজ, পলিটেকনিক এলাকায় এয়াকুব ফিউচার পার্ক এলাকায় অনেক ডেভেলপার ফ্ল্যাট প্রকল্প নিয়েছেন। মূলত খুলশী এলাকার ফ্লেভার দিতেই নাসিরাবাদের পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছেন ডেভেলপাররা। নগরীর জামালখান এলাকায় সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে সিপিডিএল। চট্টগ্রাম মহানগরীর নগরীর বিশদ উন্নয়ন পরিকল্পনা করে থাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
পুরো শহরে উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার অসাম্য প্রসঙ্গে সংস্থাটির সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘ডেভেলপাররা সবসময় প্রফিটবেইজ প্রকল্প নিয়ে থাকেন। তাই যেখানে তারা বেশি লাভ করতে পারবেন সেখানে প্রকল্প নেয়। কিন্তু নগরীর অন্যান্য এলাকায় মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য চাইলে প্রকল্প নেওয়া যায়।’
আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠার পেছনে নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও বড় একটি ফ্যাক্টর। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমাদের মতো সরকারি সংস্থাগুলো হালিশহর, পতেঙ্গা বা বাকলিয়া এলাকাগুলোতে হাসপাতাল, স্কুল, শপিং মলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। একই সঙ্গে সিডিএকে ওইসব এলাকায় প্লট বা ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করে অন্যদের উৎসাহিত করতে হবে।’
তবে প্রকল্প যেখানেই নেওয়া হোক না কেন, নির্মাণ উপকরণের দাম না কমলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আবাসন খাত। ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং মধ্যবিত্তের নাগালেরই বাইরে চলে যাবে। এতে শুধু উচ্চবিত্তদের জন্যই তৈরি হবে ফ্ল্যাট।
আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী রিহ্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান
‘অনেকে বক্তৃতায় বলেন, কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বেগমপাড়া গড়ে উঠছে। আমি বলব, এই বেগমপাড়া গড়ে ওঠার পেছনে আমাদের পলিসি দায়ী। মানুষের অর্থ যদি এখানে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হতো, তাহলে কখনোই দেশের বাইরে বেগমপাড়া গড়ে উঠত না।’ রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী এমন দাবি করেছেন। তিনি আক্ষেপ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে বৈধ টাকা পদ্ধতিগত কারণে কালো টাকায় পরিণত হয়ে যায়। আর তখন সেই কালোটাকা মানুষ দেশের বাইরে নিয়ে যায়। এসব টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।’
নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় আবাসন খাতের জন্য অশনিসংকেত অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে আবদুল কৈয়ূম বলেন, ‘আবাসন কোম্পানিগুলো পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের সুনজর দেওয়া খুব প্রয়োজন।’
সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সুবিধা প্রত্যাশা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকার ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি কমাতে পারে, ফ্ল্যাটের ট্রান্সফার ফি কমাতে পারে আর সেকেন্ডারি মার্কেট (ব্যক্তিপর্যায়ে ফ্ল্যাট বিক্রি) গড়ে তুলতে ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে। তবেই এই খাত টিকে থাকতে পারবে। অন্যথায় কভিডের পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অনেক কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।’
বর্তমানে লাক্সারি ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে কি বিত্তশালীদের চাহিদা বাড়ছে? আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্ল্যাট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য নয়। মধ্যবিত্তদের বাজেটে যারা ফ্ল্যাট নির্মাণ করত, এক দশকে তাদের অনেকে বাজার থেকে হারিয়ে গেছে। ফলে মধ্যবিত্তদের নাগালে ফ্ল্যাট নেই, উচ্চবিত্তদের জন্যই মূলত ফ্ল্যাট গড়ে তোলা হচ্ছে।’
ডলার সংকটের কারণে দেশে আবাসনশিল্পের ফিটিংস আইটেম আনতে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কী করা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সুুযোগে দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের প্রসার বাড়াতে পারে।’
ডা. কাজী আইনুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট
নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় আবাসন খাতের উত্তরণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, আর এতে এ খাতের জন্য অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আইনুল হক।
