অর্থনীতিতে স্বস্তি অব্যাহত থাকুক
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বিগত নির্বাচনী বছরগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম হিসেবে দেশের অর্থনীতি এ বছর ছিল স্বস্তির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হরতাল, অবরোধ, সহিংসতার ঝাপটা লাগে অর্থনীতিতে। স্বাধীনতার পর থেকেই এমনটি হয়ে আসছে বাংলাদেশে। চিরাচরিত এই রূপ পাল্টে গিয়ে এবার নির্বাচনের আগের সপ্তাহেও রপ্তানি আয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে আগের মতোই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অগ্রগতি গত বছরের চেয়ে বেশি।
নব্বইয়ের দশকে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে এলেও পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনী বছরই ছিল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দ্বন্দ্বমুখর। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনে হরতাল, অবরোধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সহিংসতায় বিপর্যস্ত ছিল জনজীবন। এসবের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ত অর্থনীতিতে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির করা এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতিবছর গড়ে ৪৬ দিন করে হরতাল হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনী বছরগুলোতেই হরতাল হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
১৯৯০ সাল থেকে দেশের প্রতিটি নির্বাচনী বছরে কীভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে, তা তুলে ধরে এই নভেম্বরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৫-৯৬ নির্বাচনী বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হয়। ২০০১-০২ নির্বাচনী বছরে ডিডিপি আগের বছরের ৫ দশমিক ৩ থেকে কমে ৪ দশমিক ৬ হয়। ২০০৮-০৯ নির্বাচনী বছরে জিডিপি আগের বছরের ৬ দশমিক ২ থেকে কমে ৫ দশমিক ৭ হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঘিরে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছিল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই বছর একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে। নব্বইয়ের পর এবারই প্রথম কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই এতে অংশ নিচ্ছে। ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক পক্ষগুলোর নানা দ্বন্দ্ব-বিরোধ থাকা সত্ত্বেও বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই বছরের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে অর্থনীতি। এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রত্যক্ষ ফলাফল উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতাবস্থা ও অগ্রগতিতে।
নির্বাচনের বছর হিসেবে চলতি বছরের ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা যাচ্ছে রপ্তানি খাত এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও। পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। নানা রকম শঙ্কা সত্ত্বেও সময়মতো সরবরাহ পেয়ে ডিসেম্বর মাসেও বিদেশি পোশাক আমদানিকারকরা আরো নতুন কাজের অর্ডার দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের হিসাবে চলতি বছরের বিনিয়োগ নিবন্ধন প্রস্তাব আশানুরূপ এবং পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়নও ইতিবাচকভাবে এগিয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার টানপোড়েনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি বিনষ্ট না হওয়াটা ইতিবাচক। আসন্ন নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর অংশগ্রহণকারী সব দলগুলোই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে যেন দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখবে এটাই প্রত্যাশা।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বিগত নির্বাচনী বছরগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম হিসেবে দেশের অর্থনীতি এ বছর ছিল স্বস্তির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হরতাল, অবরোধ, সহিংসতার ঝাপটা লাগে অর্থনীতিতে। স্বাধীনতার পর থেকেই এমনটি হয়ে আসছে বাংলাদেশে। চিরাচরিত এই রূপ পাল্টে গিয়ে এবার নির্বাচনের আগের সপ্তাহেও রপ্তানি আয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে আগের মতোই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অগ্রগতি গত বছরের চেয়ে বেশি।
নব্বইয়ের দশকে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে এলেও পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনী বছরই ছিল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দ্বন্দ্বমুখর। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনে হরতাল, অবরোধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সহিংসতায় বিপর্যস্ত ছিল জনজীবন। এসবের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ত অর্থনীতিতে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির করা এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতিবছর গড়ে ৪৬ দিন করে হরতাল হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনী বছরগুলোতেই হরতাল হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
১৯৯০ সাল থেকে দেশের প্রতিটি নির্বাচনী বছরে কীভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে, তা তুলে ধরে এই নভেম্বরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৫-৯৬ নির্বাচনী বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হয়। ২০০১-০২ নির্বাচনী বছরে ডিডিপি আগের বছরের ৫ দশমিক ৩ থেকে কমে ৪ দশমিক ৬ হয়। ২০০৮-০৯ নির্বাচনী বছরে জিডিপি আগের বছরের ৬ দশমিক ২ থেকে কমে ৫ দশমিক ৭ হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঘিরে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছিল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই বছর একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে। নব্বইয়ের পর এবারই প্রথম কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই এতে অংশ নিচ্ছে। ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক পক্ষগুলোর নানা দ্বন্দ্ব-বিরোধ থাকা সত্ত্বেও বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই বছরের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে অর্থনীতি। এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রত্যক্ষ ফলাফল উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতাবস্থা ও অগ্রগতিতে।
নির্বাচনের বছর হিসেবে চলতি বছরের ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা যাচ্ছে রপ্তানি খাত এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও। পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। নানা রকম শঙ্কা সত্ত্বেও সময়মতো সরবরাহ পেয়ে ডিসেম্বর মাসেও বিদেশি পোশাক আমদানিকারকরা আরো নতুন কাজের অর্ডার দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের হিসাবে চলতি বছরের বিনিয়োগ নিবন্ধন প্রস্তাব আশানুরূপ এবং পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়নও ইতিবাচকভাবে এগিয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার টানপোড়েনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি বিনষ্ট না হওয়াটা ইতিবাচক। আসন্ন নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর অংশগ্রহণকারী সব দলগুলোই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে যেন দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখবে এটাই প্রত্যাশা।