সহিংসতা বন্ধে ইসির উদ্যোগ কই
| ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে আসছে। প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে জমে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। সহিংসতার খবরও। গত শনিবার নরসিংদীতে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাহাদিয়া নামের ১০ বছরের এক শিশু আহত হয়েছে। প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় একটি মাদ্রাসা ভবনের নিচে সম্প্রতি বিএনপি প্রার্থী মঞ্জুর এলাহীর প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। শনিবার দুপুরে এক দল দুর্বৃত্ত ক্যাম্পটিতে সশস্ত্র হামলা চালায়। শিবপুর দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহাদিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে হট্টগোলের শব্দ শুনে বারান্দায় এলে গুলিবিদ্ধ হয়। গতকাল নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তার বাম হাত থেকে তিনটি গুলি বের করা হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অনাথ মেয়েটি আপাতত শঙ্কামুক্ত। মাহাদিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। তবে শিশুটি এই নির্বাচনী সহিংসতার ক্ষত যে অনেক দিন বয়ে বেড়াবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পেশিশক্তি নির্ভর রাজনীতির কাছে হয়তো মানুষের জানমালের ক্ষতির গুরুত্ব নেই। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র এই দায় কি এড়াতে পারে? সহিংসতা বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ কই?
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। গত ১১ ডিসেম্বর নোয়াখালীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী সহিংসতার খবর আসতে থাকে। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হামলার শিকার হন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে হামলার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আসছে। গত শুক্রবার ভোর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দুবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কেবল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে না, মানুষের জানমালকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার আগে ভোটার ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টা ও তৎপরতা সত্ত্বেও কোনোবারই সহিংসতামুক্ত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে বৈ কমছে না। বিষয়টা উদ্বেগের। নির্বাচন শেষে সহিংস কর্মকা-কে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের ভোগান্তির দায়ভার কেউ নিচ্ছে কি? নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধ করতে প্রয়োজনে নতুন করে ভাবতে হবে। সংঘর্ষ এড়াতে প্রচার-প্রচারণায় যে বিধিনিষেধ আছে, তার সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেই একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটছে। কমিশনকে এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থক নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলে সহিংস ঘটনা কমবে, এমনটা আশা করা অমূলক নয়।
সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অংশগ্রহণমুলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। নির্বাচনকেন্দ্রিক আর যেন কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। সহিংস ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শেয়ার করুন
| ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে আসছে। প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে জমে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। সহিংসতার খবরও। গত শনিবার নরসিংদীতে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাহাদিয়া নামের ১০ বছরের এক শিশু আহত হয়েছে। প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় একটি মাদ্রাসা ভবনের নিচে সম্প্রতি বিএনপি প্রার্থী মঞ্জুর এলাহীর প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। শনিবার দুপুরে এক দল দুর্বৃত্ত ক্যাম্পটিতে সশস্ত্র হামলা চালায়। শিবপুর দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহাদিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে হট্টগোলের শব্দ শুনে বারান্দায় এলে গুলিবিদ্ধ হয়। গতকাল নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তার বাম হাত থেকে তিনটি গুলি বের করা হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অনাথ মেয়েটি আপাতত শঙ্কামুক্ত। মাহাদিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। তবে শিশুটি এই নির্বাচনী সহিংসতার ক্ষত যে অনেক দিন বয়ে বেড়াবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পেশিশক্তি নির্ভর রাজনীতির কাছে হয়তো মানুষের জানমালের ক্ষতির গুরুত্ব নেই। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র এই দায় কি এড়াতে পারে? সহিংসতা বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ কই?
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। গত ১১ ডিসেম্বর নোয়াখালীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী সহিংসতার খবর আসতে থাকে। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হামলার শিকার হন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে হামলার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আসছে। গত শুক্রবার ভোর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দুবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কেবল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে না, মানুষের জানমালকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার আগে ভোটার ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টা ও তৎপরতা সত্ত্বেও কোনোবারই সহিংসতামুক্ত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে বৈ কমছে না। বিষয়টা উদ্বেগের। নির্বাচন শেষে সহিংস কর্মকা-কে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের ভোগান্তির দায়ভার কেউ নিচ্ছে কি? নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধ করতে প্রয়োজনে নতুন করে ভাবতে হবে। সংঘর্ষ এড়াতে প্রচার-প্রচারণায় যে বিধিনিষেধ আছে, তার সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেই একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটছে। কমিশনকে এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থক নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলে সহিংস ঘটনা কমবে, এমনটা আশা করা অমূলক নয়।
সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অংশগ্রহণমুলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। নির্বাচনকেন্দ্রিক আর যেন কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। সহিংস ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।