ইন্টারনেট সচল থাকুক সারাক্ষণ
| ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগব্যবস্থার যে নতুন সময়ে আমরা বাস করছি, সেখানে একমুহূর্তও ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নেই। কেননা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও দাপ্তরিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়টি। এই যুগে অবস্থা এমন হয়েছে যে, বিদ্যুতের বদলে হারিকেন জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করার যে বিকল্প আছে এখন ইন্টারনেট না থাকলে তেমন কোনো বিকল্পও মানুষের হাতে নেই।
নানা কারণেই বিভিন্ন সময়ে আমরা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার ঘটনা দেখেছি এবং এখনো তা দেখা যাচ্ছে। কখনো জননিরাপত্তার কথা বলে, কখনো গুজব বা অপপ্রচার রোধের কথা বলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের বড় অংশই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাবে, গত নভেম্বর নাগাদ দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৯ কোটি ১৮ লাখের বেশি; যার মধ্যে ৮ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহকই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র দুদিন আগে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ফোর জি ও থ্রি জি সেবা বন্ধ রাখা নিয়ে জনমনে নতুন করে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ফোর জি ও থ্রি জি সেবা বন্ধ থাকলেও টু জি ইন্টারনেটসেবা চালু ছিল। কিন্তু এই ইন্টারনেটে বার্তা পাঠানো ও গ্রহণ করা গেলেও ছবি ও ভিডিও পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। আর ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়ার কারণে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করাও কষ্টকর হয়ে যায় গ্রাহকের জন্য।
কেন এমন হচ্ছে তার উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে, আসলে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক এই নতুন যোগাযোগ বাস্তবতা আমাদের যে প্রাযুক্তিক সক্ষমতায় নিয়ে গেছে সে তুলনায় সরকারি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো অনেক পিছিয়ে। এ কারণে প্রায়শই নির্দিষ্ট পরিসরে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে সামগ্রিক ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা দেখছি। সর্বশেষ ভোটের আগে এই সেবা বন্ধ রাখার বিষয়টিও হয়তো তেমনি। নির্বাচনী প্রচারের নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পরও অনেক প্রার্থীই ইন্টারনেটে নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই প্রচার বা অপপ্রচার যাই বলুন তা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে আমরা পুরো দেশেই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ রাখতে দেখা গেল।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের দিনে বা আগে-পরে নিরাপত্তার প্রশ্নে কিংবা অন্য কোনো কারণে ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটতে পারে কি না। সত্যিকার অর্থেই এর উত্তর হবে কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি বিশেষ স্থান বা এলাকায় তা করার যৌক্তিকতা থাকলেও কোনো অবস্থাতেই সারা দেশের নাগরিকদের এমন সেবার বাইরে রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বিষয়টি নাগরিকদের ব্যবসায়িক, পারিবারিক এবং সামাজিক স্বার্থের সঙ্গে যেমন যুক্ত তেমনি এটা মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের মৌলিক অধিকারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। বিশেষ পরিস্থিতিই হোক কিংবা অন্য কোনো সময়, ইন্টারনেট সব সময় সচল থাকুক।
শেয়ার করুন
| ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগব্যবস্থার যে নতুন সময়ে আমরা বাস করছি, সেখানে একমুহূর্তও ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নেই। কেননা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও দাপ্তরিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়টি। এই যুগে অবস্থা এমন হয়েছে যে, বিদ্যুতের বদলে হারিকেন জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করার যে বিকল্প আছে এখন ইন্টারনেট না থাকলে তেমন কোনো বিকল্পও মানুষের হাতে নেই।
নানা কারণেই বিভিন্ন সময়ে আমরা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার ঘটনা দেখেছি এবং এখনো তা দেখা যাচ্ছে। কখনো জননিরাপত্তার কথা বলে, কখনো গুজব বা অপপ্রচার রোধের কথা বলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের বড় অংশই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাবে, গত নভেম্বর নাগাদ দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৯ কোটি ১৮ লাখের বেশি; যার মধ্যে ৮ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহকই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র দুদিন আগে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ফোর জি ও থ্রি জি সেবা বন্ধ রাখা নিয়ে জনমনে নতুন করে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ফোর জি ও থ্রি জি সেবা বন্ধ থাকলেও টু জি ইন্টারনেটসেবা চালু ছিল। কিন্তু এই ইন্টারনেটে বার্তা পাঠানো ও গ্রহণ করা গেলেও ছবি ও ভিডিও পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। আর ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়ার কারণে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করাও কষ্টকর হয়ে যায় গ্রাহকের জন্য।
কেন এমন হচ্ছে তার উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে, আসলে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক এই নতুন যোগাযোগ বাস্তবতা আমাদের যে প্রাযুক্তিক সক্ষমতায় নিয়ে গেছে সে তুলনায় সরকারি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো অনেক পিছিয়ে। এ কারণে প্রায়শই নির্দিষ্ট পরিসরে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে সামগ্রিক ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা দেখছি। সর্বশেষ ভোটের আগে এই সেবা বন্ধ রাখার বিষয়টিও হয়তো তেমনি। নির্বাচনী প্রচারের নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পরও অনেক প্রার্থীই ইন্টারনেটে নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই প্রচার বা অপপ্রচার যাই বলুন তা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে আমরা পুরো দেশেই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ রাখতে দেখা গেল।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের দিনে বা আগে-পরে নিরাপত্তার প্রশ্নে কিংবা অন্য কোনো কারণে ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটতে পারে কি না। সত্যিকার অর্থেই এর উত্তর হবে কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি বিশেষ স্থান বা এলাকায় তা করার যৌক্তিকতা থাকলেও কোনো অবস্থাতেই সারা দেশের নাগরিকদের এমন সেবার বাইরে রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বিষয়টি নাগরিকদের ব্যবসায়িক, পারিবারিক এবং সামাজিক স্বার্থের সঙ্গে যেমন যুক্ত তেমনি এটা মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের মৌলিক অধিকারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। বিশেষ পরিস্থিতিই হোক কিংবা অন্য কোনো সময়, ইন্টারনেট সব সময় সচল থাকুক।