ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে
রূপান্তর ডেস্ক | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
ভোটের ঠিক আগে আগে সহিংসতা ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নে নির্বাচনী মাঠে আস্থাহীনতার এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক জোটের নেতাদের ওপর হামলা, মামলা এবং প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে গেছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মাঠে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি-কোস্টগার্ড-সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকলেও কেন এমন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ল তার জবাব নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে।
এদিকে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনকে ‘ব্যর্থ ও অকার্যকর’ আখ্যা দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অন্যদিকে, ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ না থাকার দাবি করে সম্প্রতি সিইসির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল বুধবার ‘ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের’ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না।’ এ সবই সাধারণ ভোটারদের আস্থাহীন করে তুলতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তবে, এখন পর্যন্ত খবর হলো জোটগতভাবে এবং পৃথকভাবেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ভোটের মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন না তারা। কেননা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার আর কোনো বিকল্প নেই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকলে বিএনপির এবার আর সেই ভুল করার কথা নয়।
কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন না করলেই কেবল নির্বাচন সফল হয় না। একটি নির্বাচন সফল হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ শর্তটি হলো ভোটারদের অংশগ্রহণ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একচেটিয়া নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে (মোট ১৫৪টি) বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়া আসনগুলোতে মোট ভোট পড়েছিল মাত্র ৪০ ভাগ, যা আগের সাধারণ নির্বাচনগুলোর তুলনায় প্রায় অর্ধেকের মতো। ফলে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পান কিংবা তাদের ভোটদানের মতো পরিবেশ না থাকে তাহলে নির্বাচন সফল করাটা কঠিন। এ প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর কথা স্মরণ করা যেতে পারে। নির্বাচনী প্রচারের ওই সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘যেনতেন প্রকারে’ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে চায় না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিগত সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রাখলে প্রধানমন্ত্রীর এই কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়।
এ অবস্থায় ভোটের মাঠে দ্রুত আস্থা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। গত কয়েকদিনের সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। যাতে ক্ষুদ্র স্বার্থ ও লোভের বশবর্তী হয়ে সামান্য ভুলের কারণে জাতির বৃহত্তর ক্ষতি না হয়। দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার অন্য কোনো বিকল্প নেই।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

ভোটের ঠিক আগে আগে সহিংসতা ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নে নির্বাচনী মাঠে আস্থাহীনতার এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক জোটের নেতাদের ওপর হামলা, মামলা এবং প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে গেছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মাঠে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি-কোস্টগার্ড-সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকলেও কেন এমন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ল তার জবাব নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে।
এদিকে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনকে ‘ব্যর্থ ও অকার্যকর’ আখ্যা দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অন্যদিকে, ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ না থাকার দাবি করে সম্প্রতি সিইসির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল বুধবার ‘ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের’ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না।’ এ সবই সাধারণ ভোটারদের আস্থাহীন করে তুলতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তবে, এখন পর্যন্ত খবর হলো জোটগতভাবে এবং পৃথকভাবেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ভোটের মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন না তারা। কেননা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার আর কোনো বিকল্প নেই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকলে বিএনপির এবার আর সেই ভুল করার কথা নয়।
কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন না করলেই কেবল নির্বাচন সফল হয় না। একটি নির্বাচন সফল হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ শর্তটি হলো ভোটারদের অংশগ্রহণ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একচেটিয়া নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে (মোট ১৫৪টি) বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়া আসনগুলোতে মোট ভোট পড়েছিল মাত্র ৪০ ভাগ, যা আগের সাধারণ নির্বাচনগুলোর তুলনায় প্রায় অর্ধেকের মতো। ফলে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পান কিংবা তাদের ভোটদানের মতো পরিবেশ না থাকে তাহলে নির্বাচন সফল করাটা কঠিন। এ প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর কথা স্মরণ করা যেতে পারে। নির্বাচনী প্রচারের ওই সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘যেনতেন প্রকারে’ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে চায় না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিগত সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রাখলে প্রধানমন্ত্রীর এই কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়।
এ অবস্থায় ভোটের মাঠে দ্রুত আস্থা ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। গত কয়েকদিনের সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। যাতে ক্ষুদ্র স্বার্থ ও লোভের বশবর্তী হয়ে সামান্য ভুলের কারণে জাতির বৃহত্তর ক্ষতি না হয়। দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার অন্য কোনো বিকল্প নেই।