চট্টগ্রামে আবাসন খাতের অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব আইনুল হকের এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় একচেটিয়া ব্যবসা করেছিল। পরবর্তীতে অনেক কোম্পানি গড়ে উঠায় প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়েছেন। তবে প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন খুব ভালোভাবেই।
প্রায় দুই দশক আগের তুলনায় এখনকার আবাসন খাতের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা. আইনুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসময় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে খুঁটি গেড়ে দিলেই ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যেতো। গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরবর্তীতে ভবন নির্মাণ করতো ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন আর সেদিন নাই।’
তিনি বলেন, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করায় এখন গ্রাহক আগে ফ্ল্যাট চায়, পরে বুকিং। অর্থাৎ নিজের টাকায় ভবন নির্মাণের পর গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা যাবে। ব্যবসা অনেক কঠিন। আর এই কঠিনের মধ্যে নির্মাণ উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।
ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই উল্লেখ করে আইনুল হক বলেন, একটি প্রকল্পের যেসব ফ্ল্যাট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে চুক্তির সময় সেগুলোর যে দাম ছিল। এখন সেই দামে দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ নির্মাণ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো না হলে ব্যবসায় টিকে থাকা যাবে না বলে তিনি দাবি করেন।
কিন্তু চুক্তির পর দাম বাড়ানো সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কোউন্নয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে রিহ্যাব বা সরকারের পক্ষ থেকেও নীতিগত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বাহ্যিকভাবে নান্দনিক এবং বসবাসে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করবে উইকন প্রপার্টিজের ফ্ল্যাট। উইকনের পক্ষ থেকে এমন নিশ্চয়তাই দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যায়। আর এর অন্যতম কারণ বলে দাবি করা হয়, ফ্ল্যাট ক্রেতাদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধব উইকনের ডিজাইনের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হলে তারা আগেভাগেই বুকিং দিয়ে রাখেন নতুন প্রকল্পে যেন তাদের জন্য ফ্ল্যাট রাখা হয়। আর এই আত্মবিশ্বাস থেকে আবাসনশিল্পে আসার মাত্র চার বছরের মধ্যে ১২টি প্রকল্প নিয়েছে উইকন প্রপার্টিজ; যা বর্তমান বাজারে অকল্পনীয় বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
এই অকল্পনীয় কাজটি করছে একদল তুখোড় তরুণ তুর্কি। যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভবনের ডিজাইনের কাজ করছে, আবার কেউ নির্মাণে অভিজ্ঞ। সব মিলিয়ে উইকন প্রপার্টিজ চট্টগ্রাম শহরে ধূমকেতুর মতো আগমন ঘটলেও বাজারে নিজেদের অবস্থান মজবুত রাখার আভাস দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আশরাফুল ইসলাম আলভি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা রিয়েল এস্টেটে আসার আগে পিটুপির মাধ্যমে নকশা প্রণয়ন, ভবন নির্মাণ, নির্মাণ উপকরণ, ইন্টেরিয়রসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে আসছি ২০১৩ সাল থেকে। ২০১৪ সালে আমরা কাজ করেছি ভবনের নির্মাণ উপকরণ নিয়ে, ২০১৫ সালে নকশা প্রণয়নে ও ফার্নিচার তৈরিতে, ২০১৬ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করি। আর এই অভিজ্ঞতা পুঁজি করে ২০১৯ সালে আবাসনশিল্পে আসা। দেশে রড, সিমেন্ট, ফার্নিচারসহ সব ধরনের নির্মাণ উপকরণ আমাদেরই নিজস্ব। আর এতেই আমরা এগিয়ে থাকব এই শিল্পে।’
প্রায় পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর জাকির হোসেন রোডে দক্ষিণ খুলশী আবদুল মালেক সড়কে নির্মিত ‘উইকন নূহ’স কেভ’ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৮ মাসে। করোনাকালে এই অসাধ্য কাজটি করেছে উইকন প্রপার্টিজ। এটি উইকনের প্রথম প্রকল্প। যেখানে অনেক ডেভেলপারের প্রকল্প হস্তান্তরের গড় সময় পাঁচ বছর। সর্বোচ্চ ৬০ কিস্তিতে প্রকল্পের ফ্ল্যাট গ্রহণের সুবিধা দিয়ে থাকেন ডেভেলপাররা, সেখানে মাত্র ১৮ মাসে প্রকল্প হস্তান্তর কীভাবে সম্ভব? তবে শুধু এই প্রকল্পই নয়, ইতিমধ্যে উইকনের আওতায় নির্মাণাধীন বাকি প্রকল্পগুলোও দেড় বছরে হস্তান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু কীভাবে এ কাজ করছে উইকন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আশরাফুল ইসলাম আলভির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অন্যরা যেখানে কাজ করে আট ঘণ্টা। আমরা সেখানে কাজ করি ২৪ ঘণ্টা (তিন শিফট)। এতে অন্যরা এক বছরে যে পরিমাণ কাজ করতে পারে, আমরা তা চার মাসে সম্পাদন করতে পারি।’
