সহিংসতা দমনে ইসির শক্ত ভূমিকা চাই
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
সোম-মঙ্গলবারের নির্বাচনী সহিংসতা হঠাৎ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। অথচ ভোটের আগে শেষ দু-তিন দিনে প্রার্থীদের প্রচারে উৎসবমুখর পরিবেশই থাকার কথা। নির্বাচনী মাঠের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সেনা মোতায়েনকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানালেও আকস্মিকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেল।
সোমবার নির্বাচনী শিবিরে হামলার জের ধরে গুলিবিদ্ধ হয়ে খাগড়াছড়িতে দুজন নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন শীর্ষ নেতার ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির দাবি, সারা দেশের ২৮টি আসনে হামলার ঘটনায় তাদের ১৯ প্রার্থীসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পরদিন মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রচার মিছিলে পেট্রলবোমা হামলায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটপ্রার্থীর সমর্থকরা। পাশাপাশি ঢাকার নবাবগঞ্জে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন।
নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করে রাজধানীতে পূর্বনির্ধারিত পথসভাগুলো স্থগিত করে দেয় ক্ষমতার বাইরে থাকা সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু নিরাপত্তা ও হামলার প্রতিকার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও কোনো সুরাহা না পাওয়ার কথা বলে ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ নেতারা।
এই পরিস্থিতি সব রাজনৈতিক দল ও জোটের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়। এতে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচার এবং ভোটারদের ভোট দেওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনা দুই-ই বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও। নির্বাচনী মাঠের পরিবেশ রক্ষায় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকার পরও কেন এভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে।
নব্বইয়ের পর এবারই প্রথম একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে ভোটে অংশ নিতে যাচ্ছে দেশের প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দল। সঙ্গত কারণেই এই নির্বাচনের সাফল্য নিয়ে দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট সব মহলেরই দৃষ্টি থাকবে। নানা রকম দ্বন্দ্ব-সংঘাত সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়। কেননা, দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু নির্বাচনের তিন-চারদিন আগেও ভোটারদের মধ্যে ভোট দিতে যাওয়ার মতো আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি না করতে পারলে এ সবই মøান হয়ে যেতে পারে।
এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলা-সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই পরিস্থিতির কারণে যাতে কোনো পক্ষ নির্বাচনে একচেটিয়া ভোটের সুযোগ না পায় কিংবা কোনো পক্ষ যাতে ভোট থেকে ছিটকে না পড়ে, সে বিষয়েও নজর দিতে হবে কমিশনকেই। আর অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ভোট দেওয়ার বিষয়ে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে কমিশনকে।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

সোম-মঙ্গলবারের নির্বাচনী সহিংসতা হঠাৎ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। অথচ ভোটের আগে শেষ দু-তিন দিনে প্রার্থীদের প্রচারে উৎসবমুখর পরিবেশই থাকার কথা। নির্বাচনী মাঠের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সেনা মোতায়েনকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানালেও আকস্মিকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেল।
সোমবার নির্বাচনী শিবিরে হামলার জের ধরে গুলিবিদ্ধ হয়ে খাগড়াছড়িতে দুজন নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন শীর্ষ নেতার ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির দাবি, সারা দেশের ২৮টি আসনে হামলার ঘটনায় তাদের ১৯ প্রার্থীসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পরদিন মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রচার মিছিলে পেট্রলবোমা হামলায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটপ্রার্থীর সমর্থকরা। পাশাপাশি ঢাকার নবাবগঞ্জে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন।
নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করে রাজধানীতে পূর্বনির্ধারিত পথসভাগুলো স্থগিত করে দেয় ক্ষমতার বাইরে থাকা সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু নিরাপত্তা ও হামলার প্রতিকার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও কোনো সুরাহা না পাওয়ার কথা বলে ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ নেতারা।
এই পরিস্থিতি সব রাজনৈতিক দল ও জোটের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়। এতে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচার এবং ভোটারদের ভোট দেওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনা দুই-ই বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও। নির্বাচনী মাঠের পরিবেশ রক্ষায় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকার পরও কেন এভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে।
নব্বইয়ের পর এবারই প্রথম একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে ভোটে অংশ নিতে যাচ্ছে দেশের প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দল। সঙ্গত কারণেই এই নির্বাচনের সাফল্য নিয়ে দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট সব মহলেরই দৃষ্টি থাকবে। নানা রকম দ্বন্দ্ব-সংঘাত সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়। কেননা, দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু নির্বাচনের তিন-চারদিন আগেও ভোটারদের মধ্যে ভোট দিতে যাওয়ার মতো আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি না করতে পারলে এ সবই মøান হয়ে যেতে পারে।
এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলা-সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই পরিস্থিতির কারণে যাতে কোনো পক্ষ নির্বাচনে একচেটিয়া ভোটের সুযোগ না পায় কিংবা কোনো পক্ষ যাতে ভোট থেকে ছিটকে না পড়ে, সে বিষয়েও নজর দিতে হবে কমিশনকেই। আর অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ভোট দেওয়ার বিষয়ে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে কমিশনকে।