উইকন প্রপার্টিজ নগরীর পাঁচলাইশে ‘উইকন শুকরানা’ নামে একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রিমিয়াম সেই প্রকল্পের স্থাপত্য নিদর্শন অনন্য। ১২তলা ভবনের প্রতি ফ্লোরে তিনটি করে ইউনিট রয়েছে। সুইমিং পুল, গার্ডেন, ওয়াকওয়ে, জিম, কিডস প্লে জোন, নামাজের জন্য জায়গাসহ ভবনে বসবাসকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটির ডিজাইনেও রয়েছে পুরাকীর্তি ও আধুনিক স্থাপত্যের মিশেল। উইকনের প্রায় প্রতিটি ভবনেই আধুনিক স্থাপত্য এবং নির্মাণ উপকরণ বিলাসবহুল।
এ বিষয়ে কথা হয় উইকনের আর্কিটেক্ট ও পরিচালক মেহেদী ইফতেখারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভবন নির্মাণে ডিজাইন করতে গিয়ে গ্রাহককে সর্বোচ্চ লাক্সারিয়াস সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করি। একই সঙ্গে ভবনের ইন্টেরিয়র এবং বৈদ্যুতিক পয়েন্ট জুতসই স্থানে বসানো হয়। ফ্ল্যাটের প্রতিটি জায়গা পরিমাপ করে ডিজাইন করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানসম্মত অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা এই শহরে রয়েছে। তাই আমরা প্রিমিয়াম ফ্ল্যাট নির্মাণ করছি। একই সঙ্গে আমরা বাতাসে আয়তন মেপে কোনো মূল্য নিচ্ছি না; অর্থাৎ একজন ক্রেতা যত বর্গফুট জায়গা ব্যবহার করবেন, ঠিক ততটুকুর মূল্য পরিশোধ করবেন। প্রতিটি জায়গা ইঞ্চি পরিমাণ মেপে ক্রেতা বুঝে নিতে পারবেন।’
বর্তমানে দক্ষিণ খুলশী ভিআইপি আবাসিক এলাকায় উইকন মে বেরি, রহমান নগরে উইকন ইকরা, কাতালগঞ্জে উইকন ক্যানোপি, চট্টেশ্বরী রোডে উইকন এম এন টাওয়ার ও উইকন রেইন ফরেস্ট, আমিরবাগে উইকন জেএম সাউথ লন, উত্তর খুলশীতে উইকন নর্থ, ওআর নিজাম রোডে উইকন মমতাজ ম্যানোর, হালিশহর জি ব্লকে উইকন হকস বে ল্যান্ডমার্ক, গোলপাহাড়ে উইকন স্কাইরিজ নামে প্রকল্প নিয়েছে উইকন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আজ ৯ জুন (শুক্রবার)। ভাগ্যরেখা অনুযায়ী আপনার আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কী বলছে জ্যোতিষশাস্ত্র? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যারা দিনের শুরুতেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে চান তারা একবার পড়ে নিতে পারেন আজকের রাশিফল।
মেষ : ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল
জাতক এ সপ্তাহে শত বছরের পুরনো কেনো বস্তুর সন্ধান লাভ করবেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি, অলংকার বা কোনো অমূল্য ধর্ম গ্রন্থের সন্ধান পেতে পারেন।
বৃষ : ২১ এপ্রিল-২০ মে
জাতকের এ সময়টায় সন্তান, স্ত্রী অথবা বন্ধু-বান্ধবীর কারণে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। মূল্যবান দ্রব্যাদির বিষয়ে একটু সাবধান হোন।
মিথুন : ২১ মে-২০ জুন
আপনার এ সপ্তাহে অর্থ ভাগ্য ভালো। জাতকের মঙ্গল লগ্ন কোনো প্রতিযোগিতামূলক জীবিকায় প্রলুব্ধ করবে। যেমন, নেভি, আর্মি বা বৈমানিক ইত্যাদি।
কর্কট : ২১ জুন-২০ জুলাই
জাতকের হঠাৎ কোনো দলিল-দস্তাবেজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোভ নয়, মালিককে ফিরিয়ে দেওয়াই মানুষের কাজ।
সিংহ : ২১ জুলাই-২০ আগস্ট
মঙ্গল ও রবির অবস্থানগত কারণে সিংহের ক্রোধ জাগ্রত হতে পারে। মেয়েরা রাগ করে বিপথে যাবেন না। অযথা আপনার অমূল্য বাচ্চাদানি বিনষ্ট হবে।
কন্যা : ২১ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর
জাতকের এ সপ্তাহটা শুভ। তবে অযথা প্রশাসনের বিরুদ্ধ কোনো কাজে জড়াবেন না।
তুলা : ২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর
জাতকের গ্রহগণ সৌভাগ্যের দ্বার মেলে ধরবে। সহসা দয়িতার কারণে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।
বৃশ্চিক : ২৩ অক্টোবর-২০ নভেম্বর
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ইন্দ্রিয় তাড়নায় জাতক অবৈধকর্মে লিপ্ত হতে পারেন। অনুঢ়ারা অর্থোপার্জনে আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা লাভ করবেন।
ধনু : ২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর
জাতকের অর্থ ও বন্ধু জুটবে। বিদেশ ভ্রমণ যোগ বিদ্যমান। তবে ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
মকর : ২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি
জাতকের জন্মকু-ুলীতে শনি কেন্দ্রস্থ হওয়ার ফলে, ক্রোধ বিপদ ডেকে আনবে। দুর্ঘটনায় রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব ক্রোধ সম্বরণ করুন।
কুম্ভ : ২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি
জাতক জীবনে প্রতিপত্তি লাভ করবেন। সৃষ্টিশীল কাজে সুনামের যোগ রয়েছে। রাজদ্বারে স্বীকৃতি পাবেন।
মীন : ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ
জাতক অপরিচিত নারী দ্বারা প্রলোভনের শিকার হতে পারেন। নিজেকে যতই স্মার্ট ভাবুন না কেন, পথিনারী বিবর্জিতা, ভ্রমণে নারীসঙ্গ পরিহার করুন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।